সংবিধান ‘কাটাছেঁড়া’ তো করেছে বিএনপি : কাদের

আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিই সংবিধান ‘কাটাছেঁড়া করে ক্ষতবিক্ষত করেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে ধানমন্ডিতে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরপর রচিত বাহাত্তরের সংবিধান ‘কাটাছেঁড়া করা’ নিয়ে আক্ষেপ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার এক সপ্তাহ পর এই পাল্টা অভিযোগ আনলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের জানিয়ে দিলেন, এই সংবিধান ‘এই মুহূর্তে আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়’। কাজেই শাসনতন্ত্রে যেভাবে বলা আছে, ঠিক সেভাবেই ভোট হবে।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিএনপির দাবি নাকচ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের আলোকেই আগামী নির্বাচন হবে। যা আছে আমরা তা নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। সংবিধানের কোন সংশোধন কোন পরিবর্তন কিছুতেই সম্ভব নয়।’

বিএনপি সরকার অতীতে সংবিধানকে ‘কাটাছেঁড়া করেছে, কলমের খোঁচায় সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে’ এমন মন্তব্যও করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘তারাই (বিএনপি) সংবিধানের ওপর আঘাত এনেছে, সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানকে অক্ষত রেখে সংবিধানের আলোকে আগামী নির্বাচন করতে চাই।’

বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত ১০ মার্চ কথা বলেন ফখরুল। সেদিন এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। তাদের একটাও ভালো কাজ নেই। তারা এই দেশের সমাজকে দুই ভাগে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে।’

‘একটি বড় ক্ষতি হচ্ছে, আমাদের যে সংবিধান ১৯৭২ সালে এই দেশের মানুষ রচনা করেছিল, যে সংবিধান সবাই মেনে নিয়েছিল, সেই সংবিধানকে তারা বারবার কাটাছেঁড়া করে একটা অকার্যকর সংবিধানে পরিণত করেছে।’

মুক্তিযুদ্ধে জয়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রচনা হয় দেশের প্রথম সংবিধান। তাতে চার মূলনীতি ছিল- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। এর মধ্যে বিএনপি স্পষ্টতই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পক্ষে নয়। এই সংবিধানের আলোকে ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ করা হলেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময় সে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত সংবিধানে মোট ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে হয় তিনটি সংশোধনী। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে করেন একটি, তাকে হত্যার পর বিএনপির আমলে হয় আরও একটি।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পর সংশোধনী আসে চারটি। তার পদত্যাগের পর প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি হয়ে নির্বাচন শেষে আবার পদে পাওয়ার বিষয়টি বৈধতা দেয়ার জন্য আসে আরও একটি সংশোধনী। খালেদা জিয়ার দুইবারের মেয়াদে সংবিধান সংশোধন হয় মোট তিন দফা। আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর হয় আরও তিনটি সংশোধনী। এরমধ্যে ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের বিধানে ফিরে আসে। বিএনপি এর তীব্র বিরোধিতা করে।

দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বিরোধ পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে ২০১১ সালে যে সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এর আগে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে বিএনপি দাবি করছে, নির্বাচনকালীন সেই সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ বলছে, উচ্চ আদালতের আয়ে এই সরকারের বিষয়টি চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে গেছে। কাজেই তা আর সম্ভব নয়।

ওবায়দুল কাদের কথা বলেন বাংলাদেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ‘স্বপ্ন’ নিয়েও। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল দুটি। একটি হলো স্বাধীনতা, আর একটি হলো মুক্তি। স্বাধীনতার আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জন করেছি। কিন্তু এখন আমাদের মুক্তির সংগ্রাম চলছে। এই মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী সাম্প্রদায়িক শক্তি ও জঙ্গিবাবাদদের বিষবিক্ষকে সম্পূর্ণভাবে আমরা উপড়ে দেব।’

শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩ , ০৪ চৈত্র ১৪২৯, ২৫ শবান ১৪৪৪

সংবিধান ‘কাটাছেঁড়া’ তো করেছে বিএনপি : কাদের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিই সংবিধান ‘কাটাছেঁড়া করে ক্ষতবিক্ষত করেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে ধানমন্ডিতে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরপর রচিত বাহাত্তরের সংবিধান ‘কাটাছেঁড়া করা’ নিয়ে আক্ষেপ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার এক সপ্তাহ পর এই পাল্টা অভিযোগ আনলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের জানিয়ে দিলেন, এই সংবিধান ‘এই মুহূর্তে আর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়’। কাজেই শাসনতন্ত্রে যেভাবে বলা আছে, ঠিক সেভাবেই ভোট হবে।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিএনপির দাবি নাকচ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের আলোকেই আগামী নির্বাচন হবে। যা আছে আমরা তা নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। সংবিধানের কোন সংশোধন কোন পরিবর্তন কিছুতেই সম্ভব নয়।’

বিএনপি সরকার অতীতে সংবিধানকে ‘কাটাছেঁড়া করেছে, কলমের খোঁচায় সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে’ এমন মন্তব্যও করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘তারাই (বিএনপি) সংবিধানের ওপর আঘাত এনেছে, সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানকে অক্ষত রেখে সংবিধানের আলোকে আগামী নির্বাচন করতে চাই।’

বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত ১০ মার্চ কথা বলেন ফখরুল। সেদিন এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। তাদের একটাও ভালো কাজ নেই। তারা এই দেশের সমাজকে দুই ভাগে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে।’

‘একটি বড় ক্ষতি হচ্ছে, আমাদের যে সংবিধান ১৯৭২ সালে এই দেশের মানুষ রচনা করেছিল, যে সংবিধান সবাই মেনে নিয়েছিল, সেই সংবিধানকে তারা বারবার কাটাছেঁড়া করে একটা অকার্যকর সংবিধানে পরিণত করেছে।’

মুক্তিযুদ্ধে জয়ের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রচনা হয় দেশের প্রথম সংবিধান। তাতে চার মূলনীতি ছিল- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। এর মধ্যে বিএনপি স্পষ্টতই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পক্ষে নয়। এই সংবিধানের আলোকে ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ করা হলেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময় সে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত সংবিধানে মোট ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে হয় তিনটি সংশোধনী। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে করেন একটি, তাকে হত্যার পর বিএনপির আমলে হয় আরও একটি।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পর সংশোধনী আসে চারটি। তার পদত্যাগের পর প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি হয়ে নির্বাচন শেষে আবার পদে পাওয়ার বিষয়টি বৈধতা দেয়ার জন্য আসে আরও একটি সংশোধনী। খালেদা জিয়ার দুইবারের মেয়াদে সংবিধান সংশোধন হয় মোট তিন দফা। আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর হয় আরও তিনটি সংশোধনী। এরমধ্যে ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের বিধানে ফিরে আসে। বিএনপি এর তীব্র বিরোধিতা করে।

দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বিরোধ পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে ২০১১ সালে যে সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। এর আগে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে বিএনপি দাবি করছে, নির্বাচনকালীন সেই সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ বলছে, উচ্চ আদালতের আয়ে এই সরকারের বিষয়টি চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে গেছে। কাজেই তা আর সম্ভব নয়।

ওবায়দুল কাদের কথা বলেন বাংলাদেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ‘স্বপ্ন’ নিয়েও। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল দুটি। একটি হলো স্বাধীনতা, আর একটি হলো মুক্তি। স্বাধীনতার আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জন করেছি। কিন্তু এখন আমাদের মুক্তির সংগ্রাম চলছে। এই মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী সাম্প্রদায়িক শক্তি ও জঙ্গিবাবাদদের বিষবিক্ষকে সম্পূর্ণভাবে আমরা উপড়ে দেব।’