বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ব্যাংক খাতে ২৯ হাজার ২৭৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। ২০২১ সালে পুনঃতফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৩৭৯ কোটি ২৬ টাকা। ঋণ পুনঃতফসিল করার পরিমাণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা বা ১৩৭ শতাংশ।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। আবার অনিয়মে কেলেঙ্কারি ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আঁতাত করে নেয়া ঋণ ফেরত দিচ্ছে না। এছাড়া খেলাপিরা একের পর এক ছাড় পাচ্ছেন, এ কারণে অনেকে এখন ঋণ দিচ্ছেন না। ফলে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। আদায়ে কঠোর না হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তার সুযোগে ঋণ নিয়মিত দেখানোর পথ পেয়ে যাচ্ছেন খেলাপিরা। কাগজে-কলমে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে পুনঃতফসিলে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আঁতাত করে নেয়া ঋণ ফেরত দিচ্ছে না। আবার অনেকে ছাড়ের আশায় ইচ্ছা করে ঋণ শোধ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে আদায়ে কঠোর না হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সহায়তা দিচ্ছে। এ সুযোগে ঋণ নিয়মিত দেখানোর পথ পেয়ে যাচ্ছেন খেলাপিরা। কখনো বিশেষ ব্যবস্থায় পুনঃতফসিল, কখনো পুনর্গঠনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের আসল তথ্য থেকে যাচ্ছে আড়ালে। এসব কারণে খেলাপি সঙ্গে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বাড়ছে। সুবিধা পাওয়া এসব ঋণের অর্থ আগামীতে ফেরত পাবে কি-না এ নিয়ে সন্দেহ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৮ জুলাই পুনঃতফসিল নীতিমালায় শিথিলতা আনার পরই গত বছরের শেষ ছয় মাসে অস্বাভাবিক চিত্র দেখা যায়। ২০২২ সালের (জানুয়ারি-জুন) এ ছয় মাসে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয় পাঁচ হাজার ৯৬০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর শেষ ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) সময় ২৩ হাজার ৩১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পুনঃতফসিল করা হয়। ২০২১ সালের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এর পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, শিথিলতার আগে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে হলে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। এখন তা আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ জমা দিলেই করা যাচ্ছে। আগে এসব ঋণ পরিশোধের সময় ছিল সর্বোচ্চ দুই বছর। এখন ৫ থেকে ৮ বছর সময় পাচ্ছে। এছাড়া আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগতো। এখন সেই ক্ষমতা পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তাই বোর্ড গ্রাহককে ইচ্ছে মতো সুবিধা দিয়ে পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়েছে। এজন্য ব্যাংক খাতে অস্বাভাবিকভাবে পুনঃতফসিল করা ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া গত বছরের শেষ প্রান্তিকের চিত্রটি আরও অস্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের শেষ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তিন মাসে পুনঃতফসিল করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। যা আগের প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ছিল ৫ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের শেষে প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। এতেই বুঝা যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিলতার পর অস্বাভাবিকভাবে পুনঃতফসিলকৃত ঋণ বেড়ে চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খেলাপিরা দেখছেন ঋণ শোধ না করলে বেশি ছাড় পাওয়া যায়। এজন্য এখন একটি শ্রেণী ঋণ পরিশোধ না করে সুবিধা নেয়ার আশায় বসে থাকেন।

শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩ , ০৩ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ব্যাংক খাতে ২৯ হাজার ২৭৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। ২০২১ সালে পুনঃতফসিল করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৩৭৯ কোটি ২৬ টাকা। ঋণ পুনঃতফসিল করার পরিমাণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা বা ১৩৭ শতাংশ।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। আবার অনিয়মে কেলেঙ্কারি ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আঁতাত করে নেয়া ঋণ ফেরত দিচ্ছে না। এছাড়া খেলাপিরা একের পর এক ছাড় পাচ্ছেন, এ কারণে অনেকে এখন ঋণ দিচ্ছেন না। ফলে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। আদায়ে কঠোর না হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তার সুযোগে ঋণ নিয়মিত দেখানোর পথ পেয়ে যাচ্ছেন খেলাপিরা। কাগজে-কলমে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে পুনঃতফসিলে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আঁতাত করে নেয়া ঋণ ফেরত দিচ্ছে না। আবার অনেকে ছাড়ের আশায় ইচ্ছা করে ঋণ শোধ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে আদায়ে কঠোর না হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সহায়তা দিচ্ছে। এ সুযোগে ঋণ নিয়মিত দেখানোর পথ পেয়ে যাচ্ছেন খেলাপিরা। কখনো বিশেষ ব্যবস্থায় পুনঃতফসিল, কখনো পুনর্গঠনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের আসল তথ্য থেকে যাচ্ছে আড়ালে। এসব কারণে খেলাপি সঙ্গে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বাড়ছে। সুবিধা পাওয়া এসব ঋণের অর্থ আগামীতে ফেরত পাবে কি-না এ নিয়ে সন্দেহ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৮ জুলাই পুনঃতফসিল নীতিমালায় শিথিলতা আনার পরই গত বছরের শেষ ছয় মাসে অস্বাভাবিক চিত্র দেখা যায়। ২০২২ সালের (জানুয়ারি-জুন) এ ছয় মাসে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয় পাঁচ হাজার ৯৬০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর শেষ ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) সময় ২৩ হাজার ৩১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পুনঃতফসিল করা হয়। ২০২১ সালের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এর পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, শিথিলতার আগে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে হলে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। এখন তা আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ জমা দিলেই করা যাচ্ছে। আগে এসব ঋণ পরিশোধের সময় ছিল সর্বোচ্চ দুই বছর। এখন ৫ থেকে ৮ বছর সময় পাচ্ছে। এছাড়া আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগতো। এখন সেই ক্ষমতা পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তাই বোর্ড গ্রাহককে ইচ্ছে মতো সুবিধা দিয়ে পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়েছে। এজন্য ব্যাংক খাতে অস্বাভাবিকভাবে পুনঃতফসিল করা ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া গত বছরের শেষ প্রান্তিকের চিত্রটি আরও অস্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের শেষ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তিন মাসে পুনঃতফসিল করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। যা আগের প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ছিল ৫ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের শেষে প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। এতেই বুঝা যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিলতার পর অস্বাভাবিকভাবে পুনঃতফসিলকৃত ঋণ বেড়ে চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খেলাপিরা দেখছেন ঋণ শোধ না করলে বেশি ছাড় পাওয়া যায়। এজন্য এখন একটি শ্রেণী ঋণ পরিশোধ না করে সুবিধা নেয়ার আশায় বসে থাকেন।