পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রবিউল ইসলাম যিনি ভারতীয় নাগরিক পরিচয়ে পাসপোর্ট নিয়ে দুবাইয়ে আরাভ খান নামে আছেন। গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা আরাভ খান ওরফে রবিউলকে কী বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে এমন কথা বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে। তবে বাংলাদেশের পুলিশ হত্যা মামলার এ আসামিকে কিভাবে ফিরিয়ে আনা হবে সে জটিলতা কাটছে না। যদিও বলা হচ্ছে আরাভ খানকে ‘নজরদারিতে’ রাখা হয়েছে কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হচ্ছেন না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, মামুন খান হত্যা মামলায় পলাতক আসামির নাম রবিউল ইসলাম। দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানই মূলত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাকারী রবিউল ইসলাম এ কথা সত্য। কিন্তু নাম পাল্টে আরাফ খান নামে দুবাইয়ে আশ্রয় নিলেও বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে নেয়নি। ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাইয়ে গেছেন। আইন অনুযায়ী আরাভ খান ভারতীয় নাগরিক। বাংলাদেশে পুলিশের খাতায় আরাভ খান রবিউল ইসলাম নামে। এখন দুবাই থেকে তাকে ফেরত আনা জটিল হবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আরাভ খানকে বাংলাদেশে আনতে হলে ভারতের সহযোগিতা লাগবে। কারণ আরাভ খান ভারতীয় পাসপোর্টধারী। দুবাই থেকে তাকে ভারত হয়ে আনতে হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময় চুক্তি থাকলেও দুবাইয়ের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক। কিন্তু তিনি রবিউল ইসলাম নাম বদলে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই গেছেন। তাই চাইলেও ইন্টারপোল আরাভকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারবে না। কারণ সেখানে তার অবস্থান ভারতীয় হিসেবে। দুবাইয়ে ঘটা কোন ঘটনার আসামি বা অপরাধীও নন আরাভ। আবার আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তিও নেই। তাছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় চার্জশিট দাখিল হলেও দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নন তিনি। মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া এখনও চলমান। তাকে ফেরানো নির্ভর করছে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, ভারত ও দুবাই পুলিশের সহযোগিতা ও সদিচ্ছার ওপর। আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে চুক্তি থাকতেই হবে এমন নয়। কিন্তু চুক্তি থাকলে সহজ হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান খুনের মামলার আসামি দুবাইয়ে থাকা রবিউল ইসলাম। ইন্সপেক্টর মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে ডিএমপির বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ইন্সপেক্টর মামুন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি ১০ জন। তাদের মধ্যে দু’জন কিশোরী। রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। মামুন হত্যার ঘটনায় লাশ গোপন করতে সহায়তা করেছেন রবিউল। খুনে সরাসরি জড়িতরাও রবিউলের সহযোগী। রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। মামলাটিতে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়াও। এ মামলার আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন আসামি রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দীদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩)। উচ্চ আদালত মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২০ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন। যদিও সে মামলা এখনও ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও গত এক বছরে দু’বার দেশে এসেছিলেন আরাভ খান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে একবারও তিনি গ্রেপ্তার হননি। দেশে এসে ঘুরেফিরে আর ফেইসবুকে লাইভ করে আবার নিরাপদে দুবাই ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব গণমাধ্যমকে বলেন, চাইলেও ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। কিন্তু চাইতে তো হবে। কোন একটা দেশ থেকে যদি কাউকে ফিরিয়ে আনতে চাই, তিনি যদি ক্রিমিনাল হন, তাহলে সেই দেশের সঙ্গে চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) থাকতে হবে। আমি জানি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সেরকম