অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা অবেশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, আইএমএফ ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট ঋণের অনুমোদন দিয়েছে। এতে করে দ্বীপরাষ্ট্র সংকট নিরসনের আশা জুগিয়েছে। আইএমএফ বোর্ডও ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিক্রমাসিংহে আইএমএফ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমরা আমাদের অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে চাই।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করতে থাকা শ্রীলঙ্কা এমনিতেই বিপুল ঋণের ভারে জর্জরিত। কিন্তু বিদেশি মুদ্রার সংকটে করুণ দশার মধ্যে আইএমএফের ওই ঋণ দেশটির ‘টিকে থাকার সহায়’ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন এবং বিমান পরিবহন সংস্থার বেসরকারিকরণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে সরকার। করোনা মহামারীর বড় প্রভাব পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে। মহামারীর শুরু থেকে ধীরে ধীরে দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। ২০২২ সালে অবস্থা চরম আকার ধারণ করে। ওই সময় শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এরপর ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি দেখা দিলে ২০২২ সালে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ মানুষ। এ বিক্ষোভের জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন।
অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে গত বছরের মে মাসে ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয় কলম্বো। এর মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণ খেলাপির তালিকায় যুক্ত হয় দেশটির নাম।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সূত্রপাত হয় ২০১৯ সালে। সে বছর ট্যাক্সে বড় ধরনের ছাড় দেয়ার ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে। এই ট্যাক্স ছাড়ের ঘোষণায় শ্রীলঙ্কার সরকারের আয় বছরে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি কমে যায়। যার প্রভাব পড়ে ২০২২ সালে এসে।
চলতি বছরের মার্চের শুরুতে শ্রীলঙ্কার ঋণ কাঠামো নতুন করে সাজানোর ঘোষণা দেয় চীন। এছাড়া ভারতও এগিয়ে আসে। এরপরই আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিতে সম্মত হয়।
অন্য সব দেশের মতো ঋণ দেয়ার আগে আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকেও কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছিল। যার মধ্যে ছিল জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করতে হবে, ট্যাক্স বৃদ্ধি করতে হবে, জ্বালানি ভর্তুকি বাদ দিতে হবে এবং সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে হবে। শ্রীলঙ্কা এর সবই মেনে নেয়।
ট্যাক্স, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে জীবনব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকদিন আগেও আবার বিক্ষোভ করেছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জানিয়েছেন, আইএমএফের শর্ত মেনে নেয়া ছাড়া তাদের কাছে অন্য কোন উপায় ছিল না।
বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩ , ০৮ চৈত্র ১৪২৯, ২৯ শবান ১৪৪৪
অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা অবেশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, আইএমএফ ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট ঋণের অনুমোদন দিয়েছে। এতে করে দ্বীপরাষ্ট্র সংকট নিরসনের আশা জুগিয়েছে। আইএমএফ বোর্ডও ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিক্রমাসিংহে আইএমএফ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমরা আমাদের অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে চাই।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করতে থাকা শ্রীলঙ্কা এমনিতেই বিপুল ঋণের ভারে জর্জরিত। কিন্তু বিদেশি মুদ্রার সংকটে করুণ দশার মধ্যে আইএমএফের ওই ঋণ দেশটির ‘টিকে থাকার সহায়’ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন এবং বিমান পরিবহন সংস্থার বেসরকারিকরণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে সরকার। করোনা মহামারীর বড় প্রভাব পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে। মহামারীর শুরু থেকে ধীরে ধীরে দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। ২০২২ সালে অবস্থা চরম আকার ধারণ করে। ওই সময় শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এরপর ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি দেখা দিলে ২০২২ সালে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ মানুষ। এ বিক্ষোভের জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন।
অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে গত বছরের মে মাসে ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয় কলম্বো। এর মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণ খেলাপির তালিকায় যুক্ত হয় দেশটির নাম।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সূত্রপাত হয় ২০১৯ সালে। সে বছর ট্যাক্সে বড় ধরনের ছাড় দেয়ার ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে। এই ট্যাক্স ছাড়ের ঘোষণায় শ্রীলঙ্কার সরকারের আয় বছরে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি কমে যায়। যার প্রভাব পড়ে ২০২২ সালে এসে।
চলতি বছরের মার্চের শুরুতে শ্রীলঙ্কার ঋণ কাঠামো নতুন করে সাজানোর ঘোষণা দেয় চীন। এছাড়া ভারতও এগিয়ে আসে। এরপরই আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিতে সম্মত হয়।
অন্য সব দেশের মতো ঋণ দেয়ার আগে আইএমএফ শ্রীলঙ্কাকেও কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছিল। যার মধ্যে ছিল জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করতে হবে, ট্যাক্স বৃদ্ধি করতে হবে, জ্বালানি ভর্তুকি বাদ দিতে হবে এবং সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে হবে। শ্রীলঙ্কা এর সবই মেনে নেয়।
ট্যাক্স, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে জীবনব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকদিন আগেও আবার বিক্ষোভ করেছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জানিয়েছেন, আইএমএফের শর্ত মেনে নেয়া ছাড়া তাদের কাছে অন্য কোন উপায় ছিল না।