১৯৭১ সালের ২২ মার্চ ছিল বাঙালির চলমান স্বাধিকার আন্দোলনের আরেকটি উত্তাল দিন। রাত পোহালে ‘পাকিস্তান দিবস’ হলেও সেদিকে মন নেই স্বাধীনতাকামী বাঙালির বরং ২৩ মার্চকে ‘প্রতিরোধ দিবস’ এবং ‘স্বাধীন পূর্ব বাংলা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তুতি চলছে দেশজুড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পরদিন ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে (অধুনা খন্ড-বিখন্ড একাধিক স্টেডিয়াম) জয়বাংলা গণবাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান হবে।
অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বক্তৃতা করেন। সংগ্রামী জনতার গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি ও করতালির মধ্যে জনগণের নেতা ঘোষণা করেন, ‘বন্দুক, কামান, মেশিনগান কিছুই জনগনের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।’
একাত্তরের এদিন ঢাকার প্রধান দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে ‘বাংলার স্বাধিকার’ শীর্ষক একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। হামিদুল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন অবজারভার গ্রুপের পত্রিকাসমূহ ‘বাংলার স্বাধিকার’ শিরোনামে ক্রোড়পত্রটি প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরদিন অবশ্য শিরোনামটি বদলে ‘বাংলাদেশ’ করে ক্রোড়পত্রটি প্রকাশ করে। ক্রোড়পত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধগুলোর লেখক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধুর অন্যতম অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. রেহমান সোবহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী এবং পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম কামারুজ্জামান। ক্রোড়পত্রে প্রথম পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর তিন কলামব্যাপী ছবির সঙ্গে হাতে লেখা একটি বাণীও প্রকাশিত হয়।
একাত্তরের এদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সাবেক সৈনিকদের বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশের ঘোষণা আগেই পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। সমাবেশে সাবেক সৈনিকেরা ছাড়াও ছুটিতে অবস্থানরত চাকরিরত সৈনিকেরাও পোশাক পরিধান করে অংশ নেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ১৯২৪ সালে সান্ডহার্স্ট মিলিটারি কলেজ থেকে কমিশন পাওয়া মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ ইসফাকুল মজিদ। সভা পরিচালনা করেন লে. কর্নেল (অব.) আতাউল গনী ওসমানী। সমাবেশে বক্তৃতা করেন জেনারেল মজিদ, কর্নেল ওসমানী, লে. কমান্ডার আবেদীন, সৈয়দ আহমদ, এসএস হোসেন, মাহমুদুন্নবী, খলিলুল্লাহ্, আশরাফ প্রমুখ। ‘জয় বাংলা’ সংগীতের সঙ্গে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জনানোর মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। সমাবেশে দেশের আসন্ন স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উপস্থিত সবাই শপথ নেন।
সমাবেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত সব বাঙালি কর্মকর্তা ও জওয়ানকে কর্মস্থল ত্যাগ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদানের জন্য চলে আসারও আহ্বান জানানো হয়।
সভা শেষে সৈনিকেরা বাদ্যের তালে তালে মার্চ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন। এখানে মিনারের বেদিতে সামরিক কায়দায় পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এখান থেকে মার্চ করে তারা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসায় যান। এতে নেতৃত্ব দেন জেনারেল মজিদ ও কর্নেল ওসমানী। সাবেক সৈনিকদের সমগ্র যাত্রাপথে রাস্তার দুই পাশ থেকে জনতা হর্ষধ্বনি ও করতালি দিয়ে উৎসাহ দেয়।
বঙ্গবন্ধু তার বাড়ির গেটে সাবেক সৈনিকদের স্বাগত জানান। সেখান থেকে তিনি জেনারেল মজিদ, কর্নেল ওসমানীসহ চারজনকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যান। তাদের নিয়ে তিনি তার লাইব্রেরিতে একান্ত বৈঠক করেন। জেনারেল মজিদ এ বৈঠকে শেখ মুজিবকে শক্তির প্রতীক একটি তরবারি উপহার দেন এবং অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সৈনিকদের পক্ষ থেকে তাদের সার্ভিস বঙ্গবন্ধুর কাছে নিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধু সসম্মানে চুম্বনের সঙ্গে তরবারিটি গ্রহণ করেন।
একই দিন মগবাজারে অনুষ্ঠিত পাক মোটর মহিলা সংগ্রাম পরিষদের সভায় সাবেক সৈনিকদের অবিলম্বে জেনারেল মজিদের নেতৃত্বে একটি প্যারামিলিটারি বাহিনী গঠনের জন্য আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক আগা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন এদিন সকালে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে বলেন, ‘পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতাদের মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।’
সকালে হেয়ার রোডের প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। এদিন ছিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ-দফা বৈঠক। বৈঠক প্রায় সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন,‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত ঘোষণা বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ৪ দফা পূরণ না পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এই বৈঠক শেষে ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নেতারা সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান।
রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে এক অনির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।’ এদিন আরও স্পষ্ট হয় যে, উদ্ভূত রাজনৈতিক সংকটের কোন সমাধানের ইচ্ছে নেই ইয়াহিয়া-ভুট্টোর।
এদিন আন্দোলনকারীরা ধানমন্ডিতে মার্কিন কনসাল জেনারেলের বাসভবনে বোমা ছুঁড়ে মারে।
লেখক : অনুষ্ঠান সমন্বয়ক ও গবেষক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।
বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩ , ০৮ চৈত্র ১৪২৯, ২৯ শবান ১৪৪৪
সাদেকুর রহমান
১৯৭১ সালের ২২ মার্চ ছিল বাঙালির চলমান স্বাধিকার আন্দোলনের আরেকটি উত্তাল দিন। রাত পোহালে ‘পাকিস্তান দিবস’ হলেও সেদিকে মন নেই স্বাধীনতাকামী বাঙালির বরং ২৩ মার্চকে ‘প্রতিরোধ দিবস’ এবং ‘স্বাধীন পূর্ব বাংলা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তুতি চলছে দেশজুড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পরদিন ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে (অধুনা খন্ড-বিখন্ড একাধিক স্টেডিয়াম) জয়বাংলা গণবাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান হবে।
অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার বক্তৃতা করেন। সংগ্রামী জনতার গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি ও করতালির মধ্যে জনগণের নেতা ঘোষণা করেন, ‘বন্দুক, কামান, মেশিনগান কিছুই জনগনের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।’
একাত্তরের এদিন ঢাকার প্রধান দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে ‘বাংলার স্বাধিকার’ শীর্ষক একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। হামিদুল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন অবজারভার গ্রুপের পত্রিকাসমূহ ‘বাংলার স্বাধিকার’ শিরোনামে ক্রোড়পত্রটি প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরদিন অবশ্য শিরোনামটি বদলে ‘বাংলাদেশ’ করে ক্রোড়পত্রটি প্রকাশ করে। ক্রোড়পত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধগুলোর লেখক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধুর অন্যতম অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. রেহমান সোবহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী এবং পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম কামারুজ্জামান। ক্রোড়পত্রে প্রথম পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর তিন কলামব্যাপী ছবির সঙ্গে হাতে লেখা একটি বাণীও প্রকাশিত হয়।
একাত্তরের এদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সাবেক সৈনিকদের বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশের ঘোষণা আগেই পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। সমাবেশে সাবেক সৈনিকেরা ছাড়াও ছুটিতে অবস্থানরত চাকরিরত সৈনিকেরাও পোশাক পরিধান করে অংশ নেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ১৯২৪ সালে সান্ডহার্স্ট মিলিটারি কলেজ থেকে কমিশন পাওয়া মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ ইসফাকুল মজিদ। সভা পরিচালনা করেন লে. কর্নেল (অব.) আতাউল গনী ওসমানী। সমাবেশে বক্তৃতা করেন জেনারেল মজিদ, কর্নেল ওসমানী, লে. কমান্ডার আবেদীন, সৈয়দ আহমদ, এসএস হোসেন, মাহমুদুন্নবী, খলিলুল্লাহ্, আশরাফ প্রমুখ। ‘জয় বাংলা’ সংগীতের সঙ্গে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জনানোর মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। সমাবেশে দেশের আসন্ন স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উপস্থিত সবাই শপথ নেন।
সমাবেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত সব বাঙালি কর্মকর্তা ও জওয়ানকে কর্মস্থল ত্যাগ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদানের জন্য চলে আসারও আহ্বান জানানো হয়।
সভা শেষে সৈনিকেরা বাদ্যের তালে তালে মার্চ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন। এখানে মিনারের বেদিতে সামরিক কায়দায় পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এখান থেকে মার্চ করে তারা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসায় যান। এতে নেতৃত্ব দেন জেনারেল মজিদ ও কর্নেল ওসমানী। সাবেক সৈনিকদের সমগ্র যাত্রাপথে রাস্তার দুই পাশ থেকে জনতা হর্ষধ্বনি ও করতালি দিয়ে উৎসাহ দেয়।
বঙ্গবন্ধু তার বাড়ির গেটে সাবেক সৈনিকদের স্বাগত জানান। সেখান থেকে তিনি জেনারেল মজিদ, কর্নেল ওসমানীসহ চারজনকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যান। তাদের নিয়ে তিনি তার লাইব্রেরিতে একান্ত বৈঠক করেন। জেনারেল মজিদ এ বৈঠকে শেখ মুজিবকে শক্তির প্রতীক একটি তরবারি উপহার দেন এবং অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সৈনিকদের পক্ষ থেকে তাদের সার্ভিস বঙ্গবন্ধুর কাছে নিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধু সসম্মানে চুম্বনের সঙ্গে তরবারিটি গ্রহণ করেন।
একই দিন মগবাজারে অনুষ্ঠিত পাক মোটর মহিলা সংগ্রাম পরিষদের সভায় সাবেক সৈনিকদের অবিলম্বে জেনারেল মজিদের নেতৃত্বে একটি প্যারামিলিটারি বাহিনী গঠনের জন্য আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক আগা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন এদিন সকালে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে বলেন, ‘পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতাদের মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।’
সকালে হেয়ার রোডের প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। এদিন ছিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ-দফা বৈঠক। বৈঠক প্রায় সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন,‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত ঘোষণা বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ৪ দফা পূরণ না পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এই বৈঠক শেষে ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নেতারা সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান।
রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে এক অনির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।’ এদিন আরও স্পষ্ট হয় যে, উদ্ভূত রাজনৈতিক সংকটের কোন সমাধানের ইচ্ছে নেই ইয়াহিয়া-ভুট্টোর।
এদিন আন্দোলনকারীরা ধানমন্ডিতে মার্কিন কনসাল জেনারেলের বাসভবনে বোমা ছুঁড়ে মারে।
লেখক : অনুষ্ঠান সমন্বয়ক ও গবেষক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।