মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে গতকাল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকীতে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষের কণ্ঠে ঝরেছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা। তাদের ভাষায়, দুর্নীতির কারণে স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও দেশ উন্নয়নের শেখরে পৌছাতে পারেনি। ফলে স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য এখনও অধরাই রয়ে গেছে। তাদের মতে, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করে অচীরেই বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ সাম্যের বাংলাদেশ, এই যেন হয় আজকের দিনের প্রত্যয়।
একত্রিশ বার তোপধ্বনি, জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া ও প্রার্থনাসহ নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিবসটি উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। একই দিনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ভীড় ছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনকেন্দ্রিক আশপাশের সড়কেও।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সুসজ্জিত করা হয় জাতীয় পতাকায়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। গতকাল প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়।
সকালে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে এবং বিউগলে করণ সুর বেজে উঠে। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও খাইরুজ্জমান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুল-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরপরই সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তখন স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষের ঢল নামে।
এসময় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)সহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক স্মৃতিসৌধের মূল বেদীতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। এরপর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানার নিয়ে দলে দলে জনস্রোত প্রবেশ করে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। হাতে পুষ্পস্তবক, লাল সবুজের পতাকা, অনেকের পোষাকেও ছিল লাল সবুজের সমারোহ।
সরেজমিন দেখা যায়, শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে বেদি ভরে যাচ্ছে। তবে স্মৃতিসৌধের দিকে জন¯্রােত অব্যহত আছে। সবার শ্রদ্ধা নিবেদনে সুবিধার্থে বেদি থেকে ফুল অপসারণ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অজিত কুমার সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলসমূহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমুহ, জাতীয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হলসমূহ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাপ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের প্রতি।
আলাদাভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়েও আসেন অনেকে। তবে এবার রোজার কারণে ভিড় ছিল কিছুটা কম।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সুসজ্জিত করা হয় জাতীয় পতাকায়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনেও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সড়কে অলঙ্করণ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে উৎসবমুখর পরিবেশে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ প্রকাশ করে।
এ ছাড়া সকালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মোহাম্মদপুরে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ যোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও রাত ১২টা ১ মিনিট (২৫ মার্চ দিবাগত) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করে।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, যথাযোগ্য মর্যাদায় স্থানীয় শহীদ বেদি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়াসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে।
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩ , ১৩ চৈত্র ১৪২৯, ০৪ রমজান ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে গতকাল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকীতে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ মানুষের কণ্ঠে ঝরেছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা। তাদের ভাষায়, দুর্নীতির কারণে স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও দেশ উন্নয়নের শেখরে পৌছাতে পারেনি। ফলে স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য এখনও অধরাই রয়ে গেছে। তাদের মতে, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করে অচীরেই বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ সাম্যের বাংলাদেশ, এই যেন হয় আজকের দিনের প্রত্যয়।
একত্রিশ বার তোপধ্বনি, জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া ও প্রার্থনাসহ নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিবসটি উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। একই দিনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ভীড় ছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনকেন্দ্রিক আশপাশের সড়কেও।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সুসজ্জিত করা হয় জাতীয় পতাকায়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। গতকাল প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়।
সকালে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে এবং বিউগলে করণ সুর বেজে উঠে। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও খাইরুজ্জমান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুল-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরপরই সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তখন স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষের ঢল নামে।
এসময় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)সহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক স্মৃতিসৌধের মূল বেদীতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। এরপর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানার নিয়ে দলে দলে জনস্রোত প্রবেশ করে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। হাতে পুষ্পস্তবক, লাল সবুজের পতাকা, অনেকের পোষাকেও ছিল লাল সবুজের সমারোহ।
সরেজমিন দেখা যায়, শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে বেদি ভরে যাচ্ছে। তবে স্মৃতিসৌধের দিকে জন¯্রােত অব্যহত আছে। সবার শ্রদ্ধা নিবেদনে সুবিধার্থে বেদি থেকে ফুল অপসারণ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অজিত কুমার সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলসমূহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমুহ, জাতীয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হলসমূহ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাপ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের প্রতি।
আলাদাভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়েও আসেন অনেকে। তবে এবার রোজার কারণে ভিড় ছিল কিছুটা কম।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সুসজ্জিত করা হয় জাতীয় পতাকায়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনেও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সড়কে অলঙ্করণ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে উৎসবমুখর পরিবেশে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ প্রকাশ করে।
এ ছাড়া সকালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মোহাম্মদপুরে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ যোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও রাত ১২টা ১ মিনিট (২৫ মার্চ দিবাগত) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করে।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, যথাযোগ্য মর্যাদায় স্থানীয় শহীদ বেদি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়াসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে।