আরাভ পুলিশ হত্যার আসামি জেনেও সাকিব দুবাই গেছেন : ডিবি

পুলিশ কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যার আসামি আরাভ খান দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। পুলিশের খাতায় যার নাম রবিউল ইসলাম। পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর মামুন খান হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান। নাম পাল্টে হয়ে যান আরাভ খান। আর সেই ব্যবসায়ীর স্বর্ণের শো-রুম উদ্বোধনে দেশ থেকে বিভিন্ন অঙ্গনের তারাকারা ছুটে গেলেন দুবাইয়ে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার ভিডিও প্রচার হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার তালিকায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও। এমন খবর প্রকাশিত হওয়ায় পুলিশের টনক নড়েছে। পুলিশ বলছে, তদন্তের স্বার্থে খুনের মামলার আসামির দাওয়াতে দুবাই যাওয়া ক্রিকেট তারাকা সাকিব আল হাসানসহ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পাশাপাশি ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানকে।

গতকাল দুপুরে ডিএমপির ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, স্বর্ণের দোকানের মালিক আরাভ খান যে পুলিশ খুনের আসামি তা সাকিবকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এরপরও তিনি দুবাই গেছেন। এটি দুঃখজনক। তদন্তের স্বার্থে সাকিব ও হিরো আলমসহ খুনের আসামির অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া বাংলাদেশি তারকাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

ডিবিপ্রধান বলেন, আমাদের পুলিশের একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক মামুন। তাকে শুধু হত্যাই করা হয়নি, তার লাশ যেন না পাওয়া যায় সেজন্য কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর মামলা হয়, যার তদন্ত করেছে ডিবি। আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে যায় এবং নকল একজন আসামি জেলখানায় দেয় সে। পরে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে। এর মধ্যে মূল আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যায় সে।

গত ১৫ মার্চ দুবাইয়ে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশি নাগরিক আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাইয়ে যাওয়ার পর শত কোটি টাকা ব্যয়ে আরাভ জুয়েলার্সের শো-রুম গড়ে তোলেন। যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তবে উদ্বোধনী মঞ্চে না উঠে ১০ মিনিটের মধ্যে চলে যান তিনি। একই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মঞ্চ মাতান দেশের আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। এছাড়া চলচ্চিত্র তারাকাসহ দেশ-বিদেশের একাধিক তারাকারাও ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন। অনুষ্ঠান শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়ে ভিডিও পোস্ট করেন দেশের তারাকারা। এরপর বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। পুলিশ জানতে পারে দেশের তারাকারা দুবাইয়ে যে আরাভ খানের স্বর্ণের শো-রুম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যাচ্ছেন তিনি আর কেউ নন বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি যার আসল নাম রবিউল ইসলাম।

পুলিশ বলছে, দুবাইয়ের কোটিপতি ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম একজন খুনি, সে একজন মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন করেছে। মিডিয়াতে অনেকে বলার পরও সাকিবসহ অন্য তারকারা খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাই গেছেন এবং তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে যোগ দিয়েছেন। আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে ইন্টারপোলের সহায়তায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরাভ খানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কতগুলো মামলা রয়েছে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ১২টি ওয়ারেন্ট রয়েছে, মামলা রয়েছে, চার্জশিটও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আরাভ খানই যে রবিউল ডিবি কখন নিশ্চিত হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন কোন মামলার চার্জশিট দেয়া হয় তখন আসামিরা কে কোথায় আছে তা খোঁজ-খবর নেয়া হয়। আরাভ খানের বিভিন্ন ছবি প্রকাশ হয় এবং সাকিব আল হাসান টেলিভিশন ও ফেইসবুকে ওই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলেন। সবকিছু মিলে আমরা তথ্য পাই আরাভ খানই পুলিশ খুনের মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। ডিবিপ্রধান আরও বলেন, খুনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারণ করেন রবিউল ইসলাম। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি এখন দুবাইতে অবস্থান করছেন।

যেভাবে জানা গেলো খুনের মামলার আসামির দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসা

পুলিশের ভাষ্য, মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের ঘোষণাটি ছড়িয়ে পড়ার পর গোয়েন্দাদের নজরে আসে। দীর্ঘদিন ধরে যাকে খোঁজা হচ্ছিল তিনি দুবাইয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে স্বর্ণের দোকান দিতে যাচ্ছেন। কিনেছেন বাড়ি-গাড়ি। দুবাইয়ে রয়েছে তার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে উদ্বোধন করা হয়েছে আরাভ জুয়েলার্সের। কয়েক দিন আগে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান তারকাদের সম্ভাব্য উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন রবিউল ওরফে আরাভ। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল ও বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও। তার ওই ফেইসবুক পোস্ট দেখে অনেকেই চিনে ফেলেন, তিনি বাংলাদেশে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। ফেরারি এক আসামি দুবাইয়ে গিয়ে কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

পুলিশেষ ভাষ্য, ফেব্রুয়ারি মাসে ভিডিও পোস্ট করা হলে অনুসন্ধান করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার টাকায় দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসা শুরু করেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান এমন তথ্য তাদের কাছে আসে।

যেভাবে দেশ ছাড়েন আরাভ খান

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আরাভ খান অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন বলে ভাষ্য পুলিশের। তবে তারা দেশ ছেড়ে পালানোর পেছনে পুলিশের কারো সহযোগিতা থাকতে পারে। এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন গোয়েন্দারা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে গা ঢাকা দেয়ার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার ফরতাবাদ এলাকায় আশ্রয় নেন দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরয়ে রবিউল ইসলাম। আসল পরিচয় গোপন করে পাঁচ-ছয় বছর ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফরতাবাদ এলাকার উদয় সংঘ ক্লাবের পাশের একটি বস্তিতে। সেখানে জাকির খানের ভাঙাচোরা বাসার দোতলায় মাসিক ২ হাজার রুপিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন আরাভ ও তার স্ত্রী সাজেমা নাসরিন। এরপর জাকির খান ও তার স্ত্রী রেহানা বিবি খানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন তারা। সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েই জাকির ও রেহানার ভারতীয় আধার কার্ড সংগ্রহ করে তাদেরই কথিত বাবা-মা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাদের কাগজ কাজে লাগিয়েই আরাভ ভুয়া ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। সেই পাসপোর্ট দিয়ে দুবাই পালিয়ে যান পুলিশ খুনের আসামি আরাভ। এরপর থেকে গত কয়েক বছর দুবাইতেই অবস্থান করছেন আরাভ খান। আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মোল্লা। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই পাসপোর্টেই পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরের ঠিকানা দেয়া। তার স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক (আসাম) সাজেমা নাসরিনের পাসপোর্টটিও ভারতীয়। আরাভের কথিত বাবা-মা জাকির খান ও রেহানা বিবি খানের পাসপোর্টেও তাদের উভয়ের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে কন্দর্পপুর, উদয় সংঘ ক্লাব, রাজপুর-সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা-৭০০০৮৪।

ভারতের জাকির রেহেনা দম্পতির সন্তান পরিচয়ে পাসপোর্ট করা আরাভ খানের বিষয়ে রেহেনা বিবি সে দেশের সাংবাদিকদের জানান, বছর দুয়েক আগে তার স্বামী জাকির হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত্র হয়ে মারা গেছেন। আরাভের ছবি দেখে রেহানা জানান, ৫ বছর আগে আমাদের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছিল। আমাদের বাসায় এক বছর ভাড়া ছিল, এরপর চলে যায়। এ সময় মাসিক ২ হাজার রুপি করে ভাড়া দিত। রেহানার দাবি, তাদের আধার কার্ড নিয়ে আরাভ কী একটা কাগজ তৈরি করবে বলেছিল। সে কারণে তিনি ও তার স্বামী উভয়ই আরাভকে আমাদের আধার কার্ড দিয়ে দেন। সেই ভারতীয় আধার কার্ড দিয়েই নিজের স্ত্রীর ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেছিল আরাভ খান।

ইন্টারপোলের মাধ্যমে আরাভকে ফিরিয়ে আনতে চায় পুলিশ

পুলিশ বলছে, এই আরাভ খানই মূলত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এছাড়া তিনি কীভাবে দেশত্যাগ করলেন সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে খুনি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তারের জন্য অনুরোধ করবো। তাকে দেশে ফেরত আনা হবে। এছাড়া তিনি কীভাবে দেশ ত্যাগ করলেন সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।

গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খানই এসবির পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যার আসামি। তার আসল নাম রবিউল ইসলাম। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতে সোপর্দ করার চেষ্টা চলছে।

যেভাবে খুন হন এসবির পুলিশ পরিদর্শক

২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীর একটি বাসায় গিয়ে খুন হন পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। পরদিন তার মরদেহ বস্তায় ভরে গাজীপুরের উলুখোলার একটি জঙ্গলে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেই অভিযোগপত্রে বলা হয়, রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করত একটি চক্র। তাদের লক্ষ্য ছিল বিত্তবানদের আটকে অশালীন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আদায় করা। রবিউলসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয় আদালতে। মামুন হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে রবিউল ছাড়াও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকে (২১) আসামি করা হয়। এছাড়া নিহত মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩) ও দুই কিশোরীকে আসামি করা হয়। মামলার নথিপত্র অনুযায়ী রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লা এবং লাকি বেগমের ছেলে। ওই গ্রামটি উপজেলার হিরন ইউনিয়নের অন্তভর্ভুক্ত।

পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর রবিউল ইসলাম নামের একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে জেলে পাঠান। প্রায় ৯ মাস কারাবাসের পর ওই তরুণ বলেন, তিনি রবিউল ইসলাম নন, তার আসল নাম আবু ইউসুফ। রবিউল ইসলামের কথামতো তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি। এরপর আদালত বিষয়টি অনুসন্ধান করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। ডিবির অনুসন্ধানে জানা যায়, খুনের মামলার আসামি রবিউলের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মতিউর রহমান। আর রবিউলের পরিবর্তে আদালতে আত্মসমর্পণকারী আবু ইউসুফের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার আইনপুর গ্রামে। তার বাবা নুরুজ্জামান, মা হালিমা বেগম।

পুলিশ বলছে, ২০১৮ সালে মামুন এমরান খানকে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরে বনে ফেলে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয়। রবিউল ওরফে হৃদয় মগবাজারের নয়াটোলার আমবাগান এলাকা থেকে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। রমনা মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা হয়। জেলে পাঠানোর পর তিনি জামিনে বের হন। দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ২৫ জুন আবারও অবৈধ অস্ত্রসহ তাকে গুলশান থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জেলে পাঠানোর পর আবারও জামিনে বেরিয়ে যান তিনি। পরের বছর পরিদর্শক মামুন এমরান খানকে হত্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক থাকেন হৃদয়।

শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩ , ০৩ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

আরাভ পুলিশ হত্যার আসামি জেনেও সাকিব দুবাই গেছেন : ডিবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

সাকিবের পাশে খুনি আরাভ

পুলিশ কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যার আসামি আরাভ খান দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। পুলিশের খাতায় যার নাম রবিউল ইসলাম। পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর মামুন খান হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান। নাম পাল্টে হয়ে যান আরাভ খান। আর সেই ব্যবসায়ীর স্বর্ণের শো-রুম উদ্বোধনে দেশ থেকে বিভিন্ন অঙ্গনের তারাকারা ছুটে গেলেন দুবাইয়ে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার ভিডিও প্রচার হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার তালিকায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও। এমন খবর প্রকাশিত হওয়ায় পুলিশের টনক নড়েছে। পুলিশ বলছে, তদন্তের স্বার্থে খুনের মামলার আসামির দাওয়াতে দুবাই যাওয়া ক্রিকেট তারাকা সাকিব আল হাসানসহ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পাশাপাশি ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানকে।

গতকাল দুপুরে ডিএমপির ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, স্বর্ণের দোকানের মালিক আরাভ খান যে পুলিশ খুনের আসামি তা সাকিবকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এরপরও তিনি দুবাই গেছেন। এটি দুঃখজনক। তদন্তের স্বার্থে সাকিব ও হিরো আলমসহ খুনের আসামির অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া বাংলাদেশি তারকাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

ডিবিপ্রধান বলেন, আমাদের পুলিশের একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক মামুন। তাকে শুধু হত্যাই করা হয়নি, তার লাশ যেন না পাওয়া যায় সেজন্য কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর মামলা হয়, যার তদন্ত করেছে ডিবি। আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে যায় এবং নকল একজন আসামি জেলখানায় দেয় সে। পরে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে। এর মধ্যে মূল আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যায় সে।

গত ১৫ মার্চ দুবাইয়ে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশি নাগরিক আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাইয়ে যাওয়ার পর শত কোটি টাকা ব্যয়ে আরাভ জুয়েলার্সের শো-রুম গড়ে তোলেন। যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তবে উদ্বোধনী মঞ্চে না উঠে ১০ মিনিটের মধ্যে চলে যান তিনি। একই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মঞ্চ মাতান দেশের আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। এছাড়া চলচ্চিত্র তারাকাসহ দেশ-বিদেশের একাধিক তারাকারাও ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন। অনুষ্ঠান শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়ে ভিডিও পোস্ট করেন দেশের তারাকারা। এরপর বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। পুলিশ জানতে পারে দেশের তারাকারা দুবাইয়ে যে আরাভ খানের স্বর্ণের শো-রুম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যাচ্ছেন তিনি আর কেউ নন বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি যার আসল নাম রবিউল ইসলাম।

পুলিশ বলছে, দুবাইয়ের কোটিপতি ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম একজন খুনি, সে একজন মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন করেছে। মিডিয়াতে অনেকে বলার পরও সাকিবসহ অন্য তারকারা খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাই গেছেন এবং তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে যোগ দিয়েছেন। আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে ইন্টারপোলের সহায়তায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরাভ খানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কতগুলো মামলা রয়েছে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ১২টি ওয়ারেন্ট রয়েছে, মামলা রয়েছে, চার্জশিটও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আরাভ খানই যে রবিউল ডিবি কখন নিশ্চিত হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন কোন মামলার চার্জশিট দেয়া হয় তখন আসামিরা কে কোথায় আছে তা খোঁজ-খবর নেয়া হয়। আরাভ খানের বিভিন্ন ছবি প্রকাশ হয় এবং সাকিব আল হাসান টেলিভিশন ও ফেইসবুকে ওই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলেন। সবকিছু মিলে আমরা তথ্য পাই আরাভ খানই পুলিশ খুনের মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। ডিবিপ্রধান আরও বলেন, খুনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারণ করেন রবিউল ইসলাম। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি এখন দুবাইতে অবস্থান করছেন।

যেভাবে জানা গেলো খুনের মামলার আসামির দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসা

পুলিশের ভাষ্য, মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের ঘোষণাটি ছড়িয়ে পড়ার পর গোয়েন্দাদের নজরে আসে। দীর্ঘদিন ধরে যাকে খোঁজা হচ্ছিল তিনি দুবাইয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে স্বর্ণের দোকান দিতে যাচ্ছেন। কিনেছেন বাড়ি-গাড়ি। দুবাইয়ে রয়েছে তার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে উদ্বোধন করা হয়েছে আরাভ জুয়েলার্সের। কয়েক দিন আগে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান তারকাদের সম্ভাব্য উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন রবিউল ওরফে আরাভ। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল ও বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও। তার ওই ফেইসবুক পোস্ট দেখে অনেকেই চিনে ফেলেন, তিনি বাংলাদেশে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। ফেরারি এক আসামি দুবাইয়ে গিয়ে কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

পুলিশেষ ভাষ্য, ফেব্রুয়ারি মাসে ভিডিও পোস্ট করা হলে অনুসন্ধান করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার টাকায় দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসা শুরু করেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান এমন তথ্য তাদের কাছে আসে।

যেভাবে দেশ ছাড়েন আরাভ খান

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আরাভ খান অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন বলে ভাষ্য পুলিশের। তবে তারা দেশ ছেড়ে পালানোর পেছনে পুলিশের কারো সহযোগিতা থাকতে পারে। এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন গোয়েন্দারা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে গা ঢাকা দেয়ার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার ফরতাবাদ এলাকায় আশ্রয় নেন দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরয়ে রবিউল ইসলাম। আসল পরিচয় গোপন করে পাঁচ-ছয় বছর ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফরতাবাদ এলাকার উদয় সংঘ ক্লাবের পাশের একটি বস্তিতে। সেখানে জাকির খানের ভাঙাচোরা বাসার দোতলায় মাসিক ২ হাজার রুপিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন আরাভ ও তার স্ত্রী সাজেমা নাসরিন। এরপর জাকির খান ও তার স্ত্রী রেহানা বিবি খানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন তারা। সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েই জাকির ও রেহানার ভারতীয় আধার কার্ড সংগ্রহ করে তাদেরই কথিত বাবা-মা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাদের কাগজ কাজে লাগিয়েই আরাভ ভুয়া ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। সেই পাসপোর্ট দিয়ে দুবাই পালিয়ে যান পুলিশ খুনের আসামি আরাভ। এরপর থেকে গত কয়েক বছর দুবাইতেই অবস্থান করছেন আরাভ খান। আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মোল্লা। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই পাসপোর্টেই পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরের ঠিকানা দেয়া। তার স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক (আসাম) সাজেমা নাসরিনের পাসপোর্টটিও ভারতীয়। আরাভের কথিত বাবা-মা জাকির খান ও রেহানা বিবি খানের পাসপোর্টেও তাদের উভয়ের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে কন্দর্পপুর, উদয় সংঘ ক্লাব, রাজপুর-সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা-৭০০০৮৪।

