বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত হেলালিয়া হাট স্টেশনটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

নওগাঁর অদূরে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার হেলালিয়া হাট রেল স্টেশনটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্টেশন। তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশেই এই স্টেশনটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই স্টেশনের সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ অনেকেরই ট্রেন সফরের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার স্মৃতি রক্ষার্থে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ভ্রমণের তথ্য সম্বলিত ম্যূরাল নির্মাণ করাসহ দ্রুত ছোট পরিসরে টিনের পরিবর্তে আধুনিকমানের একটি আকর্ষণীয় স্টেশন নির্মাণ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

সান্তাহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম খাঁন বলেন ১৯৬৮ সালে তৎকালীন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রেনযোগে পুরো দেশ সফর করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৮ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে ট্রেন যোগে উত্তরবঙ্গ সফরে এলে ছাতনী ও ঢেকড়া গ্রামের জনগণ এই স্টেশনে বঙ্গবন্ধু বহনকারী ট্রেনটিকে থামিয়ে দেয়। তখন বর্তমান স্টেশনের স্থানে আয়োজিত ছোট্ট একটি সমাবেশে বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এখানকার মানুষের দাবির ভিত্তিতে কথা দিয়েছিলেন যে তিনি যদি ১৯৬৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেন তাহলে এখানে একটি স্টেশন নির্মাণ করে দিবেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসের ১০ তারিখে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্থানীয় হাট হেলালিয়ার নামেই টিনের ছাউনির হেলালিয়া হাট রেল স্টেশনটির উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেন যোগে উত্তরবঙ্গ সফরে এলে স্থানীয় মানুষদের দাবির ভিত্তিতে ট্রেন থামিয়ে ট্রেন থেকেই স্থানীয় মানুষদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন। এরপর থেকে এই লোকাল স্টেশনটিতে ৪টি লোকাল ট্রেন দাঁড়াতো। পরবর্তীতে উত্তরের চিলাহাটি থেকে দক্ষিণের খুলনাগামী রকেট মেইল ও পারবতীপুর থেকে রাজশাহীগামী উত্তরা মেইল ট্রেনটি দাঁড়াতো। এরপর ১৭ বছর পূর্বে হঠাৎ করেই সকল লোকাল ট্রেনের বিরতিসহ এই স্টেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন এই অঞ্চলটি মূলত মাদুর তৈরির জন্য বিখ্যাত। সারাদেশের মানুষ যে মাদুর ব্যবহার করেন সেই মাদুর একমাত্র এই অঞ্চলেই তৈরি হয়ে থাকে। আর সেই মাদুর পুরো দেশ এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মাদুর চালান করতে ট্রেনই একমাত্র সুবিধাজনক পরিবহন ব্যবস্থা। মাদুরসহ অন্যান্য উপকরণ এবং যাত্রী পরিবহনের তাগিদে পুনরায় এই স্টেশনে লোকাল দুটি ট্রেনের বিরতির দাবিতে স্থানীয়রা রেলপথ বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সিনিয়র সচিব ও এই এলাকার কৃতী সন্তান ফাতিমা ইয়াসমিন ও প্রকৌশলী শাহ মো. শহিদুল হকের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি এই স্টেশনে উত্তরা মেইল ট্রেনটির বিরতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই স্টেশনের আশেপাশে প্রায় ১০টি প্লাস্টিকের মাদুর তৈরির কারখানা তৈরি হয়েছে। যে ফ্যাক্টরিগুলো থেকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদুর ট্রাক যোগে চালান করা হচ্ছে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অথচ উত্তরা মেইল ট্রেনের পাশাপাশি খুলনাগামী রকেট মেইল ট্রেনটি যদি এই স্টেশনে বিরতি দিতো তাহলে এখানকার ব্যবসায়ীরা পূর্বের মতো খুব কম খরচে ও কম সময়ে মাদুরগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করতে পারতো। ঐতিহ্যবাহী এই স্টেশনে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার স্মৃতি রক্ষার্থে আধুনিক মানের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দুটি ট্রেনের বিরতি বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩ , ০২ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত হেলালিয়া হাট স্টেশনটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

নওগাঁর অদূরে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার হেলালিয়া হাট রেল স্টেশনটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্টেশন। তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশেই এই স্টেশনটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই স্টেশনের সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ অনেকেরই ট্রেন সফরের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার স্মৃতি রক্ষার্থে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ভ্রমণের তথ্য সম্বলিত ম্যূরাল নির্মাণ করাসহ দ্রুত ছোট পরিসরে টিনের পরিবর্তে আধুনিকমানের একটি আকর্ষণীয় স্টেশন নির্মাণ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

সান্তাহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম খাঁন বলেন ১৯৬৮ সালে তৎকালীন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রেনযোগে পুরো দেশ সফর করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৮ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে ট্রেন যোগে উত্তরবঙ্গ সফরে এলে ছাতনী ও ঢেকড়া গ্রামের জনগণ এই স্টেশনে বঙ্গবন্ধু বহনকারী ট্রেনটিকে থামিয়ে দেয়। তখন বর্তমান স্টেশনের স্থানে আয়োজিত ছোট্ট একটি সমাবেশে বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এখানকার মানুষের দাবির ভিত্তিতে কথা দিয়েছিলেন যে তিনি যদি ১৯৬৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেন তাহলে এখানে একটি স্টেশন নির্মাণ করে দিবেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসের ১০ তারিখে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্থানীয় হাট হেলালিয়ার নামেই টিনের ছাউনির হেলালিয়া হাট রেল স্টেশনটির উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেন যোগে উত্তরবঙ্গ সফরে এলে স্থানীয় মানুষদের দাবির ভিত্তিতে ট্রেন থামিয়ে ট্রেন থেকেই স্থানীয় মানুষদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন। এরপর থেকে এই লোকাল স্টেশনটিতে ৪টি লোকাল ট্রেন দাঁড়াতো। পরবর্তীতে উত্তরের চিলাহাটি থেকে দক্ষিণের খুলনাগামী রকেট মেইল ও পারবতীপুর থেকে রাজশাহীগামী উত্তরা মেইল ট্রেনটি দাঁড়াতো। এরপর ১৭ বছর পূর্বে হঠাৎ করেই সকল লোকাল ট্রেনের বিরতিসহ এই স্টেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন এই অঞ্চলটি মূলত মাদুর তৈরির জন্য বিখ্যাত। সারাদেশের মানুষ যে মাদুর ব্যবহার করেন সেই মাদুর একমাত্র এই অঞ্চলেই তৈরি হয়ে থাকে। আর সেই মাদুর পুরো দেশ এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মাদুর চালান করতে ট্রেনই একমাত্র সুবিধাজনক পরিবহন ব্যবস্থা। মাদুরসহ অন্যান্য উপকরণ এবং যাত্রী পরিবহনের তাগিদে পুনরায় এই স্টেশনে লোকাল দুটি ট্রেনের বিরতির দাবিতে স্থানীয়রা রেলপথ বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সিনিয়র সচিব ও এই এলাকার কৃতী সন্তান ফাতিমা ইয়াসমিন ও প্রকৌশলী শাহ মো. শহিদুল হকের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি এই স্টেশনে উত্তরা মেইল ট্রেনটির বিরতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই স্টেশনের আশেপাশে প্রায় ১০টি প্লাস্টিকের মাদুর তৈরির কারখানা তৈরি হয়েছে। যে ফ্যাক্টরিগুলো থেকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদুর ট্রাক যোগে চালান করা হচ্ছে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অথচ উত্তরা মেইল ট্রেনের পাশাপাশি খুলনাগামী রকেট মেইল ট্রেনটি যদি এই স্টেশনে বিরতি দিতো তাহলে এখানকার ব্যবসায়ীরা পূর্বের মতো খুব কম খরচে ও কম সময়ে মাদুরগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করতে পারতো। ঐতিহ্যবাহী এই স্টেশনে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার স্মৃতি রক্ষার্থে আধুনিক মানের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দুটি ট্রেনের বিরতি বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।