জয়ে টি-২০ সিরিজ শুরু টাইগারদের

ওপেনার রনি তালুকদারের ঝড়ো হাফ-সেঞ্চুরির পর ও পেসার তাসকিন আহমেদের দুরন্ত বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে টি-২০ সিরিজ শুর করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ।

গতকাল প্রথম টি-২০তে বৃষ্টি আইনে (ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন) স্বাগতিকরা ২২ রানে হারায় আইরিশদের। রনি ৩৮ বলে ৬৭ রান করেন। তাসকিন ২ ওভার বোলিংয়ে ১৬ রানে ৪ উইকেট নেন। এটা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। বাংলাদেশ ১৯.৩ ওভারে ৫ উইকটে ২০৭ রান তোলার পর নামে বৃষ্টি। ইনিংস শেষ হয় ওখানেই। আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় পরে ৮ ওভারে ১০৪ রান। ৫ উইকেট হারিয়ে তারা করতে পারে ৮১ রান।

চট্টগ্রামে টস জয়ী আয়ারল্যান্ড বোলিং শুরু করে হেরি টেক্টরকে দিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫১ টি-২০তে তিনি একটি বলও করেননি। তবে আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই নতুন বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। এ দিন অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম ওভারে তাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কায় শুরু করেন লিটন। পরের ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারকে পুল করে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন রনি। ব্যস দুজনের রান রথ ছুটতে থাকে।

লিটন-রনির ঝড়ের পর বিধ্বংসী তাসকিন, সিরিজে এগিয়ে বাংলাদেশ

চার-ছক্কা আসতে থাকে প্রতি ওভারেই। পেস-স্পিন, কিছুই পায়নি পাত্তা।

প্রথম ৫ ওভারে ভিন্ন ৫ বোলার ব্যবহার করেন এই সিরিজের আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। কিন্তু রানের স্রোত পন্ড করতে পারেননি কেউ। ৫ ওভারে রান উঠে যায় ৬১।

পরের ওভারে সেই রান পেরিয়ে যায় ৮০। মার্ক অ্যাডারের করা ওভারটিতে প্রথম বলে কঠিন একটা সুযাগ দিয়েছিলেন লিটন। পরের বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে রনির ছক্কা, এরপর টানা তিন বাউন্ডারি।

৬ ওভারেই চলে আসে ১২ বাউন্ডারি। স্কোর বোর্ডে রান তখন ৮১। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে মিরপুরে ৭৬।

অপ্রতিরোধ্য জুটিকে শেষ পর্যন্ত থামাতে পারেন ক্রিস ইয়াং। তার সেøায়ারে আলতো শটে মিড অফে ধরা পড়েন লিটন। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ২৩ বলে ৪৭ করে ফেরেন তিনি। জুটি ভাঙে ৪৩ বলে ৯১ রানে।

লিটনের পর নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরে যান এক ছক্কায় ১৩ বলে ১৪ করে। তবে আইরিশদের স্বস্তি ফেরেনি। রনির ঝড় চলতে থাকে। চারে নেমে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গী হন শামীম হোসেনও।

বেন হোয়াইটওকে টানা দুই বাউন্ডারিতে রনি পঞ্চাশে পৌঁছে যান ২৪ বলে। তার জন্য আবেগময় এক মাইলফলক। সেই ২০১৫ সালের পর জাতীয় দলে ফিরেছেন তিনি কদিন আগে। ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান অবশেষে প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটির স্বাদ পেলেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে, অভিষেকের প্রায় ৮ বছর পর।

শামীম ক্রিজ যাওয়ার পরপরই তিন বলের মধ্যে চার-ছক্কা মারেন হোয়াইটকে। ওই ওভারে ছক্কা আসে রনির ব্যাট থেকেও।

রনির ইনিংস শেষ হয় রানের তাড়নাতেই। গ্রাহাম হিউমের ফুল লেংথ বলে স্লগ খেলে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

অ্যাডায়ারের কাটারে শামীমের ইনিংস থামে ২০ বল ৩০ রানে। এই দফায় দলে ফেরার পর তার প্রথম ইনিংস ছিল এটি। সবশেষ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে খেললেও ব্যাটিং পাননি।

সাকিব শুরু করেন প্রথম বলের বাউন্ডারিতে। তাওহিদ হৃদয় আউট হয়ে যান এক ছক্কায় ৮ বলে ১৩ করে। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেয়ে প্রথম বলকে সীমানায় পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজও। এর পরপরই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ। সাকিব তখন অপরাজিত ১৩ বলে ২০ করে।

টি-২০তে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ২১৫, দেশের মাঠে সর্বোচ্চ ২১১। চার বল আগে ইনিংস থেমে যাওয়ায় তা আর ছাড়ানো হলো না।

২ ঘণ্টা পর খেলা শুরু হয় যে সমীকরণে, আয়ারল্যান্ডের সামনে জয়ের হাতছানি ছিল তাতে ভালোভাবেই। পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার শুরুটাও করেন আশা জাগানিয়া। পাওয়ার প্লের ২ ওভারে দুজন তোলেন ৩২ রান।

নাসুম আহমেদের প্রথম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে আসে ১৮ রান, মোস্তাফিজুর রহমানের ওভারে তিন বাউন্ডারিতে ১৪।

পরের ওভারেই রাশ টেনে ধরেন হাসান মাহমুদ। বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে টানা তিন বলে রান দেননি তিনি রস অ্যাডায়ারকে। পরের বলে আইরিশ ওপেনার খেলার চেষ্টা করেন স্টাম্প ছেড়ে, হাসানের দুর্দান্ত ইয়র্কার ভেঙে দেয় মিডল স্টাম্প।

পরের ওভারেই তাসকিনের তিন ছোবল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় ফুল লেংথ বলে বোল্ড লর্কান টাকার। স্লগ করে বোল্ড স্টার্লিং (৮ বলে ১৭)। পয়েন্ট সীমানায় ধরা পড়েন জর্জ ডকরেল।

পরে হাসানের এক ওভারে টেক্টরের তিন বাউন্ডারিতে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে অভিজ্ঞতার সবটুকু মেলে ধরে সাকিব দেন স্রেফ ৫ রান।

পরের দুই ওভারে আর পেরে ওঠেনি আইরিশরা। শেষ ওভারে অসাধারণ ক্যাচে টেক্টরকে ফেরান মিরাজ, ৪ উইকেট পূর্ণ করেন তাসকিন। বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ে স্বস্তিতে।

ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে পারেননি রনি তালকদার। তার হয়ে তা গ্রহণ করেন অধিনায়ক সাকিব।

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামীকাল।

মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩ , ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ০৫ রমজান ১৪৪৪

জয়ে টি-২০ সিরিজ শুরু টাইগারদের

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

তাসকিনের দুরন্ত বোলিংয়ে সহজ জয় পায় টাইগাররা

ওপেনার রনি তালুকদারের ঝড়ো হাফ-সেঞ্চুরির পর ও পেসার তাসকিন আহমেদের দুরন্ত বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে টি-২০ সিরিজ শুর করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ।

গতকাল প্রথম টি-২০তে বৃষ্টি আইনে (ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন) স্বাগতিকরা ২২ রানে হারায় আইরিশদের। রনি ৩৮ বলে ৬৭ রান করেন। তাসকিন ২ ওভার বোলিংয়ে ১৬ রানে ৪ উইকেট নেন। এটা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। বাংলাদেশ ১৯.৩ ওভারে ৫ উইকটে ২০৭ রান তোলার পর নামে বৃষ্টি। ইনিংস শেষ হয় ওখানেই। আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় পরে ৮ ওভারে ১০৪ রান। ৫ উইকেট হারিয়ে তারা করতে পারে ৮১ রান।

চট্টগ্রামে টস জয়ী আয়ারল্যান্ড বোলিং শুরু করে হেরি টেক্টরকে দিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫১ টি-২০তে তিনি একটি বলও করেননি। তবে আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই নতুন বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। এ দিন অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম ওভারে তাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কায় শুরু করেন লিটন। পরের ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারকে পুল করে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন রনি। ব্যস দুজনের রান রথ ছুটতে থাকে।

লিটন-রনির ঝড়ের পর বিধ্বংসী তাসকিন, সিরিজে এগিয়ে বাংলাদেশ

চার-ছক্কা আসতে থাকে প্রতি ওভারেই। পেস-স্পিন, কিছুই পায়নি পাত্তা।

প্রথম ৫ ওভারে ভিন্ন ৫ বোলার ব্যবহার করেন এই সিরিজের আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। কিন্তু রানের স্রোত পন্ড করতে পারেননি কেউ। ৫ ওভারে রান উঠে যায় ৬১।

পরের ওভারে সেই রান পেরিয়ে যায় ৮০। মার্ক অ্যাডারের করা ওভারটিতে প্রথম বলে কঠিন একটা সুযাগ দিয়েছিলেন লিটন। পরের বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে রনির ছক্কা, এরপর টানা তিন বাউন্ডারি।

৬ ওভারেই চলে আসে ১২ বাউন্ডারি। স্কোর বোর্ডে রান তখন ৮১। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে মিরপুরে ৭৬।

অপ্রতিরোধ্য জুটিকে শেষ পর্যন্ত থামাতে পারেন ক্রিস ইয়াং। তার সেøায়ারে আলতো শটে মিড অফে ধরা পড়েন লিটন। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ২৩ বলে ৪৭ করে ফেরেন তিনি। জুটি ভাঙে ৪৩ বলে ৯১ রানে।

লিটনের পর নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরে যান এক ছক্কায় ১৩ বলে ১৪ করে। তবে আইরিশদের স্বস্তি ফেরেনি। রনির ঝড় চলতে থাকে। চারে নেমে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গী হন শামীম হোসেনও।

বেন হোয়াইটওকে টানা দুই বাউন্ডারিতে রনি পঞ্চাশে পৌঁছে যান ২৪ বলে। তার জন্য আবেগময় এক মাইলফলক। সেই ২০১৫ সালের পর জাতীয় দলে ফিরেছেন তিনি কদিন আগে। ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান অবশেষে প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটির স্বাদ পেলেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে, অভিষেকের প্রায় ৮ বছর পর।

শামীম ক্রিজ যাওয়ার পরপরই তিন বলের মধ্যে চার-ছক্কা মারেন হোয়াইটকে। ওই ওভারে ছক্কা আসে রনির ব্যাট থেকেও।

রনির ইনিংস শেষ হয় রানের তাড়নাতেই। গ্রাহাম হিউমের ফুল লেংথ বলে স্লগ খেলে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

অ্যাডায়ারের কাটারে শামীমের ইনিংস থামে ২০ বল ৩০ রানে। এই দফায় দলে ফেরার পর তার প্রথম ইনিংস ছিল এটি। সবশেষ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে খেললেও ব্যাটিং পাননি।

সাকিব শুরু করেন প্রথম বলের বাউন্ডারিতে। তাওহিদ হৃদয় আউট হয়ে যান এক ছক্কায় ৮ বলে ১৩ করে। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেয়ে প্রথম বলকে সীমানায় পাঠান মেহেদী হাসান মিরাজও। এর পরপরই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ। সাকিব তখন অপরাজিত ১৩ বলে ২০ করে।

টি-২০তে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ২১৫, দেশের মাঠে সর্বোচ্চ ২১১। চার বল আগে ইনিংস থেমে যাওয়ায় তা আর ছাড়ানো হলো না।

২ ঘণ্টা পর খেলা শুরু হয় যে সমীকরণে, আয়ারল্যান্ডের সামনে জয়ের হাতছানি ছিল তাতে ভালোভাবেই। পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার শুরুটাও করেন আশা জাগানিয়া। পাওয়ার প্লের ২ ওভারে দুজন তোলেন ৩২ রান।

নাসুম আহমেদের প্রথম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে আসে ১৮ রান, মোস্তাফিজুর রহমানের ওভারে তিন বাউন্ডারিতে ১৪।

পরের ওভারেই রাশ টেনে ধরেন হাসান মাহমুদ। বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে টানা তিন বলে রান দেননি তিনি রস অ্যাডায়ারকে। পরের বলে আইরিশ ওপেনার খেলার চেষ্টা করেন স্টাম্প ছেড়ে, হাসানের দুর্দান্ত ইয়র্কার ভেঙে দেয় মিডল স্টাম্প।

পরের ওভারেই তাসকিনের তিন ছোবল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় ফুল লেংথ বলে বোল্ড লর্কান টাকার। স্লগ করে বোল্ড স্টার্লিং (৮ বলে ১৭)। পয়েন্ট সীমানায় ধরা পড়েন জর্জ ডকরেল।

পরে হাসানের এক ওভারে টেক্টরের তিন বাউন্ডারিতে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে অভিজ্ঞতার সবটুকু মেলে ধরে সাকিব দেন স্রেফ ৫ রান।

পরের দুই ওভারে আর পেরে ওঠেনি আইরিশরা। শেষ ওভারে অসাধারণ ক্যাচে টেক্টরকে ফেরান মিরাজ, ৪ উইকেট পূর্ণ করেন তাসকিন। বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ে স্বস্তিতে।

ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে পারেননি রনি তালকদার। তার হয়ে তা গ্রহণ করেন অধিনায়ক সাকিব।

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামীকাল।