খুলনার ডুমুরিয়ার তালতলা-বাগআচড়া নদী খননের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করেই যেনতেনভাবে করা হচ্ছে খননকাজ। ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ নদী খনন কাজের তদারকি করছে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয়দের অভিযোগ, খননে নকশা, এস্টিমেট ও অ্যালাইনমেন্ট সঠিকভাবে অনুসরণ হচ্ছে না। এতে ভদ্রা, ও সালতা নদীর মতো বছর না ঘুরতেই ভরাটের আশঙ্কা করছেন তারা। এলাকাবাসী জানান, তালতলা-বাগআচড়া নদীরবুকে অনেক স্থানে চাষাবাদ করেন কৃষকরা। ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার শিকার হন স্থানীয় মানুষ। কোটি কোটি টাকার ফসল ও সম্পদ নষ্ট হয়। ওই এলাকার অন্তত ১০ গ্রামের মানুষকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় তালতলা-বাগআচড়া নদীটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন, সেচ ও মাছের আধার তৈরিতে জাইকার অর্থায়নে ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার জুড়ে খনন করা হবে। ১১ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার টাকার এ কাজের কার্যাদেশ পায় এএসডিজিএল-এমকেই (জেভি) নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩০ জুলাই ২০২২ থেকে ২৫ জুন ২০২৪ পর্যন্ত।
সরেজমিন দেখা যায়, নদীটির উৎসমুখ পশ্চিমে সালতা নদী এবং পতিতমুখ গ্যাংরাইল নদীতে মিশেছে। নদীর সুন্দরবুনিয়া ব্রিজসংলগ্ন স্থানে খনন কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে এস্টিমেট অনুযায়ী মুখ চওড়া হবে ১৩৫ ফুট, তলদেশ চওড়া হবে ৫০ ফুট এবং গভীরতা হবে ২০ ফুট। তবে তা হয়নি। কোনো রকমে কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, খননে নক্সা, এস্টিমেট ও অ্যালাইনমন্টে সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। একপাশে চেপে মাঝ বরাবর খনন করে দুইপাড় উঁচু করা হচ্ছে। এছাড়া খনন করা মাটি রেকর্ডীয় জমিতে ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে ধানের খেত। আবার ভাটা মালিকদের কাছেও মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। সরেজমিন আরও দেখা যায়, নাব্য হারিয়ে নদীটি ভরাটের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে গড়ে তুলেছেন পাকাবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। নদীর পশ্চিমপাড় দখলকরে দুটি দোতলা ও ৪-৫টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেগুলো অক্ষত থাকলেও ভাঙা হয়েছে বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড গরিবদের উচ্ছেদ করে টাকাওয়ালা মানুষদের পুনর্বাসন করেছে। ভেঙে ফেলা কাঁচাঘরের মানুষরা এখন বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন।
তবে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ও প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসনাতুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে নদীপাড়ের কিছু দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকী দখলদারসহ ভবনগুলো অপসারণেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। নকশা, এস্টিমেট ও অ্যালাইনমন্ট সঠিকভাবে অনুসরণ করেই খননকাজ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক শামীম আহসান বলেন, খনন একেক জায়গায় একেক রকম ধরা রয়েছে। সেভাবে নিয়মমাফিকই করা হচ্ছে। খননের মাটিও দূরে ফেলা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
খুলনা : অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করেই যেনতেনভাবে করা হচ্ছে নদীর খননকাজ -সংবাদ
আরও খবরশুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩ , ০৩ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪
জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা
খুলনা : অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করেই যেনতেনভাবে করা হচ্ছে নদীর খননকাজ -সংবাদ
খুলনার ডুমুরিয়ার তালতলা-বাগআচড়া নদী খননের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করেই যেনতেনভাবে করা হচ্ছে খননকাজ। ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ নদী খনন কাজের তদারকি করছে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয়দের অভিযোগ, খননে নকশা, এস্টিমেট ও অ্যালাইনমেন্ট সঠিকভাবে অনুসরণ হচ্ছে না। এতে ভদ্রা, ও সালতা নদীর মতো বছর না ঘুরতেই ভরাটের আশঙ্কা করছেন তারা। এলাকাবাসী জানান, তালতলা-বাগআচড়া নদীরবুকে অনেক স্থানে চাষাবাদ করেন কৃষকরা। ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার শিকার হন স্থানীয় মানুষ। কোটি কোটি টাকার ফসল ও সম্পদ নষ্ট হয়। ওই এলাকার অন্তত ১০ গ্রামের মানুষকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় তালতলা-বাগআচড়া নদীটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন, সেচ ও মাছের আধার তৈরিতে জাইকার অর্থায়নে ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার জুড়ে খনন করা হবে। ১১ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার টাকার এ কাজের কার্যাদেশ পায় এএসডিজিএল-এমকেই (জেভি) নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩০ জুলাই ২০২২ থেকে ২৫ জুন ২০২৪ পর্যন্ত।
সরেজমিন দেখা যায়, নদীটির উৎসমুখ পশ্চিমে সালতা নদী এবং পতিতমুখ গ্যাংরাইল নদীতে মিশেছে। নদীর সুন্দরবুনিয়া ব্রিজসংলগ্ন স্থানে খনন কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে এস্টিমেট অনুযায়ী মুখ চওড়া হবে ১৩৫ ফুট, তলদেশ চওড়া হবে ৫০ ফুট এবং গভীরতা হবে ২০ ফুট। তবে তা হয়নি। কোনো রকমে কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, খননে নক্সা, এস্টিমেট ও অ্যালাইনমন্টে সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। একপাশে চেপে মাঝ বরাবর খনন করে দুইপাড় উঁচু করা হচ্ছে। এছাড়া খনন করা মাটি রেকর্ডীয় জমিতে ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে ধানের খেত। আবার ভাটা মালিকদের কাছেও মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। সরেজমিন আরও দেখা যায়, নাব্য হারিয়ে নদীটি ভরাটের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে গড়ে তুলেছেন পাকাবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। নদীর পশ্চিমপাড় দখলকরে দুটি দোতলা ও ৪-৫টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেগুলো অক্ষত থাকলেও ভাঙা হয়েছে বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড গরিবদের উচ্ছেদ করে টাকাওয়ালা মানুষদের পুনর্বাসন করেছে। ভেঙে ফেলা কাঁচাঘরের মানুষরা এখন বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন।
তবে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ও প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসনাতুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে নদীপাড়ের কিছু দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকী দখলদারসহ ভবনগুলো অপসারণেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। নকশা, এস্টিমেট ও অ্যালাইনমন্ট সঠিকভাবে অনুসরণ করেই খননকাজ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক শামীম আহসান বলেন, খনন একেক জায়গায় একেক রকম ধরা রয়েছে। সেভাবে নিয়মমাফিকই করা হচ্ছে। খননের মাটিও দূরে ফেলা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।