আরাভ খানের পেছনে কে?

দেশজুড়ে এই মুহূর্তে আলাচিত নাম রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান; যিনি বলা হচ্ছে এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক! তবে প্রশ্ন উঠেছে যে ব্যক্তিটি চার বছর আগেও ছিলেন শূন্য, এই অল্প সময়ের মাধ্যমে কিভাবে এত টাকার মালিক বনে গেলেন!

কেউ কেউ বলছেন, এ টাকা আরাভের নয়। তার মাথার ওপর অন্য কেউ রয়েছেন। তবে কে সেই ব্যক্তি সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। বিভিন্ন সূত্র বলছে আরাভ খান যখন খুনের মামলার আসামি হন তখন তাকে রক্ষায় যে ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করেছেন তিনিই এই সম্পত্তি বা টাকার মালিক। যা আরাভের নামে দুবাইয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

কে সেই ব্যক্তি? তিনি পুলিশের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলে এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে। তবে রবিউল ইসলাম অর্থাৎ আরাভ খান ফেইসবুক লাইভে এসে তা অস্বীকার করেছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘পুলিশের পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার আসামি আরাভ। শুধু হত্যাই করেনি, তার লাশ যেন না পাওয়া যায় সেজন্য কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল।’

এই হত্যাকান্ডের পর মামলা হয়, যার তদন্ত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যা মামলায় আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে গেলেও অন্য একজনকে রবিউল বলে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। সে নিজেও তাকে রবিউল ইসলাম বলেই পরিচয় দেয়। তবে পরে বিচারিক প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে সে পুলিশ হত্যার আসামি রবিউল ইসলাম নয়। পরে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, আরাভ ভারতে পালিয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উদয় সংঘ ক্লাবের পাশে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। খুনের মামলায় আসামি হওয়ার পর পালিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ওঠেন কর্তাবাদ এলাকার নরেন্দ্রপুর বস্তিতে। সেই এলাকার বস্তির জনৈক জাকির হোসেনের বাড়িতে অবস্থান ছিল তার। জাকির ও তার স্ত্রী রেহানা বিবির সঙ্গে সখ্য গড়ে তাদের বাবা-মা বানিয়ে আরাভ তার নিজের ও স্ত্রীর ভারতীয় পাসপোর্ট বানান। তবে রেহানা বিবির দাবি, আধার কার্ড পেতে সহায়তা করলেও পাসপোর্ট তৈরির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যান। যে পাসপার্টে তিনি দুবাই যান সেই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে ২০২০ সালে। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরাভ খান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তার বাবার নাম জাকির খান এবং মা রেহানা বিবি খান বলে উল্লেখ করা হয়। পাসপোর্টের মেয়াদ ২০৩০ সালের ২৭ জুলাই শেষ হবে। আরব আমিরাত সরকার ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর তাকে রেসিডেন্ট পারমিট দেয়। আগামী বছরের ৩০ অক্টোবর এই পারমিটের মেয়াদ শেষ হবে।

আরাভ খান আলোচনায় এসেছেন দুবাইয়ে হাজার কোটি টাকার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, টিকটক ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হিরো আলমসহ বিভিন্ন তারকা।

এই খবর ছড়ানোর পরই আরাভ খানের আসল চেহারা সামনে আসে। প্রশ্ন উঠতে থাকে তার হাজার কোটি টাকার স্বর্ণের দোকান, দুবাইয়ে অন্যান্য সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে। আর এই প্রশ্নের মধ্যেই তার মাথার ওপরে পুলিশের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন বলে গুঞ্জন চলছে।

বলা হচ্ছে, আরাভ খান ওই কর্মকর্তার সম্পর্কে আত্মীয়। আরাভ যখন পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তখন ওই কর্মকর্তা একটি ইউনিট প্রধান ছিলেন। তিনিই আরাভকে নানাভাবে সহায়তা করে ভারতে পালাতে সহায়তা করেন। এরপর দুবাইয়ে আরাভের মাধ্যমে ওই কর্মকর্তা হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। এই টাকা জুয়েলারি ও আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়।

যদিও গত বৃহস্পতিবার ফেইসবুক লাইভে এসে কথা বলেন আরাভ খান। ২২ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের লাইভে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে হেল্প করে ফ্লাইট করে দিয়েছেন-এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আপনারা কি কখনো শুনেছেন একটা পুলিশ মার্ডার কেসে আরেকটা পুলিশ হেল্প করবে? আমার সঙ্গে যে ভাইদের নাম বলছে, তারা কোনদিন কোনকিছুতে আমার সঙ্গে জড়িত না। একটা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, সেটা স্বাভাবিক। আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমার সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল।’ এই বিষয়ে নাম প্রকাশ করে পুলিশের মন্তব্য করতে চাননি।

শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩ , ০৪ চৈত্র ১৪২৯, ২৫ শবান ১৪৪৪

আরাভ খানের পেছনে কে?

