নির্বাচনের বছর চোখ-কান খোলা রাখবে দুদক, প্রার্থীর হলফনামাও খতিয়ে দেখবে

নির্বাচনের বছর চোখ-কান খোলা রাখবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাশাপাশি নির্বচানে অংশ নেয়া সব প্রার্থী হলফনামায় সম্পদের যে বিবরণী দাখিল করেন তা খতিয়ে দেখবে। গতকাল দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২২) রাষ্ট্রপিতের কাছে হস্তান্তর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।

অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছর সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে এবং এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে দুদক। আগামী বছর দুদকের কাজে আরও গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে।

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরও অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।

দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনও ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।

জনগণের আস্থা প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার বলেন, যারা এটা বলছে তারা কোন তথ্যের ভিত্তিতে বলেছে। আমাদের এই বার্ষিক প্রতিবেদন সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন। এখানে কোন আবেগ নেই কিংবা অতিরঞ্জিত কিছু নাই। দুদক আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, ভেতরে ও বাইরে এর কার্যকর ক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই বরং কমেছে। তবে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানি লন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।

দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ গত ২০ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২ পেশ করেন। এ সময় দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এবং মো. জহুরুল হক ও সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

পরে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে উন্নয়নের প্রতিটি খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সর্বাত্মক প্রয়াস চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ব্রিফিংয়ে জানান, সাক্ষাতকালে দুদক চেয়ারম্যান প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং কমিশনের সার্বিক কর্মকান্ড সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। রাষ্ট্রপতি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও তাগিদ দেন। দুর্নীতি দমন করতে গিয়ে কমিশনের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না হয় সেটা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন আবদুল হামিদ।

বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩ , ০৮ চৈত্র ১৪২৯, ২৯ শবান ১৪৪৪

নির্বাচনের বছর চোখ-কান খোলা রাখবে দুদক, প্রার্থীর হলফনামাও খতিয়ে দেখবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নির্বাচনের বছর চোখ-কান খোলা রাখবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাশাপাশি নির্বচানে অংশ নেয়া সব প্রার্থী হলফনামায় সম্পদের যে বিবরণী দাখিল করেন তা খতিয়ে দেখবে। গতকাল দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২২) রাষ্ট্রপিতের কাছে হস্তান্তর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।

অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছর সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে এবং এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে দুদক। আগামী বছর দুদকের কাজে আরও গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে।

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরও অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।

দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনও ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।

জনগণের আস্থা প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার বলেন, যারা এটা বলছে তারা কোন তথ্যের ভিত্তিতে বলেছে। আমাদের এই বার্ষিক প্রতিবেদন সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন। এখানে কোন আবেগ নেই কিংবা অতিরঞ্জিত কিছু নাই। দুদক আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, ভেতরে ও বাইরে এর কার্যকর ক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই বরং কমেছে। তবে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানি লন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।

দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ গত ২০ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২ পেশ করেন। এ সময় দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এবং মো. জহুরুল হক ও সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

পরে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে উন্নয়নের প্রতিটি খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সর্বাত্মক প্রয়াস চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ব্রিফিংয়ে জানান, সাক্ষাতকালে দুদক চেয়ারম্যান প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং কমিশনের সার্বিক কর্মকান্ড সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। রাষ্ট্রপতি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও তাগিদ দেন। দুর্নীতি দমন করতে গিয়ে কমিশনের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না হয় সেটা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন আবদুল হামিদ।