সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন

দুই দলের হট্টগোল, ধাক্কাধাক্কি

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে ব্যাপক হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গতকাল সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। এদিন নির্ধারিত সময় সকাল দশটায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের হট্টগোল। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর তথা বেলা ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত উপকমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোট শুরু হয়। এ নিয়ে দিনভর সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে উত্তেজনা বিরাজ করে। বিকেল তিনটার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। এরপর সাড়ে তিনটার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সমিতি প্রাঙ্গণে থাকা ভোটের প্যান্ডেলের দিকে আসে। এরপর এক পর্যায়ে প্যান্ডেল ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর পরই আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা স্লোগানসহ পাল্টা মিছিল করে। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সমিতি ভনের মিলনায়তনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিএনপি-সমর্থিত প্যানেল থেকে মনোনীত সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুসের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত উপকমিটির একজন সদস্যের কথা-কাটাকাটি চলছিল। অন্যদিকে উপকমিটির পক্ষ থেকে বারবার প্রার্থীদের নির্ধারিত জায়গায় যেতে বলা হচ্ছিল। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা ‘ইয়েস, ইয়েস’ বলে রব তোলেন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত এক আইনজীবীর সঙ্গে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির। তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্যানেল থেকে এবারের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী।

জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে মূলত গত সোমবার থেকে উত্তেজনা শুরু হয়। এর আগে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এই প্রেক্ষাপটে ভোট হবে কি না, কে আহ্বায়ক হবেন, নাকি উপকমিটির অন্য সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন- এ নিয়ে গত মঙ্গলবার দিনভর আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলে। ওইদিন সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ১০ সাংবাদিক। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এটিএন নিউজের সাংবাদিক জাবেদ আক্তারের অবস্থা গুরুতর। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যরা হলেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস, জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফজলুল হক, আজকের পত্রিকার নূর মোহাম্মদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জান্নাতুল ফেরদৌস, বৈশাখী টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরা পারসন হুমায়ুন কবির, মানবজমিনের আবদুল্লাহ আল মারুফ।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সাংবাদিক জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত অডিটোরিয়ামে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তাদের অডিটোরিয়াম থেকে বের করে দেয়ার জন্য সেখানে প্রবেশ করেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। তারা সেখানে ঢুকেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ওপর লাঠিচার্জ করেন। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিচ্ছিলেন সাংবাদিকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অতর্কিতভাবে সাংবাদিকদের মারধর ও লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ ও মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। গতকাল প্রধান বিচারপতির দপ্তরে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতির নেতৃত্বে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল অভিযোগ জানালে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। দায়িত্ব পালনের সময় সবার সতর্ক হওয়া উচিত।’ এ সময় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩ , ০২ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন

দুই দলের হট্টগোল, ধাক্কাধাক্কি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

নির্বাচনকে ঘিরে অশান্ত আদালত প্রাঙ্গণ, দু’দলের সংঘাত -সংবাদ

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে ব্যাপক হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গতকাল সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। এদিন নির্ধারিত সময় সকাল দশটায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের হট্টগোল। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর তথা বেলা ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত উপকমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোট শুরু হয়। এ নিয়ে দিনভর সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে উত্তেজনা বিরাজ করে। বিকেল তিনটার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। এরপর সাড়ে তিনটার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সমিতি প্রাঙ্গণে থাকা ভোটের প্যান্ডেলের দিকে আসে। এরপর এক পর্যায়ে প্যান্ডেল ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর পরই আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা স্লোগানসহ পাল্টা মিছিল করে। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সমিতি ভনের মিলনায়তনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিএনপি-সমর্থিত প্যানেল থেকে মনোনীত সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুসের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত উপকমিটির একজন সদস্যের কথা-কাটাকাটি চলছিল। অন্যদিকে উপকমিটির পক্ষ থেকে বারবার প্রার্থীদের নির্ধারিত জায়গায় যেতে বলা হচ্ছিল। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা ‘ইয়েস, ইয়েস’ বলে রব তোলেন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত এক আইনজীবীর সঙ্গে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির। তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্যানেল থেকে এবারের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী।

জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে মূলত গত সোমবার থেকে উত্তেজনা শুরু হয়। এর আগে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এই প্রেক্ষাপটে ভোট হবে কি না, কে আহ্বায়ক হবেন, নাকি উপকমিটির অন্য সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন- এ নিয়ে গত মঙ্গলবার দিনভর আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলে। ওইদিন সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ১০ সাংবাদিক। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এটিএন নিউজের সাংবাদিক জাবেদ আক্তারের অবস্থা গুরুতর। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যরা হলেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস, জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফজলুল হক, আজকের পত্রিকার নূর মোহাম্মদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জান্নাতুল ফেরদৌস, বৈশাখী টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরা পারসন হুমায়ুন কবির, মানবজমিনের আবদুল্লাহ আল মারুফ।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সাংবাদিক জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত অডিটোরিয়ামে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তাদের অডিটোরিয়াম থেকে বের করে দেয়ার জন্য সেখানে প্রবেশ করেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। তারা সেখানে ঢুকেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ওপর লাঠিচার্জ করেন। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিচ্ছিলেন সাংবাদিকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অতর্কিতভাবে সাংবাদিকদের মারধর ও লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ ও মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। গতকাল প্রধান বিচারপতির দপ্তরে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতির নেতৃত্বে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল অভিযোগ জানালে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। দায়িত্ব পালনের সময় সবার সতর্ক হওয়া উচিত।’ এ সময় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।