বর্ধিত গৃহকর প্রত্যাহারের দাবিতে নগর ভবন ঘেরাও

করদাতা সুরক্ষা পরিষদ চট্টগ্রাম নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল গতকাল বুধবার সকাল থেকে। বর্ধিত গৃহকর প্রত্যাহারের দাবিতে এ কর্মসূচির আগেই সকাল ৯টার দিকে নগর ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে ৯টার পরে আসা কেউ নগর ভবনে ঢুকতে পারেনি। এতে বিপাকে পড়েছে সিটি করপোরেশনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

জানা গেছে, গতকাল সকাল নয়টায় নগর ভবনের ফটকে তালা দেন সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ। ফলে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নগর ভবনে ঢুকতে পারেননি। কর্মচারীরা টাইগারপাস সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে সাড়ে ১০টার দিকে ফটক খুলে দেয়া হয়।

তবে বাড়তি গৃহকর আদায় বাতিলের দাবিতে এই ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ‘করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। তবে নগর ভবন অভিমুখে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় তারা নগর ভবনের অন্তত এক কিলোমিটার দূরে সড়কে অবস্থান নেয়। পরে পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল নগর ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেন। তবে এ সময় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নিজ কার্যালয়ে থাকলেও আন্দোলনকারীদের দেখা দেননি।

এ কর্মসূচি চলাকালে মেয়রপন্থি সরকারি দলের কিছু নেতাকর্মী আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় চড়াও হন। পুলিশের কঠোর ভূমিকার কারণে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ পাহারা দিয়ে পরিষদের নেতাদের নগর ভবনে নিয়ে যান এবং স্মারকলিপি দেয়ার পর তাদের আবারও সড়কে পৌঁছে দেন।

জানা গেছে, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়ন করে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নামেন সাবেক মেয়র (বর্তমানে প্রয়াত) এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে কর আদায় স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় চসিক। এর ভিত্তিতে ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। তখন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, গণহারে গৃহকর বাড়ানো হবে না, শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে।

কিন্তু পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু হলে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে পাঁচ বছর পর গত বছরের মাঝামাঝি থেকে একই দাবিতে আন্দোলনে নামে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’।

সংগঠনটির সভা-সমাবেশ, গণশুনানিসহ বেশকিছু কর্মসূচি পালনের পর গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ঘেরাও কমসূচি ঘোষণা করে। এর বিরোধিতা করে গত মঙ্গলবার ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে মেয়রপন্থি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করেন।

ঘেরাও কর্মসূচির দিনে গতকাল সকাল থেকে নগরীর বাটালি হিল সংলগ্ন এলাকায় চসিক মেয়রের অস্থায়ী কার্যালয় নগর ভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সকাল ৯টায় তালা লাগিয়ে দেয়ায় করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে কর্মস্থলে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষও দুর্ভোগে পড়েন।

তবে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচির কারণে ফটক বন্ধ করা হয়নি জানিয়ে সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, সকাল ৯টায় অফিসে প্রবেশের সময়সীমা মানতে বাধ্য করতেই ফটক বন্ধ করা হয়েছে। এখন থেকে এ নিয়ম কার্যকর থাকবে।

এদিকে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতাকর্মীরা নগরীর ৪১ ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে গতকাল সকাল ১১টার দিকে কদমতলীর দস্তগীর মার্কেটের সামনে জড়ো হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর তারা মিছিল নিয়ে দেওয়ানহাট হয়ে নগর ভবনের দিকে এগোতে থাকেন। মিছিল টাইগারপাস এলাকায় পৌঁছার পর একদল লোক ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে তাদের ওপর চড়াও হন। সেখানে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। একপর্যায়ে পুলিশ উভয়পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের আর মিছিল নিয়ে এগোতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানালে তারা সেখানেই অবস্থান নেয়। তারা পুলিশ এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র ও গৃহকরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে মেয়রের পক্ষে আসা লোকজন পরিষদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির দোসর বলে অভিযুক্ত করেন।

সেখানে জমায়েতের উদ্দেশে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল আবছার বলেন, আমরা পুলিশকে বলেছি, আমরা ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন করছি। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা আমরা করব না। এরপরও পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছে, এটা অপ্রত্যাশিত। আমরা অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে এবং প্রশাসনের প্রতি সম্মান জানিয়ে এখানেই (সড়ক) অবস্থান করব। এখান থেকে ৪-৫ জন গিয়ে স্মারকলিপি দেব।

পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি বলেন- মেয়র, আপনি ভয় পেয়েছেন। ভীত হয়ে আমাদের আটকে দিয়েছেন। আপনি পুলিশকে অনুমতি দিয়ে আমাদের যেতে দিতে পারতেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। কিন্তু আপনি সেটা করছেন না। আপনি ৭০ লাখ নগরবাসীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

