তিস্তায় পশ্চিমবঙ্গের ‘নতুন প্রকল্প’ দিল্লিকে চিঠি দেবে ঢাকা

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানিয়েছেন, তিস্তা নদী থেকে পানি প্রত্যাহারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন খাল খননের উদ্যোগের বিষয়ে গণমাধ্যমের খবর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে ভারতকে চিঠি দেয়া হবে।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা কলকাতায় একটা পেপারে আসার পর, সেটার ওপরে বাংলাদেশের মিডিয়া একটা নিউজ করেছে। সেটার পরে জেআরসিকে (যৌথ নদী কমিশন) আমি বলেছি, জেআরসি মেম্বারকে চিঠি দেয়ার জন্য তার কাউন্টার পার্টকে, যে তারা অফিসিয়ালি আমাদের বলুক। আমরা মিডিয়ায় পেয়েছি, সেখানে এটা কতটা নির্ভরশীল সেটা তো আমরা জানি না।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটার ওপর কমেন্ট করব না। আমরা যেটা করতে চাচ্ছি আমরা একটা চিঠি তাদের দিচ্ছি। সেই চিঠিটার উত্তর এলে পরে আমরা বুঝতে পারব, সত্যি তারা ডাইভার্ট করতেছে কি, করতেছে না।’

গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, দার্জিলিংয়ে ৩টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। তিস্তার উজানে আরও ২টি খাল খনন করবে ভারত। এর মাধ্যমে জলপাইগুড়ি এবং কুচবিহার জেলার কৃষি জমি সেচের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি যেখানে ঝুলে আছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এমন উদ্যোগের ফল কী হতে পারে সেই প্রশ্নও রাখা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘ পানি সম্মেলন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে পশ্চিমবঙ্গের ওই উদ্যোগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘চিঠি অলরেডি ড্রাফট রেডি হয়ে আছে। আমি সময়ের জন্য সাইন করতে পারিনি। আজকে সাইন করব। চিঠিটাতো দেখে সাইন করতে হবে।’

চিঠিতে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানানো হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জানতে চাওয়ার জন্য আমরা চিঠি দিচ্ছি। আমাদের জেআরসি থেকে আমরা চিঠি দেব।’

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় ইনসিস্ট করি, বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে, সুসম্পর্ক আছে। কিছু যদি না হয়, আমাদের অপশন তো আছেই। অপশনটা কী সেটাতো আমি আপনাদের বলতে পারব না।’

প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশ ও ভারত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিটি ঝুলে রয়েছে। ২০১১ সালে চূড়ান্ত করেছিল কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিরোধিতায় এটি সই হয়নি’।

যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী সভার আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রীকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন, ঢাকায় আহ্বান অনুসারে এই মাসে কিংবা পরবর্তী মাসে জেআরসি সভার বিষয়ে ভারত ‘মৌখিক প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আগে জেআরসির বৈঠক হবে কি-না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তিনি আমাকে মৌখিকভাবে কথা দিয়েছেন, সেজন্য আমরা আশা করতে পারি, উনি (প্রধানমন্ত্রী) যাওয়ার আগে জেআরসি মিটিং একটা হবে।’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জলবিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্পের জন্য আরও দুটি খাল খনন করে তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহারে বিষয়ে ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ এমন মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।

ঢাকার পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, তিস্তা সংক্রান্ত খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খাল খননের বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; যৌথ নদী কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং আলোচনা করছে। এ ব্যাপারে আমরা সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যাচাই করছি।

তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। আমরা খবরটির সত্যতা যাচাই করছি। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক, সেটি বিবেচনায় রেখে আমরা আলোচনার মাধ্যমে যেকোন উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে অব্যাহত চেষ্টা রাখব। আমরা আশা রাখছি, আলোচনার মাধ্যমে আমরা এ সমস্যাটির সমাধানে যাব।’

শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩ , ০৩ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

তিস্তায় পশ্চিমবঙ্গের ‘নতুন প্রকল্প’ দিল্লিকে চিঠি দেবে ঢাকা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানিয়েছেন, তিস্তা নদী থেকে পানি প্রত্যাহারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন খাল খননের উদ্যোগের বিষয়ে গণমাধ্যমের খবর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে ভারতকে চিঠি দেয়া হবে।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা কলকাতায় একটা পেপারে আসার পর, সেটার ওপরে বাংলাদেশের মিডিয়া একটা নিউজ করেছে। সেটার পরে জেআরসিকে (যৌথ নদী কমিশন) আমি বলেছি, জেআরসি মেম্বারকে চিঠি দেয়ার জন্য তার কাউন্টার পার্টকে, যে তারা অফিসিয়ালি আমাদের বলুক। আমরা মিডিয়ায় পেয়েছি, সেখানে এটা কতটা নির্ভরশীল সেটা তো আমরা জানি না।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটার ওপর কমেন্ট করব না। আমরা যেটা করতে চাচ্ছি আমরা একটা চিঠি তাদের দিচ্ছি। সেই চিঠিটার উত্তর এলে পরে আমরা বুঝতে পারব, সত্যি তারা ডাইভার্ট করতেছে কি, করতেছে না।’

গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, দার্জিলিংয়ে ৩টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। তিস্তার উজানে আরও ২টি খাল খনন করবে ভারত। এর মাধ্যমে জলপাইগুড়ি এবং কুচবিহার জেলার কৃষি জমি সেচের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি যেখানে ঝুলে আছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এমন উদ্যোগের ফল কী হতে পারে সেই প্রশ্নও রাখা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘ পানি সম্মেলন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে পশ্চিমবঙ্গের ওই উদ্যোগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘চিঠি অলরেডি ড্রাফট রেডি হয়ে আছে। আমি সময়ের জন্য সাইন করতে পারিনি। আজকে সাইন করব। চিঠিটাতো দেখে সাইন করতে হবে।’

চিঠিতে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানানো হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জানতে চাওয়ার জন্য আমরা চিঠি দিচ্ছি। আমাদের জেআরসি থেকে আমরা চিঠি দেব।’

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় ইনসিস্ট করি, বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে, সুসম্পর্ক আছে। কিছু যদি না হয়, আমাদের অপশন তো আছেই। অপশনটা কী সেটাতো আমি আপনাদের বলতে পারব না।’

প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশ ও ভারত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিটি ঝুলে রয়েছে। ২০১১ সালে চূড়ান্ত করেছিল কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিরোধিতায় এটি সই হয়নি’।

যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী সভার আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রীকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন, ঢাকায় আহ্বান অনুসারে এই মাসে কিংবা পরবর্তী মাসে জেআরসি সভার বিষয়ে ভারত ‘মৌখিক প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আগে জেআরসির বৈঠক হবে কি-না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তিনি আমাকে মৌখিকভাবে কথা দিয়েছেন, সেজন্য আমরা আশা করতে পারি, উনি (প্রধানমন্ত্রী) যাওয়ার আগে জেআরসি মিটিং একটা হবে।’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জলবিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্পের জন্য আরও দুটি খাল খনন করে তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহারে বিষয়ে ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ এমন মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।

ঢাকার পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, তিস্তা সংক্রান্ত খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খাল খননের বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; যৌথ নদী কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং আলোচনা করছে। এ ব্যাপারে আমরা সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যাচাই করছি।

তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। আমরা খবরটির সত্যতা যাচাই করছি। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক, সেটি বিবেচনায় রেখে আমরা আলোচনার মাধ্যমে যেকোন উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে অব্যাহত চেষ্টা রাখব। আমরা আশা রাখছি, আলোচনার মাধ্যমে আমরা এ সমস্যাটির সমাধানে যাব।’