শিশুদের মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের শিশুদের মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, তারাই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনগোষ্ঠী।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজকের শিশুদের এইটুকুই বলবো যে, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, শিক্ষকদের কথা মান্য করা, অভিভাবকদের কথা মান্য করা এবং প্রতিটি শিশুকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। সবাইকেই উন্নত মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন হতে হবে। যারা প্রতিবন্ধী বা অক্ষম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।’

শেখ হাসিনা গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাগাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩’ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় শিশু দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’।

তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে কোন শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না, কোন মানুষই ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হবে না, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আগামীর বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’

তার সরকার শিশুদের সুরক্ষার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আগামীতে ২০৪১ সালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়তে চাই এবং আজকের শিশুরাই হবে সেই আগামী দিনের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। যারা এই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে।

প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে আজকের শিশুদের উন্নত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, জাতির পিতা যেমন ফুটবল খেলতেন, তার দাদাও খেলতেন আর আমার ভাইয়েরা তো খেলতেনই। এমনকি ছেলেমেয়ে এবং নাতি-পুতিরাও খেলাধুলা করে। এজন্য তার সরকার আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতার নানারকম ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা খেরাধুলায় অংশগ্রহণ করলে শরীর ভালো থাকবে, মনমানসিকতা ভালো থাকবে এবং সবাই একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠবে। সেটাই আমি চাই।

‘অন্ধকে অন্ধ বলিও না, আর পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না- এটা তো ছোটবেলার শিক্ষা,’ কাজেই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমরা তাদের ভাতা দেই এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বৃত্তিও দিয়ে থাকি। কাজেই সবাই একই সমাজের, সবাই একই সংসারের।

তিনি বলেন, জাতির পিতা শিশুদের ভালোবাসতেন এবং শিশুদের জন্য তার অত্যন্ত দরদ ছিল এবং শিশুদের সঙ্গে খেলা করতেও তিনি ভালোবাসতেন। এজন্য তার জন্মদিনকে আমরা ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছি। কারণ শিশুরা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এবং তারা যেন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল। শিশুদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ছোট্ট স্বপ্নিল বিশ্বাস।

শিশু প্রতিনিধি স্নেহা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দুই শিশু রুবাবা তোহা জামান ও এ এল শরফুদ্দিন।

শুরুতে ‘বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন এবং জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতা এবং আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমানের লেখা ‘শিশুদের শেখ মুজিব’ শিরোনামের একটি সচিত্র বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাচিত সেরা চিত্রকর্মটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক হিসেবে উপহার দেয়া হয়।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ১শ’ অসচ্ছল শিক্ষার্থী আর্থিক অনুদান হিসেবে প্রত্যেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা করে লাভ করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা শেখ মুজিবের জন্মস্থান। এই মাটিতে তিনি জন্ম নিয়েছেন, বড় হয়েছেন এবং এই মাটিতেই তিনি শায়িত। নিজের জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য। তার ভেতর যে মানবিকতা রয়েছে, মানুষের প্রতি দরদ, শিশুকাল থেকেই সেটা দেখা গেছে। যখন স্কুলে পড়তেন তখন থেকেই দরিদ্র কোন শিক্ষার্থী যার বই নেই তাকে বই দিয়ে দিতেন। নিজের গায়ের কাপড় খুলে দরিদ্র মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলার ধান পর্যন্ত মানুষের মাঝে বিলিয়েছেন। তার ভেতর সেই মানবিকতা ছোটবেলা থেকেই আমার দাদা-দাদি লক্ষ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বড় হয়ে জাতির পিতা, যারা একেবারে শোষিত-বঞ্চিত ছিল, একবেলা খাবার পেত না, কোন পুষ্টি ছিল না, রোগে চিকিৎসা পেত না তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্যই আজীবন সংগ্রাম করেছেন।

আমরা আজ যে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে পারছি সেজন্য ১৯৪৮ সাল থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম জাতির পিতাই শুরু করেছিলেন। তারই নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা ও স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা কেবল স্বাধীনতাই এনে দেননি। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে মাত্র নয় মাসের মধ্যে যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানেই শিশু অধিকারের কথা বলা আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন। দুস্থ-অনাথ শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় শিশু আইন, ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন। তিনি এসব শিশুদের জন্য ‘কেয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে সরকারি শিশু পরিবার নামে পরিচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় সরকার গঠনের পর আমরা জাতীয় শিশু শ্রমনীতি, ২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০, জাতীয় শিশুনীতি, ২০১১, এবং মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৩-২০২৫), উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪, বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আইন, ২০১৮, বাল্য বিবাহ নিরোধকল্পে জাতীয় মহাপরিকল্পনা (২০১৮-২০৩০) এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০২০ প্রণয়ন করেছি।

শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩ , ০৪ চৈত্র ১৪২৯, ২৫ শবান ১৪৪৪

শিশুদের মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাসস

image

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আনন্দ প্রকাশ

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের শিশুদের মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, তারাই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনগোষ্ঠী।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজকের শিশুদের এইটুকুই বলবো যে, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, শিক্ষকদের কথা মান্য করা, অভিভাবকদের কথা মান্য করা এবং প্রতিটি শিশুকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। সবাইকেই উন্নত মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন হতে হবে। যারা প্রতিবন্ধী বা অক্ষম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।’

শেখ হাসিনা গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাগাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩’ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় শিশু দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’।

তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে কোন শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না, কোন মানুষই ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হবে না, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আগামীর বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’

তার সরকার শিশুদের সুরক্ষার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আগামীতে ২০৪১ সালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়তে চাই এবং আজকের শিশুরাই হবে সেই আগামী দিনের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। যারা এই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে।

প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে আজকের শিশুদের উন্নত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, জাতির পিতা যেমন ফুটবল খেলতেন, তার দাদাও খেলতেন আর আমার ভাইয়েরা তো খেলতেনই। এমনকি ছেলেমেয়ে এবং নাতি-পুতিরাও খেলাধুলা করে। এজন্য তার সরকার আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত খেলাধুলা ও প্রতিযোগিতার নানারকম ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা খেরাধুলায় অংশগ্রহণ করলে শরীর ভালো থাকবে, মনমানসিকতা ভালো থাকবে এবং সবাই একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠবে। সেটাই আমি চাই।

‘অন্ধকে অন্ধ বলিও না, আর পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না- এটা তো ছোটবেলার শিক্ষা,’ কাজেই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমরা তাদের ভাতা দেই এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বৃত্তিও দিয়ে থাকি। কাজেই সবাই একই সমাজের, সবাই একই সংসারের।

তিনি বলেন, জাতির পিতা শিশুদের ভালোবাসতেন এবং শিশুদের জন্য তার অত্যন্ত দরদ ছিল এবং শিশুদের সঙ্গে খেলা করতেও তিনি ভালোবাসতেন। এজন্য তার জন্মদিনকে আমরা ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছি। কারণ শিশুরা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এবং তারা যেন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল। শিশুদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ছোট্ট স্বপ্নিল বিশ্বাস।

শিশু প্রতিনিধি স্নেহা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দুই শিশু রুবাবা তোহা জামান ও এ এল শরফুদ্দিন।

শুরুতে ‘বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন এবং জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতা এবং আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমানের লেখা ‘শিশুদের শেখ মুজিব’ শিরোনামের একটি সচিত্র বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাচিত সেরা চিত্রকর্মটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক হিসেবে উপহার দেয়া হয়।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ১শ’ অসচ্ছল শিক্ষার্থী আর্থিক অনুদান হিসেবে প্রত্যেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা করে লাভ করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা শেখ মুজিবের জন্মস্থান। এই মাটিতে তিনি জন্ম নিয়েছেন, বড় হয়েছেন এবং এই মাটিতেই তিনি শায়িত। নিজের জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য। তার ভেতর যে মানবিকতা রয়েছে, মানুষের প্রতি দরদ, শিশুকাল থেকেই সেটা দেখা গেছে। যখন স্কুলে পড়তেন তখন থেকেই দরিদ্র কোন শিক্ষার্থী যার বই নেই তাকে বই দিয়ে দিতেন। নিজের গায়ের কাপড় খুলে দরিদ্র মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলার ধান পর্যন্ত মানুষের মাঝে বিলিয়েছেন। তার ভেতর সেই মানবিকতা ছোটবেলা থেকেই আমার দাদা-দাদি লক্ষ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বড় হয়ে জাতির পিতা, যারা একেবারে শোষিত-বঞ্চিত ছিল, একবেলা খাবার পেত না, কোন পুষ্টি ছিল না, রোগে চিকিৎসা পেত না তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্যই আজীবন সংগ্রাম করেছেন।

আমরা আজ যে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে পারছি সেজন্য ১৯৪৮ সাল থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম জাতির পিতাই শুরু করেছিলেন। তারই নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা ও স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা কেবল স্বাধীনতাই এনে দেননি। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে মাত্র নয় মাসের মধ্যে যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানেই শিশু অধিকারের কথা বলা আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন। দুস্থ-অনাথ শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় শিশু আইন, ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন। তিনি এসব শিশুদের জন্য ‘কেয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে সরকারি শিশু পরিবার নামে পরিচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় সরকার গঠনের পর আমরা জাতীয় শিশু শ্রমনীতি, ২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০, জাতীয় শিশুনীতি, ২০১১, এবং মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৩-২০২৫), উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪, বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আইন, ২০১৮, বাল্য বিবাহ নিরোধকল্পে জাতীয় মহাপরিকল্পনা (২০১৮-২০৩০) এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০২০ প্রণয়ন করেছি।