বাউফলে আ’লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আহত ৫০

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গুলি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস উদ্যাপন করতে গিয়ে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতালেব হাওলাদার ও ৬ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

গুরুতর আহত অবস্থায় মোতালেব হাওলাদার ও রাবার বুলেটবিদ্ধ রিপন নামে এক সমর্থককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনার পর পৌর শহরে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে বাউফল উপজেলা পরিষদের গেট সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জসহ পুলিশ ২০ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন বাউফল থানার ওসি।

সূত্র জানায়, দিবসটি উপলক্ষে ৪ ভাগে বিভক্ত হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় জনতা ভবনে দিবসটি পালনের জন্য স্থান নির্ধারণ করেন। অন্যপক্ষ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারও একই স্থানে দিবসটি পালনের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আ স ম ফিরোজ সমর্থিত নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ছবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় জনতা ভবনে জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে মোতালেব হাওলাদারের নেতৃত্বে একটি মিছিল উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে দিয়ে জনতা ভবনে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রশাসন মিছিলে বাধা দেয়। এক পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে মোতালেব হাওলাদারের কর্মী-সমর্থকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময় ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এরপর চার পাঁচজন নেতাকর্মী নিয়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মোতালেব হাওলাদার আওয়ামী লীগ জনতা ভবনের দিকে যেতে চাইলে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে মোতালেব হাওলাদার আহত হয়। পড়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. সোয়েব মাহমুদ জানান, মোতালেব হাওলাদারের শরীরে বিভিন্ন অংশে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠির আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। এছাড়া রিপন নামের অন্য এক কর্মীর শরীরে একাধিক রাবার বুলেটের আঘাত থাকায় তাদের দুজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, গতকালকের অনুষ্ঠানের ব্যপারে দু’পক্ষকে একসঙ্গে বসানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা রাজি হননি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। শহরে সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বাউফল থানার ওসি আল মামুন বলেন, বাউফলে সব গ্রুপের র‌্যালি ঘোষণা করা হলে সবাইকে সময় বেঁধে দিয়ে স্ব-স্ব স্থান থেকে র‌্যালি বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয় জনতা ভবনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে লাঠিচার্জসহ ২০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।

এছাড়া পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল পৌর শহরের কুন্ডুপট্টি সড়কে তার দলীয় কার্যালয়ে ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এভিআর গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসিব আলম তালুকদার কাছিপাড়া আবদুর রসিদ ডিগ্রি কলেজ মাঠে দরিদ্রদের ফ্রি চিকিৎসার আয়োজন করেন।

শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩ , ০৪ চৈত্র ১৪২৯, ২৫ শবান ১৪৪৪

বাউফলে আ’লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আহত ৫০

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গুলি

প্রতিনিধি, বাউফল (পটুয়াখালী)

image

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস উদ্যাপন করতে গিয়ে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতালেব হাওলাদার ও ৬ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

গুরুতর আহত অবস্থায় মোতালেব হাওলাদার ও রাবার বুলেটবিদ্ধ রিপন নামে এক সমর্থককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনার পর পৌর শহরে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে বাউফল উপজেলা পরিষদের গেট সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জসহ পুলিশ ২০ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন বাউফল থানার ওসি।

সূত্র জানায়, দিবসটি উপলক্ষে ৪ ভাগে বিভক্ত হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় জনতা ভবনে দিবসটি পালনের জন্য স্থান নির্ধারণ করেন। অন্যপক্ষ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারও একই স্থানে দিবসটি পালনের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আ স ম ফিরোজ সমর্থিত নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ছবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় জনতা ভবনে জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে মোতালেব হাওলাদারের নেতৃত্বে একটি মিছিল উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে দিয়ে জনতা ভবনে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রশাসন মিছিলে বাধা দেয়। এক পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে মোতালেব হাওলাদারের কর্মী-সমর্থকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময় ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এরপর চার পাঁচজন নেতাকর্মী নিয়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মোতালেব হাওলাদার আওয়ামী লীগ জনতা ভবনের দিকে যেতে চাইলে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে মোতালেব হাওলাদার আহত হয়। পড়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. সোয়েব মাহমুদ জানান, মোতালেব হাওলাদারের শরীরে বিভিন্ন অংশে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠির আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। এছাড়া রিপন নামের অন্য এক কর্মীর শরীরে একাধিক রাবার বুলেটের আঘাত থাকায় তাদের দুজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, গতকালকের অনুষ্ঠানের ব্যপারে দু’পক্ষকে একসঙ্গে বসানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা রাজি হননি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। শহরে সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বাউফল থানার ওসি আল মামুন বলেন, বাউফলে সব গ্রুপের র‌্যালি ঘোষণা করা হলে সবাইকে সময় বেঁধে দিয়ে স্ব-স্ব স্থান থেকে র‌্যালি বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয় জনতা ভবনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে লাঠিচার্জসহ ২০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।

এছাড়া পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল পৌর শহরের কুন্ডুপট্টি সড়কে তার দলীয় কার্যালয়ে ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এভিআর গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসিব আলম তালুকদার কাছিপাড়া আবদুর রসিদ ডিগ্রি কলেজ মাঠে দরিদ্রদের ফ্রি চিকিৎসার আয়োজন করেন।