কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক স্কুলের ভেতরে এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ছাত্র-জনতা-পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় পুলিশসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে ৭ জনসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে কয়েকটি যানবাহনে। গত বুধবার রাতভর এ ঘটনার পর গতকাল দুপুরে দেবিদ্বার থানায় পৃথক দুটি মামলায় অন্তত ২ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেনসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় গতকাল দিনভর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
মামলার বিবরণ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার জেলার দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার অফিস কক্ষে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এ ঘটনার পর ছাত্রীর সহপাঠীসহ তাকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে তার বাবার কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়। এদিকে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানির পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বিকেলের দিকে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্য সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায়ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, পরে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবি জানায়। সন্ধ্যায় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় তার পক্ষে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলায় অন্তত ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের অধিকাংশ ওই বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্র। রাতে ছাত্রদের ওপর হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
পরে তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করে ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধারে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত ধাওয়া পালটা-ধাওয়া, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি ও পুলিশের অস্ত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন, সিয়াম (১৫), মিনহাজ (১৭), অলি (১৬), আকাশ (১৬), আরিফুল ইসলাম (২৬), সাব্বির (১৮) ও হৃদয় (১৭)। তাদের প্রত্যেকেকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া জহিরুল ইসলাম ও সারোয়ারসহ ৫ পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানা যায়। রাতে কুমিল্লা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অন্তত ৩শ’ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশের অন্তত ৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত কনস্টেবল জহির ও সারোয়ারকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষককে আসামি করে দেবিদ্বার থানায় একটি ও থানার এসআই মুকতার হোসেন মানিক বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ১০ জন ও অজ্ঞাত ২শ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি আরও জানান, খোয়া যাওয়া অস্ত্রটি গতকাল সকালে উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তার প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। ওই স্বার্থান্বেষীদের ইন্ধনে পুলিশকে লক্ষ্য করে অন্তত ৭০টি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন, এ ঘটনায় অপরাধী যে-ই হোন তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এদিকে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই প্রধান শিক্ষকের চরিত্র নিয়ে বিতর্ক আছে। এর আগে তিনি দুটি বিদ্যালয় থেকে একই অভিযোগে চাকুরিচ্যুত হয়েছিলেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের আনকূল্য পেয়ে তিনি এ বিদ্যালয়ে চাকরি বাগিয়ে নেন এবং চারিত্রিক দোষে ফের এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। এদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, প্রধান শিক্ষকের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার পক্ষে-বিপক্ষে স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনীতির বিবদমান দুটি পক্ষ বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
কুমিল্লা : ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা -সংবাদ
আরও খবরশুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩ , ০৩ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪
জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা
কুমিল্লা : ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা -সংবাদ
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক স্কুলের ভেতরে এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ছাত্র-জনতা-পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় পুলিশসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে ৭ জনসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে কয়েকটি যানবাহনে। গত বুধবার রাতভর এ ঘটনার পর গতকাল দুপুরে দেবিদ্বার থানায় পৃথক দুটি মামলায় অন্তত ২ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেনসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় গতকাল দিনভর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
মামলার বিবরণ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার জেলার দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার অফিস কক্ষে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এ ঘটনার পর ছাত্রীর সহপাঠীসহ তাকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে তার বাবার কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়। এদিকে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানির পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বিকেলের দিকে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্য সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায়ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, পরে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবি জানায়। সন্ধ্যায় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় তার পক্ষে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলায় অন্তত ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের অধিকাংশ ওই বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্র। রাতে ছাত্রদের ওপর হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
পরে তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করে ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধারে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত ধাওয়া পালটা-ধাওয়া, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি ও পুলিশের অস্ত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন, সিয়াম (১৫), মিনহাজ (১৭), অলি (১৬), আকাশ (১৬), আরিফুল ইসলাম (২৬), সাব্বির (১৮) ও হৃদয় (১৭)। তাদের প্রত্যেকেকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া জহিরুল ইসলাম ও সারোয়ারসহ ৫ পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানা যায়। রাতে কুমিল্লা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অন্তত ৩শ’ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশের অন্তত ৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত কনস্টেবল জহির ও সারোয়ারকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষককে আসামি করে দেবিদ্বার থানায় একটি ও থানার এসআই মুকতার হোসেন মানিক বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ১০ জন ও অজ্ঞাত ২শ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি আরও জানান, খোয়া যাওয়া অস্ত্রটি গতকাল সকালে উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তার প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। ওই স্বার্থান্বেষীদের ইন্ধনে পুলিশকে লক্ষ্য করে অন্তত ৭০টি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন, এ ঘটনায় অপরাধী যে-ই হোন তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এদিকে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই প্রধান শিক্ষকের চরিত্র নিয়ে বিতর্ক আছে। এর আগে তিনি দুটি বিদ্যালয় থেকে একই অভিযোগে চাকুরিচ্যুত হয়েছিলেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের আনকূল্য পেয়ে তিনি এ বিদ্যালয়ে চাকরি বাগিয়ে নেন এবং চারিত্রিক দোষে ফের এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। এদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, প্রধান শিক্ষকের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার পক্ষে-বিপক্ষে স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনীতির বিবদমান দুটি পক্ষ বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।