ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের আর অস্ত্র দেবে না ইরান

ইয়েমেনে শিয়াপন্থী হুথি বিদ্রোহীদের আর অস্ত্র সরবরাহ করবে না ইরান। চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিত্রতা পুনঃস্থাপনের পর দেশটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

প্রায় ৭ বছর বৈরিতা চলার পর চীনের মধ্যস্থতায় গত সপ্তাহে ফের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতির দুই বৃহৎ শক্তি সৌদি আরব এবং ইরান। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তারা। সেই চুক্তিতে ইয়েমেনের প্রঙ্গটিও ছিল। তেহরান জানিয়েছে, ইয়েমেনে চলমান গৃহযুদ্ধ অবসানে একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করতে এই চুক্তিটি সহায়ক হবে।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদিসমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। কারণ ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সহায়তা করছে সৌদি এবং হুথিদের প্রতিহত করতে ‘আরব জোট’ নামের একটি সামরিক জোটও গঠন করেছে দেশটি। জোটের প্রধান দুই দেশ ছিল সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। অন্যদিকে বিদ্রোহী হুথিদের শুরু থেকেই বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে ইরান।

ইরানের সরবরাহ করা বিভিন্ন সমরাস্ত্রের মধ্যে ক্রস-বর্ডার ক্ষেপণাস্ত্র ও আধুনিক চালকবিহীন যুদ্ধবিমান বা ড্রোনও ছিল। এসব অস্ত্র দিয়ে অনেক সময়ই সৌদি ও আমিরাতের অভ্যন্তরে হামলা চালাত হুথিরা।

উপসাগর ও আরব সাগরে টহল দেয়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনী গত ৮ বছরে বেশ কিছু ইরানি অস্ত্রের চালান আটক করেছে। হুথিদের জন্য সেসব অস্ত্রের চালান পাঠিয়েছিল ইরান।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তেহরান যদি হুথিদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে, তাহলে সশস্ত্র এই গোষ্ঠী ব্যাপক চাপে পড়বে, ফলে আত্মসমর্পণ বা সংঘাত বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না এই গোষ্ঠীর সামনে। ‘আমরা আশা করছি, ইয়েমেনে শীঘ্রই এ ব্যাপারটি (হুথিদের আত্মসমর্পণ) ঘটবে,’ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন এক সৌদি কর্মকর্তা।

শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩ , ০৪ চৈত্র ১৪২৯, ২৫ শবান ১৪৪৪

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের আর অস্ত্র দেবে না ইরান

image

ইয়েমেনে শিয়াপন্থী হুথি বিদ্রোহীদের আর অস্ত্র সরবরাহ করবে না ইরান। চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিত্রতা পুনঃস্থাপনের পর দেশটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

প্রায় ৭ বছর বৈরিতা চলার পর চীনের মধ্যস্থতায় গত সপ্তাহে ফের কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতির দুই বৃহৎ শক্তি সৌদি আরব এবং ইরান। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তারা। সেই চুক্তিতে ইয়েমেনের প্রঙ্গটিও ছিল। তেহরান জানিয়েছে, ইয়েমেনে চলমান গৃহযুদ্ধ অবসানে একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করতে এই চুক্তিটি সহায়ক হবে।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদিসমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। কারণ ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সহায়তা করছে সৌদি এবং হুথিদের প্রতিহত করতে ‘আরব জোট’ নামের একটি সামরিক জোটও গঠন করেছে দেশটি। জোটের প্রধান দুই দেশ ছিল সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। অন্যদিকে বিদ্রোহী হুথিদের শুরু থেকেই বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে ইরান।

ইরানের সরবরাহ করা বিভিন্ন সমরাস্ত্রের মধ্যে ক্রস-বর্ডার ক্ষেপণাস্ত্র ও আধুনিক চালকবিহীন যুদ্ধবিমান বা ড্রোনও ছিল। এসব অস্ত্র দিয়ে অনেক সময়ই সৌদি ও আমিরাতের অভ্যন্তরে হামলা চালাত হুথিরা।

উপসাগর ও আরব সাগরে টহল দেয়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনী গত ৮ বছরে বেশ কিছু ইরানি অস্ত্রের চালান আটক করেছে। হুথিদের জন্য সেসব অস্ত্রের চালান পাঠিয়েছিল ইরান।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তেহরান যদি হুথিদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে, তাহলে সশস্ত্র এই গোষ্ঠী ব্যাপক চাপে পড়বে, ফলে আত্মসমর্পণ বা সংঘাত বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না এই গোষ্ঠীর সামনে। ‘আমরা আশা করছি, ইয়েমেনে শীঘ্রই এ ব্যাপারটি (হুথিদের আত্মসমর্পণ) ঘটবে,’ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন এক সৌদি কর্মকর্তা।