বিশেষ প্রতিনিধি

দেশজুড়ে এই মুহূর্তে আলাচিত নাম রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান; যিনি বলা হচ্ছে এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক! তবে প্রশ্ন উঠেছে যে ব্যক্তিটি চার বছর আগেও ছিলেন শূন্য, এই অল্প সময়ের মাধ্যমে কিভাবে এত টাকার মালিক বনে গেলেন!

কেউ কেউ বলছেন, এ টাকা আরাভের নয়। তার মাথার ওপর অন্য কেউ রয়েছেন। তবে কে সেই ব্যক্তি সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। বিভিন্ন সূত্র বলছে আরাভ খান যখন খুনের মামলার আসামি হন তখন তাকে রক্ষায় যে ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করেছেন তিনিই এই সম্পত্তি বা টাকার মালিক। যা আরাভের নামে দুবাইয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

কে সেই ব্যক্তি? তিনি পুলিশের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলে এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে। তবে রবিউল ইসলাম অর্থাৎ আরাভ খান ফেইসবুক লাইভে এসে তা অস্বীকার করেছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘পুলিশের পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার আসামি আরাভ। শুধু হত্যাই করেনি, তার লাশ যেন না পাওয়া যায় সেজন্য কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল।’

এই হত্যাকান্ডের পর মামলা হয়, যার তদন্ত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যা মামলায় আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে গেলেও অন্য একজনকে রবিউল বলে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। সে নিজেও তাকে রবিউল ইসলাম বলেই পরিচয় দেয়। তবে পরে বিচারিক প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে সে পুলিশ হত্যার আসামি রবিউল ইসলাম নয়। পরে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, আরাভ ভারতে পালিয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উদয় সংঘ ক্লাবের পাশে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। খুনের মামলায় আসামি হওয়ার পর পালিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ওঠেন কর্তাবাদ এলাকার নরেন্দ্রপুর বস্তিতে। সেই এলাকার বস্তির জনৈক জাকির হোসেনের বাড়িতে অবস্থান ছিল তার। জাকির ও তার স্ত্রী রেহানা বিবির সঙ্গে সখ্য গড়ে তাদের বাবা-মা বানিয়ে আরাভ তার নিজের ও স্ত্রীর ভারতীয় পাসপোর্ট বানান। তবে রেহানা বিবির দাবি, আধার কার্ড পেতে সহায়তা করলেও পাসপোর্ট তৈরির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যান। যে পাসপার্টে তিনি দুবাই যান সেই পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে ২০২০ সালে। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরাভ খান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তার বাবার নাম জাকির খান এবং মা রেহানা বিবি খান বলে উল্লেখ করা হয়। পাসপোর্টের মেয়াদ ২০৩০ সালের ২৭ জুলাই শেষ হবে। আরব আমিরাত সরকার ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর তাকে রেসিডেন্ট পারমিট দেয়। আগামী বছরের ৩০ অক্টোবর এই পারমিটের মেয়াদ শেষ হবে।

আরাভ খান আলোচনায় এসেছেন দুবাইয়ে হাজার কোটি টাকার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, টিকটক ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হিরো আলমসহ বিভিন্ন তারকা।

এই খবর ছড়ানোর পরই আরাভ খানের আসল চেহারা সামনে আসে। প্রশ্ন উঠতে থাকে তার হাজার কোটি টাকার স্বর্ণের দোকান, দুবাইয়ে অন্যান্য সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে। আর এই প্রশ্নের মধ্যেই তার মাথার ওপরে পুলিশের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন বলে গুঞ্জন চলছে।

বলা হচ্ছে, আরাভ খান ওই কর্মকর্তার সম্পর্কে আত্মীয়। আরাভ যখন পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তখন ওই কর্মকর্তা একটি ইউনিট প্রধান ছিলেন। তিনিই আরাভকে নানাভাবে সহায়তা করে ভারতে পালাতে সহায়তা করেন। এরপর দুবাইয়ে আরাভের মাধ্যমে ওই কর্মকর্তা হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। এই টাকা জুয়েলারি ও আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়।

যদিও গত বৃহস্পতিবার ফেইসবুক লাইভে এসে কথা বলেন আরাভ খান। ২২ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের লাইভে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে হেল্প করে ফ্লাইট করে দিয়েছেন-এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আপনারা কি কখনো শুনেছেন একটা পুলিশ মার্ডার কেসে আরেকটা পুলিশ হেল্প করবে? আমার সঙ্গে যে ভাইদের নাম বলছে, তারা কোনদিন কোনকিছুতে আমার সঙ্গে জড়িত না। একটা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, সেটা স্বাভাবিক। আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমার সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল।’ এই বিষয়ে নাম প্রকাশ করে পুলিশের মন্তব্য করতে চাননি।