নিয়ন্ত্রণহীন বাজার : কমেনি ব্রয়লার মুরগির দাম

রমজানের প্রথমদিন গতকাল বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম কোথাও কোথাও এখনও ২৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে, রমজান মাসে তারা খামার থেকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রি করবে। ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে তলব করে বাজারে পোলট্রির (ব্রয়লার মুরগি) ‘অযৌক্তিক’ মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার একপর্যায়ে কোম্পানিগুলো রোজার মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম কমিয়ে রাখতে সম্মত হয়।

চার প্রতিষ্ঠান খামার পর্যায়ে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রির ঘোষণা দেয়ার ফলে খুচরা বাজারে দাম কমতে শুরু করে।

তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল ব্রয়লার মুরগি ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে হয়েছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে।

বেচা-বিক্রি ও দামের বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের নুরজাহান ব্রয়লার হাউজের মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ নুরুন্নবী সংবাদকে বলেন, ‘গতকালের চেয়ে দাম একটু কমেছে, গতকাল ব্রয়লার মুরগি কেজি ২৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ (গতকাল) ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। দাম আরও কমতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোজা শুরুর দুই দিন আগে থেকে সাত রমজান পর্যন্ত বেচা-বিক্রি ভালো হয়। মাঝখানের বেচা-বিক্রি নরমাল হয়। আবার ২৫ রমজান থেকে বেচা-বিক্রি বেশি হয়।’

তবে শান্তিনগর কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এ বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৬৫ থেকে ২৭০ টাকায়। এ বাজারের জরিনা ব্রয়লার হাউজে ব্রয়লার মুরগির দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কেজি ২৬৫ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি করছি।’

সরকারি তদারকি না থাকায় দেশের পোলট্রি খাতে হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করেছে।

সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ এখন কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত এসব মুরগি বিক্রি হয়েছে। তাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কেজিপ্রতি অন্তত ৬০ টাকা বেশি মুনাফা করেছে।

করপোরেট প্রতিষ্ঠানের (তাদের চুক্তিভিত্তিক ফার্মসহ) মাধ্যম থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টন মুরগি বাজারে আসে। সেই হিসাবে দিনে তাদের অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। এভাবে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৫২ দিনে ৬২৪ কোটি টাকা মুরগি বিক্রির মাধ্যমে লাভ করেছে কোম্পানিগুলো। আর একদিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে তাদের মুনাফা ৩১২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটির দাবি, দেশে প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। এসব বাচ্চা কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে। একেকটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। খুদে বার্তা দিয়ে সেই বাচ্চা প্রতিটি এখন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় দেয়ার কথা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতিটি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ব্রয়লার মুরগির অস্বাভাবিক দামের কারণ প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতি পোষাতে না পেরে খামার বন্ধ করে উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়েছেন। এ সুযোগে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পোলট্রির ফিড বা খাবার ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রান্তিক খামারি উৎপাদনে গেলে তখন বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে ক্ষতিতে ফেলছেন। তারা আরও বলেছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে। চুক্তিভিত্তিক খামারও রয়েছে তাদের। এতে করে বাজার তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা না গেলে এই খাতের অস্থিরতা কমানো সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘এতদিন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানগুলো যখন চাপের মুখে পড়ল, তখন তারা ঠিকই দাম কমিয়ে বিক্রি করতে চাইছে। বিষয়টি এমন নয় যে তারা লোকসানে মুরগি বিক্রি করবে। তার মানে এটা স্পষ্ট, তাদের লাভের অংশ অনেক বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টির আরও অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষা দিতে পোলট্রি বোর্ড গঠনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বর্ষা মাস না আসা পর্যন্ত দাম কমার কোন সম্ভাবনা নাই। আর আর একটা উপায় আছে ভারত থেকে যদি আসতে গরু আসে দেশে তাহলে দাম কমতে পারে।’

কারওয়ান বাজারে গরুর মাংস কেজি ৭৫০ টাকা বিক্রি হলেও শান্তিনগর বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এ বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা খোকন এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কর্মী সংবাদকে বলেন, ‘আমরা একদাম কেজি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছে।’

কারওয়ান বাজারের চাষের মাছ বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০ কই ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।’

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘বেগুন-করোলা-ঢেঁঢ়শ কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এছাড়া পটোল ৭০ টাকা, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা মিষ্টি কুমরা ৩৫ টাকা, লাউ ৬০টাকা, শিম ৫০, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ও টমেটো কেজি ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

কারওরান বাজারে এক কেজি লম্বা বেগুন ৮০ টাকা বিক্রি হলেও রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।

এছাড়া লেবু আকার, জাত ও বাজারভেদে হালি ৪০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এবারের রমজানে সেই শরবত তৈরির প্রতিটি উপাদানের দাম বাড়ায় ব্যয় বেড়েছে শরবত পানে। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, লেবু, চিনি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফলের ফ্লেভারের শরবত পণ্যের দাম রমজান মাসের আগেই এক দফা বাড়ানো হয়েছে।

বাজারে বর্তমানে প্যাকেটজাত ফলের শরবত পাউডার বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে ৫০০ গ্রাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দাম বাড়ার আগে ছিল ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা।

বাজারে পাওয়া পাউডার শরবত প্যাকেটের মধ্যে ফস্টার ক্লার্ক ৫০০ গ্রাম ৩১০ টাকা, নিউট্রি-সি ৩৫০ গ্রাম ৩৬০ টাকা, ইস্পাহানি ইস্পি ৫০০ গ্রাম ২৮০ টাকা, ট্যাংক ৭৫০ গ্রাম ৬৫০ টাকা। রুহ আফজা ৩০০ গ্রাম ২১০ টাকা ও ৭০০ গ্রাম ৩৬০ টাকা। ইসবগুলের ভুষি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি পিস বেল আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায়।

চিনির বাজারে দেখা যায়, খোলা সাদা চিনি এখনও কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩ , ১১ চৈত্র ১৪২৯, ০২ রমজান ১৪৪৪

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার : কমেনি ব্রয়লার মুরগির দাম

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রমজানের প্রথমদিন গতকাল বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম কোথাও কোথাও এখনও ২৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে, রমজান মাসে তারা খামার থেকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রি করবে। ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে তলব করে বাজারে পোলট্রির (ব্রয়লার মুরগি) ‘অযৌক্তিক’ মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার একপর্যায়ে কোম্পানিগুলো রোজার মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম কমিয়ে রাখতে সম্মত হয়।

চার প্রতিষ্ঠান খামার পর্যায়ে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রির ঘোষণা দেয়ার ফলে খুচরা বাজারে দাম কমতে শুরু করে।

তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল ব্রয়লার মুরগি ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে হয়েছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে।

বেচা-বিক্রি ও দামের বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের নুরজাহান ব্রয়লার হাউজের মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ নুরুন্নবী সংবাদকে বলেন, ‘গতকালের চেয়ে দাম একটু কমেছে, গতকাল ব্রয়লার মুরগি কেজি ২৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ (গতকাল) ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। দাম আরও কমতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোজা শুরুর দুই দিন আগে থেকে সাত রমজান পর্যন্ত বেচা-বিক্রি ভালো হয়। মাঝখানের বেচা-বিক্রি নরমাল হয়। আবার ২৫ রমজান থেকে বেচা-বিক্রি বেশি হয়।’

তবে শান্তিনগর কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এ বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৬৫ থেকে ২৭০ টাকায়। এ বাজারের জরিনা ব্রয়লার হাউজে ব্রয়লার মুরগির দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কেজি ২৬৫ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি করছি।’

সরকারি তদারকি না থাকায় দেশের পোলট্রি খাতে হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করেছে।

সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ এখন কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত এসব মুরগি বিক্রি হয়েছে। তাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কেজিপ্রতি অন্তত ৬০ টাকা বেশি মুনাফা করেছে।

করপোরেট প্রতিষ্ঠানের (তাদের চুক্তিভিত্তিক ফার্মসহ) মাধ্যম থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টন মুরগি বাজারে আসে। সেই হিসাবে দিনে তাদের অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। এভাবে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৫২ দিনে ৬২৪ কোটি টাকা মুরগি বিক্রির মাধ্যমে লাভ করেছে কোম্পানিগুলো। আর একদিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে তাদের মুনাফা ৩১২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটির দাবি, দেশে প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। এসব বাচ্চা কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে। একেকটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। খুদে বার্তা দিয়ে সেই বাচ্চা প্রতিটি এখন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় দেয়ার কথা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতিটি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ব্রয়লার মুরগির অস্বাভাবিক দামের কারণ প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতি পোষাতে না পেরে খামার বন্ধ করে উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়েছেন। এ সুযোগে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পোলট্রির ফিড বা খাবার ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রান্তিক খামারি উৎপাদনে গেলে তখন বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে ক্ষতিতে ফেলছেন। তারা আরও বলেছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট প্রতিষ্ঠান। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে। চুক্তিভিত্তিক খামারও রয়েছে তাদের। এতে করে বাজার তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা না গেলে এই খাতের অস্থিরতা কমানো সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘এতদিন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানগুলো যখন চাপের মুখে পড়ল, তখন তারা ঠিকই দাম কমিয়ে বিক্রি করতে চাইছে। বিষয়টি এমন নয় যে তারা লোকসানে মুরগি বিক্রি করবে। তার মানে এটা স্পষ্ট, তাদের লাভের অংশ অনেক বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টির আরও অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষা দিতে পোলট্রি বোর্ড গঠনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বর্ষা মাস না আসা পর্যন্ত দাম কমার কোন সম্ভাবনা নাই। আর আর একটা উপায় আছে ভারত থেকে যদি আসতে গরু আসে দেশে তাহলে দাম কমতে পারে।’

কারওয়ান বাজারে গরুর মাংস কেজি ৭৫০ টাকা বিক্রি হলেও শান্তিনগর বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এ বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা খোকন এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় কর্মী সংবাদকে বলেন, ‘আমরা একদাম কেজি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছে।’

কারওয়ান বাজারের চাষের মাছ বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০ কই ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।’

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘বেগুন-করোলা-ঢেঁঢ়শ কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এছাড়া পটোল ৭০ টাকা, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা মিষ্টি কুমরা ৩৫ টাকা, লাউ ৬০টাকা, শিম ৫০, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ও টমেটো কেজি ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

কারওরান বাজারে এক কেজি লম্বা বেগুন ৮০ টাকা বিক্রি হলেও রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।

এছাড়া লেবু আকার, জাত ও বাজারভেদে হালি ৪০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এবারের রমজানে সেই শরবত তৈরির প্রতিটি উপাদানের দাম বাড়ায় ব্যয় বেড়েছে শরবত পানে। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, লেবু, চিনি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফলের ফ্লেভারের শরবত পণ্যের দাম রমজান মাসের আগেই এক দফা বাড়ানো হয়েছে।

বাজারে বর্তমানে প্যাকেটজাত ফলের শরবত পাউডার বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে ৫০০ গ্রাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দাম বাড়ার আগে ছিল ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা।

বাজারে পাওয়া পাউডার শরবত প্যাকেটের মধ্যে ফস্টার ক্লার্ক ৫০০ গ্রাম ৩১০ টাকা, নিউট্রি-সি ৩৫০ গ্রাম ৩৬০ টাকা, ইস্পাহানি ইস্পি ৫০০ গ্রাম ২৮০ টাকা, ট্যাংক ৭৫০ গ্রাম ৬৫০ টাকা। রুহ আফজা ৩০০ গ্রাম ২১০ টাকা ও ৭০০ গ্রাম ৩৬০ টাকা। ইসবগুলের ভুষি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি পিস বেল আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায়।

চিনির বাজারে দেখা যায়, খোলা সাদা চিনি এখনও কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।