গাছ উপড়ে খনন যন্ত্রে বেড়িবাঁধ সংস্কার প্রতিবাদে কাজ বন্ধ

কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও কয়রা তিনটি নদ-নদীর ১২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ঘেরা খুলনার কয়রা উপজেলা। এই বেড়িবাঁধেই এখাকার মানুষের জীবন-মরণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভাঙলে এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। ক্রমাগত ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনে প্রতিবছর নদীর পানিতে প্লাবিত হয় এখাকার হাজার হাজার বসতি। লবণাক্ত পানি থেকে লোকালয়কে রক্ষা করতে সেখানে নদীরপাড়ে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, যা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় প্রত্যেক বছরই কোনো না কোনো প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে দরপত্র ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু নির্ধারিত ঠিকাদারকে জরুরি সংস্কারের নামে সেই কাজ দেওয়া হয়। সেইসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধ মেরামতের কাজ না করে অর্ধেকমূল্যে স্থানীয় সাব-ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।

সাব-ঠিকাদাররাও সেই কাজ না করে চুক্তিবদ্ধ হওয়া মূল্যের অর্ধেকমূল্যে শ্রমিক সর্দারদের মৌখিক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। শ্রমিক সর্দাররা স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে সেইকাজ করেও লাভবান হন। এভাবে কয়েক হাত ঘুরে প্রকল্পের মূল টাকার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ব্যয় হয় বাঁধ মেরামতে। বাকি টাকা চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। যার অংশ পান পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারাও।

এদিকে শাকবাড়িয়া নদীপাড়ে চর বনায়নের গাছ উপড়ে ফেলে ঠিকাদারের খননযন্ত্র ব্যবহার করে বেড়িবাঁধ সংস্কার করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদের মুখে গত সোমবার সকালে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের শাকবাড়িয়া নদীপাড়ে। স্থানীয় ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ সরকারের নেতৃত্বে এই কাজ চলছিল বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার লোকজন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, মূলত কাজটি কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতার। তিনি তার অনুরোধে কাজটি দেখাশোনা করছেন।

এলাকাবাসী জানান, কয়রা গ্রামের শাকবাড়িয়া নদীর এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির মাধ্যমে বিপ্লব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়। রোববার তারা খননযন্ত্র দিয়ে চর বনায়নের গাছ উপড়ে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ শুরু করেন। রোববার স্থানীয় বাসিন্দারা এর প্রতিবাদ করেন। তাতে কর্ণপাত না করায় সোমবার এলাকার দুই শতাধিক লোকজন একত্র হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হোক, সেটি তারাও চান। তবে নদীরচরের গাছ কেটে ও ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নয়, কোদাল দিয়ে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করতে হবে। কারণ, নদীর চরের গাছ কাটলে দ্রুতই নদী ভাঙনের কবলে পড়বে। এভাবে কাজ চালালে নদীরপানির আঘাতে যেকোনো সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

সাতক্ষীরা পাউবোর (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার জানান, বাঁধ মেরামতের জন্য নদীরচরের গাছ কাটার সংবাদ পেয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মমিনুর রহমান বলেন, চর বনায়নের গাছ উজাড় করে বাঁধ সংস্কারের সুযোগ নেই। গাছ কেটে থাকলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩ , ০৮ চৈত্র ১৪২৯, ২৯ শবান ১৪৪৪

গাছ উপড়ে খনন যন্ত্রে বেড়িবাঁধ সংস্কার প্রতিবাদে কাজ বন্ধ

জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা

কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও কয়রা তিনটি নদ-নদীর ১২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ঘেরা খুলনার কয়রা উপজেলা। এই বেড়িবাঁধেই এখাকার মানুষের জীবন-মরণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভাঙলে এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। ক্রমাগত ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনে প্রতিবছর নদীর পানিতে প্লাবিত হয় এখাকার হাজার হাজার বসতি। লবণাক্ত পানি থেকে লোকালয়কে রক্ষা করতে সেখানে নদীরপাড়ে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, যা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় প্রত্যেক বছরই কোনো না কোনো প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে দরপত্র ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু নির্ধারিত ঠিকাদারকে জরুরি সংস্কারের নামে সেই কাজ দেওয়া হয়। সেইসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধ মেরামতের কাজ না করে অর্ধেকমূল্যে স্থানীয় সাব-ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।

সাব-ঠিকাদাররাও সেই কাজ না করে চুক্তিবদ্ধ হওয়া মূল্যের অর্ধেকমূল্যে শ্রমিক সর্দারদের মৌখিক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। শ্রমিক সর্দাররা স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে সেইকাজ করেও লাভবান হন। এভাবে কয়েক হাত ঘুরে প্রকল্পের মূল টাকার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ব্যয় হয় বাঁধ মেরামতে। বাকি টাকা চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। যার অংশ পান পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারাও।

এদিকে শাকবাড়িয়া নদীপাড়ে চর বনায়নের গাছ উপড়ে ফেলে ঠিকাদারের খননযন্ত্র ব্যবহার করে বেড়িবাঁধ সংস্কার করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদের মুখে গত সোমবার সকালে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের শাকবাড়িয়া নদীপাড়ে। স্থানীয় ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ সরকারের নেতৃত্বে এই কাজ চলছিল বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার লোকজন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, মূলত কাজটি কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতার। তিনি তার অনুরোধে কাজটি দেখাশোনা করছেন।

এলাকাবাসী জানান, কয়রা গ্রামের শাকবাড়িয়া নদীর এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির মাধ্যমে বিপ্লব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়। রোববার তারা খননযন্ত্র দিয়ে চর বনায়নের গাছ উপড়ে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ শুরু করেন। রোববার স্থানীয় বাসিন্দারা এর প্রতিবাদ করেন। তাতে কর্ণপাত না করায় সোমবার এলাকার দুই শতাধিক লোকজন একত্র হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হোক, সেটি তারাও চান। তবে নদীরচরের গাছ কেটে ও ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নয়, কোদাল দিয়ে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করতে হবে। কারণ, নদীর চরের গাছ কাটলে দ্রুতই নদী ভাঙনের কবলে পড়বে। এভাবে কাজ চালালে নদীরপানির আঘাতে যেকোনো সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

সাতক্ষীরা পাউবোর (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার জানান, বাঁধ মেরামতের জন্য নদীরচরের গাছ কাটার সংবাদ পেয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মমিনুর রহমান বলেন, চর বনায়নের গাছ উজাড় করে বাঁধ সংস্কারের সুযোগ নেই। গাছ কেটে থাকলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।