মৈত্রী পাইপলাইনে কতটা লাভবান হবে বাংলাদেশ

ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য মৈত্রী পাইপলাইন চালু করা হয়েছে। গতকাল প্রথম দিনেই ভারতের শিলিগুড়ির লুমানিগড় তেল শোধনাগার থেকে ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল এসে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এই পাইপলাইন দিয়ে আমদানি করা জ্বালানি তেল দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার চাহিদা পূরণ হবে। জ্বালানি তেলের খরচও আগের চেয়ে কমবে বলে মনে করছেন তারা।

যদিও বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যে চুক্তির আওতায় এই পাইপলাইন তৈরি করা হলো এবং ডিজেল আমদানি করা হবে তাতে কি আছে তা বিস্তারিত প্রকাশ না করায় এ পাইপলাইন বাংলাদেশকে জ্বালানির ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় ভারত নির্ভর করে তোলে কি-না তা নিয়েও উদ্বেগ আছে।’

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসি অবশ্য বলছে, এতদিন যে পদ্ধতিতে ভারত থেকে ডিজেল আনা হচ্ছিল সেটি আদর্শ ছিল না বরং এখন নতুন পাইপলাইন হয়ে যাওয়ায় ‘তুলনামূলক কম খরচে’ এবং ‘রিয়েল টাইমে’ জ্বালানি পাওয়া যাবে।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এজাজ হোসেন বলেন, এখানে শুধু তেল আনাটা সহজ হচ্ছে আর কোন কিছুই বাংলাদেশ পাচ্ছে না। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এই পাইপলাইনে আনা জ্বালানি তো কম বা সাশ্রয়ী দামে পাবে না। আবার এখানে কোন গ্যারান্টেড সাপ্লাইয়ের বিষয়ও নেই। যে পরিমাণ তেল আসবে তা খুব বড় কিছু নয়।’

বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ অবশ্য বলেছেন, নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে কম খরচে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন তারা। যদিও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের হয়েছে তাতে এই পাইপলাইন নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ না করলে বলা কঠিন যে, এতে বাংলাদেশের লাভ হবেই।’

শামসুল আলম বলেন, ‘ভারতের দুটি প্রতিষ্ঠান এই সীমান্ত পাইপলাইন দিয়ে ডিজেল পাঠাবে। তারাও যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে যখন তখন দাম বাড়িয়ে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলে তার থেকে সুরক্ষাকবচ কী, তা নিয়ে সংসদ বা মন্ত্রিসভা কোথাও কথা হয়েছে?’

বাংলাদেশে ব্যবহৃত জ্বালানির পঁচাত্তর শতাংশই ডিজেল এবং দেশে ডিজেলের চাহিদা প্রায় ৪৬ লাখ টন। এর আশি ভাগই সরকারকে আমদানি করতে হয়। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে দুই হাজার ২শ’ টন ডিজেল আমদানি হয় বাংলাদেশে।

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক টিপু সুলতান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপাতত রেলওয়ের হেড ডিপোতে তেল সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রথম দিকে বছরে আড়াই লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করবে। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী তা ৪-৫ লাখ টনে বৃদ্ধি পাবে।’

প্রকল্পের কমিশনিং টিমের কো-অর্ডিনেটর এএসএম আহসান হাবিব বলেন, ‘ভারত থেকে আমাদেরকে প্রতি বছর আড়াই লাখ মেট্রিক টন তেল সরবরাহ করবে। চাহিদা বাড়লে তারা বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত তেল সরবরাহ করবে। প্রকল্পটির পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে। যেসব তেল ভারত থেকে নিয়ে আসা হবে তা উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলায় সরবরাহ করা হবে। সব চাহিদা এই পাম্পের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হবে।’

‘মূলত নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়। এই সময়টাতে ওয়াগন সমস্যার কারণে চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এই প্রকল্পটি এমনভাবে করা হয়েছে যাতে করে পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় এবং নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে’ বলেন আহসান হাবিব।

রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩ , ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ২৬ শবান ১৪৪৪

মৈত্রী পাইপলাইনে কতটা লাভবান হবে বাংলাদেশ

সংবাদ ডেস্ক

ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য মৈত্রী পাইপলাইন চালু করা হয়েছে। গতকাল প্রথম দিনেই ভারতের শিলিগুড়ির লুমানিগড় তেল শোধনাগার থেকে ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল এসে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এই পাইপলাইন দিয়ে আমদানি করা জ্বালানি তেল দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার চাহিদা পূরণ হবে। জ্বালানি তেলের খরচও আগের চেয়ে কমবে বলে মনে করছেন তারা।

যদিও বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যে চুক্তির আওতায় এই পাইপলাইন তৈরি করা হলো এবং ডিজেল আমদানি করা হবে তাতে কি আছে তা বিস্তারিত প্রকাশ না করায় এ পাইপলাইন বাংলাদেশকে জ্বালানির ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় ভারত নির্ভর করে তোলে কি-না তা নিয়েও উদ্বেগ আছে।’

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসি অবশ্য বলছে, এতদিন যে পদ্ধতিতে ভারত থেকে ডিজেল আনা হচ্ছিল সেটি আদর্শ ছিল না বরং এখন নতুন পাইপলাইন হয়ে যাওয়ায় ‘তুলনামূলক কম খরচে’ এবং ‘রিয়েল টাইমে’ জ্বালানি পাওয়া যাবে।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এজাজ হোসেন বলেন, এখানে শুধু তেল আনাটা সহজ হচ্ছে আর কোন কিছুই বাংলাদেশ পাচ্ছে না। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এই পাইপলাইনে আনা জ্বালানি তো কম বা সাশ্রয়ী দামে পাবে না। আবার এখানে কোন গ্যারান্টেড সাপ্লাইয়ের বিষয়ও নেই। যে পরিমাণ তেল আসবে তা খুব বড় কিছু নয়।’

বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ অবশ্য বলেছেন, নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে কম খরচে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন তারা। যদিও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের হয়েছে তাতে এই পাইপলাইন নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ না করলে বলা কঠিন যে, এতে বাংলাদেশের লাভ হবেই।’

শামসুল আলম বলেন, ‘ভারতের দুটি প্রতিষ্ঠান এই সীমান্ত পাইপলাইন দিয়ে ডিজেল পাঠাবে। তারাও যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে যখন তখন দাম বাড়িয়ে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলে তার থেকে সুরক্ষাকবচ কী, তা নিয়ে সংসদ বা মন্ত্রিসভা কোথাও কথা হয়েছে?’

বাংলাদেশে ব্যবহৃত জ্বালানির পঁচাত্তর শতাংশই ডিজেল এবং দেশে ডিজেলের চাহিদা প্রায় ৪৬ লাখ টন। এর আশি ভাগই সরকারকে আমদানি করতে হয়। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে দুই হাজার ২শ’ টন ডিজেল আমদানি হয় বাংলাদেশে।

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক টিপু সুলতান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপাতত রেলওয়ের হেড ডিপোতে তেল সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রথম দিকে বছরে আড়াই লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করবে। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী তা ৪-৫ লাখ টনে বৃদ্ধি পাবে।’

প্রকল্পের কমিশনিং টিমের কো-অর্ডিনেটর এএসএম আহসান হাবিব বলেন, ‘ভারত থেকে আমাদেরকে প্রতি বছর আড়াই লাখ মেট্রিক টন তেল সরবরাহ করবে। চাহিদা বাড়লে তারা বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত তেল সরবরাহ করবে। প্রকল্পটির পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে। যেসব তেল ভারত থেকে নিয়ে আসা হবে তা উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলায় সরবরাহ করা হবে। সব চাহিদা এই পাম্পের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হবে।’

‘মূলত নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়। এই সময়টাতে ওয়াগন সমস্যার কারণে চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এই প্রকল্পটি এমনভাবে করা হয়েছে যাতে করে পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় এবং নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে’ বলেন আহসান হাবিব।