পরিষদের আরেক সংগঠক মুজিবুল হক বলেন, ৭০ লাখ মানুষকে সেবা দেয়ার বদলে মেয়র চেয়ারে বসে তাদের গলা কাটছেন। তিনি যে গৃহকর নির্ধারণ করেছেন তাতে ৫ হাজার টাকার ঘরভাড়া ১০ হাজার টাকা হয়ে যাবে। দ্বিগুণ ঘরভাড়া ভাড়াটিয়ারা কিভাবে দেবে, তারা এই শহরে থাকতে পারবে? মেয়র সাহেব আমাদের ঘরভাড়া বন্ধ করে মারার চেষ্টা করছেন। আমরা ঘরে বসে মরবো না, পিচঢালা রাজপথে রক্ত দিয়ে মরবো।

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র কাজী শহীদুল হক বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স একবার বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার বলছে আপিলে আস, কমিয়ে দিচ্ছি। আপিলে গেলে ঘুষ নিয়ে কিছু কমিয়ে দিচ্ছে। এভাবে ২০০ কোটি টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। এসব লুটেরাদের হাত থেকে ৭০ লাখ নগরবাসীকে বাঁচাতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি।

সেখানে উপস্থিত নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বলেন, উনারা (পরিষদ) মিছিল নিয়ে দেওয়ানহাট হয়ে টাইগারপাসের দিকে আসেন। সেখানে আবার আরেকটা গ্রুপ ছিল। আমরা উভয় গ্রুপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম মিছিল নিয়ে আর সামনে না যায়। তারা অনুরোধ শুনেছেন। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা হয়নি।

এরপর নুরুল আবছার ও জান্নাতুল ফেরদৌস পপির নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদল পুলিশ বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে নগর ভবনে রওনা দেন। টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত মূল সড়ক থেকে নগর ভবনের দিকে যাওয়ার সড়কে প্রবেশের পথে আবার মেয়রপন্থি প্রায় অর্ধশত লোক তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে তাদের নগর ভবনে ঢুকতে না দেয়ার হুমকি দেন। তবে পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিয়ে নগর ভবনে নিয়ে যান। তারা মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি দিতে চাইলেও অনুমতি দেয়া হয়নি। পরে তারা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলামের কক্ষে যান। সেখানে মেয়রের একান্ত সহকারী মো. আবুল হাশেম তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান।

image

চট্টগ্রাম : অতিরিক্ত ট্যাক্স বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল টাইগারপাস এলাকায় বাধার মুখে -সংবাদ

আরও খবর
যুব সমাজকে নার্সিং শিক্ষা ও সেবায় নিয়োজিত থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি চান শিক্ষামন্ত্রী
দেড় মাস অসুস্থ থাকার পর অবশেষে মারা গেল সেই বাঘিনী
ভোট চুরির মহারাজা বিএনপি : কাদের
এবার সুপ্রিম কোর্টেও ভোট চুরি করছে সরকার : ফখরুল
স্ত্রীসহ পুলিশ সদস্য ও ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল
চট্টগ্রামে এসএ গ্রুপের এমডি ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
১১৬১ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলায় জামিন চাইলেন বিমানের ২১ কর্মকর্তা
বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষ পানির অধিকার চায়

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩ , ০২ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

বর্ধিত গৃহকর প্রত্যাহারের দাবিতে নগর ভবন ঘেরাও

চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

চট্টগ্রাম : অতিরিক্ত ট্যাক্স বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল টাইগারপাস এলাকায় বাধার মুখে -সংবাদ

করদাতা সুরক্ষা পরিষদ চট্টগ্রাম নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল গতকাল বুধবার সকাল থেকে। বর্ধিত গৃহকর প্রত্যাহারের দাবিতে এ কর্মসূচির আগেই সকাল ৯টার দিকে নগর ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে ৯টার পরে আসা কেউ নগর ভবনে ঢুকতে পারেনি। এতে বিপাকে পড়েছে সিটি করপোরেশনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

জানা গেছে, গতকাল সকাল নয়টায় নগর ভবনের ফটকে তালা দেন সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ। ফলে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নগর ভবনে ঢুকতে পারেননি। কর্মচারীরা টাইগারপাস সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে সাড়ে ১০টার দিকে ফটক খুলে দেয়া হয়।

তবে বাড়তি গৃহকর আদায় বাতিলের দাবিতে এই ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ‘করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। তবে নগর ভবন অভিমুখে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় তারা নগর ভবনের অন্তত এক কিলোমিটার দূরে সড়কে অবস্থান নেয়। পরে পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল নগর ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেন। তবে এ সময় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নিজ কার্যালয়ে থাকলেও আন্দোলনকারীদের দেখা দেননি।

এ কর্মসূচি চলাকালে মেয়রপন্থি সরকারি দলের কিছু নেতাকর্মী আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় চড়াও হন। পুলিশের কঠোর ভূমিকার কারণে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ পাহারা দিয়ে পরিষদের নেতাদের নগর ভবনে নিয়ে যান এবং স্মারকলিপি দেয়ার পর তাদের আবারও সড়কে পৌঁছে দেন।

জানা গেছে, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়ন করে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নামেন সাবেক মেয়র (বর্তমানে প্রয়াত) এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে কর আদায় স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় চসিক। এর ভিত্তিতে ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। তখন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, গণহারে গৃহকর বাড়ানো হবে না, শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে।

