যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়ন সম্ভব

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়ন সম্ভব।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস যৌথভাবে আয়োজিত ‘ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য স্থানীয় মুদ্রায় করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে এ দেশে একক কিংবা যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। তিনি জানান, দুই দেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে যমুনা রেল সেতু স্থাপনসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, যা সম্পন্ন হলে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে প্রভৃত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে সহজতর করবে। তিনি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পাশাপাশি অন্য প্রদেশে বিনিয়োগ ও পণ্য রপ্তানিতে মনোযোগী হওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ হতে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আরোপিত এন্টি-ডাম্পিং ডিউটির ফলে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, যা নিরসনে ভারত সরকারকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া আরও সহজীকরণের ওপর জোররোপ করেন ড. মসিউর রহমান।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ২০২২ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং শুল্ক বহির্ভূত যোগাযোগ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় উন্নয়নের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। তিনি বলেন, ২০২১ সালে বিশ^ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করো হয়েছে, দেশ দুটোর যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় আয় যথাক্রমে ১৭% ও ৮% বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, দুটো দেশের রয়েছে পৃথিবীর ৫ম বৃহত্তম সীমান্ত, এমতাবস্থায় সীমান্ত এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যারিস্টার সাত্তার বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের যোগাযোগের উন্নয়নে দুই দেশের আঞ্চলিক বাজার ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ইতোমধ্যে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশের বিনিয়োগ সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে এগ্রো-প্রসেসিং, টেক্সটাইল, অটোমোবাইল, তথ্য-প্রযুক্তি ও সেবা প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

সেমিনারে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি জানান, গত এক দশকে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এবং প্রস্তাবিত ‘সেপা’ চুক্তির বাস্তাবয়ন হলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় আরো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে। হাইকমিশনার বলেন, ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাসকল্পে আধুনিক সড়ক, রেল ও নদী পথের যোগাযোগ এবং অবকাঠামো খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং বর্তমানে ৭টি ‘ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন’ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে, যা সম্পন্ন হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সহজতর হবে। তিনি জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৭টি স্থানে ‘বর্ডার-হাট’ পরিচালনার মাধ্যম স্থানীয় উদ্যোক্তারা সহজেই পণ্য রপ্তানিতে সক্ষম হয়েছেন এবং সামনের দিনগুলোতে বর্ডার হাট কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অন্য দেশে পণ্য রপ্তানিতে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। সেমিনারে বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তারা বলেন, দুই দেশের মোট বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ হয়ে থাকে স্থলবন্দরের মাধ্যমে এবং এক্ষেত্রে বেনাপল-পেট্রোপল বন্দরের ব্যবহারের হার প্রায় ৭০%।

মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, গত ৫ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত ৩ বছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এছাড়া বাংলাদেশের রেলওয়ে খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারত সরকার বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার সুফল শীঘ্রই কাজে আসবে। সেইসঙ্গে বলা হয়, প্রস্তাবিত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ পাইপলাইন’ এর কার্যক্রম চালু হলে প্রতিবছর প্রায় ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন ডিজেল পরিবহন সক্ষম হবে, যেটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩ , ০৩ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়ন সম্ভব

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়ন সম্ভব।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস যৌথভাবে আয়োজিত ‘ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য স্থানীয় মুদ্রায় করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে এ দেশে একক কিংবা যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। তিনি জানান, দুই দেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে যমুনা রেল সেতু স্থাপনসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, যা সম্পন্ন হলে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে প্রভৃত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে সহজতর করবে। তিনি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পাশাপাশি অন্য প্রদেশে বিনিয়োগ ও পণ্য রপ্তানিতে মনোযোগী হওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ হতে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আরোপিত এন্টি-ডাম্পিং ডিউটির ফলে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, যা নিরসনে ভারত সরকারকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া আরও সহজীকরণের ওপর জোররোপ করেন ড. মসিউর রহমান।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ২০২২ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং শুল্ক বহির্ভূত যোগাযোগ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় উন্নয়নের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। তিনি বলেন, ২০২১ সালে বিশ^ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করো হয়েছে, দেশ দুটোর যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় আয় যথাক্রমে ১৭% ও ৮% বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, দুটো দেশের রয়েছে পৃথিবীর ৫ম বৃহত্তম সীমান্ত, এমতাবস্থায় সীমান্ত এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যারিস্টার সাত্তার বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের যোগাযোগের উন্নয়নে দুই দেশের আঞ্চলিক বাজার ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ইতোমধ্যে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশের বিনিয়োগ সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে এগ্রো-প্রসেসিং, টেক্সটাইল, অটোমোবাইল, তথ্য-প্রযুক্তি ও সেবা প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

সেমিনারে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি জানান, গত এক দশকে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এবং প্রস্তাবিত ‘সেপা’ চুক্তির বাস্তাবয়ন হলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় আরো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে। হাইকমিশনার বলেন, ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাসকল্পে আধুনিক সড়ক, রেল ও নদী পথের যোগাযোগ এবং অবকাঠামো খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং বর্তমানে ৭টি ‘ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন’ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে, যা সম্পন্ন হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সহজতর হবে। তিনি জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৭টি স্থানে ‘বর্ডার-হাট’ পরিচালনার মাধ্যম স্থানীয় উদ্যোক্তারা সহজেই পণ্য রপ্তানিতে সক্ষম হয়েছেন এবং সামনের দিনগুলোতে বর্ডার হাট কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অন্য দেশে পণ্য রপ্তানিতে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। সেমিনারে বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তারা বলেন, দুই দেশের মোট বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ হয়ে থাকে স্থলবন্দরের মাধ্যমে এবং এক্ষেত্রে বেনাপল-পেট্রোপল বন্দরের ব্যবহারের হার প্রায় ৭০%।

মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, গত ৫ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত ৩ বছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এছাড়া বাংলাদেশের রেলওয়ে খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারত সরকার বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার সুফল শীঘ্রই কাজে আসবে। সেইসঙ্গে বলা হয়, প্রস্তাবিত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ পাইপলাইন’ এর কার্যক্রম চালু হলে প্রতিবছর প্রায় ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন ডিজেল পরিবহন সক্ষম হবে, যেটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।