শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানসহ ২০-২২ জন আসামি হতে পারে

মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার ১ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সুমন শিকদার মুসাসহ কিলিং মিশনে অংশ নেয়া খুনিরা গ্রেপ্তার হলেও আড়ালে থেকে গেছে অনেক কথা। তবে বিদেশে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে আনার পর টিপু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সুমন শিকদার মুসা আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে সাপে বর হয়েছে একটি বিশেষ মহলের জন্য। মুসার জবানবন্দিকে পুঁিজ করে হত্যাকাণ্ডে নির্দেশদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা রকম কথা বলা হচ্ছে। যদিও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা এখনও বলছেন মুসার জবানবন্দিতে যে দুজন নেতার নাম এসেছে তাদের কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এমনকি মুসার জবানবন্দির সঙ্গে বাস্তবে তদন্তে পাওয়া তথ্যেরও বিস্তর ফারাক পাচ্ছে তারা।

এক বছর আগের ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলগেটের আগে ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে যানজটে আটকে থাকা মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে গুলি চালালে ওই গাড়িতে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু গুলিবিদ্ধ হয়ে সিটেই লুটিয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি গুলিতে পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া জামাল প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সেই হত্যার জের ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে কিলার গ্রুপের সদস্যরা ধরা পড়লেও মূল পরিকল্পনাকারী দুবাইয়ে আত্মগোপনকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসান এখনও ধরা পড়েনি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজ প্রায় শেষ। মূলত আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মুসাকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকেই হত্যাকাণ্ডের অনেক বিষয় সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি।

হত্যাকাণ্ডের পর একটি মোবাইল নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সূত্র ধরে তদন্তে উঠে আসে শুটার মাসুমের নাম। ডিবি গ্রেপ্তার করে মাসুম ওরফে আকাশকে। ডিবি তার দেয়া তথ্য থেকে আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ’র ছোট ভাই যুবলীগ নেতা এরফান উল্লাহ দামালকে গ্রেপ্তার করে। খুনের এক সপ্তাহ পর র‌্যাব এ ঘটনায় মতিঝিলের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক (৫২), আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮) এবং মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে (৫১) গ্রেপ্তার করে।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এ হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মুছা। এ হত্যায় প্রধান মদদাতাও শনাক্ত করা গেছে মুছার গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। কারণ মতিঝিলে এই হত্যাটি সংগঠিত হয়েছে একাধিক কারণ থেকে। এখানে আন্ডারওয়ার্ল্ড ও আন্ডারগ্রাউন্ড দুই স্তরের একাধিক ঘটনা জড়িত।

ডিবির ও র‌্যাবের তদন্ত বলছে পরিকল্পনা অনুযায়ী দুবাইয়ে জিসানের ডেরায় বসে টিপু হত্যার ছক আঁকা হয়। ঢাকায় হত্যার মূল দায়িত্ব দেয়া হয় সুমন সিকদার ওরফে মুসাকে। টিপু হত্যাকাণ্ডের সব পরিকল্পনার রেকি করার পর ওই বছরের ১২ মার্চ দুবাই চলে যান মুসা। হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তে মুসার নাম আসলে দুবাই থেকে পালিয়ে ওমান চলে যান। পরে রয়েল পুলিশ অব ওমানের হাতে মুসা গ্রেপ্তার হয়। ৯ জুন তাকে ওমান থেকে দেশ ফিরিয়ে আনা হয়। মুসার জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বিদেশে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের। মুসা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী বলে পরিচিত। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে টিপু ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান ছিল। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিলকী

হত্যা মামলায় টিপু গ্রেপ্তার হওয়ার পর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারান তিনি। পরে অবশ্য ওই মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও দলীয় পদ আর ফিরে পাননি। তবে টিপু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতিঝিল এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ঘর গোছানোর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মতিঝিলের আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক মাঠ দখলের জন্য টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

ডিবির তদন্তকারীরা বলছেন, মুসার জবানবন্দিতে যেসব আওয়ামী লীগ নেতার নাম এসেছে তাদের মধ্যে দুজন আগেই গ্রেপ্তার করেছে। তবে অন্য দুজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতার নাম এসেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। কারণ মুসার জবানবন্দিতে ওই নেতার ভূমিকার বিষয়ে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের তদন্তে শীর্ষ ওই দুই নেতার সেরকম ভূমিকা থাকার কোন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। হত্যায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে এবং মুসা ছাড়া জবানবন্দি দেয়া আকাশ ও নাসিরের জবানবন্দিতে ওই দুই নেতার বিষয়েও কোন তথ্য নেই।

আওয়ামী লীগের দুজন নেতার নাম আসা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, মুসার জবানবন্দিতে নাকি দুজন নেতার নাম বলা হয়েছে যারা রাজধানীর দুই জায়গায় দুটি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু পুলিশের তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে আমরা শুনিনি। মূলত টিপু হত্যাকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ গ্রুপ রাজনৈতিক সুবিধা নিতে মাঠে নেমেছে। ওই চক্রটি নানাভাবে চেষ্টা করছে টিপু হত্যায় আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে জড়াতে। ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সাংগঠনিক সম্পাদক পদদারী ওই নেতার একটি বিরোধী চক্র রয়েছে যারা এখন মামলার বাদীর ওপর ভর করেছে। মূলত ওই চক্রটি এখন মুসার জবানবন্দিকে পুঁজি করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা বলেন, টিপুকে যারা হত্যা করেছে সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। টিপুকে যেদিন হত্যা করা হয় সেটিন তার গাড়িতে থাকা দুই ব্যক্তির একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের মামা। অন্যজন আওয়ামী লীগের কর্মী বোচা বাবুর বাবা। বোচা বাবু হত্যার পেছনে টিপুরই ইশারা ছিল। আবার হত্যা হওয়ার পর মামলা করার পেছনে টিপই সহযোগিতা করেছে। বোবা বাবুর স্ত্রীর সঙ্গে টিপুর একটি অনৈতিক সম্পর্ক্য ছিল। যদিও বোচা বাবু টিপুর সহযোগী ছিল বলে অনেকেই জানতো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, টিপু মারা যাওয়ার পর তার সামাজ্য দখল নিতে সহযোগিতা তৎপর হয়ে উঠেছে। তারাই মূলত নানাভাবে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম তথ্য সরবরাহ করছে। এসব তথ্যের সূত্র ধরে মামলার বাদী ও টিপুর স্ত্রী সরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলিও বিভিন্ন রকম কথা বলছে। যা মোটেও সত্য নয়।

ডিবির তদন্তকারীরা বলছেন, হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুকসহ ২০ থেকে ২২ জনের নাম থাকতে পারে চার্জশিটে। এর মধ্যে থাকছে আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার, দামাল, মানিক, ফারুক, পলাশ, সালেহের নাম থাকছে। তবে মুসার জবানবন্দিতে যেহেতু দুজন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতার নাম এসেছে তাদের নামও থাকতে পারে। ওই দুই নেতা মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক পদধারী একজন নেতার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মুসার জবানবন্দিতে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তার কোন তথ্য প্রমাণ এখনও মেলেনি। আমরা বিষয়টি নানাভাবে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি।

শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩ , ১১ চৈত্র ১৪২৯, ০২ রমজান ১৪৪৪

টিপু হত্যার এক বছর

শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানসহ ২০-২২ জন আসামি হতে পারে

সাইফ বাবলু

মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার ১ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সুমন শিকদার মুসাসহ কিলিং মিশনে অংশ নেয়া খুনিরা গ্রেপ্তার হলেও আড়ালে থেকে গেছে অনেক কথা। তবে বিদেশে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে আনার পর টিপু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সুমন শিকদার মুসা আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে সাপে বর হয়েছে একটি বিশেষ মহলের জন্য। মুসার জবানবন্দিকে পুঁিজ করে হত্যাকাণ্ডে নির্দেশদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা রকম কথা বলা হচ্ছে। যদিও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা এখনও বলছেন মুসার জবানবন্দিতে যে দুজন নেতার নাম এসেছে তাদের কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এমনকি মুসার জবানবন্দির সঙ্গে বাস্তবে তদন্তে পাওয়া তথ্যেরও বিস্তর ফারাক পাচ্ছে তারা।

এক বছর আগের ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলগেটের আগে ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে যানজটে আটকে থাকা মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে গুলি চালালে ওই গাড়িতে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু গুলিবিদ্ধ হয়ে সিটেই লুটিয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি গুলিতে পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া জামাল প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সেই হত্যার জের ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে কিলার গ্রুপের সদস্যরা ধরা পড়লেও মূল পরিকল্পনাকারী দুবাইয়ে আত্মগোপনকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসান এখনও ধরা পড়েনি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজ প্রায় শেষ। মূলত আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মুসাকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকেই হত্যাকাণ্ডের অনেক বিষয় সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি।

হত্যাকাণ্ডের পর একটি মোবাইল নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সূত্র ধরে তদন্তে উঠে আসে শুটার মাসুমের নাম। ডিবি গ্রেপ্তার করে মাসুম ওরফে আকাশকে। ডিবি তার দেয়া তথ্য থেকে আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ’র ছোট ভাই যুবলীগ নেতা এরফান উল্লাহ দামালকে গ্রেপ্তার করে। খুনের এক সপ্তাহ পর র‌্যাব এ ঘটনায় মতিঝিলের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক (৫২), আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮) এবং মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে (৫১) গ্রেপ্তার করে।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এ হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মুছা। এ হত্যায় প্রধান মদদাতাও শনাক্ত করা গেছে মুছার গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। কারণ মতিঝিলে এই হত্যাটি সংগঠিত হয়েছে একাধিক কারণ থেকে। এখানে আন্ডারওয়ার্ল্ড ও আন্ডারগ্রাউন্ড দুই স্তরের একাধিক ঘটনা জড়িত।

ডিবির ও র‌্যাবের তদন্ত বলছে পরিকল্পনা অনুযায়ী দুবাইয়ে জিসানের ডেরায় বসে টিপু হত্যার ছক আঁকা হয়। ঢাকায় হত্যার মূল দায়িত্ব দেয়া হয় সুমন সিকদার ওরফে মুসাকে। টিপু হত্যাকাণ্ডের সব পরিকল্পনার রেকি করার পর ওই বছরের ১২ মার্চ দুবাই চলে যান মুসা। হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তে মুসার নাম আসলে দুবাই থেকে পালিয়ে ওমান চলে যান। পরে রয়েল পুলিশ অব ওমানের হাতে মুসা গ্রেপ্তার হয়। ৯ জুন তাকে ওমান থেকে দেশ ফিরিয়ে আনা হয়। মুসার জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বিদেশে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের। মুসা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী বলে পরিচিত। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে টিপু ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান ছিল। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিলকী

হত্যা মামলায় টিপু গ্রেপ্তার হওয়ার পর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারান তিনি। পরে অবশ্য ওই মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও দলীয় পদ আর ফিরে পাননি। তবে টিপু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতিঝিল এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ঘর গোছানোর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মতিঝিলের আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক মাঠ দখলের জন্য টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

ডিবির তদন্তকারীরা বলছেন, মুসার জবানবন্দিতে যেসব আওয়ামী লীগ নেতার নাম এসেছে তাদের মধ্যে দুজন আগেই গ্রেপ্তার করেছে। তবে অন্য দুজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতার নাম এসেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। কারণ মুসার জবানবন্দিতে ওই নেতার ভূমিকার বিষয়ে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের তদন্তে শীর্ষ ওই দুই নেতার সেরকম ভূমিকা থাকার কোন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। হত্যায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে এবং মুসা ছাড়া জবানবন্দি দেয়া আকাশ ও নাসিরের জবানবন্দিতে ওই দুই নেতার বিষয়েও কোন তথ্য নেই।

আওয়ামী লীগের দুজন নেতার নাম আসা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, মুসার জবানবন্দিতে নাকি দুজন নেতার নাম বলা হয়েছে যারা রাজধানীর দুই জায়গায় দুটি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু পুলিশের তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে আমরা শুনিনি। মূলত টিপু হত্যাকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ গ্রুপ রাজনৈতিক সুবিধা নিতে মাঠে নেমেছে। ওই চক্রটি নানাভাবে চেষ্টা করছে টিপু হত্যায় আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে জড়াতে। ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সাংগঠনিক সম্পাদক পদদারী ওই নেতার একটি বিরোধী চক্র রয়েছে যারা এখন মামলার বাদীর ওপর ভর করেছে। মূলত ওই চক্রটি এখন মুসার জবানবন্দিকে পুঁজি করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা বলেন, টিপুকে যারা হত্যা করেছে সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। টিপুকে যেদিন হত্যা করা হয় সেটিন তার গাড়িতে থাকা দুই ব্যক্তির একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের মামা। অন্যজন আওয়ামী লীগের কর্মী বোচা বাবুর বাবা। বোচা বাবু হত্যার পেছনে টিপুরই ইশারা ছিল। আবার হত্যা হওয়ার পর মামলা করার পেছনে টিপই সহযোগিতা করেছে। বোবা বাবুর স্ত্রীর সঙ্গে টিপুর একটি অনৈতিক সম্পর্ক্য ছিল। যদিও বোচা বাবু টিপুর সহযোগী ছিল বলে অনেকেই জানতো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, টিপু মারা যাওয়ার পর তার সামাজ্য দখল নিতে সহযোগিতা তৎপর হয়ে উঠেছে। তারাই মূলত নানাভাবে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম তথ্য সরবরাহ করছে। এসব তথ্যের সূত্র ধরে মামলার বাদী ও টিপুর স্ত্রী সরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলিও বিভিন্ন রকম কথা বলছে। যা মোটেও সত্য নয়।

ডিবির তদন্তকারীরা বলছেন, হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুকসহ ২০ থেকে ২২ জনের নাম থাকতে পারে চার্জশিটে। এর মধ্যে থাকছে আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার, দামাল, মানিক, ফারুক, পলাশ, সালেহের নাম থাকছে। তবে মুসার জবানবন্দিতে যেহেতু দুজন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতার নাম এসেছে তাদের নামও থাকতে পারে। ওই দুই নেতা মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক পদধারী একজন নেতার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মুসার জবানবন্দিতে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তার কোন তথ্য প্রমাণ এখনও মেলেনি। আমরা বিষয়টি নানাভাবে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি।