এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার কারণ অতিরিক্ত গতি ও চালকের ক্লান্তি

অতিরিক্ত গতি ও চালকের ক্লান্তির কারণে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিটি বলছে, ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি অতিরিক্ত গতিতে চলছিল। বাসটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারের বেশি ছিল। এদিকে বিশ্রাম না নিয়ে বাস চালানোর কারণে ওই বাসের চালক ক্লান্ত ছিলেন। ঘুম ঘুম চোখে তিনি বাসটি চালানোর কারণে বাসের নিয়ন্ত্রণ হারান।

গত রোববার খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত নারীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কমিটির একজন সদস্য গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) পল্লব কুমার হাজরা। কমিটির সদস্যরা হলেন মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মনিরুজ্জামান ফকির, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসানাত-ই-রাব্বি, মাদারীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হোসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাসটি খুলনা থেকেই বেপরোয়া গতিতে চলে আসছিল। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শুরু এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পর বাসটির গতি আরও বেড়ে যায়। সড়কে কোন স্পিডগান না থাকায় কখনো কখনো চালক ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বাসটি চালাচ্ছিলেন। বাসটি এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর এলাকায় আসারপরই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। এ অবস্থায় চালক চোখে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে অসচেতনভাবে বাস চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।

এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে পড়ার কারণে এত প্রাণহানি ঘটেছে বলে ধারণা করছেন তদন্ত কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার এত মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল না। বাসটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে বিদ্যুতের গতিতে গিয়ে আন্ডারপাসের গাইড ওয়ালে গিয়ে সজোরে ধাক্কা খায়। এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যা এত বেড়েছে।’

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু নীতিমালা সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে ওই সদস্য বলেন, অবৈধ যানবাহন চিহ্নিত করতে হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া, নিয়মিত মামলা করা, পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে হিডেন ক্যামেরা স্থাপন করা, স্পিডগান দিয়ে সব ধরনের যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করাসহ আরও কিছু সুপারিশ রয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা কমবে।

এদিকে গত সোমবার ও গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। একই সঙ্গে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান পল্লব কুমার হাজরা বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ের কাজ শেষ করেছি। রাতের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়া হবে। আরও বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন করবে জেলা প্রশাসক।’

বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩ , ০৮ চৈত্র ১৪২৯, ২৯ শবান ১৪৪৪

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার কারণ অতিরিক্ত গতি ও চালকের ক্লান্তি

প্রতিনিধি, মাদারীপুর

image

অতিরিক্ত গতি ও চালকের ক্লান্তির কারণে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিটি বলছে, ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি অতিরিক্ত গতিতে চলছিল। বাসটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারের বেশি ছিল। এদিকে বিশ্রাম না নিয়ে বাস চালানোর কারণে ওই বাসের চালক ক্লান্ত ছিলেন। ঘুম ঘুম চোখে তিনি বাসটি চালানোর কারণে বাসের নিয়ন্ত্রণ হারান।

গত রোববার খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত নারীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কমিটির একজন সদস্য গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) পল্লব কুমার হাজরা। কমিটির সদস্যরা হলেন মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মনিরুজ্জামান ফকির, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসানাত-ই-রাব্বি, মাদারীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হোসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাসটি খুলনা থেকেই বেপরোয়া গতিতে চলে আসছিল। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শুরু এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পর বাসটির গতি আরও বেড়ে যায়। সড়কে কোন স্পিডগান না থাকায় কখনো কখনো চালক ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বাসটি চালাচ্ছিলেন। বাসটি এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর এলাকায় আসারপরই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। এ অবস্থায় চালক চোখে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে অসচেতনভাবে বাস চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।

এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে পড়ার কারণে এত প্রাণহানি ঘটেছে বলে ধারণা করছেন তদন্ত কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার এত মৃত্যু হওয়ার কথা ছিল না। বাসটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে বিদ্যুতের গতিতে গিয়ে আন্ডারপাসের গাইড ওয়ালে গিয়ে সজোরে ধাক্কা খায়। এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যা এত বেড়েছে।’

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু নীতিমালা সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে ওই সদস্য বলেন, অবৈধ যানবাহন চিহ্নিত করতে হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া, নিয়মিত মামলা করা, পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে হিডেন ক্যামেরা স্থাপন করা, স্পিডগান দিয়ে সব ধরনের যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করাসহ আরও কিছু সুপারিশ রয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা কমবে।

এদিকে গত সোমবার ও গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। একই সঙ্গে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান পল্লব কুমার হাজরা বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ের কাজ শেষ করেছি। রাতের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়া হবে। আরও বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন করবে জেলা প্রশাসক।’