ল্যাপটপ ও প্রিন্টার আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি

দেশের বাজারে ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের দাম আকাশচুম্বী। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও আমদানি পর্যায়ে পণ্য দুটির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপই এর পেছনে দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে দাম সাধ্যের মধ্যে রাখতে ল্যাপটপ ও প্রিন্টার আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট সভায় গতকাল এ প্রস্তাব তুলে ধরেন বিসিএসের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার। বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে এনবিআরের সদস্য ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি সভায় বেশকিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করে। সর্বোচ্চ ২২ ইঞ্চি সাইজের মনিটর আমদানিতে কোন ধরনের কর দিতে হয় না। এক্ষেত্রে সংগঠনটি সর্বোচ্চ ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত কর অব্যাহতির দাবি জানিয়েছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির প্রায় সব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বিসিএস।

সংগঠনটির সভাপতি বলেন, ‘বাড়তি ভ্যাটের কারণে ল্যাপটপের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। স্থানীয় উৎপাদনকারীরা গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে পারেনি। আগে ২৫-৩০ হাজার টাকায় মানুষ ল্যাপটপ কিনতে পারত। এখন ৫০ হাজার টাকার নিচে কোন ল্যাপটপ কিনতে পারছে না।’

বাংলাদেশ টয় মার্চেন্টস, ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা চেয়েছে। বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সফরমার্স অ্যান্ড সুইচগিয়ার্স ৩০টি পণ্যে আমদানি ও রেগুলেটরি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ তাদের প্রস্তাবে জানায়, প্রাথমিকভাবে মোবাইল কারখানাগুলোকে কিছু শুল্ক ও মূসক সুবিধা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এসবের কার্যকারিতা এ বছর শেষ হয়ে যাবে। অথচ চীন, ভারতসহ বিশ্বের অন্য দেশে দেখা যায়, কারখানাগুলোর পূর্ণ সক্ষমতা তৈরি হতে আরও বেশি সময় লাগে। তাই শুল্ক ও মূসকের সংশ্লিষ্ট এসআরওগুলোর সময়সীমা বাড়াতে হবে। অবৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানি ও বাজারজাত ঠেকাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক এর আগে যে সিস্টেম বাস্তবায়িত করেছে, তা রাজস্ব বোর্ড পর্যালোচনা করে পুনঃবাস্তবায়ন করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।

অন্যদিকে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী, সফটওয়্যার ও আইটিএস খাতের কর অব্যাহতি ২০৩০ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। সংগঠনটির অন্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, মেধা পাচার রোধে সফটওয়্যার ও আইটি খাতের পেশাজীবীদের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়ের ওপর আয়কর রেয়াত প্রদান, স্থানীয় সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার ওপর মূসক সম্পূর্ণ তুলে দেয়া, ডিজিটাল সিকিউরিটি পণ্যের উচ্চ শুল্ক হ্রাস করে শূন্য শতাংশ করা।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বাজেট প্রস্তাবনায় জানায়, বাস, ট্রাক ও লরির রেডিয়াল টায়ার সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। বর্তমানে এসব পণ্য আমদানিতে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) দিতে হয়। সেইসঙ্গে প্রতি কেজি রেডিয়াল টায়ারে ৩ দশমিক ৫০ ডলার ও নন-রেডিয়াল টায়ারে ৩ ডলার ট্যারিফ বিদ্যমান। এ হার রেডিয়াল ও নন-রেডিয়াল উভয় ক্ষেত্রে ২ ডলার করার প্রস্তাব দিয়েছে পরিবহন সমিতি। এছাড়া আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব জানিয়েছে সংগঠনটি।’ সমিতি আরও জানায়, মোটরযানে ব্যবহৃত ইঞ্জিন আমদানিতে সুনির্দিষ্ট এইচএস কোড নির্ধারণ করে আমদানি শুল্ক ৩ শতাংশ করা ও খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩ , ০৯ চৈত্র ১৪২৯, ৩০ শবান ১৪৪৪

ল্যাপটপ ও প্রিন্টার আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

দেশের বাজারে ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের দাম আকাশচুম্বী। ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও আমদানি পর্যায়ে পণ্য দুটির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপই এর পেছনে দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে দাম সাধ্যের মধ্যে রাখতে ল্যাপটপ ও প্রিন্টার আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট সভায় গতকাল এ প্রস্তাব তুলে ধরেন বিসিএসের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার। বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে এনবিআরের সদস্য ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি সভায় বেশকিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করে। সর্বোচ্চ ২২ ইঞ্চি সাইজের মনিটর আমদানিতে কোন ধরনের কর দিতে হয় না। এক্ষেত্রে সংগঠনটি সর্বোচ্চ ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত কর অব্যাহতির দাবি জানিয়েছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির প্রায় সব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বিসিএস।

সংগঠনটির সভাপতি বলেন, ‘বাড়তি ভ্যাটের কারণে ল্যাপটপের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। স্থানীয় উৎপাদনকারীরা গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে পারেনি। আগে ২৫-৩০ হাজার টাকায় মানুষ ল্যাপটপ কিনতে পারত। এখন ৫০ হাজার টাকার নিচে কোন ল্যাপটপ কিনতে পারছে না।’

বাংলাদেশ টয় মার্চেন্টস, ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা চেয়েছে। বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সফরমার্স অ্যান্ড সুইচগিয়ার্স ৩০টি পণ্যে আমদানি ও রেগুলেটরি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ তাদের প্রস্তাবে জানায়, প্রাথমিকভাবে মোবাইল কারখানাগুলোকে কিছু শুল্ক ও মূসক সুবিধা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এসবের কার্যকারিতা এ বছর শেষ হয়ে যাবে। অথচ চীন, ভারতসহ বিশ্বের অন্য দেশে দেখা যায়, কারখানাগুলোর পূর্ণ সক্ষমতা তৈরি হতে আরও বেশি সময় লাগে। তাই শুল্ক ও মূসকের সংশ্লিষ্ট এসআরওগুলোর সময়সীমা বাড়াতে হবে। অবৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানি ও বাজারজাত ঠেকাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক এর আগে যে সিস্টেম বাস্তবায়িত করেছে, তা রাজস্ব বোর্ড পর্যালোচনা করে পুনঃবাস্তবায়ন করার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।

অন্যদিকে জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী, সফটওয়্যার ও আইটিএস খাতের কর অব্যাহতি ২০৩০ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। সংগঠনটির অন্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, মেধা পাচার রোধে সফটওয়্যার ও আইটি খাতের পেশাজীবীদের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়ের ওপর আয়কর রেয়াত প্রদান, স্থানীয় সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার ওপর মূসক সম্পূর্ণ তুলে দেয়া, ডিজিটাল সিকিউরিটি পণ্যের উচ্চ শুল্ক হ্রাস করে শূন্য শতাংশ করা।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বাজেট প্রস্তাবনায় জানায়, বাস, ট্রাক ও লরির রেডিয়াল টায়ার সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। বর্তমানে এসব পণ্য আমদানিতে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) দিতে হয়। সেইসঙ্গে প্রতি কেজি রেডিয়াল টায়ারে ৩ দশমিক ৫০ ডলার ও নন-রেডিয়াল টায়ারে ৩ ডলার ট্যারিফ বিদ্যমান। এ হার রেডিয়াল ও নন-রেডিয়াল উভয় ক্ষেত্রে ২ ডলার করার প্রস্তাব দিয়েছে পরিবহন সমিতি। এছাড়া আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব জানিয়েছে সংগঠনটি।’ সমিতি আরও জানায়, মোটরযানে ব্যবহৃত ইঞ্জিন আমদানিতে সুনির্দিষ্ট এইচএস কোড নির্ধারণ করে আমদানি শুল্ক ৩ শতাংশ করা ও খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।