রপ্তানির পথ খুঁজছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি

বরেন্দ্রঅঞ্চলের কৃষিপণ্য শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। চলে যাচ্ছে বিদেশেও। এই অঞ্চলের বিভিন্ন মওসুমের ফল সবজি খ্যাতি ইউরোপ ও মধ্য প্রচ্যরদেশ দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ায় সেখানেও ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

গত ১৫ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলামের বাগান থেকে ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা গেল দুবাইতে। তিনি গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডাক্ট লিমিটেডের মাধ্যমে পেয়ারা দুবাই রপ্তানি করছেন। জেলার নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া এলাকায় বিশাল পেয়ারা বাগান গড়ে তুলেছেন রফিকুল। এই বাগানের উৎপাদিত পেয়ারা গত ১৫ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে বাগান থেকে ৮ হাজার কেজি পেয়ারা দুবাই রপ্তানি করা হয়েছে। তখন দেশের বাজারে পেয়ারার প্রতি মণ ছিল মাত্র ১৪০০ টাকা, কিন্তু বিশ্ববাজারে এই পেয়ারার দাম ২৩০০ টাকা মণ। দুবাইতে অন্যান্য দেশের পেয়ারার চেয়ে আমাদের পেয়ারা বেশি দামে বিক্রি হয়।’

তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের পেয়ারা ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। আমাদের মতো কৃষকদের যথাযথ ট্রেনিং দিয়ে সাহায্য করলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। ব্যবসায়ীদের পেয়ারা রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে অন্য দেশের চেয়ে বেশি এগিয়ে যাব।’

গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডাক্ট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার হেমায়েত হোসাইন শিপলু বলেন, ‘আমরা যখন একটা বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করি, সবকিছু খেয়াল রাখি। পেয়ারায় দাগ থাকা যাবে না, পোকা-মাকড় থাকা যাবে না, পেয়ারার ছাল উঠে গেলে সেই পেয়ারা নেব না। আমরা সবসময় সুন্দর আর টেস্টি পেয়ারা বিদেশে রপ্তানি করে থাকি। আমরা দুবাইয়ে চড়ামূল্যে এই পেয়ারা বিক্রি করছি। আগামীতে সেখানে পেয়ারার দাম আরও বাড়বে।’

নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘এই উপজেলায় উৎপাদিত ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা বিদেশে যাচ্ছে, এটা খুশির খবর। কৃষি দপ্তরের আশা, আমাদের দেশে উৎপাদিত সব পণ্যই বিদেশে যাক, তাহলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবে এবং চাষাবাদেও আগ্রহ বাড়বে।

কয়েক বছর ধরেই ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আম পাঠিয়েছেন রাজশাহীর বাঘা অঞ্চলের আম ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাগমারা তাহেরপুর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হচ্ছে কাঁচা মরিচ। এবার আম, কাঁচা মরিচের পর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরের পেয়ারা ও বরই যাচ্ছে ইতালিতে।

কৃষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে গ্লে­াবাল গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসের বৈশ্বিক নীতিমালা অনুসরণ করে আম উৎপাদন করা গেলে শুধু আম থেকেই হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।

গত ১৭ জানুয়ারি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধমে প্যাকেজিং করে এই পেয়ারার প্রথম চালান ইতালিতে পাঠানো হয়েছে। আধা মেট্রিক টন পেয়ারার প্রথম চালান বাঘা গ্রামের সাদি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়। সাদি এন্টারপ্রাইজ এসব পেয়ারা চাষ করেছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়ার সাদি এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ছানা।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং হাউজে পেয়ারাগুলো মোড়কজাত করা হয়। তারপর কার্গো ফ্লাইটে এসব পেয়ারা সরাসরি প্রথম চালানে অল্প পরিমাণে পেয়ারা পাঠানো হয়েছে। আরও বেশি পরিমাণে যেন রপ্তানি করা যায়, এজন্য ঢাকার বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। পেয়ারার পর বাঘার বরই রপ্তানির একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাঘায় ভালো বরই চাষ হচ্ছে। বরইও বিদেশে যাবে।

