বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপে অঙ্গীকার নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলে বিচার বিভাগের ‘সংস্কার’কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে বিভাজন দূর করার অঙ্গীকার করেছেন। অবশ্য বিরোধীরা গোটা প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানাচ্ছে।

ইসরায়েলের সরকার বিচার বিভাগের ‘সংস্কার -এর নামে গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল করার চেষ্টা করছে, এমন অভিযোগে গোটা ভূখ-ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ তীব্র হচ্ছে।

তাদের দাবি, বাস্তবে রাজনীতিকদের হাতে আদালতের তুলনায় বেশি ক্ষমতা তুলে দিতে নেতানিয়াহু এমন বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য তদন্ত ও শাস্তি এড়াতে এমন হাতিয়ার দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মূলত বৃহস্পতিবারই সংসদে বিতর্কিত একটি আইন অনুমোদিত হয়েছে, যার আওতায় কোনও প্রধানমন্ত্রীকে পদের অযোগ্য ঘোষণা করতে শর্তগুলো আরও কঠিন করা হয়েছে। বিরোধী পক্ষের শীর্ষ নেতা ইয়ার লাপিদ সেই পদক্ষেপকে নেতানিয়াহুকে রক্ষার ‘ব্যক্তিগত আইন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির মধ্যে ‘দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এদিকে তেল আবিব শহরের বাইরে বিক্ষোভকারীরা হাইওয়ে অবরোধ করায় পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। ইসরায়েলের অন্যান্য শহরেও হাজার হাজার মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। অনেকে দেশে স্বৈরতন্ত্রের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও প্রতিবাদ দেখা গেছে। দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আপোশের ইঙ্গিত দিয়েছেন। জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশন ভাষণে তিনি সংস্কারের পদক্ষেপ চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার করলেও সেই প্রস্তাবের সমর্থক ও বিরোধীদের জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্রে পৌঁছানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তার মতে, সংস্কারের বিরোধীরা মোটেই দেশদ্রোহী, পক্ষপাতদুষ্ট বা ফ্যাসিস্ট নয়। জনগণের মধ্যে শান্তি ফেরাতে ও বিভাজন মেটাতে নেতানিয়াহু সব রকম পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসন যন্ত্রের মধ্যেও নেতানিয়াহু সরকারের বিতর্কিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ আপোশ প্রস্তাব পেশ করলেও সরকার সেটি অগ্রাহ্য করেছে। এবার খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গালান্ট বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপের স্বার্থে আইনি প্রক্রিয়া মুলতবি রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশেষ করে রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যরা এই সরকারের নির্দেশ অমান্য করার হুমকি দেয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন তিনি।

নেতানিয়াহু তাকে তলব করায় তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ বাতিল করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী নিজেই টেলিভিশনে ভাষণ দেন। ইসরায়েলের বিরোধী নেতারা তথাকথিত সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়ে জোট সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তারা গোটা প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের বর্তমান অস্থিরতা মেটাতে আপোশের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। রোববার নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় তিনি গণতন্ত্রের সব শাখার ওপর প্রকৃত ‘চেক্স অ্যান্ড ব্যালেন্সেস’-এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের আপোশ প্রস্তাব বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩ , ১১ চৈত্র ১৪২৯, ০২ রমজান ১৪৪৪

বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপে অঙ্গীকার নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলে বিচার বিভাগের ‘সংস্কার’কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে বিভাজন দূর করার অঙ্গীকার করেছেন। অবশ্য বিরোধীরা গোটা প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানাচ্ছে।

ইসরায়েলের সরকার বিচার বিভাগের ‘সংস্কার -এর নামে গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল করার চেষ্টা করছে, এমন অভিযোগে গোটা ভূখ-ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ তীব্র হচ্ছে।

তাদের দাবি, বাস্তবে রাজনীতিকদের হাতে আদালতের তুলনায় বেশি ক্ষমতা তুলে দিতে নেতানিয়াহু এমন বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য তদন্ত ও শাস্তি এড়াতে এমন হাতিয়ার দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মূলত বৃহস্পতিবারই সংসদে বিতর্কিত একটি আইন অনুমোদিত হয়েছে, যার আওতায় কোনও প্রধানমন্ত্রীকে পদের অযোগ্য ঘোষণা করতে শর্তগুলো আরও কঠিন করা হয়েছে। বিরোধী পক্ষের শীর্ষ নেতা ইয়ার লাপিদ সেই পদক্ষেপকে নেতানিয়াহুকে রক্ষার ‘ব্যক্তিগত আইন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির মধ্যে ‘দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এদিকে তেল আবিব শহরের বাইরে বিক্ষোভকারীরা হাইওয়ে অবরোধ করায় পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। ইসরায়েলের অন্যান্য শহরেও হাজার হাজার মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। অনেকে দেশে স্বৈরতন্ত্রের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও প্রতিবাদ দেখা গেছে। দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আপোশের ইঙ্গিত দিয়েছেন। জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশন ভাষণে তিনি সংস্কারের পদক্ষেপ চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার করলেও সেই প্রস্তাবের সমর্থক ও বিরোধীদের জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্রে পৌঁছানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তার মতে, সংস্কারের বিরোধীরা মোটেই দেশদ্রোহী, পক্ষপাতদুষ্ট বা ফ্যাসিস্ট নয়। জনগণের মধ্যে শান্তি ফেরাতে ও বিভাজন মেটাতে নেতানিয়াহু সব রকম পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসন যন্ত্রের মধ্যেও নেতানিয়াহু সরকারের বিতর্কিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ আপোশ প্রস্তাব পেশ করলেও সরকার সেটি অগ্রাহ্য করেছে। এবার খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গালান্ট বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপের স্বার্থে আইনি প্রক্রিয়া মুলতবি রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশেষ করে রিজার্ভ বাহিনীর সদস্যরা এই সরকারের নির্দেশ অমান্য করার হুমকি দেয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন তিনি।

নেতানিয়াহু তাকে তলব করায় তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ বাতিল করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী নিজেই টেলিভিশনে ভাষণ দেন। ইসরায়েলের বিরোধী নেতারা তথাকথিত সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়ে জোট সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তারা গোটা প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের বর্তমান অস্থিরতা মেটাতে আপোশের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। রোববার নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় তিনি গণতন্ত্রের সব শাখার ওপর প্রকৃত ‘চেক্স অ্যান্ড ব্যালেন্সেস’-এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের আপোশ প্রস্তাব বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।