এক বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার

দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা এখন এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬। তিন বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৬ হাজার ১০৭টি হিসাব। দুই বছরে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজার। আর গত এক বছরে বেড়েছে ৭ হাজার ৯৭০টি। গত সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২২ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছে না, অন্যদিকে কিছু মানুষের অর্থবিত্ত বেড়েছে। অনেকেই সম্পদশালী হয়েছে। এভাবে বৈষম্য বাড়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের আয় যখন কমছে তখন কোটিপতি আমানত বাড়তে থাকা মানে একটি গোষ্ঠী আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। এটাই অর্থনৈতিক বৈষম্য।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ১৬৭টি। যাদের হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৯৪৫টি হিসাব। তাদের হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এছাড়া ১০ কোটি এক টাকা থেকে ১৫ কোটির টাকার হিসাব রয়েছে তিন হাজার ৮৪৫টি, ১৫ কোটি এক টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১৮৩৩টি, ২০ কোটি এক টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ১৪৩টি, ২৫ কোটি এক টাকা থেকে ৩০ কোটি ৮৮৭টি, ৩০ কোটি এক টাকা থেকে ৩৫ কোটি ৪৭২টি এবং ৩৫ কোটি এক টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩১৫ আমানতকারীর হিসাব। ৪০ কোটি এক টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৫৭৭টি। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৬২টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ দুই লাখ ২৯ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬৪টি। এই হিসাবগুলোতে জমা ছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। কোটি টাকার ওপরে এসব হিসাবে জমা আছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ৯৭০টি। দুই বছরে বেড়েছে ১৬ হাজার ৫৬টি এবং তিন বছরে বেড়েছে ২৬ হাজার ১০৭টি হিসাব। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি জমা হওয়া এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টি হিসাবে ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ওই সময় মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২১১টি। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯টি।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি।

image
আরও খবর
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ-উজবেকিস্তান বিজনেস সামিট
সালিশি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ কমিশন অন আরবিট্রেশন
ডিএসইতে পতনের চেয়ে উত্থান ছয়গুণ বেশি
শুল্ক বৃদ্ধি প্রস্তাবের প্রতিবাদে বিড়ি শ্রমিকদের মানববন্ধন
বিসিএস, বিটিএ ও টি এস্টেট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে চুক্তি
সিলেটে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সম্মেলন
পূবালী ব্যাংক ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মধ্যে সমঝোতা
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে চুক্তি
ইউনিয়ন ব্যাংকের মাদাম বিবির হাট উপশাখা উদ্বোধন
ইসলামী ব্যাংক-রিয়া মানি রেমিট্যান্স উৎসবের মোটরসাইকেল হস্তান্তর
বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের মধ্যে চুক্তি
ইউনাইটেড ইনসিওন্সের শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন
ব্র্যাক ব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ

বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩ , ০৮ চৈত্র ১৪২৯, ২৯ শবান ১৪৪৪

এক বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা এখন এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬। তিন বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৬ হাজার ১০৭টি হিসাব। দুই বছরে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজার। আর গত এক বছরে বেড়েছে ৭ হাজার ৯৭০টি। গত সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২২ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছে না, অন্যদিকে কিছু মানুষের অর্থবিত্ত বেড়েছে। অনেকেই সম্পদশালী হয়েছে। এভাবে বৈষম্য বাড়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের আয় যখন কমছে তখন কোটিপতি আমানত বাড়তে থাকা মানে একটি গোষ্ঠী আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। এটাই অর্থনৈতিক বৈষম্য।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ১৬৭টি। যাদের হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৯৪৫টি হিসাব। তাদের হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এছাড়া ১০ কোটি এক টাকা থেকে ১৫ কোটির টাকার হিসাব রয়েছে তিন হাজার ৮৪৫টি, ১৫ কোটি এক টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১৮৩৩টি, ২০ কোটি এক টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ১৪৩টি, ২৫ কোটি এক টাকা থেকে ৩০ কোটি ৮৮৭টি, ৩০ কোটি এক টাকা থেকে ৩৫ কোটি ৪৭২টি এবং ৩৫ কোটি এক টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩১৫ আমানতকারীর হিসাব। ৪০ কোটি এক টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৫৭৭টি। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৬২টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ দুই লাখ ২৯ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬৪টি। এই হিসাবগুলোতে জমা ছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। কোটি টাকার ওপরে এসব হিসাবে জমা আছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ৯৭০টি। দুই বছরে বেড়েছে ১৬ হাজার ৫৬টি এবং তিন বছরে বেড়েছে ২৬ হাজার ১০৭টি হিসাব। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি জমা হওয়া এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টি হিসাবে ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ওই সময় মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২১১টি। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯টি।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি।