রেলের অগ্রিম টিকেট শতভাগ অনলাইনে, বিক্রি শুরু ৭ এপ্রিল

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে রেলের আগাম টিকেট বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এবারের ঈদযাত্রার পরিবেশ ‘উন্নতির’ লক্ষ্যে অনলাইনে শতভাগ টিকেট বিক্রির ঘোষণাও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঈদের অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলরত সব আন্তঃনগর ট্রেনের ডে-অফ বাতিল করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ঈদযাত্রার সিডিউল বিপর্যয় ‘নিরসনে’ ১০ দিন আন্তর্জাতিক ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস ও আট দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল অব্যাহত রাখলেও থাকবে ধীরগতি।

গতকাল রেল ভবনের সম্মেলনে কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় রেলসচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান প্রমুখ। এর আগে গত মঙ্গলবার ‘ঈদ উপলক্ষে ট্রেন পরিচালনা’ সংক্রান্ত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, ‘ঈদের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হবে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে। ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে। তবে ২২, ২৩ এবং ২৪ এপ্রিলের টিকেট বিক্রি করা হবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। ঈদযাত্রা শুরুর ১০ দিন আগে সব আন্তঃনগর ট্রেনের শতভাগ টিকেট অনলাইনে বিক্রি হবে।’

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘৭ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ১৭ এপ্রিল, ৮ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ১৮ এপ্রিল, ৯ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ১৯ এপ্রিল, ১০ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ২০ এপ্রিল এবং ১১ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ২১ এপ্রিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা হতে বর্হিগামী ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা হবে ২৫ হাজার ৭৭৮টি, যা শতভাগ অনলাইনে বিক্রি করা হবে। এছাড়া ঢাকা/জয়দেবপুর হতে ঈদ স্পেশাল ট্রেনের আরও ৩ হাজার আসনের টিকেট অনলাইনে বিক্রি করা হবে।’

‘ঈদের সময় কমলাপুরের যে পরিবেশ তৈরি হয় এটা রেলের জন্য খুবই বিব্রতকর হয়। এখন মানুষ দুই দিন কমলাপুরে থেকেও টিকেট পায় না। সব মানুষ টিকেট পাবে না। ঈদের সময় আমাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনলাইনে শতভাগ টিকেট দেয়া হবে।’ বলেন রেলমন্ত্রী।

নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও র?্যাবের সহযোগিতায় টিকেট ছাড়া যাত্রীরা যেন স্টেশনে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। চলন্ত ট্রেনে, স্টেশনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এছাড়া র?্যাব, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে না। ঈদের ১০ দিন আগে ও ঈদের পরে ১০ দিন পর্যন্ত ট্রেনে সেলুন কার সংযোজন করা হবে না।’

ঈদযাত্রায় ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন

সংবাদ সম্মেলনে ঈদে ঘরমুখো মানুষের সুবিধার্থে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল ১ ও ৩ চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল ২ ও ৪ চাঁদপুর-চট্টগ্রাম-চাঁদপুর; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ৫ ও ৬ ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল ৭ ও ৮ চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; ঈদ স্পেশাল ৯ ও ১০ সিলেট-চাঁদপুর-সিলেট রুটে ঈদের আগে ৪ দিন এবং ঈদের পরে ৫ দিন চলাচল করবে।

এছাড়া শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ১১ ও ১২ ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার; শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ১৩ ও ১৪ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শুধুমাত্র ঈদের দিন চলাচল করবে। ঈদ স্পেশাল ১ ও ২ বী.মু.সি.ই (পঞ্চগড়)-জয়দেবপুর-বী.মু.সি.ই; ঈদ স্পেশাল ১৫ ও ১৬ ঢাকা-চিলাহাটি-ঢাকা রুটে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল এবং ২৪-২৫ এপ্রিল চলাচল করবে।

রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলরত সব আন্তঃনগর ট্রেনের ডে-অফ বাতিল করা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব ট্রেনের কোন ডে-অফ (সাপ্তাহিক ছুটি) থাকবে না। এছাড়া ঈদের দিন কোন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ৫৩টি (পাড়াতলী ওয়ার্কশপ থেকে ৪০টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ ৪টি এমজি ও ৯টি বিজি মোট ১৩টি) যাত্রীবাহী কোচ সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ২১৮টি (পূর্বাঞ্চল ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চল হতে ১০২টি) লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

৫ দিনের বদলে ১০ দিন আগের টিকেট মিলবে ১ এপ্রিল থেকে

যাত্রার ১০ দিন আগের ট্রেনের টিকেট অনলাইনে পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগে অনলাইনে ৫ দিনের অগ্রিম টিকেট পাওয়া যেত। সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ১ এপ্রিল থেকে যাত্রার ১০ দিন আগের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট অগ্রিম হিসেবে বিক্রি করা হবে। তবে সময় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত সমন্বয়ের জন্য ১ এপ্রিল ৫-১১ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত যাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। আগামী ২ এপ্রিল থেকে নতুন নিয়মে ১০ দিনের অগ্রিম টিকেটের ব্যবস্থা কার্যকর হবে।’