কিন্তু পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু হলে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে পাঁচ বছর পর গত বছরের মাঝামাঝি থেকে একই দাবিতে আন্দোলনে নামে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’।

সংগঠনটির সভা-সমাবেশ, গণশুনানিসহ বেশকিছু কর্মসূচি পালনের পর গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ঘেরাও কমসূচি ঘোষণা করে। এর বিরোধিতা করে গত মঙ্গলবার ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে মেয়রপন্থি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করেন।

ঘেরাও কর্মসূচির দিনে গতকাল সকাল থেকে নগরীর বাটালি হিল সংলগ্ন এলাকায় চসিক মেয়রের অস্থায়ী কার্যালয় নগর ভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সকাল ৯টায় তালা লাগিয়ে দেয়ায় করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে কর্মস্থলে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষও দুর্ভোগে পড়েন।

তবে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের কর্মসূচির কারণে ফটক বন্ধ করা হয়নি জানিয়ে সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, সকাল ৯টায় অফিসে প্রবেশের সময়সীমা মানতে বাধ্য করতেই ফটক বন্ধ করা হয়েছে। এখন থেকে এ নিয়ম কার্যকর থাকবে।

এদিকে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতাকর্মীরা নগরীর ৪১ ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে গতকাল সকাল ১১টার দিকে কদমতলীর দস্তগীর মার্কেটের সামনে জড়ো হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর তারা মিছিল নিয়ে দেওয়ানহাট হয়ে নগর ভবনের দিকে এগোতে থাকেন। মিছিল টাইগারপাস এলাকায় পৌঁছার পর একদল লোক ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে তাদের ওপর চড়াও হন। সেখানে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। একপর্যায়ে পুলিশ উভয়পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের আর মিছিল নিয়ে এগোতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানালে তারা সেখানেই অবস্থান নেয়। তারা পুলিশ এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র ও গৃহকরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে মেয়রের পক্ষে আসা লোকজন পরিষদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির দোসর বলে অভিযুক্ত করেন।

সেখানে জমায়েতের উদ্দেশে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল আবছার বলেন, আমরা পুলিশকে বলেছি, আমরা ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন করছি। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা আমরা করব না। এরপরও পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছে, এটা অপ্রত্যাশিত। আমরা অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে এবং প্রশাসনের প্রতি সম্মান জানিয়ে এখানেই (সড়ক) অবস্থান করব। এখান থেকে ৪-৫ জন গিয়ে স্মারকলিপি দেব।

পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি বলেন- মেয়র, আপনি ভয় পেয়েছেন। ভীত হয়ে আমাদের আটকে দিয়েছেন। আপনি পুলিশকে অনুমতি দিয়ে আমাদের যেতে দিতে পারতেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। কিন্তু আপনি সেটা করছেন না। আপনি ৭০ লাখ নগরবাসীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

পরিষদের আরেক সংগঠক মুজিবুল হক বলেন, ৭০ লাখ মানুষকে সেবা দেয়ার বদলে মেয়র চেয়ারে বসে তাদের গলা কাটছেন। তিনি যে গৃহকর নির্ধারণ করেছেন তাতে ৫ হাজার টাকার ঘরভাড়া ১০ হাজার টাকা হয়ে যাবে। দ্বিগুণ ঘরভাড়া ভাড়াটিয়ারা কিভাবে দেবে, তারা এই শহরে থাকতে পারবে? মেয়র সাহেব আমাদের ঘরভাড়া বন্ধ করে মারার চেষ্টা করছেন। আমরা ঘরে বসে মরবো না, পিচঢালা রাজপথে রক্ত দিয়ে মরবো।

করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র কাজী শহীদুল হক বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স একবার বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার বলছে আপিলে আস, কমিয়ে দিচ্ছি। আপিলে গেলে ঘুষ নিয়ে কিছু কমিয়ে দিচ্ছে। এভাবে ২০০ কোটি টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। এসব লুটেরাদের হাত থেকে ৭০ লাখ নগরবাসীকে বাঁচাতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি।

সেখানে উপস্থিত নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বলেন, উনারা (পরিষদ) মিছিল নিয়ে দেওয়ানহাট হয়ে টাইগারপাসের দিকে আসেন। সেখানে আবার আরেকটা গ্রুপ ছিল। আমরা উভয় গ্রুপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম মিছিল নিয়ে আর সামনে না যায়। তারা অনুরোধ শুনেছেন। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা হয়নি।

এরপর নুরুল আবছার ও জান্নাতুল ফেরদৌস পপির নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদল পুলিশ বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে নগর ভবনে রওনা দেন। টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত মূল সড়ক থেকে নগর ভবনের দিকে যাওয়ার সড়কে প্রবেশের পথে আবার মেয়রপন্থি প্রায় অর্ধশত লোক তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে তাদের নগর ভবনে ঢুকতে না দেয়ার হুমকি দেন। তবে পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিয়ে নগর ভবনে নিয়ে যান। তারা মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি দিতে চাইলেও অনুমতি দেয়া হয়নি। পরে তারা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলামের কক্ষে যান। সেখানে মেয়রের একান্ত সহকারী মো. আবুল হাশেম তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান।