রাজস্ব ব্যবস্থার অটোমেশন, সংস্কার ও সহজীকরণ চায় ব্যবসায়ীরা

লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যকার কর হারের ব্যবধান কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করের হার আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমাতে হবে। এছাড়া কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কর ও মূসক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ ব্যবসাবান্ধব অটোমেটেড কর ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে আয়োজিত লাইভ ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : পরিপ্রেক্ষিত বেসরকারি খাত’ অনুষ্ঠান গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজার হলে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার গতকাল এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘খেলাপী ঋণ হ্রাসের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ প্রণয়নের পাশাপাশি এডিআরের প্রয়োগ, অর্থঋণ ও ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের সংস্কার, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারি খাতে ব্যয় হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমানতের সুদহার ও ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ, অবকাঠামো খাত ও জাতীয় লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষণে দীর্ঘমেয়াদী ফিন্যান্সিয়াল ম্যাপিং প্রবর্তনের আহ্বান জানাই। সেইসঙ্গে এলডিসি উত্তর সময়ে নিজেদের প্রতিযোগীতা সক্ষমতা ধরে রাখতে রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি চামড়া, পাট, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল প্রভৃতি সম্ভবনাময় খাতে আগামী বাজেটে বিশেষ সুবিধা প্রদানেরও দাবি করছি।’

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং এফবিসিআই’র সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। আলোচনা সভায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃক ডলারের সুদ হার বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আমদানি কার্যক্রমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করেছে ফলে আমাদের রিজার্ভেও ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি। আশা করি, আগামী জুনে এলসি ও ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আগামী বাজাটে করের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই, তবে এ লক্ষ্যে কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার ওপর জোরারোপ করেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কর প্রদানের মানসিকতা বৃদ্ধি করতে হবে। তৈরি পোষাক খাতের ন্যায় কৃষি, চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ অন্য সম্ভাবনাময় খাতসমূহে যথাযথ আর্থিক ও নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ কে উৎসাহিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করছি।’

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আগামী বাজাটে মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় রাখা, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবনতা হ্রাস প্রভৃতি বিষয়সমূহের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের উচ্চাভীলাষী বাজেট প্রণয়নের সুযোগ নেই, তবে জনগণের খাদ্য নিরপত্তা নিশ্চিতকরনের বিষয়টিকে সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. শফিউল ইসলাম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় আরও বৃদ্ধি করা জরুরি। জিপিডিতে করের অবদান বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। তবে এ লক্ষ্যে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণে আরো মনোযোগী হতে হবে।’ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে দ্রুততম সময়ে সব সেবা চালুকরণের আহ্বান জানান, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে তরান্বিত করবে।

অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, এলডিসি উত্তোরণ, স্থানীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সাবির্ক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের বেসরকারিখাতের সক্ষমতা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে এবং বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে কারণ এর সঙ্গে উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারালে সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে লাল ফিতার দৌরত্য কমাতে হবে। পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকে শিল্পের উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করছি।’

এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘সাম্প্রতি সময়ে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্য জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি আমাদের বেসরকারি খাতকে বেশ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করেছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার জ্বালানির মূল্য হ্রাস পেলে স্থানীয়ভাবে তা সমন্বয় করা প্রয়োজন। আমাদের মজুদকৃত গ্যাস দিয়ে আগামী ৫ বছর স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব, তাই শিল্প খাতে জ্বালানি সক্ষমতা নিশ্চিতকরণের কোন বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে ব্যাংকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়ন এবং ম্যান-মেইড ফাইবারের ব্যবহার বাড়ানোরও প্রস্তাব করেন এ কে আজাদ। এছাড়াও তিনি শিল্পখাতে সোলারের ব্যবহার বাড়াতে বিদ্যমান শুল্ক হ্রাসের ওপর জোরারোপ করেন।’

‘আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ‘আর্থিক খাত’, ‘শিল্প ও বাণিজ্য’ এবং ‘অবকাঠামো’-এ চারটি সেশনের নির্ধারিত আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার, আইসিএবি-এর সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, এফএিস, এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়্যরমান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী, বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ আশরাফ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ অব কোম্পানিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনউদ্দিন মোনেম, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম এবং নোকিয়ার কান্ট্রি হেড মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

আলোচকরা দেশের কর ও শুল্ক ব্যবস্থার অটোমেশন, আধুনিকায়ন ও সংস্কার, করজাল বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, টেকসই পুঁজিবাজার নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় সম্পদের কার্যকর ব্যবহার বাড়ানো, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, করপোরেট কর হার কমানো, রপ্তানির সম্ভাবনাময় খাতে বন্ড সুবিধা প্রদান ও পণ্যের বহুমুখীকরণ, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যক্রম সম্পন্নকরণ, পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষর প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করেন।

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩ , ০৯ চৈত্র ১৪২৯, ৩০ শবান ১৪৪৪

রাজস্ব ব্যবস্থার অটোমেশন, সংস্কার ও সহজীকরণ চায় ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যকার কর হারের ব্যবধান কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করের হার আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমাতে হবে। এছাড়া কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কর ও মূসক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ ব্যবসাবান্ধব অটোমেটেড কর ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে আয়োজিত লাইভ ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা : পরিপ্রেক্ষিত বেসরকারি খাত’ অনুষ্ঠান গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজার হলে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার গতকাল এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘খেলাপী ঋণ হ্রাসের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ প্রণয়নের পাশাপাশি এডিআরের প্রয়োগ, অর্থঋণ ও ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের সংস্কার, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারি খাতে ব্যয় হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমানতের সুদহার ও ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ, অবকাঠামো খাত ও জাতীয় লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষণে দীর্ঘমেয়াদী ফিন্যান্সিয়াল ম্যাপিং প্রবর্তনের আহ্বান জানাই। সেইসঙ্গে এলডিসি উত্তর সময়ে নিজেদের প্রতিযোগীতা সক্ষমতা ধরে রাখতে রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি চামড়া, পাট, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল প্রভৃতি সম্ভবনাময় খাতে আগামী বাজেটে বিশেষ সুবিধা প্রদানেরও দাবি করছি।’

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং এফবিসিআই’র সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। আলোচনা সভায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃক ডলারের সুদ হার বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আমদানি কার্যক্রমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করেছে ফলে আমাদের রিজার্ভেও ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি। আশা করি, আগামী জুনে এলসি ও ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আগামী বাজাটে করের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই, তবে এ লক্ষ্যে কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার ওপর জোরারোপ করেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কর প্রদানের মানসিকতা বৃদ্ধি করতে হবে। তৈরি পোষাক খাতের ন্যায় কৃষি, চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ অন্য সম্ভাবনাময় খাতসমূহে যথাযথ আর্থিক ও নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ কে উৎসাহিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করছি।’

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আগামী বাজাটে মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় রাখা, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবনতা হ্রাস প্রভৃতি বিষয়সমূহের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের উচ্চাভীলাষী বাজেট প্রণয়নের সুযোগ নেই, তবে জনগণের খাদ্য নিরপত্তা নিশ্চিতকরনের বিষয়টিকে সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. শফিউল ইসলাম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় আরও বৃদ্ধি করা জরুরি। জিপিডিতে করের অবদান বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। তবে এ লক্ষ্যে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণে আরো মনোযোগী হতে হবে।’ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে দ্রুততম সময়ে সব সেবা চালুকরণের আহ্বান জানান, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে তরান্বিত করবে।

অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, এলডিসি উত্তোরণ, স্থানীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সাবির্ক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের বেসরকারিখাতের সক্ষমতা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে এবং বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে কারণ এর সঙ্গে উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারালে সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে লাল ফিতার দৌরত্য কমাতে হবে। পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকে শিল্পের উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করছি।’

এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘সাম্প্রতি সময়ে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্য জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি আমাদের বেসরকারি খাতকে বেশ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করেছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার জ্বালানির মূল্য হ্রাস পেলে স্থানীয়ভাবে তা সমন্বয় করা প্রয়োজন। আমাদের মজুদকৃত গ্যাস দিয়ে আগামী ৫ বছর স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব, তাই শিল্প খাতে জ্বালানি সক্ষমতা নিশ্চিতকরণের কোন বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে ব্যাংকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়ন এবং ম্যান-মেইড ফাইবারের ব্যবহার বাড়ানোরও প্রস্তাব করেন এ কে আজাদ। এছাড়াও তিনি শিল্পখাতে সোলারের ব্যবহার বাড়াতে বিদ্যমান শুল্ক হ্রাসের ওপর জোরারোপ করেন।’

‘আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ‘আর্থিক খাত’, ‘শিল্প ও বাণিজ্য’ এবং ‘অবকাঠামো’-এ চারটি সেশনের নির্ধারিত আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার, আইসিএবি-এর সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, এফএিস, এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস্ এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়্যরমান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী, বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ আশরাফ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ অব কোম্পানিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনউদ্দিন মোনেম, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম এবং নোকিয়ার কান্ট্রি হেড মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

আলোচকরা দেশের কর ও শুল্ক ব্যবস্থার অটোমেশন, আধুনিকায়ন ও সংস্কার, করজাল বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, টেকসই পুঁজিবাজার নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় সম্পদের কার্যকর ব্যবহার বাড়ানো, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, করপোরেট কর হার কমানো, রপ্তানির সম্ভাবনাময় খাতে বন্ড সুবিধা প্রদান ও পণ্যের বহুমুখীকরণ, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যক্রম সম্পন্নকরণ, পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষর প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করেন।