পৌরসভায় ঢুকে মেয়রকে গুলি করার হুমকি দিলেন আ’লীগ সম্পাদক মুছা

যশোরের ঝিকরগাছার পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামালকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ গত ১৫ মার্চ পৌরসভা কার্যালয়ে ঢুকে হত্যার হুমিক দেন বলে দাবি করেছেন মেয়র। গতকাল দুপুর ১২টায় যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন।

মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, এ ঘটনায় তিনি ঝিকরগাছা থানা পুলিশ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। এখন পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি নিরাপত্তার অভাববোধ করেছেন। এর আগে তিনি পৌর পরিষদের সভা করেছেন। পৌর পরিষদের সিদ্ধান্তে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এ সময় ১১ জন পৌর কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে মেয়র বলেন, গত ১৫ মার্চ সাড়ে ১১টার দিকে পৌরসভায় নিজ কার্যালয়ে থাকার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ কক্ষে ঢুকে সবাইকে বের করে দেন। অফিস কক্ষে ঢোকার মুখে ৭/৮ ক্যাডারকে বাইরে (কক্ষের সামনে) দাঁড় করিয়ে রাখেন। সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু মুছা মাহমুদ নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার পর থেকে তার সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ রয়েছে। এদিন অফিসে ঢুকে সরকারি কাজে বাধা ও আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।

কী কারণে হত্যার হুমকি দেয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, শহরের সাবেক বোটঘাট এলাকায় পাঁচ শতকের একটি সরকারি সম্পত্তি ডিসিআর না কেটেই মুছা মাহমুদের নেতৃত্বে দখল করে নেয়া হয়েছে। এতোদিন তালাবদ্ধ থাকলেও সেটা খোলা অবস্থায় দেখে আমি পৌর কার্যালয়ে এসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে কেউ ডিসিআর কেটে নিয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। এর ঘণ্টাখানেক পরে এসে মুছা মাহমুদ গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।

তবে হুমকির বিষয়টি সত্য নয় দাবি করেছেন মুছা মাহমুদ। তার দাবি, ওই জমি আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত অফিসের। যুবলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেনসহ কয়েকজন অফিস খুলে বসেছিলেন। পৌর মেয়র সেখানে গিয়ে তাদের গালিগালাজ করেন। সেখানে পৌর মেয়র ব্যক্তিগত অফিস বানাতে চান। এ বিষয় জানতে তিনি পৌরসভায় মেয়রের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্ত মেয়র পিস্তল বের করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। এসব বিষয় উল্লেখ করে তিনি ঘটনার পরদিন ১৬ মার্চ ঝিকরগাছা থানায় জিডি করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, ওই সম্পত্তিতে আওয়ামী লীগের অফিস করার জন্য তারাই চেষ্টা করছেন। ডিসিআর প্রাপ্তির জন্য তিনিসহ স্থানীয় এমপি ডা. নাসির উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা রমজান শরীফ বাদশা যৌথ স্বাক্ষর করে আবেদন করেছেন। গুলি করে হত্যার হুমকির বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে এখানে আওয়ামী লীগের অফিস প্রসঙ্গটি আনা হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে মেয়র আরও বলেন, মুছা মাহমুদ আওয়ামী লীগের লেবাসধারী সন্ত্রাসী। ২০১০ সালে তিনি শার্শা থানার তৎকালীন ওসিকে পিটিয়েছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুছা মাহমুদের ক্যাডারদের নির্যাতনে শিকার হয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বাপ্পী, মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

ঝিকরগাছা থানার ওসি সুমন ভক্ত বলেন, ‘পৌর মেয়রের অভিযোগ পেয়েছি। দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের অপেক্ষা করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, মেয়র ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মুছা মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক। আমরা উভয়ের কাছ থেকে ঘটনা শুনেছি। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩ , ০৪ চৈত্র ১৪২৯, ২৫ শবান ১৪৪৪

পৌরসভায় ঢুকে মেয়রকে গুলি করার হুমকি দিলেন আ’লীগ সম্পাদক মুছা

যশোর অফিস

যশোরের ঝিকরগাছার পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামালকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ গত ১৫ মার্চ পৌরসভা কার্যালয়ে ঢুকে হত্যার হুমিক দেন বলে দাবি করেছেন মেয়র। গতকাল দুপুর ১২টায় যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন।

মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, এ ঘটনায় তিনি ঝিকরগাছা থানা পুলিশ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। এখন পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি নিরাপত্তার অভাববোধ করেছেন। এর আগে তিনি পৌর পরিষদের সভা করেছেন। পৌর পরিষদের সিদ্ধান্তে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এ সময় ১১ জন পৌর কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে মেয়র বলেন, গত ১৫ মার্চ সাড়ে ১১টার দিকে পৌরসভায় নিজ কার্যালয়ে থাকার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ কক্ষে ঢুকে সবাইকে বের করে দেন। অফিস কক্ষে ঢোকার মুখে ৭/৮ ক্যাডারকে বাইরে (কক্ষের সামনে) দাঁড় করিয়ে রাখেন। সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু মুছা মাহমুদ নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার পর থেকে তার সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ রয়েছে। এদিন অফিসে ঢুকে সরকারি কাজে বাধা ও আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।

কী কারণে হত্যার হুমকি দেয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, শহরের সাবেক বোটঘাট এলাকায় পাঁচ শতকের একটি সরকারি সম্পত্তি ডিসিআর না কেটেই মুছা মাহমুদের নেতৃত্বে দখল করে নেয়া হয়েছে। এতোদিন তালাবদ্ধ থাকলেও সেটা খোলা অবস্থায় দেখে আমি পৌর কার্যালয়ে এসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে কেউ ডিসিআর কেটে নিয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। এর ঘণ্টাখানেক পরে এসে মুছা মাহমুদ গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।

তবে হুমকির বিষয়টি সত্য নয় দাবি করেছেন মুছা মাহমুদ। তার দাবি, ওই জমি আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত অফিসের। যুবলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেনসহ কয়েকজন অফিস খুলে বসেছিলেন। পৌর মেয়র সেখানে গিয়ে তাদের গালিগালাজ করেন। সেখানে পৌর মেয়র ব্যক্তিগত অফিস বানাতে চান। এ বিষয় জানতে তিনি পৌরসভায় মেয়রের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্ত মেয়র পিস্তল বের করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। এসব বিষয় উল্লেখ করে তিনি ঘটনার পরদিন ১৬ মার্চ ঝিকরগাছা থানায় জিডি করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, ওই সম্পত্তিতে আওয়ামী লীগের অফিস করার জন্য তারাই চেষ্টা করছেন। ডিসিআর প্রাপ্তির জন্য তিনিসহ স্থানীয় এমপি ডা. নাসির উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা রমজান শরীফ বাদশা যৌথ স্বাক্ষর করে আবেদন করেছেন। গুলি করে হত্যার হুমকির বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে এখানে আওয়ামী লীগের অফিস প্রসঙ্গটি আনা হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে মেয়র আরও বলেন, মুছা মাহমুদ আওয়ামী লীগের লেবাসধারী সন্ত্রাসী। ২০১০ সালে তিনি শার্শা থানার তৎকালীন ওসিকে পিটিয়েছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুছা মাহমুদের ক্যাডারদের নির্যাতনে শিকার হয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বাপ্পী, মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

ঝিকরগাছা থানার ওসি সুমন ভক্ত বলেন, ‘পৌর মেয়রের অভিযোগ পেয়েছি। দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের অপেক্ষা করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, মেয়র ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মুছা মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক। আমরা উভয়ের কাছ থেকে ঘটনা শুনেছি। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।