রমজানে নিত্যপণ্য : এক বছরে দাম বেড়েছে ১২ থেকে ৭৭ শতাংশ

এটা যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে, রমজান মাস এলেই দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারও প্রায় অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে শুধু এক বছরের ব্যবধানেই নয়, দীর্ঘদিন ধরে দফায় দফায় বাড়ছিল দাম। রমজান মাস আসায় দাম বৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। নিত্যপণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসলা ও বিভিন্ন সবজি।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বললেও ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী‘সিন্ডিকেট বা জোট’ করে দাম বাড়াচ্ছেন। সরকার তাদের শক্ত হাতে দমন করছে না। সাধারণ মানুষ অসহায়।

এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালে প্রতি কেজি আটার দাম ছিল ৪০ টাকা, মিনিকেট চাল ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, ডাল (মশুর দেশি) ১০০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, ডিম (লাল, ডজন) ১১৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা ও চিনি ছিল ৮০ টাকা।

আর মাত্র এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছর ২০২৩ সালের রমজানের আগে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি আটার দাম ছিল ৭০ টাকা, মিনিকেট চাল ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ডাল (দেশি মশুর) ১৫০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা, ব্রয়লার ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, ডিম (লাল, ডজন) ১৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা ও চিনি ছিল ১২০ টাকা।

অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ, চালের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ, ডালের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ, তেলের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ, মুরগির দাম বেড়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ, ডিমের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ, আলুর দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ, ছোলার দাম ৩৪ শতাংশ, পেঁয়াজের দাম ৩৪ শতাংশ ও চিনির দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাজার করতে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের হাতে আমরা জিম্মি। তারা যখন তখন ইচ্ছেমতো দাম বাড়ান। এখানে জনগণের করার কিছু নেই। আমরা হয়তো আন্দোলন করতে পারি। কিন্তু তাহলে সরকারের কাজটা কী? ব্যবসায়ীরা এভাবে যদি বাজার কব্জা করে থাকে, তাহলে দেশটা তাদের লিখে দিলেই তো হয়।’

রিকশাচালক আবদুল সরকার সংবাদকে বলেন, ‘ঈদ ছাড়া গরু বা ছাগলের মাংস খেতে পারি না। গত কোরবানির ঈদে গরুর মাংস খেয়েছি। আবার সামনে ঈদ আসছে। তখন ফের খাবো। দাম কম থাকায় বউ-বাচ্চাদের অন্তত ব্রয়লার মুরগি খাওয়াতে পারতাম। এখন তো সেটাও পারছি না। যে ডিম ১০০ টাকা ডজন কিনতাম, সেই ডিম এখন ১৫০ টাকা ডজন কিনতে হচ্ছে।’

বেশ কিছুদিন ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলে আসছেন, দেশে নিত্যপণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। তাই দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। তারপরও ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়ছে। গত রোববার সবিচালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দেশে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলাসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ আছে। কোন পণ্যের ঘাটতি বা মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই।’

এমনকি কোন পণ্য কত পরিমাণ মজুদ আছে, সেটার একটা পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন তিনি। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ তেল ও চিনি মজুদ আছে। ছয় শিল্প গ্রুপের কাছে ৩ লাখ ২ হাজার ১৬৩ টন ভোজ্যতেল মজুদ আছে। আর পাঁচটি শিল্পগ্রুপের কাছে চিনি মজুদ রয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ টন। এছাড়া ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন ভোজ্যতেল এবং ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন চিনি পাইপলাইনে রয়েছে।

এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি বারবার অনুরোধ করি, মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না, মানবিক দায়িত্ব আছে। আমরা সেন্সেবল ব্যবসায়ী চাই। পৃথিবীর সব জায়গায় উৎসবের সময়ে মানুষকে একটু ছাড় দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের দেশে তার ব্যতিক্রমটি হয়। রমজান এসেছে, ব্যবসায়ীদের বলব, আপনারা একটু সংযমী হোন। যা ন্যায্যমূল্য সেটাই নেবেন, আমরা সারাদিন পাহারা দিতে পারবো না। আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, আপনারা দায়িত্ব নেবেন কি না?’

দেশে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায় সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গত মাসে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘পণ্যের কোন ঘাটতি নেই, বাজার ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। চিনি, ছোলা, তেলসহ সব নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সংকটের যে কথা বলা হচ্ছে তা কৃত্রিম ও এটা বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা এই কাজটা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে একটা বিষয় কাজ করে, রমজান এলেই দাম বাড়ে। আর এ বিষয়টার সুযোগ নেয় অসাধুরা। এই বিষয়টা বাজারে দাম বৃদ্ধি উসকে দেয়।’

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা তা আঁচ করা যায় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক প্রতিবেদনে। সংগঠনটির সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২২ সাল সাধারণ মানুষের জন্য একদমই স্বস্তির ছিল না। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে নাজেহাল হয়ে পড়েছে ভোক্তারা।’

সংগঠনটির এক হিসাবে দেখানো হয়েছে, ঢাকা মহানগরে ২০২২ সালে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম ১১ শতাংশ বেড়েছে। এটি হলো গড় হিসাব। একেকটা পণ্য আলাদাভাবে হিসাব করলে দেখা যাবে, কোন পণ্যের দাম এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যা রীতিমত আঁতকে উঠার মতো।

ক্যাব বলছে, ২০২২ সালে চাল, ডাল, তেল, চিনি, মাছ, মাংস, সবজি, ফলসহ প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। রান্নার জ্বালানি, সাবান, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসামগ্রী, স্যানিটারি ন্যাপকিন, মশার ওষুধ, পোশাকের দাম এবং পরিবহন ভাড়া ও শিক্ষার ব্যয় বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দেড় দশকে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন), মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে। তবু চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে গেছে। নিম্নমধ্যবিত্তের প্রকৃত আয় খুব একটা বাড়েনি। অধিকাংশ আয়ই বেড়েছে উচ্চবিত্তের। ফলে দেশে দিন দিন আয়বৈষম্য বাড়ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য কাল হয়ে আসে।’ দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা ঠেকাতে বরাবরের মতো এবারও নানা আয়োজন করেছে সরকার। ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, এবার রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কঠোর বাজার মনিটরিং করবে সরকারের ১৩ সংস্থা।

অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন দাম বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য রমজান মাসজুড়ে বাজার তদারকি করবে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি মনিটরিং টিম বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে চারটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাজার নজরদারিতে ঢাকা সিটি করপোরেশন, আনসার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করবে। বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের বিশেষ টিম।

শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩ , ১০ চৈত্র ১৪২৯, ০১ রমজান ১৪৪৪

রমজানে নিত্যপণ্য : এক বছরে দাম বেড়েছে ১২ থেকে ৭৭ শতাংশ

রেজাউল করিম

image

গতকাল রাজধানীতে ওএমএসের পণ্যের ট্রাকের পেছনে সাধারণ মানুষের ভিড় -সংবাদ

এটা যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে, রমজান মাস এলেই দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারও প্রায় অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে শুধু এক বছরের ব্যবধানেই নয়, দীর্ঘদিন ধরে দফায় দফায় বাড়ছিল দাম। রমজান মাস আসায় দাম বৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। নিত্যপণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসলা ও বিভিন্ন সবজি।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বললেও ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী‘সিন্ডিকেট বা জোট’ করে দাম বাড়াচ্ছেন। সরকার তাদের শক্ত হাতে দমন করছে না। সাধারণ মানুষ অসহায়।

এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালে প্রতি কেজি আটার দাম ছিল ৪০ টাকা, মিনিকেট চাল ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, ডাল (মশুর দেশি) ১০০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, ডিম (লাল, ডজন) ১১৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা ও চিনি ছিল ৮০ টাকা।

আর মাত্র এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছর ২০২৩ সালের রমজানের আগে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি আটার দাম ছিল ৭০ টাকা, মিনিকেট চাল ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ডাল (দেশি মশুর) ১৫০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা, ব্রয়লার ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, ডিম (লাল, ডজন) ১৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা ও চিনি ছিল ১২০ টাকা।

অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ, চালের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ, ডালের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ, তেলের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ, মুরগির দাম বেড়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ, ডিমের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ, আলুর দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ, ছোলার দাম ৩৪ শতাংশ, পেঁয়াজের দাম ৩৪ শতাংশ ও চিনির দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাজার করতে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের হাতে আমরা জিম্মি। তারা যখন তখন ইচ্ছেমতো দাম বাড়ান। এখানে জনগণের করার কিছু নেই। আমরা হয়তো আন্দোলন করতে পারি। কিন্তু তাহলে সরকারের কাজটা কী? ব্যবসায়ীরা এভাবে যদি বাজার কব্জা করে থাকে, তাহলে দেশটা তাদের লিখে দিলেই তো হয়।’

রিকশাচালক আবদুল সরকার সংবাদকে বলেন, ‘ঈদ ছাড়া গরু বা ছাগলের মাংস খেতে পারি না। গত কোরবানির ঈদে গরুর মাংস খেয়েছি। আবার সামনে ঈদ আসছে। তখন ফের খাবো। দাম কম থাকায় বউ-বাচ্চাদের অন্তত ব্রয়লার মুরগি খাওয়াতে পারতাম। এখন তো সেটাও পারছি না। যে ডিম ১০০ টাকা ডজন কিনতাম, সেই ডিম এখন ১৫০ টাকা ডজন কিনতে হচ্ছে।’

বেশ কিছুদিন ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলে আসছেন, দেশে নিত্যপণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। তাই দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। তারপরও ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়ছে। গত রোববার সবিচালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দেশে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলাসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ আছে। কোন পণ্যের ঘাটতি বা মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই।’

এমনকি কোন পণ্য কত পরিমাণ মজুদ আছে, সেটার একটা পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন তিনি। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ তেল ও চিনি মজুদ আছে। ছয় শিল্প গ্রুপের কাছে ৩ লাখ ২ হাজার ১৬৩ টন ভোজ্যতেল মজুদ আছে। আর পাঁচটি শিল্পগ্রুপের কাছে চিনি মজুদ রয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ টন। এছাড়া ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন ভোজ্যতেল এবং ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন চিনি পাইপলাইনে রয়েছে।

এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি বারবার অনুরোধ করি, মানুষের কষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না, মানবিক দায়িত্ব আছে। আমরা সেন্সেবল ব্যবসায়ী চাই। পৃথিবীর সব জায়গায় উৎসবের সময়ে মানুষকে একটু ছাড় দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের দেশে তার ব্যতিক্রমটি হয়। রমজান এসেছে, ব্যবসায়ীদের বলব, আপনারা একটু সংযমী হোন। যা ন্যায্যমূল্য সেটাই নেবেন, আমরা সারাদিন পাহারা দিতে পারবো না। আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, আপনারা দায়িত্ব নেবেন কি না?’

দেশে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায় সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গত মাসে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘পণ্যের কোন ঘাটতি নেই, বাজার ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। চিনি, ছোলা, তেলসহ সব নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সংকটের যে কথা বলা হচ্ছে তা কৃত্রিম ও এটা বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা এই কাজটা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে একটা বিষয় কাজ করে, রমজান এলেই দাম বাড়ে। আর এ বিষয়টার সুযোগ নেয় অসাধুরা। এই বিষয়টা বাজারে দাম বৃদ্ধি উসকে দেয়।’

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা তা আঁচ করা যায় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক প্রতিবেদনে। সংগঠনটির সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২২ সাল সাধারণ মানুষের জন্য একদমই স্বস্তির ছিল না। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে নাজেহাল হয়ে পড়েছে ভোক্তারা।’

সংগঠনটির এক হিসাবে দেখানো হয়েছে, ঢাকা মহানগরে ২০২২ সালে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম ১১ শতাংশ বেড়েছে। এটি হলো গড় হিসাব। একেকটা পণ্য আলাদাভাবে হিসাব করলে দেখা যাবে, কোন পণ্যের দাম এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যা রীতিমত আঁতকে উঠার মতো।

ক্যাব বলছে, ২০২২ সালে চাল, ডাল, তেল, চিনি, মাছ, মাংস, সবজি, ফলসহ প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। রান্নার জ্বালানি, সাবান, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসামগ্রী, স্যানিটারি ন্যাপকিন, মশার ওষুধ, পোশাকের দাম এবং পরিবহন ভাড়া ও শিক্ষার ব্যয় বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দেড় দশকে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন), মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে। তবু চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে গেছে। নিম্নমধ্যবিত্তের প্রকৃত আয় খুব একটা বাড়েনি। অধিকাংশ আয়ই বেড়েছে উচ্চবিত্তের। ফলে দেশে দিন দিন আয়বৈষম্য বাড়ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য কাল হয়ে আসে।’ দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা ঠেকাতে বরাবরের মতো এবারও নানা আয়োজন করেছে সরকার। ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, এবার রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কঠোর বাজার মনিটরিং করবে সরকারের ১৩ সংস্থা।

অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন দাম বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য রমজান মাসজুড়ে বাজার তদারকি করবে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি মনিটরিং টিম বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে চারটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাজার নজরদারিতে ঢাকা সিটি করপোরেশন, আনসার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করবে। বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের বিশেষ টিম।