কাঁদে নদ-নদী

আব্দুল মান্নান খান

নদীর কথা বলে শেষ করা যাবে না। দেশের বেশির ভাগ নদ-নদী স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। কাজেই কোনটার কথা রেখে কোনটার কথা বলব। তিস্তার কথা আমি এখন কিছু বলতে গেলে হাস্যকর শোনাবে। কারণ তিস্তা এখন বড় ইস্যু। নব্বই দশকের মাঝামাঝি শুকনো মৌসুমে ডিমলায় গিয়ে তিস্তা দেখেছিলাম। এত বড় নদী কোথায় লঞ্চ-স্টিমার দেখব তা না দেখি নৌকাই চলে না। তখন শুধু ফারাক্কার কথাই ছিল মানুষের মুখে মুখে। ওদিকে যে তিস্তার ‘কম্ম যে ফতে’ সেকথা কেউকে বলতে শুনিনি।

পুরো দেশটাই এখন চলছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করে। মাঠের ফসল ফলানোসহ অন্যান্য সব কাজই চলছে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে। যশোরের অনেক গ্রামে এখন ঘরবাড়িতেও গভীর নলকূপ ছাড়া পানি পাওয়া যায় না।

নদ-নদীর জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে বলে আমরা খুব হৈচৈ করি। নদীতে পানি না থাকলে নদীর জায়গা দখল তো হবেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান একবার বলেছিলেন, আমরা যে একে অপরকে ছিঁড়ে খাচ্ছি না সেই তো কত’। তার কথার প্রসঙ্গ ধরেই বলি, আমাদের যে পরিমাণ জনসংখ্যা আর যে পরিমাণ জায়গা-জমি আবাসভূমি, যে পরিমাণ বেকারের সংখ্যা, যে পরিমাণ শিক্ষা ও আর্থিক পশ্চাদপদোতা, যে পরিমাণ দুর্নীতিপরায়ণতা এবং প্রভাবশালী ক্ষমতাবানরা যে পরিমাণ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারদর্শী সেখানে পানি নেই অথচ নদীর জায়গা বলে খালি পড়ে থাকবে কেউ গিয়ে দখল করবে নাÑ কী করে আমরা সেটা আশা করতে পারি। তবে হ্যাঁ, প্রতিটা ক্ষেত্রেই দেখাশোনা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক রয়েছে। এখন দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই কেউ না কেউ এসে সেটা দখল করে ফেলছে। সেই ব্যর্থতার দায় যেহেতু কারও ঘাড়ে পড়ছে না কাজেই চলছে।

এখন কথা হলো, আমাদের নদ-নদী খাল-বিলের পানি গেল কোথায়। আমরা শুনে থাকি কোনো নদী যদি একাধিক দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় তাহলে তার কোন একটি দেশ এককভাবে ওই নদীর গতিপথে কোন বাধার সৃষ্টি করতে পারে না বা ভিন্নদিকে পানির গতিকে প্রবাহিত করাতে পারে না। অর্থাৎ ইচ্ছা মতো সরিয়ে নিতে পারে না। যদি এমন কিছু করতে হয় তা হলে সংশিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একমত হয়েই সেটা করা লাগে। অর্থাৎ একতরফা কোন কিছু করা যায় না।

নদীর পানির ব্যবহার নিয়ে এ রকমই আন্তর্জাতিক আইনের বিধি-বিধান আছে বলে শোনা যায় যার উদাহরণ মেকং, সিন্ধু, নীল ইত্যাদি নদীর পানি ভাগাভাগি। সে অর্থে আমাদের যেসব নদ-নদী ভারত থেকে এসে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সাগরে গিয়ে পড়েছে সেগুলোও আন্তর্জাতিক নদী। ভারতের যুক্তি ভারতের কাছে। আমরা দেখছি, যে কারণেই হোক ভারত ব্যাপারটা সেভাবে নেয়নি। তাদের দেশের নদীর পানি বা নদীকে তাদের সুবিধা মতো ব্যবহার করেছে। নদীর ভাটিতে যে আমরা আছি সেটার কোন গুরুত্ব বহন করেনি। উজানে বাঁধ দিয়ে পানি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করিয়ে নিয়েছে। কাজটা তারা একতরফাভাবে সম্পন্ন করেছেন বলে আমরা শুনি। পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হয়নি তা নয়। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয়েছে বারবার। বাংলাদেশ একবার গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে জাতিসংঘেও গিয়েছিল। পরে সেখান থেকে আবেদন প্রত্যাহার করে এনে ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি বণ্টনের একটা চুক্তিও হয়েছে। ফারাক্কা পয়েন্টে পানি যে পরিমাণ আসবে সেটাই ভাগাভাগি হবে। ফারাক্কা পয়েন্টে আসার আগে যে উজান থেকে গঙ্গার পানি অন্যদিকে প্রবাহিত করানো হয়েছে সে হিসাব করা হয়নি বলে আমরা শুনি। এতে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হয়েছে তা এখন আর কারও অজানা নয়। পদ্মা ও তার উপনদী শাখানদীগুলো কতটুকু নব্য ফিরে পেযেছে তাও সবাই দেখছে।

সে যাইহোক, ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু কথা বলেছিলেন ২০১৯ সালে, পত্রপত্রিকায় এসেছিল। তিনি বলেছিলেন, গঙ্গার বিষয়টি জাতিসংঘে নিয়ে আমাদের কোন লাভ হয়নি বরং ক্ষতি হয়েছে এবং এতে একটা বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল’। তিনি আরও বলেছিলেন, আমরা চেয়েছিলাম উজান ও ভাটির দেশের ক্ষেত্রে অববাহিকা ব্যবস্থাপনায় সমান অধিকার থাকবে। কিন্তু তারা চাচ্ছিলেন এটার ওপর এককভাবে তাদের অধিকার থাকবে’। মূল কথাটা এখানেই। ভারতের এই মনোভাবের কোনো পরিবর্তন আনতে না পারলে যত কথাই বলা হোক কোনো কাজ হবে না যেমন থেমে আছে থেমেই থাকবে। কাজের কাজ কিছু হবে না।

তবু গঙ্গার পানি নিয়ে চুক্তি একটা হয়েছে এটাই কথা। আর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি তো ঝুলেই গেছে। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকের জায়গায় এখন ত্রিপক্ষীয় কূটনীতি চলছে বলে শোনা যায়। শোনা যায় পশ্চিমবঙ্গ না চাইলে দিল্লির ক্ষমতা নেই তিস্তার পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করার। পত্রিকায় সর্বশেষ খবর এসেছে, তিস্তার পানি প্রত্যাহারে নতুন দুই খাল কাটছে পশ্চিমবঙ্গ, সংকট বাড়বে বাংলাদেশের’। এই যদি হয় পদ্মা-তিস্তার অবস্থা তাহলে বাকি নদ-নদীগুলোর কী হবে কতদিনে হবে আদৌ হবে কিনা। কোনো তালিকা চোখে না পড়লেও শোনা যায় এ রকম চুয়ান্নটা অভিন্ন নদ-নদীর উজানে বাঁধ দিয়েছে ভারত। এর মধ্যে একটাকে কেবল বাংলাদেশের সীমান্তে দাঁড়িয়ে দেখা যায়। সর্বশেষ উত্তরে বাংলাবান্ধা সীমান্তে গেলে দেখা যায় মহানন্দা নদীর উপর বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে কিভাবে পানি ভিন্ন দিকে নেয়া হয়েছে। আর এপারে মহানন্দার দিকে তাকালে মনে হয় যেন মহানন্দার চোখের জল বইছে এপারে।

বলতেই হয, সাগরে পানির অভাব নেই, কোনদিন হবে বলেও কেউ মনে করেন না। বঙ্গোপসাগর থেকে পানি বাতাসে ভেসে মেঘ আকারে হিমালয় পর্বতমালার দিকে যায়। আবার সেখান থেকে স্থলপথে নেমে এসে পড়ে গিয়ে সেই সাগরে। ছোট-বড় যেসব পথ ধরে নেমে আসে সেগুলোই নদী। সৃষ্টির অপার মহিমায় বয়ে চলেছে এ ধারা নিরবধি। এখানে মানুষের কিছু করার নেই। আসমুদ্রহিমাচলের মানুষ শুধু ভোগ করে এসেছে মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবের সুফল। এর একটা অংশ আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ। মানুষের কার্যকলাপে সেই বাংলাদেশ ভূখন্ড এখন পানির অভাবে নদী-খাল-বিল শুকিয়ে যাবে এমনটা হতেই পারে না। এতে দীর্ঘমেয়াদে মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই আমরা খালি চোখে দেখা সাধারণ মানুষ শুধু আশ্বাস না দুই দেশের মধ্যে যুক্তিসঙ্গত বাস্তব পদক্ষেপ দ্রুত আশা করি।

এ বিষয়ে সর্বশেষ প্রকাশিত খবরটা আবার উদ্ধৃত করে শেষ করি, তিস্তার পানি প্রত্যাহারে নতুন দুই খাল কাটছে পশ্চিমবঙ্গ, সংকট বাড়বে বাংলাদেশের।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

image

শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে তিস্তা নদী শুকিয়ে যায়

আরও খবর
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক
প্লাস্টিক দূষণ : উদ্বিগ্ন বিশ্ব

শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩ , ০৩ চৈত্র ১৪২৯, ২৪ শবান ১৪৪৪

কাঁদে নদ-নদী

আব্দুল মান্নান খান

image

শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে তিস্তা নদী শুকিয়ে যায়

নদীর কথা বলে শেষ করা যাবে না। দেশের বেশির ভাগ নদ-নদী স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। কাজেই কোনটার কথা রেখে কোনটার কথা বলব। তিস্তার কথা আমি এখন কিছু বলতে গেলে হাস্যকর শোনাবে। কারণ তিস্তা এখন বড় ইস্যু। নব্বই দশকের মাঝামাঝি শুকনো মৌসুমে ডিমলায় গিয়ে তিস্তা দেখেছিলাম। এত বড় নদী কোথায় লঞ্চ-স্টিমার দেখব তা না দেখি নৌকাই চলে না। তখন শুধু ফারাক্কার কথাই ছিল মানুষের মুখে মুখে। ওদিকে যে তিস্তার ‘কম্ম যে ফতে’ সেকথা কেউকে বলতে শুনিনি।

পুরো দেশটাই এখন চলছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করে। মাঠের ফসল ফলানোসহ অন্যান্য সব কাজই চলছে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে। যশোরের অনেক গ্রামে এখন ঘরবাড়িতেও গভীর নলকূপ ছাড়া পানি পাওয়া যায় না।

নদ-নদীর জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে বলে আমরা খুব হৈচৈ করি। নদীতে পানি না থাকলে নদীর জায়গা দখল তো হবেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান একবার বলেছিলেন, আমরা যে একে অপরকে ছিঁড়ে খাচ্ছি না সেই তো কত’। তার কথার প্রসঙ্গ ধরেই বলি, আমাদের যে পরিমাণ জনসংখ্যা আর যে পরিমাণ জায়গা-জমি আবাসভূমি, যে পরিমাণ বেকারের সংখ্যা, যে পরিমাণ শিক্ষা ও আর্থিক পশ্চাদপদোতা, যে পরিমাণ দুর্নীতিপরায়ণতা এবং প্রভাবশালী ক্ষমতাবানরা যে পরিমাণ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারদর্শী সেখানে পানি নেই অথচ নদীর জায়গা বলে খালি পড়ে থাকবে কেউ গিয়ে দখল করবে নাÑ কী করে আমরা সেটা আশা করতে পারি। তবে হ্যাঁ, প্রতিটা ক্ষেত্রেই দেখাশোনা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক রয়েছে। এখন দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই কেউ না কেউ এসে সেটা দখল করে ফেলছে। সেই ব্যর্থতার দায় যেহেতু কারও ঘাড়ে পড়ছে না কাজেই চলছে।

এখন কথা হলো, আমাদের নদ-নদী খাল-বিলের পানি গেল কোথায়। আমরা শুনে থাকি কোনো নদী যদি একাধিক দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় তাহলে তার কোন একটি দেশ এককভাবে ওই নদীর গতিপথে কোন বাধার সৃষ্টি করতে পারে না বা ভিন্নদিকে পানির গতিকে প্রবাহিত করাতে পারে না। অর্থাৎ ইচ্ছা মতো সরিয়ে নিতে পারে না। যদি এমন কিছু করতে হয় তা হলে সংশিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একমত হয়েই সেটা করা লাগে। অর্থাৎ একতরফা কোন কিছু করা যায় না।

নদীর পানির ব্যবহার নিয়ে এ রকমই আন্তর্জাতিক আইনের বিধি-বিধান আছে বলে শোনা যায় যার উদাহরণ মেকং, সিন্ধু, নীল ইত্যাদি নদীর পানি ভাগাভাগি। সে অর্থে আমাদের যেসব নদ-নদী ভারত থেকে এসে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সাগরে গিয়ে পড়েছে সেগুলোও আন্তর্জাতিক নদী। ভারতের যুক্তি ভারতের কাছে। আমরা দেখছি, যে কারণেই হোক ভারত ব্যাপারটা সেভাবে নেয়নি। তাদের দেশের নদীর পানি বা নদীকে তাদের সুবিধা মতো ব্যবহার করেছে। নদীর ভাটিতে যে আমরা আছি সেটার কোন গুরুত্ব বহন করেনি। উজানে বাঁধ দিয়ে পানি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করিয়ে নিয়েছে। কাজটা তারা একতরফাভাবে সম্পন্ন করেছেন বলে আমরা শুনি। পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হয়নি তা নয়। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয়েছে বারবার। বাংলাদেশ একবার গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে জাতিসংঘেও গিয়েছিল। পরে সেখান থেকে আবেদন প্রত্যাহার করে এনে ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি বণ্টনের একটা চুক্তিও হয়েছে। ফারাক্কা পয়েন্টে পানি যে পরিমাণ আসবে সেটাই ভাগাভাগি হবে। ফারাক্কা পয়েন্টে আসার আগে যে উজান থেকে গঙ্গার পানি অন্যদিকে প্রবাহিত করানো হয়েছে সে হিসাব করা হয়নি বলে আমরা শুনি। এতে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হয়েছে তা এখন আর কারও অজানা নয়। পদ্মা ও তার উপনদী শাখানদীগুলো কতটুকু নব্য ফিরে পেযেছে তাও সবাই দেখছে।

সে যাইহোক, ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু কথা বলেছিলেন ২০১৯ সালে, পত্রপত্রিকায় এসেছিল। তিনি বলেছিলেন, গঙ্গার বিষয়টি জাতিসংঘে নিয়ে আমাদের কোন লাভ হয়নি বরং ক্ষতি হয়েছে এবং এতে একটা বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল’। তিনি আরও বলেছিলেন, আমরা চেয়েছিলাম উজান ও ভাটির দেশের ক্ষেত্রে অববাহিকা ব্যবস্থাপনায় সমান অধিকার থাকবে। কিন্তু তারা চাচ্ছিলেন এটার ওপর এককভাবে তাদের অধিকার থাকবে’। মূল কথাটা এখানেই। ভারতের এই মনোভাবের কোনো পরিবর্তন আনতে না পারলে যত কথাই বলা হোক কোনো কাজ হবে না যেমন থেমে আছে থেমেই থাকবে। কাজের কাজ কিছু হবে না।

তবু গঙ্গার পানি নিয়ে চুক্তি একটা হয়েছে এটাই কথা। আর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি তো ঝুলেই গেছে। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকের জায়গায় এখন ত্রিপক্ষীয় কূটনীতি চলছে বলে শোনা যায়। শোনা যায় পশ্চিমবঙ্গ না চাইলে দিল্লির ক্ষমতা নেই তিস্তার পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করার। পত্রিকায় সর্বশেষ খবর এসেছে, তিস্তার পানি প্রত্যাহারে নতুন দুই খাল কাটছে পশ্চিমবঙ্গ, সংকট বাড়বে বাংলাদেশের’। এই যদি হয় পদ্মা-তিস্তার অবস্থা তাহলে বাকি নদ-নদীগুলোর কী হবে কতদিনে হবে আদৌ হবে কিনা। কোনো তালিকা চোখে না পড়লেও শোনা যায় এ রকম চুয়ান্নটা অভিন্ন নদ-নদীর উজানে বাঁধ দিয়েছে ভারত। এর মধ্যে একটাকে কেবল বাংলাদেশের সীমান্তে দাঁড়িয়ে দেখা যায়। সর্বশেষ উত্তরে বাংলাবান্ধা সীমান্তে গেলে দেখা যায় মহানন্দা নদীর উপর বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে কিভাবে পানি ভিন্ন দিকে নেয়া হয়েছে। আর এপারে মহানন্দার দিকে তাকালে মনে হয় যেন মহানন্দার চোখের জল বইছে এপারে।

বলতেই হয, সাগরে পানির অভাব নেই, কোনদিন হবে বলেও কেউ মনে করেন না। বঙ্গোপসাগর থেকে পানি বাতাসে ভেসে মেঘ আকারে হিমালয় পর্বতমালার দিকে যায়। আবার সেখান থেকে স্থলপথে নেমে এসে পড়ে গিয়ে সেই সাগরে। ছোট-বড় যেসব পথ ধরে নেমে আসে সেগুলোই নদী। সৃষ্টির অপার মহিমায় বয়ে চলেছে এ ধারা নিরবধি। এখানে মানুষের কিছু করার নেই। আসমুদ্রহিমাচলের মানুষ শুধু ভোগ করে এসেছে মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবের সুফল। এর একটা অংশ আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ। মানুষের কার্যকলাপে সেই বাংলাদেশ ভূখন্ড এখন পানির অভাবে নদী-খাল-বিল শুকিয়ে যাবে এমনটা হতেই পারে না। এতে দীর্ঘমেয়াদে মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই আমরা খালি চোখে দেখা সাধারণ মানুষ শুধু আশ্বাস না দুই দেশের মধ্যে যুক্তিসঙ্গত বাস্তব পদক্ষেপ দ্রুত আশা করি।

এ বিষয়ে সর্বশেষ প্রকাশিত খবরটা আবার উদ্ধৃত করে শেষ করি, তিস্তার পানি প্রত্যাহারে নতুন দুই খাল কাটছে পশ্চিমবঙ্গ, সংকট বাড়বে বাংলাদেশের।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]