সাভার : টোকেন দিয়ে অটোরিকশায় চাঁদাবাজি, মাসে আয় অর্ধকোটি টাকা

ঢাকার অদূরেই সাভার উপজেলার তেতুলঝরা ইউনিয়নে হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ডে টোকেন দিয়ে অটোরিকশা থেকে স্বপ্না ওরফে সুমন ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে চলাচল করা অটোরিকশাগুলো থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া ওইসব অটোরিকশা থেকে মাসিক হারেও চাঁদা তোলে ওই সংঘবদ্ধ চক্র। ইতোমধ্যে অটোরিকশায় চাঁদা আদায়ের অভিযোগে সাভার থানায় মামলাও হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অটোরিকশা মূলত হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ড থেকে ট্যানারি, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, শামপুর ও আলীপুর পর্যন্ত চলাচল করে। এই লাইনে চালাতে অটোরিকশা চালকদের মাসে ৩০০ টাকা চাঁদা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। এছাড়া প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দিতে হয় লাইন নিয়ন্ত্রকদের। প্রতি মাসে অটোরিকশার জন্য আলাদা আলাদা টোকেনও রয়েছে। এছাড়া অন্য এলাকা থেকে কোন অটোরিকশা এলে সেগুলোর কাছ থেকেও কৌশলে পাঁচশ’ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ।

হিসাব কষলে দেখা যায় ওই স্ট্যান্ডে চলাচল করা দেড় হাজার অটোরিকশা থেকে মাসে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আদায় করে সুমন গং। ফলে অটোরিকশার লাইন নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ‘সন্ত্রাসীদের’ শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি চলে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া। এর ফলে তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ অটোরিকশা চালকরা। ইতোমধ্যে ওই টোকেনের কয়েকটি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

একজন চালক জানান, হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ড থেকে ট্যানারি ও সিঙ্গাইর পর্যন্ত প্রায় তিন বছর ধরে লেগুনা চালিয়ে আসছেন। ওই স্ট্যান্ডের এলাকায় তাকে প্রতিদিন ৫০-৮০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।

আরেকজন বলেন, এই স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে স্বপ্না ওরফে সুমন। এই সুমনের হেমায়েতপুরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন দিয়ে মাসোয়ারার ভিত্তিতে এই কাজ করায়। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া এই সুমন চাঁদাবাজি করেই কোটি কোটি টাকার মালিক বলে তার অভিযোগ। শোনা যায়, সুমন দুই এক মাস পর পরই দেশের বাইরে যায়।

আরও কয়েকজন অটোরিকশাচালক জানান, তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনেক কষ্টে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন অটোরিকশা চালিয়ে যে আয় হয় তাতে তাদের সংসার চালাতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। অথচ স্থানীয় নেতার লোকজন প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা ও প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ করেন তারা।

তারা আরও বলেন, প্রতি মাসে অটোরিকশায় একটি টোকেন নম্বর দেয়া হয়। ওই টোকেন না থাকলে কেউ এই এলাকায় সড়কে অটো চালাতে পারে না। এছাড়া টাকা না দিলে তাদের অটোরিকশা আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে তো এলাকায় থাকতে দিবে না বলেও অভিযোগ তাদের। নিরাপত্তার কারণে কারও নাম উল্লেখ করা হলো না।

ইতোমধ্যে ওই লাইনে চাঁদা নেয়াকে কেন্দ্র করে গত বছরের ডিসেম্বরে সাভার থানায় একটি মামলাও হয়েছে। মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আসামিরা হলেন মো. বাহাদুর (৪৫), মো. রফিকুল ইসলাম (৩৫), আবদুর রহিম (২৮), রিপন (৪৫), মো. আজাদ (২৭) ও নজরুল ইসলাম (৩৮)।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, হেমায়েতপুর এলাকায় অটো চালাতে গেলে মাসিক দুই হাজার টাকা ও দৈনিক ৫০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে না চাওয়ায় গাড়ি ভাঙচুর, হুমকি-ধমকি ও মারপিট করে।

বাদীর কাছ থেকে জোর করে চাঁদা নেয়ার পর র‌্যাবের টহল টিমকে বিষয়টি জানালে ওই টিম চাঁদার টাকাসহ ধরে ফেলে। পরে ৩৮৫ ও ৩৮৬ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা হয়। মামলা নং ৬৩।

এ বিষয়ে সাভার দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন খান নঈম সংবাদকে বলেন, ‘আমরা যেভাবে শুনি রাস্তায় যেভাবে জিম্মি করা হয় তা গোপনভাবে করে। এটা কয়েকটা ভাগে মালিক সমিতির চাঁদার নামে, শ্রমিকদের ফেয়্যারওয়েলের নামে করে থাকে।

এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘কোন জায়গায় অন্যায়ভাবে কোন চাঁদাবাজি সুযোগ নেই। যদি কেউ করে সুনিদিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩ , ০৪ চৈত্র ১৪২৯, ২৫ শবান ১৪৪৪

সাভার : টোকেন দিয়ে অটোরিকশায় চাঁদাবাজি, মাসে আয় অর্ধকোটি টাকা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ঢাকার অদূরেই সাভার উপজেলার তেতুলঝরা ইউনিয়নে হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ডে টোকেন দিয়ে অটোরিকশা থেকে স্বপ্না ওরফে সুমন ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে চলাচল করা অটোরিকশাগুলো থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া ওইসব অটোরিকশা থেকে মাসিক হারেও চাঁদা তোলে ওই সংঘবদ্ধ চক্র। ইতোমধ্যে অটোরিকশায় চাঁদা আদায়ের অভিযোগে সাভার থানায় মামলাও হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অটোরিকশা মূলত হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ড থেকে ট্যানারি, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, শামপুর ও আলীপুর পর্যন্ত চলাচল করে। এই লাইনে চালাতে অটোরিকশা চালকদের মাসে ৩০০ টাকা চাঁদা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। এছাড়া প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দিতে হয় লাইন নিয়ন্ত্রকদের। প্রতি মাসে অটোরিকশার জন্য আলাদা আলাদা টোকেনও রয়েছে। এছাড়া অন্য এলাকা থেকে কোন অটোরিকশা এলে সেগুলোর কাছ থেকেও কৌশলে পাঁচশ’ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ।

হিসাব কষলে দেখা যায় ওই স্ট্যান্ডে চলাচল করা দেড় হাজার অটোরিকশা থেকে মাসে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আদায় করে সুমন গং। ফলে অটোরিকশার লাইন নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ‘সন্ত্রাসীদের’ শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি চলে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া। এর ফলে তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ অটোরিকশা চালকরা। ইতোমধ্যে ওই টোকেনের কয়েকটি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

একজন চালক জানান, হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ড থেকে ট্যানারি ও সিঙ্গাইর পর্যন্ত প্রায় তিন বছর ধরে লেগুনা চালিয়ে আসছেন। ওই স্ট্যান্ডের এলাকায় তাকে প্রতিদিন ৫০-৮০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।

আরেকজন বলেন, এই স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে স্বপ্না ওরফে সুমন। এই সুমনের হেমায়েতপুরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন দিয়ে মাসোয়ারার ভিত্তিতে এই কাজ করায়। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া এই সুমন চাঁদাবাজি করেই কোটি কোটি টাকার মালিক বলে তার অভিযোগ। শোনা যায়, সুমন দুই এক মাস পর পরই দেশের বাইরে যায়।

আরও কয়েকজন অটোরিকশাচালক জানান, তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনেক কষ্টে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন অটোরিকশা চালিয়ে যে আয় হয় তাতে তাদের সংসার চালাতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। অথচ স্থানীয় নেতার লোকজন প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা ও প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ করেন তারা।

তারা আরও বলেন, প্রতি মাসে অটোরিকশায় একটি টোকেন নম্বর দেয়া হয়। ওই টোকেন না থাকলে কেউ এই এলাকায় সড়কে অটো চালাতে পারে না। এছাড়া টাকা না দিলে তাদের অটোরিকশা আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে তো এলাকায় থাকতে দিবে না বলেও অভিযোগ তাদের। নিরাপত্তার কারণে কারও নাম উল্লেখ করা হলো না।

ইতোমধ্যে ওই লাইনে চাঁদা নেয়াকে কেন্দ্র করে গত বছরের ডিসেম্বরে সাভার থানায় একটি মামলাও হয়েছে। মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আসামিরা হলেন মো. বাহাদুর (৪৫), মো. রফিকুল ইসলাম (৩৫), আবদুর রহিম (২৮), রিপন (৪৫), মো. আজাদ (২৭) ও নজরুল ইসলাম (৩৮)।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, হেমায়েতপুর এলাকায় অটো চালাতে গেলে মাসিক দুই হাজার টাকা ও দৈনিক ৫০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে না চাওয়ায় গাড়ি ভাঙচুর, হুমকি-ধমকি ও মারপিট করে।

বাদীর কাছ থেকে জোর করে চাঁদা নেয়ার পর র‌্যাবের টহল টিমকে বিষয়টি জানালে ওই টিম চাঁদার টাকাসহ ধরে ফেলে। পরে ৩৮৫ ও ৩৮৬ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা হয়। মামলা নং ৬৩।

এ বিষয়ে সাভার দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন খান নঈম সংবাদকে বলেন, ‘আমরা যেভাবে শুনি রাস্তায় যেভাবে জিম্মি করা হয় তা গোপনভাবে করে। এটা কয়েকটা ভাগে মালিক সমিতির চাঁদার নামে, শ্রমিকদের ফেয়্যারওয়েলের নামে করে থাকে।

এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘কোন জায়গায় অন্যায়ভাবে কোন চাঁদাবাজি সুযোগ নেই। যদি কেউ করে সুনিদিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’