সিরাজগঞ্জে সংগৃহীত হাড়ের গুঁড়ো যাচ্ছে দেশের ওষুধ কোম্পানিতে

তুচ্ছ ভেবে ফেলে দেওয়া হার এখন আর ফেলনা নয়। এই ফেলে দেওয়া হার সংগ্রহ করে গুড়ো করে পাঠানো হচ্ছে দেশের ওষুধ কোম্পানি গুলিতে। সিরাজগঞ্জে একমাত্র সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কালিয়া গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে হাড় গুড়া করে সার তৈরির কারখানা। আর এ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকার উৎপাদন হয় যেগুলো খুলনার ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে দিচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের পাবনা, নাটোর, বগুড়া, টাঙ্গাইল জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড় সংগ্রহ করে এখানে এনে প্রতি কেজি হার ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি করে । এই হার মেশিনের সাহায্যে গুড়া করে ২০-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় দুই ট্রাক হাড়ের গুড়া খুলনায় মহাজনদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এই কারখানায় ১৫ থেকে ২০ জন নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিক চম্পা ও আছের জানান, আমরা এখানে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করি দৈনিক সাড়ে তিনশ টাকা করে বেতন পাই যা দিয়ে আমার সংসার চলে। স্বামীর আয়ের সাথে আমার আয় সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। হাড় সংগ্রহকারী সোলায়মান জানান, আমরা কয়েকজন প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড় সংগ্রহ করে এখানে ১৪-১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। দৈনিক প্রায় গড়ে ২০ কেজি হাড় সংগ্রহ হয় এ থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। সে আরও জানায় গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন কসাইরা আর আগের মতো হার ফেলায় না মাংসের সাথেই বিক্রি করে দেয়। তাই এখন আগের মতো আর হার সংগ্রহ করতে পারি না।

এই কারখানার মালিক হাফিজুল শেখ জানান আমার বাবার আমল থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করি। সারাদেশে ৫-৬টি হাড়ের কালকারখানা রয়েছে তার মধ্যে সিরাজগঞ্জে একটি। আমরা কুড়ানো হাড় কিনে নিয়ে গুড়ো করে খুলনার ডিলার মাধ্যমে বিক্রি করি। শুনেছি তারা এই সব গুড়া দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। অনেক সময় চাহিদামতো গুড়ো সরবরাহও করতে পারি না। এখন আবার হাড়ও কেমন পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আমাদের হাড়ের গুড়া উৎপাদনের ওপর প্রভাব পরেছে ।

এই হাড়ের গুড়া ক্রেতা খুলনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই হাড়ের গুড়া থেকে গবাদি পশুর খাবার, মুরগির খাবার ও ওষুধ কোম্পানিতে ক্যাপসুল তৈরির কভার তৈরি হয়।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত বলেন, বিষয়টি আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পরে না। তবুও জানার পর এ বিষয়ে খবর নিয়েছি। তার হাড় গুড়ো করে ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে বলে জানান।

শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩ , ১০ চৈত্র ১৪২৯, ০১ রমজান ১৪৪৪

সিরাজগঞ্জে সংগৃহীত হাড়ের গুঁড়ো যাচ্ছে দেশের ওষুধ কোম্পানিতে

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

image

সিরাজগঞ্জ : হাড়ের গুড়োর কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকরা -সংবাদ

তুচ্ছ ভেবে ফেলে দেওয়া হার এখন আর ফেলনা নয়। এই ফেলে দেওয়া হার সংগ্রহ করে গুড়ো করে পাঠানো হচ্ছে দেশের ওষুধ কোম্পানি গুলিতে। সিরাজগঞ্জে একমাত্র সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কালিয়া গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে হাড় গুড়া করে সার তৈরির কারখানা। আর এ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকার উৎপাদন হয় যেগুলো খুলনার ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে দিচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের পাবনা, নাটোর, বগুড়া, টাঙ্গাইল জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড় সংগ্রহ করে এখানে এনে প্রতি কেজি হার ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি করে । এই হার মেশিনের সাহায্যে গুড়া করে ২০-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় দুই ট্রাক হাড়ের গুড়া খুলনায় মহাজনদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এই কারখানায় ১৫ থেকে ২০ জন নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিক চম্পা ও আছের জানান, আমরা এখানে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করি দৈনিক সাড়ে তিনশ টাকা করে বেতন পাই যা দিয়ে আমার সংসার চলে। স্বামীর আয়ের সাথে আমার আয় সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। হাড় সংগ্রহকারী সোলায়মান জানান, আমরা কয়েকজন প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড় সংগ্রহ করে এখানে ১৪-১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। দৈনিক প্রায় গড়ে ২০ কেজি হাড় সংগ্রহ হয় এ থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। সে আরও জানায় গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন কসাইরা আর আগের মতো হার ফেলায় না মাংসের সাথেই বিক্রি করে দেয়। তাই এখন আগের মতো আর হার সংগ্রহ করতে পারি না।

এই কারখানার মালিক হাফিজুল শেখ জানান আমার বাবার আমল থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করি। সারাদেশে ৫-৬টি হাড়ের কালকারখানা রয়েছে তার মধ্যে সিরাজগঞ্জে একটি। আমরা কুড়ানো হাড় কিনে নিয়ে গুড়ো করে খুলনার ডিলার মাধ্যমে বিক্রি করি। শুনেছি তারা এই সব গুড়া দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। অনেক সময় চাহিদামতো গুড়ো সরবরাহও করতে পারি না। এখন আবার হাড়ও কেমন পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আমাদের হাড়ের গুড়া উৎপাদনের ওপর প্রভাব পরেছে ।

এই হাড়ের গুড়া ক্রেতা খুলনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই হাড়ের গুড়া থেকে গবাদি পশুর খাবার, মুরগির খাবার ও ওষুধ কোম্পানিতে ক্যাপসুল তৈরির কভার তৈরি হয়।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত বলেন, বিষয়টি আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পরে না। তবুও জানার পর এ বিষয়ে খবর নিয়েছি। তার হাড় গুড়ো করে ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে বলে জানান।