বাঁশ ও বেত ঐতিহ্য হারাচ্ছে মানিকগঞ্জ মানবেতর জীবনে তিন হাজার পরিবার

মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩ হাজার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে জীবন জীবিকার অন্যতম বাহক হিসাবে তাদের অনেক কদর ছিল। বাজারে প্লাস্টিক ও এলোম্যানিয়াম এবং আধুনিকতার ছোয়া, উন্নত প্রযুক্তির কাছে বেত শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন পন্যের চাহিদা একেবারে কমে গেছে। ফলে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে এ দেশ থেকে।

জেলার, ঘিওর, দৌলতপুর শিবালয়, সিংগাইর, সাটুরিয়া, হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ভোরের নীরবতা ভেঙ্গে পাড়া, মহল্লা ঘুরে বেতের তৈরি কারিগররা বাঁশ ও বেত ঝোপ কিনতো। কাস্তে দড়ি, হাতে নিয়ে তার সারা দিন ঘুরে বেড়াতো গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ি। বাঁশ ও বেত ঝোপ চুক্তিতে কিনে তারা সারা দিন বেত ছাড়িয়ে বাড়ি যেত। বেত পানিতে জাগ দিয়ে রাখতো ১০ থেকে ১৫ দিন। পরে বাড়িতে বসে মনের সুখে তারা বেতের তৈরি পণ্য তৈরি করত। কিন্তু এখন আর চোখে পরে না। কালের আর্বতনে হাড়িয়ে যাচ্ছে সকল বেত শিল্পের নানা পণ্য সামগ্রী। আর এ পেশার সাথে জড়িত লোকজনের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন।

ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ঋষিপড়া গ্রামের প্রবীন বেত শিল্পী চন্দ্র সরকার (৭২), সুনিল সরকার, লক্ষন সরকার, সুকুমার সরকার, চিনু রানী, দুর্গা রানী, সুবল সরকার সাংবাদিকদের জানান, বহু কষ্ট, দুঃখ করে বাপ দাদাদের পৈত্রিক পেশাটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় বেতের অভাব,সরকারি পৃষ্টপোষকতা না থাকার কারনে বেত শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা তাদের পৈত্রিক পেশা টিকিয়ে রাখতে পারছে না। ৭০-৮০ দশকে বেতের তৈরি ধামা, কাঠা, দাড়িপাল্লা, কাঠি, পাটি, সেড়, দোলনাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা ঘিওর, বরংগাইল তরাসহ বিভিন্ন হাট বাজারে প্রচুর বিক্রি হতো।

শিবালয় উপজেলার উথলী গ্রামের নিমাই দাশ জানান, বর্তমানে বাপ দাদাদের পৈত্রিক পেশার কারণে কোন রকমভাবে টিকে আছি।

দৌলতপুর উপজেলার ধামস্বর এলাকার কাকনা জানান, এ পেশার সাথে জড়িত শিল্পীরা বেতের তৈরি জিনিসপত্র এখন আর তৈরি করতে চায়না। তারা হতাশ হয়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অন্য পেশায়।

বারসিকের জেলা স্বমন্বয়নকারী বিমল চন্দ্র রায় জানান, এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি এ পেশার সাথে জড়িত লোকজনকে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, বাশ বেতের চাষাবাদের ব্যবস্থাসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দিলে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটবে। তাহলেই এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তা না হলে অচিরেই হাড়িয়ে যাবে এই ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পটি।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, আমি বিভিন্ন উপজেলার কুটির শিল্পের সাথে জড়িত লোকজনের এলাকাতে গিয়ে দেখেছি তারা বহু কষ্ট করে কুটির শিল্পের সামগ্রী তৈরি করেন। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা কষ্ট জীবিকা নির্ভর করে। এ ছাড়া তাদের ক্ষুদ্র ঋণসহ আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।

image

মানিকগঞ্জ : ঘিওরে বাঁশ বেত দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী -সংবাদ

আরও খবর
মেহেরপুরে কালভার্ট ভেঙে যে কোন সময় ঘটবে প্রাণহানি
নিজের উৎপাদিত পাট বীজ বিতরণ প্রতিবন্ধী আক্কাসের
প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত
রাজশাহীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ কলকাতার অধ্যাপক ও সাংবাদিকরা
মানিকগঞ্জে কমল হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন
পবায় রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রির দায়ে জেল-জরিমানা
চাঁদপুরে বেড়েই চলছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য
পোরশায় গরম পানি ঢেলে নারী হত্যার অভিযোগে বৃদ্ধ আটক
সখীপুরে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক
ডুমুরিয়ার গার্ডার ব্রিজ ও টিপনা সিংগা সড়ক নির্মাণকাজে ধীরগতি
নড়াইলে আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার জমি কেনায় সহযোগিতার আশ্বাস মাশরাফির

