স্ত্রীসহ পুলিশ সদস্য ও ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল

৯৮ ভরি স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় করা মামলায় পুলিশ কনস্টেবল মুন্সী মো. কামরুজ্জামান ওরফে লিংকন ও তার স্ত্রীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গতকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক অলোক কুমার দে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘৯৮ ভরি স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে পুলিশ কনস্টেবল কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রীসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কামরুজ্জামানের স্ত্রীর কাছ থেকে ৩৬ ভরি স্বর্ণসহ মোট ৫১ ভরি স্বর্ণ ও ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়, যা আদালতের মাধ্যমে বাদীর জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ সাক্ষীরা আদালতে প্রমাণ করবে।’

অভিযোগপত্রের অন্য অভিযুক্তরা হলেন পুলিশ কনস্টেবল কামরুজ্জামানের স্ত্রী নাহিদা নাহার মেমি, মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমন, উত্তম চন্দ্র মজুমদার, মো. শরীফুল ইসলাম, মো. জাকির হোসেন, মো. রহমান সরদার, আনন্দ পাল, মো. নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুল, উত্তম পাল ও দুলাল চন্দ্র পাল। তাদের মধ্যে আনন্দ পাল, উত্তম পাল ও দুলাল পাল পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া নাসির ও মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। তবে তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমন মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও ডাকাত দলের মূল হোতা। আসামি মুন্সী মো. কামরুজ্জামান, নাহিদা নাহার, মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমন, উত্তম চন্দ্র মজুমদার, মো. শরীফুল ইসলাম, মো. জাকির হোসেন, মো. রহমান সরদার, আনন্দ পাল, মো. নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুল, উত্তম পাল, দুলাল চন্দ্র পাল, নাসির ও মালেক আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমনের নেতৃত্বে অপরাপর অভিযুক্তরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরিধান করে সংঘবদ্ধভাবে চলমান যানবাহনে থাকা যাত্রীদের টার্গেট করেন। এরপর তাদের পথরোধ করে ডাকাতিসহ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে বেড়ায়। অভিযুক্ত জাকির ও উত্তম মজুমদার পরস্পর বন্ধু। তারা একত্রে বিভিন্ন ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে।

আরও উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী তার দোকানের কর্মচারী বরুন ঘোষকে দিয়ে ছয় মাস আগে থেকে বিভিন্ন সময় গলানো স্বর্ণ কারখানায় আনা-নেয়ার কাজ করে। ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জনি টাওয়ার-সংলগ্ন সাজেদা হাসপাতালের গলি রাস্তায় গেলে দুজন সিভিল ও দুজন মহানগর পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় তার সামনে আসে। তখন তারা বরুনকে বলে, তার কাছে অবৈধ মাদকদ্রব্য আছে। অভিযুক্তরা বরুনকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলে তাকে কিলঘুসি মেরে আহত করে এবং তার প্যান্টের ভেতরে ডান কোমরে বাঁধা কালো কাপড়ে রাখা দোকানের ৯৮ ভরি স্বর্ণ ও তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা বরুনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। চিৎকার-চেঁচামেচি করলে জানে মেরে ফেলবে বলে তাকে হুমকি দেয়। অভিযুক্তরা বরুনকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রজেক্টের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পুলিশ কনস্টবল মুন্সী মো. কামরুজ্জামান ও অভিযুক্ত আনন্দ পালকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত উত্তম পালের বাসা থেকে ৯ ভরি আট আনা স্বর্ণ, অভিযুক্ত দুলাল পালের বাসা থেকে পাঁচ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণ জব্দ করা হয়। পরে অভিযুক্ত সুমনের কাছে লুণ্ঠিত স্বর্নালংকার বিক্রয়ের আট লাখ, উত্তম মজুমদারের কাছে থেকে চার লাখ টাকা ও মো. শরীফের কাছে থেকে স্বর্ণালংকার বিক্রির নগদ তিন লাখ টাকা জব্দ করা হয়। অভিযুক্ত মো. রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছে থেকে মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। কনস্টেবল কামরুজ্জামানের তথ্যমতে, অভিযুক্ত নাহিদা নাহারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে থেকে ৩৬ ভরি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। উদ্ধার হওয়া মোট ৫১ ভরি ৫ আনা স্বর্ণ এবং লুণ্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির নগদ ১৫ লাখ টাকা ভুক্তভোগীর জিম্মায় দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩ , ০২ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