তিনি বলেন, ‘১ এপ্রিল থেকে কাউন্টার অনলাইনের মাধ্যমে যুগপৎভাবে সব টিকেট সকাল ৮টা থেকে বিক্রি শুরু হবে। অর্থাৎ অনলাইন বা কাউন্টারে পৃথক কোন কোটা থাকবে না। ঈদযাত্রার সব টিকেট শুধুমাত্র অনলাইনে বিক্রি করা হবে। ঈদের অগ্রিম ও ফেরত যাত্রার টিকেট সময়সূচি অনুযায়ী ১৭ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব টিকেট শুধুমাত্র অনলাইনে বিক্রি করা হবে।’

সিডিউল বিপর্যয় ‘নিরসনে’ বন্ধ থাকবে মিতালী ও মৈত্রী

ঈদুল ফিতরে ট্রেনের সময় সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখা এবং সিডিউল বিপর্যয় নিরসনে ১০ দিন মিতালী এক্সপ্রেস ও আট দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন যথারীতি চলাচল করবে। যদিও বন্ধন ধীরগতিতে চলবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, ‘নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনা নিশ্চিত করে যাত্রীসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময়ানুবর্তিতা রক্ষার জন্য ডিভিশনাল ও জোনাল কন্ট্রোলে পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করে কর্মকর্তাদের ইমার্জেন্সি ডিউটি প্রদান করা হবে। সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং জংশন স্টেশন ও সিগন্যাল কেবিনে কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের তদারকির মাধ্যমে ট্রেন অপারেশন পরিচালনা করা হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ট্রেন সিডিউল অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে রেলপথ প্যাট্রলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। রেল ব্রিজগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিগনালিং ব্যবস্থা, কোচ এবং ইঞ্জিনের নিবিড় পরিচর্যা ও পরীক্ষা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেকোন জরুরি প্রয়োজনে নিয়োজিত করতে রিলিফ ট্রেনগুলো স্ব-স্ব অবস্থানে প্রস্তুত রাখা হবে।’

তিনি বলেন, ‘মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন ১৮-২৭ এপ্রিল; মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ২০-২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। কিন্তু বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন যথারীতি চলাচল করবে। ঈদে দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কতিপয় মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। তবে কোন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না। ঈদের আগে ২০ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ২২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ব্যতীত অন্য সব গুডস ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।’

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩ , ০৯ চৈত্র ১৪২৯, ৩০ শবান ১৪৪৪

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর

রেলের অগ্রিম টিকেট শতভাগ অনলাইনে, বিক্রি শুরু ৭ এপ্রিল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে রেলের আগাম টিকেট বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এবারের ঈদযাত্রার পরিবেশ ‘উন্নতির’ লক্ষ্যে অনলাইনে শতভাগ টিকেট বিক্রির ঘোষণাও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঈদের অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলরত সব আন্তঃনগর ট্রেনের ডে-অফ বাতিল করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ঈদযাত্রার সিডিউল বিপর্যয় ‘নিরসনে’ ১০ দিন আন্তর্জাতিক ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস ও আট দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল অব্যাহত রাখলেও থাকবে ধীরগতি।

গতকাল রেল ভবনের সম্মেলনে কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় রেলসচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান প্রমুখ। এর আগে গত মঙ্গলবার ‘ঈদ উপলক্ষে ট্রেন পরিচালনা’ সংক্রান্ত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, ‘ঈদের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হবে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে। ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে। তবে ২২, ২৩ এবং ২৪ এপ্রিলের টিকেট বিক্রি করা হবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। ঈদযাত্রা শুরুর ১০ দিন আগে সব আন্তঃনগর ট্রেনের শতভাগ টিকেট অনলাইনে বিক্রি হবে।’

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘৭ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ১৭ এপ্রিল, ৮ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ১৮ এপ্রিল, ৯ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ১৯ এপ্রিল, ১০ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ২০ এপ্রিল এবং ১১ এপ্রিল টিকেট কাটলে যাত্রা করতে হবে ২১ এপ্রিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা হতে বর্হিগামী ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা হবে ২৫ হাজার ৭৭৮টি, যা শতভাগ অনলাইনে বিক্রি করা হবে। এছাড়া ঢাকা/জয়দেবপুর হতে ঈদ স্পেশাল ট্রেনের আরও ৩ হাজার আসনের টিকেট অনলাইনে বিক্রি করা হবে।’

‘ঈদের সময় কমলাপুরের যে পরিবেশ তৈরি হয় এটা রেলের জন্য খুবই বিব্রতকর হয়। এখন মানুষ দুই দিন কমলাপুরে থেকেও টিকেট পায় না। সব মানুষ টিকেট পাবে না। ঈদের সময় আমাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনলাইনে শতভাগ টিকেট দেয়া হবে।’ বলেন রেলমন্ত্রী।

নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘সব বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও র?্যাবের সহযোগিতায় টিকেট ছাড়া যাত্রীরা যেন স্টেশনে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। চলন্ত ট্রেনে, স্টেশনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এছাড়া র?্যাব, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে না। ঈদের ১০ দিন আগে ও ঈদের পরে ১০ দিন পর্যন্ত ট্রেনে সেলুন কার সংযোজন করা হবে না।’

ঈদযাত্রায় ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন

সংবাদ সম্মেলনে ঈদে ঘরমুখো মানুষের সুবিধার্থে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল ১ ও ৩ চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল ২ ও ৪ চাঁদপুর-চট্টগ্রাম-চাঁদপুর; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ৫ ও ৬ ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল ৭ ও ৮ চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; ঈদ স্পেশাল ৯ ও ১০ সিলেট-চাঁদপুর-সিলেট রুটে ঈদের আগে ৪ দিন এবং ঈদের পরে ৫ দিন চলাচল করবে।

এছাড়া শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ১১ ও ১২ ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার; শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ১৩ ও ১৪ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শুধুমাত্র ঈদের দিন চলাচল করবে। ঈদ স্পেশাল ১ ও ২ বী.মু.সি.ই (পঞ্চগড়)-জয়দেবপুর-বী.মু.সি.ই; ঈদ স্পেশাল ১৫ ও ১৬ ঢাকা-চিলাহাটি-ঢাকা রুটে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল এবং ২৪-২৫ এপ্রিল চলাচল করবে।

রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলরত সব আন্তঃনগর ট্রেনের ডে-অফ বাতিল করা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব ট্রেনের কোন ডে-অফ (সাপ্তাহিক ছুটি) থাকবে না। এছাড়া ঈদের দিন কোন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ৫৩টি (পাড়াতলী ওয়ার্কশপ থেকে ৪০টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ ৪টি এমজি ও ৯টি বিজি মোট ১৩টি) যাত্রীবাহী কোচ সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ২১৮টি (পূর্বাঞ্চল ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চল হতে ১০২টি) লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

৫ দিনের বদলে ১০ দিন আগের টিকেট মিলবে ১ এপ্রিল থেকে

যাত্রার ১০ দিন আগের ট্রেনের টিকেট অনলাইনে পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগে অনলাইনে ৫ দিনের অগ্রিম টিকেট পাওয়া যেত। সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ১ এপ্রিল থেকে যাত্রার ১০ দিন আগের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট অগ্রিম হিসেবে বিক্রি করা হবে। তবে সময় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত সমন্বয়ের জন্য ১ এপ্রিল ৫-১১ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত যাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। আগামী ২ এপ্রিল থেকে নতুন নিয়মে ১০ দিনের অগ্রিম টিকেটের ব্যবস্থা কার্যকর হবে।’

তিনি বলেন, ‘১ এপ্রিল থেকে কাউন্টার অনলাইনের মাধ্যমে যুগপৎভাবে সব টিকেট সকাল ৮টা থেকে বিক্রি শুরু হবে। অর্থাৎ অনলাইন বা কাউন্টারে পৃথক কোন কোটা থাকবে না। ঈদযাত্রার সব টিকেট শুধুমাত্র অনলাইনে বিক্রি করা হবে। ঈদের অগ্রিম ও ফেরত যাত্রার টিকেট সময়সূচি অনুযায়ী ১৭ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব টিকেট শুধুমাত্র অনলাইনে বিক্রি করা হবে।’

সিডিউল বিপর্যয় ‘নিরসনে’ বন্ধ থাকবে মিতালী ও মৈত্রী

ঈদুল ফিতরে ট্রেনের সময় সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখা এবং সিডিউল বিপর্যয় নিরসনে ১০ দিন মিতালী এক্সপ্রেস ও আট দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন যথারীতি চলাচল করবে। যদিও বন্ধন ধীরগতিতে চলবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, ‘নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনা নিশ্চিত করে যাত্রীসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময়ানুবর্তিতা রক্ষার জন্য ডিভিশনাল ও জোনাল কন্ট্রোলে পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করে কর্মকর্তাদের ইমার্জেন্সি ডিউটি প্রদান করা হবে। সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং জংশন স্টেশন ও সিগন্যাল কেবিনে কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের তদারকির মাধ্যমে ট্রেন অপারেশন পরিচালনা করা হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ট্রেন সিডিউল অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে রেলপথ প্যাট্রলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। রেল ব্রিজগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিগনালিং ব্যবস্থা, কোচ এবং ইঞ্জিনের নিবিড় পরিচর্যা ও পরীক্ষা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেকোন জরুরি প্রয়োজনে নিয়োজিত করতে রিলিফ ট্রেনগুলো স্ব-স্ব অবস্থানে প্রস্তুত রাখা হবে।’

তিনি বলেন, ‘মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন ১৮-২৭ এপ্রিল; মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ২০-২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। কিন্তু বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন যথারীতি চলাচল করবে। ঈদে দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কতিপয় মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। তবে কোন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না। ঈদের আগে ২০ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ২২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ব্যতীত অন্য সব গুডস ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।’