ভারতের জাকির রেহেনা দম্পতির সন্তান পরিচয়ে পাসপোর্ট করা আরাভ খানের বিষয়ে রেহেনা বিবি সে দেশের সাংবাদিকদের জানান, বছর দুয়েক আগে তার স্বামী জাকির হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত্র হয়ে মারা গেছেন। আরাভের ছবি দেখে রেহানা জানান, ৫ বছর আগে আমাদের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছিল। আমাদের বাসায় এক বছর ভাড়া ছিল, এরপর চলে যায়। এ সময় মাসিক ২ হাজার রুপি করে ভাড়া দিত। রেহানার দাবি, তাদের আধার কার্ড নিয়ে আরাভ কী একটা কাগজ তৈরি করবে বলেছিল। সে কারণে তিনি ও তার স্বামী উভয়ই আরাভকে আমাদের আধার কার্ড দিয়ে দেন। সেই ভারতীয় আধার কার্ড দিয়েই নিজের স্ত্রীর ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেছিল আরাভ খান।

ইন্টারপোলের মাধ্যমে আরাভকে ফিরিয়ে আনতে চায় পুলিশ

পুলিশ বলছে, এই আরাভ খানই মূলত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এছাড়া তিনি কীভাবে দেশত্যাগ করলেন সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে খুনি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তারের জন্য অনুরোধ করবো। তাকে দেশে ফেরত আনা হবে। এছাড়া তিনি কীভাবে দেশ ত্যাগ করলেন সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।

গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খানই এসবির পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যার আসামি। তার আসল নাম রবিউল ইসলাম। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতে সোপর্দ করার চেষ্টা চলছে।

যেভাবে খুন হন এসবির পুলিশ পরিদর্শক

২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীর একটি বাসায় গিয়ে খুন হন পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। পরদিন তার মরদেহ বস্তায় ভরে গাজীপুরের উলুখোলার একটি জঙ্গলে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেই অভিযোগপত্রে বলা হয়, রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করত একটি চক্র। তাদের লক্ষ্য ছিল বিত্তবানদের আটকে অশালীন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আদায় করা। রবিউলসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয় আদালতে। মামুন হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে রবিউল ছাড়াও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকে (২১) আসামি করা হয়। এছাড়া নিহত মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩) ও দুই কিশোরীকে আসামি করা হয়। মামলার নথিপত্র অনুযায়ী রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লা এবং লাকি বেগমের ছেলে। ওই গ্রামটি উপজেলার হিরন ইউনিয়নের অন্তভর্ভুক্ত।

পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর রবিউল ইসলাম নামের একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে জেলে পাঠান। প্রায় ৯ মাস কারাবাসের পর ওই তরুণ বলেন, তিনি রবিউল ইসলাম নন, তার আসল নাম আবু ইউসুফ। রবিউল ইসলামের কথামতো তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি। এরপর আদালত বিষয়টি অনুসন্ধান করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। ডিবির অনুসন্ধানে জানা যায়, খুনের মামলার আসামি রবিউলের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মতিউর রহমান। আর রবিউলের পরিবর্তে আদালতে আত্মসমর্পণকারী আবু ইউসুফের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার আইনপুর গ্রামে। তার বাবা নুরুজ্জামান, মা হালিমা বেগম।

পুলিশ বলছে, ২০১৮ সালে মামুন এমরান খানকে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরে বনে ফেলে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয়। রবিউল ওরফে হৃদয় মগবাজারের নয়াটোলার আমবাগান এলাকা থেকে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। রমনা মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা হয়। জেলে পাঠানোর পর তিনি জামিনে বের হন। দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ২৫ জুন আবারও অবৈধ অস্ত্রসহ তাকে গুলশান থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জেলে পাঠানোর পর আবারও জামিনে বেরিয়ে যান তিনি। পরের বছর পরিদর্শক মামুন এমরান খানকে হত্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক থাকেন হৃদয়।