বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষ পানির অধিকার চায়

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালীপাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে- বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিপ্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলটি খরাপ্রবণ এলাকা। এলাকাটি দেশের অন্যান্য এলাকার থেকে ভৌগোলিকভাবে আলাদা বৈশিষ্ট বহন করে। বৈশ্বিক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতসহ পানি সমস্যা। সেই প্রাকৃতিক উৎসগুলো দিনে দিনে দখল আর নষ্ট হওয়াসহ প্রভাবশালীদের লিজ নেয়ার কারণ সেখানের প্রান্তিক মানুষ আর আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। একসময় গ্রাম ও শহরের প্রান্তিক মানুষগুলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি ব্যবহার করত। কিন্তু পানির অধিকার নিশ্চত করতে পারছে না।

অন্যদিকে উন্নয়নের ভুল পদক্ষেপের কারণে এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্মকভাবে নিচে নেমে গেছে। যার ফলে রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পানির উৎস পাতকুয়া, কুয়া, সেবার নামে আর্থিক মূল্যে পানি বিক্রি করছে এখন। গ্রামগুলোতে খাবার পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয়তা চাহিদা মাফিক পানির অভাব পুকুর, দীঘি, জলাশয়, টিউবওয়েল, নলকূপগুলোতে আর পানি পাওয়াা যায় না।

আবার বার বার ধরনা দিয়েও অনেক সময় পানির অধিকার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তেমন একটি গ্রাম তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালীপাড়া। এখানে দীর্ঘযুগ ধরে প্রায় তিন শতাধিক আদিবাসী মাহালী সম্প্রদায়ের বসবাস। বাঁশ বেতের কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন।

কিন্তু এই গ্রামে খাবার পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির কোন উৎস না থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জনগোষ্ঠীকে। অনেক দূর থেকে পানি কিনে এনে খেতে হয়। অভাবের সংসারে পানি কিনে এনে খাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া অনেক দূর থেকে পানি আনতে নারীদের নানা শারীরিক সমস্যাসহ অনেক সময় নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়। স্থানীয় পুকুর জলাশয়গুলো প্রভাবশালীরা লিজ নিয়ে তাতে রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মাছ চাষ করে এবং সেসব পুকুর থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এরকম ঘটনা বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামগুলোতেই কম-বেশি দেখা যায়।

মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালীপাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-

তানোর উপজেলার মন্ডুমালার আদিবাসী মাহালীপাড়ায় দ্রুত পর্যাপ্ত ডিপ টিউবওয়েল-সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করে খাবার পানির সমস্যা সমাধান করে দিতে হবে। জেলা তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুর-দীঘি এবং চলমান জলাভূমি লিজ প্রথা সংশোধন করে সত্যিকার স্থানীয় প্রান্তিক মানুষের ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। গ্রামের ভেতরে বা কাছাকাছি পুকুরগুলো গ্রামবাসীর নামে-কমিউনিটির নামে বিনাশর্তে লিজ দিতে হবে, যাতে কমিউনিটির মানুষগুলো এটি ব্যবহার করতে পারে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের সব পুকুর-দীঘিগুলো সংস্কার করে দিতে হবে। যাতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারসহ কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়। অতএব আপনার প্রতি আমাদের আবেদন উক্ত দাবিগুলো পূরণে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

এ সময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান, মাহালীপাড়া বাঁশ-বেত উন্নয়ন সংগঠনের চিচিলিয়া হেমব্রোম, বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩ , ০২ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষ পানির অধিকার চায়

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

image

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালীপাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে- বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিপ্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলটি খরাপ্রবণ এলাকা। এলাকাটি দেশের অন্যান্য এলাকার থেকে ভৌগোলিকভাবে আলাদা বৈশিষ্ট বহন করে। বৈশ্বিক জলবায়ুর আঞ্চলিক অভিঘাতসহ পানি সমস্যা। সেই প্রাকৃতিক উৎসগুলো দিনে দিনে দখল আর নষ্ট হওয়াসহ প্রভাবশালীদের লিজ নেয়ার কারণ সেখানের প্রান্তিক মানুষ আর আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। একসময় গ্রাম ও শহরের প্রান্তিক মানুষগুলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি ব্যবহার করত। কিন্তু পানির অধিকার নিশ্চত করতে পারছে না।

অন্যদিকে উন্নয়নের ভুল পদক্ষেপের কারণে এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মারাত্মকভাবে নিচে নেমে গেছে। যার ফলে রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পানির উৎস পাতকুয়া, কুয়া, সেবার নামে আর্থিক মূল্যে পানি বিক্রি করছে এখন। গ্রামগুলোতে খাবার পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয়তা চাহিদা মাফিক পানির অভাব পুকুর, দীঘি, জলাশয়, টিউবওয়েল, নলকূপগুলোতে আর পানি পাওয়াা যায় না।

আবার বার বার ধরনা দিয়েও অনেক সময় পানির অধিকার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তেমন একটি গ্রাম তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালীপাড়া। এখানে দীর্ঘযুগ ধরে প্রায় তিন শতাধিক আদিবাসী মাহালী সম্প্রদায়ের বসবাস। বাঁশ বেতের কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন।

কিন্তু এই গ্রামে খাবার পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির কোন উৎস না থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জনগোষ্ঠীকে। অনেক দূর থেকে পানি কিনে এনে খেতে হয়। অভাবের সংসারে পানি কিনে এনে খাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া অনেক দূর থেকে পানি আনতে নারীদের নানা শারীরিক সমস্যাসহ অনেক সময় নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়। স্থানীয় পুকুর জলাশয়গুলো প্রভাবশালীরা লিজ নিয়ে তাতে রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মাছ চাষ করে এবং সেসব পুকুর থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এরকম ঘটনা বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামগুলোতেই কম-বেশি দেখা যায়।

মন্ডুমালা পৌরসভার আদিবাসী মাহালীপাড়াসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের পানির অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-

তানোর উপজেলার মন্ডুমালার আদিবাসী মাহালীপাড়ায় দ্রুত পর্যাপ্ত ডিপ টিউবওয়েল-সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করে খাবার পানির সমস্যা সমাধান করে দিতে হবে। জেলা তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুর-দীঘি এবং চলমান জলাভূমি লিজ প্রথা সংশোধন করে সত্যিকার স্থানীয় প্রান্তিক মানুষের ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। গ্রামের ভেতরে বা কাছাকাছি পুকুরগুলো গ্রামবাসীর নামে-কমিউনিটির নামে বিনাশর্তে লিজ দিতে হবে, যাতে কমিউনিটির মানুষগুলো এটি ব্যবহার করতে পারে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের সব পুকুর-দীঘিগুলো সংস্কার করে দিতে হবে। যাতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারসহ কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়। অতএব আপনার প্রতি আমাদের আবেদন উক্ত দাবিগুলো পূরণে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

এ সময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান, মাহালীপাড়া বাঁশ-বেত উন্নয়ন সংগঠনের চিচিলিয়া হেমব্রোম, বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।