কিছু আমাদের নেই। আমি স্বরাষ্ট্রে থাকতে ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। তবে আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে চুক্তি থাকতেই হবে এমনও নয়। কিন্তু চুক্তি থাকলে সহজ। এখন কাজটা কঠিন বটে। কারণ এটা নির্ভর করছে সেই দেশের সদিচ্ছা ও পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শুনছি পুলিশ নাকি বলেছে ইন্টারপোলকে। কিন্তু কাউকে ফিরিয়ে দেয়া ইন্টারপোলের কাজ নয়। তার কাজ লোকেট করা। কোন দেশের ক্রিমিনাল অন্য দেশে আশ্রয় নিলে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইলে তারা লোকেট করে দেয়। ফিরিয়ে দেয়া তাদের কাজ নয়। যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরছে। আমরা ফিঙ্গার প্রিন্ট পর্যন্ত দিয়েছি, ইন্টারপোল কিন্তু লোকেট করতে পারেনি। এজন্য তাদের আনাও যাচ্ছে না। আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনার কাজটা বাংলাদেশকেই করতে হবে দুবাই তথা আরব আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের তো ওই দেশের সঙ্গে চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) থাকতে হবে।
আরাভ খান তো বাংলাদেশি হিসেবে নয়, ভারতীয় হিসেবে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। এক্ষেত্রে দুবাই কেন আরাভকে ঢাকায় ফেরত পাঠাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরাভ খান ভারতীয়। কিন্তু বাংলাদেশি রবিউলই যে আরাভ খান তা ভারত নিশ্চিত করবে দুবাইকে। ভারত যদি দুবাইকে জানায় যে আরাভ খানকে বাংলাদেশে পাঠালে তাদের কোন অসুবিধা নেই তবে সম্ভব। তাও অনেক প্রক্রিয়া আছে। এখন ভারতের সঙ্গে দুবাইয়ের চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) আছে কি না সেটাও দেখার বিষয়। যদি থাকে তবে আবার ভারতও আরাভ খানকে তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারে। কারণ রবিউল তো আরাভ নামে সেখানেও ভুয়া পাসপোর্ট করে অপরাধ করেছেন। সেখানে আবার আইনি প্রক্রিয়া আছে। সব মিলিয়ে জটিল প্রক্রিয়া।
এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, দুবাইয়ে আরাভ খান নামে আশ্রয় নেয়া রবিউলকে বাংলাদেশে ফেরত আনা কঠিন ও জটিল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশি রবিউলই যে আরাভ খান তা আগে ভারতকে জানাতে হবে বাংলাদেশকে। এরপর ভারত সেখানে মামলা করবে। আরাভ অপরাধী, পাসপোর্ট জালিয়াতকারী নিশ্চিত হয়ে দুবাইকে জানাবে ভারত।
তিনি জানান, চুক্তি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সদিচ্ছা থাকলে চুক্তিও লাগে না। যেমন সৌদি আরবের সঙ্গে তো আমাদের চুক্তি নেই। কিন্তু আমরা রাজন হত্যা মামলার আসামিকে সৌদি থেকে ফিরিয়ে এনেছি। সদিচ্ছা ও সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ২০১৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে একটা চুক্তি করা হয়েছিল ‘ট্রান্সফার অব সেন্টেন্সড পারসন’।
এদিকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে আরাভ খান দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারিতে আছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল দুপুরে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা যতদূর জানি আরাভ খান এখন পর্যন্ত নজরদারিতে আছেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
আরাভ খানের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোন সহযোগিতা চায়নি জানিয়ে সেহেলি সাবরিন বলেন, আরাভের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি আমাদের কাছে কোন সহায়তা চায় বা আমাদের দূতাবাসের সহায়তা চায়, তাহলে অবশ্যই আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবো। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন সহায়তা চাওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দূতাবাস যোগাযোগ রাখছে এবং তথ্য চাওয়া হলে আমরা তথ্য দেবো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র বলেন, ভারতের পাসপোর্টের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। কাজেই ভারতের পাসপোর্ট বাতিল করে তাকে দেশে ফেরত আনা হবে কি না, সেটি নিয়ে ওই মন্ত্রণালয় কাজ করবে। আমাদের যে দূতাবাস আছে দুবাই ও আমিরাতে এবং আমাদের কাছে যদি তথ্য চাওয়া হয় বা কিছু জানতে চাওয়া হয়, তবে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করতে পারি।
শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩ , ১০ চৈত্র ১৪২৯, ০১ রমজান ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রবিউল ইসলাম যিনি ভারতীয় নাগরিক পরিচয়ে পাসপোর্ট নিয়ে দুবাইয়ে আরাভ খান নামে আছেন। গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা আরাভ খান ওরফে রবিউলকে কী বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে এমন কথা বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে। তবে বাংলাদেশের পুলিশ হত্যা মামলার এ আসামিকে কিভাবে ফিরিয়ে আনা হবে সে জটিলতা কাটছে না। যদিও বলা হচ্ছে আরাভ খানকে ‘নজরদারিতে’ রাখা হয়েছে কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হচ্ছেন না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, মামুন খান হত্যা মামলায় পলাতক আসামির নাম রবিউল ইসলাম। দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানই মূলত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাকারী রবিউল ইসলাম এ কথা সত্য। কিন্তু নাম পাল্টে আরাফ খান নামে দুবাইয়ে আশ্রয় নিলেও বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে নেয়নি। ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাইয়ে গেছেন। আইন অনুযায়ী আরাভ খান ভারতীয় নাগরিক। বাংলাদেশে পুলিশের খাতায় আরাভ খান রবিউল ইসলাম নামে। এখন দুবাই থেকে তাকে ফেরত আনা জটিল হবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আরাভ খানকে বাংলাদেশে আনতে হলে ভারতের সহযোগিতা লাগবে। কারণ আরাভ খান ভারতীয় পাসপোর্টধারী। দুবাই থেকে তাকে ভারত হয়ে আনতে হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী বিনিময় চুক্তি থাকলেও দুবাইয়ের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক। কিন্তু তিনি রবিউল ইসলাম নাম বদলে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই গেছেন। তাই চাইলেও ইন্টারপোল আরাভকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারবে না। কারণ সেখানে তার অবস্থান ভারতীয় হিসেবে। দুবাইয়ে ঘটা কোন ঘটনার আসামি বা অপরাধীও নন আরাভ। আবার আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তিও নেই। তাছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় চার্জশিট দাখিল হলেও দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নন তিনি। মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া এখনও চলমান। তাকে ফেরানো নির্ভর করছে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, ভারত ও দুবাই পুলিশের সহযোগিতা ও সদিচ্ছার ওপর। আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে চুক্তি থাকতেই হবে এমন নয়। কিন্তু চুক্তি থাকলে সহজ হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান খুনের মামলার আসামি দুবাইয়ে থাকা রবিউল ইসলাম। ইন্সপেক্টর মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে ডিএমপির বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ইন্সপেক্টর মামুন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি ১০ জন। তাদের মধ্যে দু’জন কিশোরী। রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। মামুন হত্যার ঘটনায় লাশ গোপন করতে সহায়তা করেছেন রবিউল। খুনে সরাসরি জড়িতরাও রবিউলের সহযোগী। রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। মামলাটিতে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়াও। এ মামলার আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন আসামি রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দীদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩)। উচ্চ আদালত মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২০ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন। যদিও সে মামলা এখনও ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও গত এক বছরে দু’বার দেশে এসেছিলেন আরাভ খান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে একবারও তিনি গ্রেপ্তার হননি। দেশে এসে ঘুরেফিরে আর ফেইসবুকে লাইভ করে আবার নিরাপদে দুবাই ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব গণমাধ্যমকে বলেন, চাইলেও ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। কিন্তু চাইতে তো হবে। কোন একটা দেশ থেকে যদি কাউকে ফিরিয়ে আনতে চাই, তিনি যদি ক্রিমিনাল হন, তাহলে সেই দেশের সঙ্গে চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) থাকতে হবে। আমি