৯৮ ভরি স্বর্ণ ডাকাতি

স্ত্রীসহ পুলিশ সদস্য ও ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল

আদালত বার্তা পরিবেশক

৯৮ ভরি স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় করা মামলায় পুলিশ কনস্টেবল মুন্সী মো. কামরুজ্জামান ওরফে লিংকন ও তার স্ত্রীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। গতকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক অলোক কুমার দে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘৯৮ ভরি স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে পুলিশ কনস্টেবল কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রীসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কামরুজ্জামানের স্ত্রীর কাছ থেকে ৩৬ ভরি স্বর্ণসহ মোট ৫১ ভরি স্বর্ণ ও ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়, যা আদালতের মাধ্যমে বাদীর জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ সাক্ষীরা আদালতে প্রমাণ করবে।’

অভিযোগপত্রের অন্য অভিযুক্তরা হলেন পুলিশ কনস্টেবল কামরুজ্জামানের স্ত্রী নাহিদা নাহার মেমি, মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমন, উত্তম চন্দ্র মজুমদার, মো. শরীফুল ইসলাম, মো. জাকির হোসেন, মো. রহমান সরদার, আনন্দ পাল, মো. নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুল, উত্তম পাল ও দুলাল চন্দ্র পাল। তাদের মধ্যে আনন্দ পাল, উত্তম পাল ও দুলাল পাল পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া নাসির ও মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। তবে তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমন মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও ডাকাত দলের মূল হোতা। আসামি মুন্সী মো. কামরুজ্জামান, নাহিদা নাহার, মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমন, উত্তম চন্দ্র মজুমদার, মো. শরীফুল ইসলাম, মো. জাকির হোসেন, মো. রহমান সরদার, আনন্দ পাল, মো. নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুল, উত্তম পাল, দুলাল চন্দ্র পাল, নাসির ও মালেক আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমনের নেতৃত্বে অপরাপর অভিযুক্তরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরিধান করে সংঘবদ্ধভাবে চলমান যানবাহনে থাকা যাত্রীদের টার্গেট করেন। এরপর তাদের পথরোধ করে ডাকাতিসহ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে বেড়ায়। অভিযুক্ত জাকির ও উত্তম মজুমদার পরস্পর বন্ধু। তারা একত্রে বিভিন্ন ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে।

আরও উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী তার দোকানের কর্মচারী বরুন ঘোষকে দিয়ে ছয় মাস আগে থেকে বিভিন্ন সময় গলানো স্বর্ণ কারখানায় আনা-নেয়ার কাজ করে। ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জনি টাওয়ার-সংলগ্ন সাজেদা হাসপাতালের গলি রাস্তায় গেলে দুজন সিভিল ও দুজন মহানগর পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় তার সামনে আসে। তখন তারা বরুনকে বলে, তার কাছে অবৈধ মাদকদ্রব্য আছে। অভিযুক্তরা বরুনকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গাড়িতে তুলে তাকে কিলঘুসি মেরে আহত করে এবং তার প্যান্টের ভেতরে ডান কোমরে বাঁধা কালো কাপড়ে রাখা দোকানের ৯৮ ভরি স্বর্ণ ও তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা বরুনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। চিৎকার-চেঁচামেচি করলে জানে মেরে ফেলবে বলে তাকে হুমকি দেয়। অভিযুক্তরা বরুনকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রজেক্টের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পুলিশ কনস্টবল মুন্সী মো. কামরুজ্জামান ও অভিযুক্ত আনন্দ পালকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত উত্তম পালের বাসা থেকে ৯ ভরি আট আনা স্বর্ণ, অভিযুক্ত দুলাল পালের বাসা থেকে পাঁচ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণ জব্দ করা হয়। পরে অভিযুক্ত সুমনের কাছে লুণ্ঠিত স্বর্নালংকার বিক্রয়ের আট লাখ, উত্তম মজুমদারের কাছে থেকে চার লাখ টাকা ও মো. শরীফের কাছে থেকে স্বর্ণালংকার বিক্রির নগদ তিন লাখ টাকা জব্দ করা হয়। অভিযুক্ত মো. রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছে থেকে মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। কনস্টেবল কামরুজ্জামানের তথ্যমতে, অভিযুক্ত নাহিদা নাহারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে থেকে ৩৬ ভরি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। উদ্ধার হওয়া মোট ৫১ ভরি ৫ আনা স্বর্ণ এবং লুণ্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির নগদ ১৫ লাখ টাকা ভুক্তভোগীর জিম্মায় দেয়া হয়।