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩ , ০৯ চৈত্র ১৪২৯, ৩০ শবান ১৪৪৪

বাঁশ ও বেত ঐতিহ্য হারাচ্ছে মানিকগঞ্জ মানবেতর জীবনে তিন হাজার পরিবার

প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ

image

মানিকগঞ্জ : ঘিওরে বাঁশ বেত দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী -সংবাদ

মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩ হাজার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে জীবন জীবিকার অন্যতম বাহক হিসাবে তাদের অনেক কদর ছিল। বাজারে প্লাস্টিক ও এলোম্যানিয়াম এবং আধুনিকতার ছোয়া, উন্নত প্রযুক্তির কাছে বেত শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন পন্যের চাহিদা একেবারে কমে গেছে। ফলে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে এ দেশ থেকে।

জেলার, ঘিওর, দৌলতপুর শিবালয়, সিংগাইর, সাটুরিয়া, হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ভোরের নীরবতা ভেঙ্গে পাড়া, মহল্লা ঘুরে বেতের তৈরি কারিগররা বাঁশ ও বেত ঝোপ কিনতো। কাস্তে দড়ি, হাতে নিয়ে তার সারা দিন ঘুরে বেড়াতো গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ি। বাঁশ ও বেত ঝোপ চুক্তিতে কিনে তারা সারা দিন বেত ছাড়িয়ে বাড়ি যেত। বেত পানিতে জাগ দিয়ে রাখতো ১০ থেকে ১৫ দিন। পরে বাড়িতে বসে মনের সুখে তারা বেতের তৈরি পণ্য তৈরি করত। কিন্তু এখন আর চোখে পরে না। কালের আর্বতনে হাড়িয়ে যাচ্ছে সকল বেত শিল্পের নানা পণ্য সামগ্রী। আর এ পেশার সাথে জড়িত লোকজনের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন।

ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ঋষিপড়া গ্রামের প্রবীন বেত শিল্পী চন্দ্র সরকার (৭২), সুনিল সরকার, লক্ষন সরকার, সুকুমার সরকার, চিনু রানী, দুর্গা রানী, সুবল সরকার সাংবাদিকদের জানান, বহু কষ্ট, দুঃখ করে বাপ দাদাদের পৈত্রিক পেশাটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় বেতের অভাব,সরকারি পৃষ্টপোষকতা না থাকার কারনে বেত শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা তাদের পৈত্রিক পেশা টিকিয়ে রাখতে পারছে না। ৭০-৮০ দশকে বেতের তৈরি ধামা, কাঠা, দাড়িপাল্লা, কাঠি, পাটি, সেড়, দোলনাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা ঘিওর, বরংগাইল তরাসহ বিভিন্ন হাট বাজারে প্রচুর বিক্রি হতো।

শিবালয় উপজেলার উথলী গ্রামের নিমাই দাশ জানান, বর্তমানে বাপ দাদাদের পৈত্রিক পেশার কারণে কোন রকমভাবে টিকে আছি।

দৌলতপুর উপজেলার ধামস্বর এলাকার কাকনা জানান, এ পেশার সাথে জড়িত শিল্পীরা বেতের তৈরি জিনিসপত্র এখন আর তৈরি করতে চায়না। তারা হতাশ হয়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অন্য পেশায়।

বারসিকের জেলা স্বমন্বয়নকারী বিমল চন্দ্র রায় জানান, এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি এ পেশার সাথে জড়িত লোকজনকে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, বাশ বেতের চাষাবাদের ব্যবস্থাসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দিলে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটবে। তাহলেই এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তা না হলে অচিরেই হাড়িয়ে যাবে এই ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পটি।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, আমি বিভিন্ন উপজেলার কুটির শিল্পের সাথে জড়িত লোকজনের এলাকাতে গিয়ে দেখেছি তারা বহু কষ্ট করে কুটির শিল্পের সামগ্রী তৈরি করেন। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা কষ্ট জীবিকা নির্ভর করে। এ ছাড়া তাদের ক্ষুদ্র ঋণসহ আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।