জানি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সেরকম কিছু আমাদের নেই। আমি স্বরাষ্ট্রে থাকতে ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। তবে আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে চুক্তি থাকতেই হবে এমনও নয়। কিন্তু চুক্তি থাকলে সহজ। এখন কাজটা কঠিন বটে। কারণ এটা নির্ভর করছে সেই দেশের সদিচ্ছা ও পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শুনছি পুলিশ নাকি বলেছে ইন্টারপোলকে। কিন্তু কাউকে ফিরিয়ে দেয়া ইন্টারপোলের কাজ নয়। তার কাজ লোকেট করা। কোন দেশের ক্রিমিনাল অন্য দেশে আশ্রয় নিলে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইলে তারা লোকেট করে দেয়। ফিরিয়ে দেয়া তাদের কাজ নয়। যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরছে। আমরা ফিঙ্গার প্রিন্ট পর্যন্ত দিয়েছি, ইন্টারপোল কিন্তু লোকেট করতে পারেনি। এজন্য তাদের আনাও যাচ্ছে না। আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনার কাজটা বাংলাদেশকেই করতে হবে দুবাই তথা আরব আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের তো ওই দেশের সঙ্গে চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) থাকতে হবে।
আরাভ খান তো বাংলাদেশি হিসেবে নয়, ভারতীয় হিসেবে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। এক্ষেত্রে দুবাই কেন আরাভকে ঢাকায় ফেরত পাঠাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরাভ খান ভারতীয়। কিন্তু বাংলাদেশি রবিউলই যে আরাভ খান তা ভারত নিশ্চিত করবে দুবাইকে। ভারত যদি দুবাইকে জানায় যে আরাভ খানকে বাংলাদেশে পাঠালে তাদের কোন অসুবিধা নেই তবে সম্ভব। তাও অনেক প্রক্রিয়া আছে। এখন ভারতের সঙ্গে দুবাইয়ের চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) আছে কি না সেটাও দেখার বিষয়। যদি থাকে তবে আবার ভারতও আরাভ খানকে তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারে। কারণ রবিউল তো আরাভ নামে সেখানেও ভুয়া পাসপোর্ট করে অপরাধ করেছেন। সেখানে আবার আইনি প্রক্রিয়া আছে। সব মিলিয়ে জটিল প্রক্রিয়া।
এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, দুবাইয়ে আরাভ খান নামে আশ্রয় নেয়া রবিউলকে বাংলাদেশে ফেরত আনা কঠিন ও জটিল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশি রবিউলই যে আরাভ খান তা আগে ভারতকে জানাতে হবে বাংলাদেশকে। এরপর ভারত সেখানে মামলা করবে। আরাভ অপরাধী, পাসপোর্ট জালিয়াতকারী নিশ্চিত হয়ে দুবাইকে জানাবে ভারত।
তিনি জানান, চুক্তি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সদিচ্ছা থাকলে চুক্তিও লাগে না। যেমন সৌদি আরবের সঙ্গে তো আমাদের চুক্তি নেই। কিন্তু আমরা রাজন হত্যা মামলার আসামিকে সৌদি থেকে ফিরিয়ে এনেছি। সদিচ্ছা ও সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ২০১৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে একটা চুক্তি করা হয়েছিল ‘ট্রান্সফার অব সেন্টেন্সড পারসন’।
এদিকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে আরাভ খান দুবাইয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারিতে আছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল দুপুরে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা যতদূর জানি আরাভ খান এখন পর্যন্ত নজরদারিতে আছেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
আরাভ খানের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোন সহযোগিতা চায়নি জানিয়ে সেহেলি সাবরিন বলেন, আরাভের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি আমাদের কাছে কোন সহায়তা চায় বা আমাদের দূতাবাসের সহায়তা চায়, তাহলে অবশ্যই আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবো। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন সহায়তা চাওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দূতাবাস যোগাযোগ রাখছে এবং তথ্য চাওয়া হলে আমরা তথ্য দেবো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র বলেন, ভারতের পাসপোর্টের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। কাজেই ভারতের পাসপোর্ট বাতিল করে তাকে দেশে ফেরত আনা হবে কি না, সেটি নিয়ে ওই মন্ত্রণালয় কাজ করবে। আমাদের যে দূতাবাস আছে দুবাই ও আমিরাতে এবং আমাদের কাছে যদি তথ্য চাওয়া হয় বা কিছু জানতে চাওয়া হয়, তবে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করতে পারি।