অন্য দেশের ব্যবসায়ীরা রজমানে ছাড় দেয়, বাংলাদেশে তার উল্টো : বাণিজ্যমন্ত্রী

রমজান মাসে অতিরিক্ত লাভ না করে ব্যবসায়ীদের সংযমী হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদেরও প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি বারবার অনুরোধ করি, মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না, মানবিক দায়িত্ব আছে। আমরা সেন্সেবল ব্যবসায়ী চাই। পৃথিবীর সব জায়গায় উৎসবের সময়ে মানুষকে একটু ছাড় দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু আমাদের দেশে তার ব্যতিক্রম। রমজান এসেছে ব্যবসায়ীদের বলব আপনারা একটু সংযমী হোন। যা ন্যায্য মূল্য সেটাই নেবেন, আমরা সারাদিন পাহারা দিতে পারবো না। আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, আপনারা দায়িত্ব নেবেন কি-না।’

ক্রেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে হুমড়ি খেয়ে কেনার কিছু নেই। একটু সাশ্রয়ী হোন। বাজারে একটা সরবরাহ ব্যবস্থা আছে। পাঁচ কেজি পেঁয়াজের জায়গায় আপনারা ২০ কেজি কেনা শুরু করলে বাজারে হুট করে সরবরাহ চলে আসবে না।’

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

কোন কোম্পানির চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ভোক্তাদের আগ্রহী না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের উৎপাদন মূল্যের কমে কেউ আপনাকে মোটরসাইকেল দিয়ে দেবে, এসব দেখে আকৃষ্ট হবেন না। এরা দিনশেষে ঠকাবে। একটা সময় আমাদের দেশের মানুষ জানতেন না ভোক্তা হিসেবে তারা একটি অধিকার আছে, এখন মানুষ জেনেছে, ভোক্তা অধিকার তার কাজ করে যাচ্ছে, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। আমাদের অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে যদি আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারি।’

রমজানে টিসিবির কার্যক্রম নিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘টিসিবি আগে একবার দিতো, এখন দুবার দেবে। ডাল, তেল, চিনি, চাল, ঢাকায় খেজুর দেবে, গ্রামে ছোলা-বুট দেবে। এক কোটি মানুষকে দেবে, এক কোটি মানুষকে দেয়া মানে এক কোটি পরিবারকে দেয়া।’

সম্প্রতি কাতারে এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলেনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কাতারে পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনে ছিলাম। আমরা এখনও এলডিসি আছি। তবে এবারই আমাদের এলডিসিতে শেষ যোগ দেয়া; কারণ ২০২৬ সালেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়ে যাব। নির্বাচন এলে অনেক কথাই বলা হয়ে থাকে, তবে প্রধানমন্ত্রী কোথায় নিয়ে গেছেন তা বিশ্বনন্দিত।’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, এসব প্রতিষ্ঠান যেমন শক্তিশালী ও বেগবান হওয়া দরকার তা এখনও হয়ে উঠতে পারেনি। জনগণ তাদের কাজে সন্তুষ্ট, কিন্তু তাদের সক্ষমতা যথেষ্ট না। দুই তিনজন কর্মকর্তা দিয়ে একটা জেলায় ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব না। তাই দপ্তরটিকে শক্তিশালী করার দাবি জানাই।’

এফবিসিসিআই সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও বাজার ঠিক রাখতে কাজ করছি। বৈশ্বিক সংকটে বাজারে সংকটের প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। তবু আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে রচনা আহ্বান করেছিল ভোক্তা অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা সিসিএমএস।

‘কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এর মাধ্যমে ভোক্তার অভিযোগ গ্রহণ থেকে শুরু করে নিষ্পত্তি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। ফলে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি ছাড়া অন্য প্রক্রিয়ায় ভোক্তার সশরীরে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হবে না।

পাশাপাশি ভোক্তার অভিযোগের বিপরীতে জরিমানা করা অর্থের ২৫ শতাংশ প্রণোদনা নগদের পরিবর্তে ডিজিটাল বা ই-পেমেন্টে পরিশোধ করা হবে।

আরও খবর
১০ দিনে ৬৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স
যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্যাংক বন্ধ করে দেয়ার পর্যায়ে আসেনি বাংলাদেশ : মশিউর রহমান
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলন
‘গ্রাহকদের টাকা সরিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না’
ঢাকা মোটর শোতে অংশগ্রহণ করছে পদ্মা ব্যাংক
সোনালী ব্যাংকে ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার সেবা চালু
অগ্রণী ব্যাংকে ব্যবসায়িক পর্যালোচনা সভা-২০২৩
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠালে পুরস্কার
এবি ব্যাংকের তাজমহল রোড উপশাখা উদ্বোধন
বেসিক ব্যাংকে ‘ম্যাগপাই’ অ্যাপ উদ্বোধন
এক্সিম ব্যাংকের নেতৃত্বে ফেনীতে স্কুল ব্যাংকিং কনফারেন্স
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের উপশাখা উদ্বোধন

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩ , ০২ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

অন্য দেশের ব্যবসায়ীরা রজমানে ছাড় দেয়, বাংলাদেশে তার উল্টো : বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রমজান মাসে অতিরিক্ত লাভ না করে ব্যবসায়ীদের সংযমী হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদেরও প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি বারবার অনুরোধ করি, মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না, মানবিক দায়িত্ব আছে। আমরা সেন্সেবল ব্যবসায়ী চাই। পৃথিবীর সব জায়গায় উৎসবের সময়ে মানুষকে একটু ছাড় দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু আমাদের দেশে তার ব্যতিক্রম। রমজান এসেছে ব্যবসায়ীদের বলব আপনারা একটু সংযমী হোন। যা ন্যায্য মূল্য সেটাই নেবেন, আমরা সারাদিন পাহারা দিতে পারবো না। আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, আপনারা দায়িত্ব নেবেন কি-না।’

ক্রেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে হুমড়ি খেয়ে কেনার কিছু নেই। একটু সাশ্রয়ী হোন। বাজারে একটা সরবরাহ ব্যবস্থা আছে। পাঁচ কেজি পেঁয়াজের জায়গায় আপনারা ২০ কেজি কেনা শুরু করলে বাজারে হুট করে সরবরাহ চলে আসবে না।’

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

কোন কোম্পানির চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ভোক্তাদের আগ্রহী না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের উৎপাদন মূল্যের কমে কেউ আপনাকে মোটরসাইকেল দিয়ে দেবে, এসব দেখে আকৃষ্ট হবেন না। এরা দিনশেষে ঠকাবে। একটা সময় আমাদের দেশের মানুষ জানতেন না ভোক্তা হিসেবে তারা একটি অধিকার আছে, এখন মানুষ জেনেছে, ভোক্তা অধিকার তার কাজ করে যাচ্ছে, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। আমাদের অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে যদি আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারি।’

রমজানে টিসিবির কার্যক্রম নিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘টিসিবি আগে একবার দিতো, এখন দুবার দেবে। ডাল, তেল, চিনি, চাল, ঢাকায় খেজুর দেবে, গ্রামে ছোলা-বুট দেবে। এক কোটি মানুষকে দেবে, এক কোটি মানুষকে দেয়া মানে এক কোটি পরিবারকে দেয়া।’

সম্প্রতি কাতারে এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলেনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কাতারে পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনে ছিলাম। আমরা এখনও এলডিসি আছি। তবে এবারই আমাদের এলডিসিতে শেষ যোগ দেয়া; কারণ ২০২৬ সালেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়ে যাব। নির্বাচন এলে অনেক কথাই বলা হয়ে থাকে, তবে প্রধানমন্ত্রী কোথায় নিয়ে গেছেন তা বিশ্বনন্দিত।’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, এসব প্রতিষ্ঠান যেমন শক্তিশালী ও বেগবান হওয়া দরকার তা এখনও হয়ে উঠতে পারেনি। জনগণ তাদের কাজে সন্তুষ্ট, কিন্তু তাদের সক্ষমতা যথেষ্ট না। দুই তিনজন কর্মকর্তা দিয়ে একটা জেলায় ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব না। তাই দপ্তরটিকে শক্তিশালী করার দাবি জানাই।’

এফবিসিসিআই সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও বাজার ঠিক রাখতে কাজ করছি। বৈশ্বিক সংকটে বাজারে সংকটের প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। তবু আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে রচনা আহ্বান করেছিল ভোক্তা অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা সিসিএমএস।

‘কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এর মাধ্যমে ভোক্তার অভিযোগ গ্রহণ থেকে শুরু করে নিষ্পত্তি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। ফলে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি ছাড়া অন্য প্রক্রিয়ায় ভোক্তার সশরীরে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হবে না।

পাশাপাশি ভোক্তার অভিযোগের বিপরীতে জরিমানা করা অর্থের ২৫ শতাংশ প্রণোদনা নগদের পরিবর্তে ডিজিটাল বা ই-পেমেন্টে পরিশোধ করা হবে।