সাদি এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ও বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, ৫০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। এর মধ্যে বাঘার পলাশীর চরে ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একসময় চরের এই বালুচটকা জমিতে কোন আবাদ হতো না। তারা এসব জমি ইজারা নিয়ে ধীরে ধীরে পরিচর্যা করে আবাদ করছেন। এখন এসব জমিতে আম, বরই ও পেয়ারা চাষ করা হচ্ছে। ফলনও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। চরের এসব জমিতে পেয়ারা চাষ হওয়ার কারণে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এক শ্রেণীর মানুষ আধুনিক চাষ শিখে নিয়েছেন। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে যাওয়ার কারণে বিদেশে রপ্তানির উপযোগী আম, পেয়ারা ও বরই বাঘায় উৎপাদিত হচ্ছে। এজন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এদিকে ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধমে প্যাকেজিং করে কোম্পানির মাধ্যমে শফিকুল ইসলাম সানা ও বাউসা এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা শাহিন ইকবালের বাগান থেকে ইতালিতে রপ্তানি হয় তিনশ’ কেজি থাই বরই। তরুণ উদ্যোক্তা শাহিন ইকবাল ও শফিকুল ইসলাম সানা জানান, এই অঞ্চলের বরই কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আর পাকলে লাল, এ ফলটি প্রায় সবারই খুব প্রিয়। আমরা যে বরই চাষ করি যেটা কাঁচা হোক বা পাকা হোক, যেকোন অবস্থাতেই খাওয়া যায়। এ কারণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এবার রপ্তানি শুরু হয়েছে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বাঘার চাষিরা এর আগে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আম বিদেশে আম রপ্তানি করেছেন। একইভাবে তারা পেয়ারা চাষ করেছেন। প্রথম চালানে আধা মেট্রিক টন পেয়ারা পাঠানো হয়েছে। ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনাল এই পেয়ারা ও বরই ইতালিতে পাঠিয়েছে।

মো. শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আমাদের কাছে থাকা তালিকাভুক্ত চুক্তিবদ্ধ আমচাষিদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের বাগানের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা শেখানো হয়। ব্যাগিং পদ্ধতিতে ফ্রেশ আম উৎপাদনের বিষয়টিও তাদের শেখানো হয়। এভাবেই আম রপ্তানির পথ খুলছে। এদিকে গত বছর নভেম্বর মাস থেকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর হাট থেকে সপ্তাহে ২১ টন কাঁচা মরিচ যাচ্ছে বিশ্বের চারটি দেশে। এ হাটের আরিমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান স্বপন এ অঞ্চলের কাঁচা মরিচ কিনে দুবাই, কাতার, কুয়েত ও মালেশিয়ায় রপ্তানি করছেন। এতে এ অঞ্চলের কৃষকেরা মরিচের ভালো দাম পাচ্ছেন।

এদিকে আম, পেয়ারা, বরইয়ের পর কাঁচা মরিচ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় মরিচের বিখ্যাত হাট তাহেরপুর। এই হাট বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার একদম মাঝখানে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই হাটে তিন উপজেলার কৃষকেরা কৃষিপণ্য বিক্রি করেন।

তাহেরপুর হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুর উপজেলার গোপালপাড়া গ্রামের আকছেদ আলী বলেন, ‘দুর্গাপুরে বাড়ি হলেও তাহেরপুর হাটে মরিচ বিক্রি করি। এতে আমাদের যাতায়াত সুবিধা হয়। এ বছর এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করছি। এ বছর অবশ্য মরিচের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’

নোয়াখালীর দুবাই প্রবাসী ইউনুছ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘দুবাইয়ে রাজশাহী ও বগুড়ার কাঁচা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি তাহেরপুর থেকে যে মরিচ আমদানি করি সেগুলো আবার আমি প্রায় ১০ জায়গায় সরবরাহ করি। এখানে প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। তারা দেশীয় মরিচ খুব পছন্দ করেন।’

আমের অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীতে ভিএইচটি নির্মাণে কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজশাহীর পবায় ট্রিটমেন্ট প্যান্টটি স্থাপন করবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির সম্ভাব্য মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

বিএমডিএর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, তারা যে প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি ঘণ্টায় ৩ হাজার কেজি ধরে দৈনিক প্রায় ৫০ টন আম প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম। মৌসুমের প্রায় ৫ হাজার টন আম প্রক্রিয়াজাত করা যাবে এখানে। যার রপ্তানিমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার ওপরে। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে রাজশাহী বিমানবন্দর সংলগ্ন তকিপুর মৌজায় এই প্ল্যান্ট স্থাপনের কথা। এ জন্য ৬০ শতক জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে।

শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩ , ১১ চৈত্র ১৪২৯, ০২ রমজান ১৪৪৪

রপ্তানির পথ খুঁজছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি

জেলা বাতা পরিবেশক, রাজশাহী

image

বরেন্দ্রঅঞ্চলের কৃষিপণ্য শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। চলে যাচ্ছে বিদেশেও। এই অঞ্চলের বিভিন্ন মওসুমের ফল সবজি খ্যাতি ইউরোপ ও মধ্য প্রচ্যরদেশ দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ায় সেখানেও ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

গত ১৫ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলামের বাগান থেকে ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা গেল দুবাইতে। তিনি গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডাক্ট লিমিটেডের মাধ্যমে পেয়ারা দুবাই রপ্তানি করছেন। জেলার নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া এলাকায় বিশাল পেয়ারা বাগান গড়ে তুলেছেন রফিকুল। এই বাগানের উৎপাদিত পেয়ারা গত ১৫ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে বাগান থেকে ৮ হাজার কেজি পেয়ারা দুবাই রপ্তানি করা হয়েছে। তখন দেশের বাজারে পেয়ারার প্রতি মণ ছিল মাত্র ১৪০০ টাকা, কিন্তু বিশ্ববাজারে এই পেয়ারার দাম ২৩০০ টাকা মণ। দুবাইতে অন্যান্য দেশের পেয়ারার চেয়ে আমাদের পেয়ারা বেশি দামে বিক্রি হয়।’

তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের পেয়ারা ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। আমাদের মতো কৃষকদের যথাযথ ট্রেনিং দিয়ে সাহায্য করলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। ব্যবসায়ীদের পেয়ারা রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে অন্য দেশের চেয়ে বেশি এগিয়ে যাব।’

গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডাক্ট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার হেমায়েত হোসাইন শিপলু বলেন, ‘আমরা যখন একটা বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করি, সবকিছু খেয়াল রাখি। পেয়ারায় দাগ থাকা যাবে না, পোকা-মাকড় থাকা যাবে না, পেয়ারার ছাল উঠে গেলে সেই পেয়ারা নেব না। আমরা সবসময় সুন্দর আর টেস্টি পেয়ারা বিদেশে রপ্তানি করে থাকি। আমরা দুবাইয়ে চড়ামূল্যে এই পেয়ারা বিক্রি করছি। আগামীতে সেখানে পেয়ারার দাম আরও বাড়বে।’

নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘এই উপজেলায় উৎপাদিত ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা বিদেশে যাচ্ছে, এটা খুশির খবর। কৃষি দপ্তরের আশা, আমাদের দেশে উৎপাদিত সব পণ্যই বিদেশে যাক, তাহলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবে এবং চাষাবাদেও আগ্রহ বাড়বে।

কয়েক বছর ধরেই ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আম পাঠিয়েছেন রাজশাহীর বাঘা অঞ্চলের আম ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাগমারা তাহেরপুর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হচ্ছে কাঁচা মরিচ। এবার আম, কাঁচা মরিচের পর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরের পেয়ারা ও বরই যাচ্ছে ইতালিতে।

কৃষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে গ্লে­াবাল গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসের বৈশ্বিক নীতিমালা অনুসরণ করে আম উৎপাদন করা গেলে শুধু আম থেকেই হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।

গত ১৭ জানুয়ারি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধমে প্যাকেজিং করে এই পেয়ারার প্রথম চালান ইতালিতে পাঠানো হয়েছে। আধা মেট্রিক টন পেয়ারার প্রথম চালান বাঘা গ্রামের সাদি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়। সাদি এন্টারপ্রাইজ এসব পেয়ারা চাষ করেছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়ার সাদি এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ছানা।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং হাউজে পেয়ারাগুলো মোড়কজাত করা হয়। তারপর কার্গো ফ্লাইটে এসব পেয়ারা সরাসরি প্রথম চালানে অল্প পরিমাণে পেয়ারা পাঠানো হয়েছে। আরও বেশি পরিমাণে যেন রপ্তানি করা যায়, এজন্য ঢাকার বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। পেয়ারার পর বাঘার বরই রপ্তানির একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাঘায় ভালো বরই চাষ হচ্ছে। বরইও বিদেশে যাবে।

সাদি এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ও বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, ৫০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। এর মধ্যে বাঘার পলাশীর চরে ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একসময় চরের এই বালুচটকা জমিতে কোন আবাদ হতো না। তারা এসব জমি ইজারা নিয়ে ধীরে ধীরে পরিচর্যা করে আবাদ করছেন। এখন এসব জমিতে আম, বরই ও পেয়ারা চাষ করা হচ্ছে। ফলনও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। চরের এসব জমিতে পেয়ারা চাষ হওয়ার কারণে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এক শ্রেণীর মানুষ আধুনিক চাষ শিখে নিয়েছেন। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে যাওয়ার কারণে বিদেশে রপ্তানির উপযোগী আম, পেয়ারা ও বরই বাঘায় উৎপাদিত হচ্ছে। এজন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এদিকে ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধমে প্যাকেজিং করে কোম্পানির মাধ্যমে শফিকুল ইসলাম সানা ও বাউসা এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা শাহিন ইকবালের বাগান থেকে ইতালিতে রপ্তানি হয় তিনশ’ কেজি থাই বরই। তরুণ উদ্যোক্তা শাহিন ইকবাল ও শফিকুল ইসলাম সানা জানান, এই অঞ্চলের বরই কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আর পাকলে লাল, এ ফলটি প্রায় সবারই খুব প্রিয়। আমরা যে বরই চাষ করি যেটা কাঁচা হোক বা পাকা হোক, যেকোন অবস্থাতেই খাওয়া যায়। এ কারণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এবার রপ্তানি শুরু হয়েছে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বাঘার চাষিরা এর আগে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আম বিদেশে আম রপ্তানি করেছেন। একইভাবে তারা পেয়ারা চাষ করেছেন। প্রথম চালানে আধা মেট্রিক টন পেয়ারা পাঠানো হয়েছে। ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনাল এই পেয়ারা ও বরই ইতালিতে পাঠিয়েছে।

মো. শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আমাদের কাছে থাকা তালিকাভুক্ত চুক্তিবদ্ধ আমচাষিদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের বাগানের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা শেখানো হয়। ব্যাগিং পদ্ধতিতে ফ্রেশ আম উৎপাদনের বিষয়টিও তাদের শেখানো হয়। এভাবেই আম রপ্তানির পথ খুলছে। এদিকে গত বছর নভেম্বর মাস থেকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর হাট থেকে সপ্তাহে ২১ টন কাঁচা মরিচ যাচ্ছে বিশ্বের চারটি দেশে। এ হাটের আরিমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান স্বপন এ অঞ্চলের কাঁচা মরিচ কিনে দুবাই, কাতার, কুয়েত ও মালেশিয়ায় রপ্তানি করছেন। এতে এ অঞ্চলের কৃষকেরা মরিচের ভালো দাম পাচ্ছেন।

এদিকে আম, পেয়ারা, বরইয়ের পর কাঁচা মরিচ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় মরিচের বিখ্যাত হাট তাহেরপুর। এই হাট বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার একদম মাঝখানে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই হাটে তিন উপজেলার কৃষকেরা কৃষিপণ্য বিক্রি করেন।

তাহেরপুর হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুর উপজেলার গোপালপাড়া গ্রামের আকছেদ আলী বলেন, ‘দুর্গাপুরে বাড়ি হলেও তাহেরপুর হাটে মরিচ বিক্রি করি। এতে আমাদের যাতায়াত সুবিধা হয়। এ বছর এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করছি। এ বছর অবশ্য মরিচের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’

নোয়াখালীর দুবাই প্রবাসী ইউনুছ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘দুবাইয়ে রাজশাহী ও বগুড়ার কাঁচা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি তাহেরপুর থেকে যে মরিচ আমদানি করি সেগুলো আবার আমি প্রায় ১০ জায়গায় সরবরাহ করি। এখানে প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। তারা দেশীয় মরিচ খুব পছন্দ করেন।’

আমের অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীতে ভিএইচটি নির্মাণে কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজশাহীর পবায় ট্রিটমেন্ট প্যান্টটি স্থাপন করবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির সম্ভাব্য মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

বিএমডিএর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, তারা যে প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি ঘণ্টায় ৩ হাজার কেজি ধরে দৈনিক প্রায় ৫০ টন আম প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম। মৌসুমের প্রায় ৫ হাজার টন আম প্রক্রিয়াজাত করা যাবে এখানে। যার রপ্তানিমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার ওপরে। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে রাজশাহী বিমানবন্দর সংলগ্ন তকিপুর মৌজায় এই প্ল্যান্ট স্থাপনের কথা। এ জন্য ৬০ শতক জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে।