চুরির অপবাদে গাছে ঝুলিয়ে হাত-পা বেঁধে যুবককে নির্যাতন

গাজীপুরের শ্রীপুরে মধ্যযুগীয় কায়দায় গাছের ডালে হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে এক যুবককে বেধম পিটিয়েছে চুরির অভিযোগ এনে। এ সময় এমন দৃশ্য দেখতে অন্তত শতাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে এ মারধর প্রত্যক্ষ করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি অসহায় যুবকের পক্ষে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। বেধড়ক মারধরের একটি ভিডিও এরি মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে

ছড়িয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের দমদমা গ্রামে এ বর্বর নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় নির্যাতনে শিকার যুবককে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ কোন অভিযোগ পায়নি বলে

জানিয়েছেন।

নির্যাতনে শিকার যুবকের নাম আরিফুল ইসলাম খান (২৫)। সে ওই গ্রামের উসমান আলী খানের ছেলে। তাদের অভিযোগ টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে

তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় যুবলীগ নেতা কাউসার আহম্মেদ বাগমার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এ সময় তাদের ভয়ে নির্যাতনে শিকার যুবককে কেউ সাহায্য করা বা উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেনি।

অভিযুক্ত যুবলীগের আহ্বায়ক সদস্যের নাম কাউসার আহম্মেদ বাগমার। সে ওই গ্রামের আফসার উদ্দীন বাগমারের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে গত বৃহস্পতিবার সকালের একটু পরে আরিফকে বাড়ি থেকে

ধরে আনে কাউসার আহম্মেদ বাগমার ও তার লোকজন। এর আগে পাশের ডাক্তারের একটি বাংলো বাড়ির পাশে রাখা একটি প্রাইভেটকারের (আবদুল কাইয়ূমের গাড়ি) গ্লাস ভেঙে কেউ সে গাড়ির ভিতরে রাখা টাকা চুরি করেছে। এ চুরির দায় চাপায় আরিফুলের ওপর। পরে তার কাছে জানতে চায় টাকার চুরির ব্যাপারে। এ সময় আরিফ টাকা চুরি করেনি বলে নিশ্চিত করে। কিন্তু তারা তার কথায় আস্থা না পেয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধড়ক পেটায়। এ সময় মেহেদি কাউসাসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা দফায় দফায় পেটায়। এ সময় আরিফ উচ্চস্বরে কান্না করে হাতে পায়ে ধরলেও তাদের

কোন মায়া হয়নি। চলে বেধম মারধর। থেমে থেমে কয়েক দফা তাকে বেধম পিটানো হয়েছে। এক সময় আরিফ প্রায় জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তারা বলেন এ সময় শতাধিক মানুষ এ মারধরের ঘটনা দেখলেও কেউ নির্যাতনকারীদের ভয়ে আরিফকে সহায়তা করতে পারেনি। এক সময় নির্যাতনকারীরা চলে গেলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আরিফের স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন আরিফ বাড়িতে শুয়ে ছিল। এ সময় বেশ কজন লোক এসে তাকে নিয়ে যায়। পরে কাছেই খান বাড়ির কাঁঠাল বাগানে নিয়ে চুরি ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় আরিফ চুরির ব্যাপারটি অস্বীকার করে। এক সময় তারা ক্ষীপ্ত হয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধম মারধর করে। আমরা এগিয়ে গেলে আমাদেরও মারধরের হুমকি দেয়। ঘটনার পর মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে নির্যাতনকারীরা গা ডাকা দিয়েছে।

আরিফের বাবা উসমান আলী খান জানান, আমরা কোন কিছুই বুঝতে পারিনি। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিনা অপরাধে গাছে ঝুলিয়ে আমার ছেলেকে অনেক পিটিয়েছে। আমার ছেলের দুটি পা মনে হয় ভেঙে গেছে। এমন অমানবিক নির্যাচনের বিচার চাই। আমার ছেলে অপরাধী হলে আইনের মাধ্যমে বিচার করা হোক। কিন্তু আইন না মেনে এমন মারধর কেন করা হলো তারও বিচার দাবি করছি। এ কেমন অবিচার বিনা দোষে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ইচ্ছেমত মারধরা করা?

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, চুরির অভিযোগে আরিফকে মারধর করা হয়েছে এমন খবর আমার কাছে তার স্বজনরা জানিয়েছে। তিনি বলেন আহত আরিফকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর জন্য তার স্বজনদের বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা কাউসার আহম্মেদ বাগমারের সঙ্গে যোগোযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কমর উদ্দীন জানান, কাউসার বাগমার ইউনিয়ন যুবলীগ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি বলেন এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুর রহমান বলেন, এমন কোন খবর আমরা এখনও পাইনি। তিনি বলেন এমন জরুরি প্রয়োজনে পুলিশের কাছ থেকে দ্রুত সহযোগিতা পেতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ যোগাযোগ করলে পুলিশ সহজেই সহযোগিতা করতে পারে। তবে বিষয়টি র্স্পকাতর আমরা গুরুত্ব দিয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩ , ০৪ চৈত্র ১৪২৯, ২৫ শবান ১৪৪৪

চুরির অপবাদে গাছে ঝুলিয়ে হাত-পা বেঁধে যুবককে নির্যাতন

প্রতিনিধি, শ্রীপুর

গাজীপুরের শ্রীপুরে মধ্যযুগীয় কায়দায় গাছের ডালে হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে এক যুবককে বেধম পিটিয়েছে চুরির অভিযোগ এনে। এ সময় এমন দৃশ্য দেখতে অন্তত শতাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে এ মারধর প্রত্যক্ষ করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি অসহায় যুবকের পক্ষে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। বেধড়ক মারধরের একটি ভিডিও এরি মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে

ছড়িয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের দমদমা গ্রামে এ বর্বর নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় নির্যাতনে শিকার যুবককে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ কোন অভিযোগ পায়নি বলে

জানিয়েছেন।

নির্যাতনে শিকার যুবকের নাম আরিফুল ইসলাম খান (২৫)। সে ওই গ্রামের উসমান আলী খানের ছেলে। তাদের অভিযোগ টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে

তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় যুবলীগ নেতা কাউসার আহম্মেদ বাগমার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এ সময় তাদের ভয়ে নির্যাতনে শিকার যুবককে কেউ সাহায্য করা বা উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেনি।

অভিযুক্ত যুবলীগের আহ্বায়ক সদস্যের নাম কাউসার আহম্মেদ বাগমার। সে ওই গ্রামের আফসার উদ্দীন বাগমারের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে গত বৃহস্পতিবার সকালের একটু পরে আরিফকে বাড়ি থেকে

ধরে আনে কাউসার আহম্মেদ বাগমার ও তার লোকজন। এর আগে পাশের ডাক্তারের একটি বাংলো বাড়ির পাশে রাখা একটি প্রাইভেটকারের (আবদুল কাইয়ূমের গাড়ি) গ্লাস ভেঙে কেউ সে গাড়ির ভিতরে রাখা টাকা চুরি করেছে। এ চুরির দায় চাপায় আরিফুলের ওপর। পরে তার কাছে জানতে চায় টাকার চুরির ব্যাপারে। এ সময় আরিফ টাকা চুরি করেনি বলে নিশ্চিত করে। কিন্তু তারা তার কথায় আস্থা না পেয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধড়ক পেটায়। এ সময় মেহেদি কাউসাসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা দফায় দফায় পেটায়। এ সময় আরিফ উচ্চস্বরে কান্না করে হাতে পায়ে ধরলেও তাদের

কোন মায়া হয়নি। চলে বেধম মারধর। থেমে থেমে কয়েক দফা তাকে বেধম পিটানো হয়েছে। এক সময় আরিফ প্রায় জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তারা বলেন এ সময় শতাধিক মানুষ এ মারধরের ঘটনা দেখলেও কেউ নির্যাতনকারীদের ভয়ে আরিফকে সহায়তা করতে পারেনি। এক সময় নির্যাতনকারীরা চলে গেলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আরিফের স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন আরিফ বাড়িতে শুয়ে ছিল। এ সময় বেশ কজন লোক এসে তাকে নিয়ে যায়। পরে কাছেই খান বাড়ির কাঁঠাল বাগানে নিয়ে চুরি ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় আরিফ চুরির ব্যাপারটি অস্বীকার করে। এক সময় তারা ক্ষীপ্ত হয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধম মারধর করে। আমরা এগিয়ে গেলে আমাদেরও মারধরের হুমকি দেয়। ঘটনার পর মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হলে নির্যাতনকারীরা গা ডাকা দিয়েছে।

আরিফের বাবা উসমান আলী খান জানান, আমরা কোন কিছুই বুঝতে পারিনি। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিনা অপরাধে গাছে ঝুলিয়ে আমার ছেলেকে অনেক পিটিয়েছে। আমার ছেলের দুটি পা মনে হয় ভেঙে গেছে। এমন অমানবিক নির্যাচনের বিচার চাই। আমার ছেলে অপরাধী হলে আইনের মাধ্যমে বিচার করা হোক। কিন্তু আইন না মেনে এমন মারধর কেন করা হলো তারও বিচার দাবি করছি। এ কেমন অবিচার বিনা দোষে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ইচ্ছেমত মারধরা করা?

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, চুরির অভিযোগে আরিফকে মারধর করা হয়েছে এমন খবর আমার কাছে তার স্বজনরা জানিয়েছে। তিনি বলেন আহত আরিফকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর জন্য তার স্বজনদের বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা কাউসার আহম্মেদ বাগমারের সঙ্গে যোগোযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কমর উদ্দীন জানান, কাউসার বাগমার ইউনিয়ন যুবলীগ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি বলেন এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুর রহমান বলেন, এমন কোন খবর আমরা এখনও পাইনি। তিনি বলেন এমন জরুরি প্রয়োজনে পুলিশের কাছ থেকে দ্রুত সহযোগিতা পেতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ যোগাযোগ করলে পুলিশ সহজেই সহযোগিতা করতে পারে। তবে বিষয়টি র্স্পকাতর আমরা গুরুত্ব দিয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।