বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে

বিশ্বজুড়ে ব্যাংক খাতে অস্থিরতার কারণে স্বর্ণের দাম বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের একের পর এক সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দেবে। এমন পরিস্থিতিতে শীঘ্রই মূল্যবান ধাতুটির বাজারদর সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের সর্বোচ্চে পৌঁছতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি লম্বা সময় ধরে ওই পর্যায় থেকে দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক টিনা টেং বলেন, ‘শীঘ্রই সুদহার বাড়াতে যাচ্ছে ফেড। এতে করে ডলারের বিনিময় হার ও বন্ড ইল্ড আরো কমবে। এর ফলে আরেক ধাপ বাড়তে পারে স্বর্ণের দাম।’ ধাতুটি আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ ডলারের মধ্যে বিক্রি হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইসে পতনের শঙ্কা তৈরি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এখন স্বর্ণের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছেন। সর্বশেষ কর্মদিবসে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯৪০ পাউন্ড ৬৮ সেন্ট। গত সোমবার স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। মূলত চলতি মাসের শুরুতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক পতনের মুখে পড়লে স্বর্ণের দাম এক লাফে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে যায়।

স্বর্ণের দাম ইতিহাসে সর্বোচ্চে পৌঁছে ২০২০ সালের আগস্টে। রেফিনিটিভ ডাটার তথ্য অনুযায়ী, ওই মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হয় ২ হাজার ৭৫ ডলারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার প্রবণতাই মূলত এর পেছনে দায়ী ছিল।

হুয়েটন প্রেশাস মেটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) র?্যান্ডি স্মলউড বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ কেনার প্রবণতাই দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ববাজারে ধাতুটির দাম বাড়িয়ে দেয়। আগামী কয়েক মাসে স্বর্ণের বাজার বেশ শক্তিশালী থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।’

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য বলছে, গত বছর স্বর্ণের দাম ১১ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার প্রবণতাকেই দায়ী করা হয়। ২০২২ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সব মিলিয়ে ১ হাজার ১৩৬ টন স্বর্ণ কিনেছে, যা গত ৫৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

মার্চের শেষদিকে ফিচ সলিউশন পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহে স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭৫ ডলারে পৌঁছতে পারে। সামনের বছরগুলোয় স্বর্ণের বাজার মহামারীপূর্ব সময়ের চেয়েও ভালো অবস্থায় পৌঁছবে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।

ফিচের এ পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ওয়ান্ডার সিনিয়র মার্কেট অ্যানালিস্ট ক্রেইগ ইরলাম।

তিনি বলেন, ‘?আগামী মাসগুলোয় স্বর্ণের বাজার সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে তা খুবই বিশ্বাসযোগ্য বলে আমি মনে করি। ধারণা করছি, স্বর্ণের দাম আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলবে। এমনকি সুদের হার কমানো হলেও স্বর্ণের চাহিদা কমবে না।’

বিনিয়োগকারীরা এখন ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেইসঙ্গে এ পদক্ষেপের ফলে স্বর্ণের দামে কী প্রভাব পড়বে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হবে।

শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩ , ১১ চৈত্র ১৪২৯, ০২ রমজান ১৪৪৪

বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে

সংবাদ ডেস্ক

image

বিশ্বজুড়ে ব্যাংক খাতে অস্থিরতার কারণে স্বর্ণের দাম বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের একের পর এক সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দেবে। এমন পরিস্থিতিতে শীঘ্রই মূল্যবান ধাতুটির বাজারদর সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের সর্বোচ্চে পৌঁছতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি লম্বা সময় ধরে ওই পর্যায় থেকে দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক টিনা টেং বলেন, ‘শীঘ্রই সুদহার বাড়াতে যাচ্ছে ফেড। এতে করে ডলারের বিনিময় হার ও বন্ড ইল্ড আরো কমবে। এর ফলে আরেক ধাপ বাড়তে পারে স্বর্ণের দাম।’ ধাতুটি আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ ডলারের মধ্যে বিক্রি হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইসে পতনের শঙ্কা তৈরি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এখন স্বর্ণের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছেন। সর্বশেষ কর্মদিবসে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯৪০ পাউন্ড ৬৮ সেন্ট। গত সোমবার স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। মূলত চলতি মাসের শুরুতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক পতনের মুখে পড়লে স্বর্ণের দাম এক লাফে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে যায়।

স্বর্ণের দাম ইতিহাসে সর্বোচ্চে পৌঁছে ২০২০ সালের আগস্টে। রেফিনিটিভ ডাটার তথ্য অনুযায়ী, ওই মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হয় ২ হাজার ৭৫ ডলারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার প্রবণতাই মূলত এর পেছনে দায়ী ছিল।

হুয়েটন প্রেশাস মেটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) র?্যান্ডি স্মলউড বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ কেনার প্রবণতাই দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ববাজারে ধাতুটির দাম বাড়িয়ে দেয়। আগামী কয়েক মাসে স্বর্ণের বাজার বেশ শক্তিশালী থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।’

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য বলছে, গত বছর স্বর্ণের দাম ১১ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার প্রবণতাকেই দায়ী করা হয়। ২০২২ সালে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সব মিলিয়ে ১ হাজার ১৩৬ টন স্বর্ণ কিনেছে, যা গত ৫৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

মার্চের শেষদিকে ফিচ সলিউশন পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহে স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭৫ ডলারে পৌঁছতে পারে। সামনের বছরগুলোয় স্বর্ণের বাজার মহামারীপূর্ব সময়ের চেয়েও ভালো অবস্থায় পৌঁছবে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।

ফিচের এ পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ওয়ান্ডার সিনিয়র মার্কেট অ্যানালিস্ট ক্রেইগ ইরলাম।

তিনি বলেন, ‘?আগামী মাসগুলোয় স্বর্ণের বাজার সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে তা খুবই বিশ্বাসযোগ্য বলে আমি মনে করি। ধারণা করছি, স্বর্ণের দাম আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলবে। এমনকি সুদের হার কমানো হলেও স্বর্ণের চাহিদা কমবে না।’

বিনিয়োগকারীরা এখন ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেইসঙ্গে এ পদক্ষেপের ফলে স্বর্ণের দামে কী প্রভাব পড়বে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হবে।