রনি-লিটন জুটি জয়ের ভিত গড়ে দেয় : সাকিব

গতকাল খেলা শুরুর পরপরই লিটন কুমার দাস ও রনি তালুকদার বুঝিয়ে দেন উইকেট আসলে কেমন। দুজনের ধুন্দুমার ব্যাটিংয়ে সাগরিকায় বয়ে গেল রানের জোয়ার। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পরে বলেন, শুরুর সেই রান স্রোতই দলকে নিয়ে গেছে জয়ের তটে। লিটন ও রনি ৯১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন স্রেফ ৪৩ বলে। প্রথম ৬ ওভারে ৮১ রান যোগ করেন দুজন, পাওয়ার প্লেতে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

প্রথম ওভারে লিটনের ছক্কায় শুরু, এরপর দুজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এলোমেলো হয়ে যায় আইরিশ বোলিং। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে সাকিব বললেন, এই জুটিই দলকে এগিয়ে নিয়েছে জয়ের পথে।

‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম না উইকেটের আচরণ কেমন হবে। তবে যেভাবে দুই ওপেনার খেলেছে, শুরু থেকেই তারা ছিল দারুণ ইতিবাচক, ইন্টেন্ট ছিল ভালো এবং ঠিক এমন কিছুই আমাদের প্রয়োজন ছিল। এই জুটিই আমাদের জন্য ম্যাচের ভিত গড়ে দিয়েছে।’

২৩ বলে ৪৭ রান করে আউট হন লিটন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটিতে ৩৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংসে ম্যাচের সেরা হন রনি।

পরে চারে নেমে ২০ বলে ৩০ করেন শামিম, সাকিব অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ২০ রান করে। ১৯.২ ওভারে বাংলাদেশ ২০৭ রান করার পর বৃষ্টিতে শেষ হয়ে যায় ইনিংস। পরে আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮ ওভারে ১০৪। তারা যেতে পারে ৮১ পর্যন্ত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজ থেকে সম্মিলিত অবদান ও দলীয় পারফরম্যান্সের যে নমুনা বাংলাদেশ মেলে ধরছে মাঠে, তা বাড়তি তৃপ্তি দিচ্ছে অধিনায়ককে।

‘আমরা এটাই চাই (সমন্বিত পারফরম্যান্স)। টি-২০তে দু-একজনের পক্ষে সব ম্যাচে অবদান রাখা কঠিন। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স প্রয়োজন আমাদের। গত চার ম্যাচ ধরে এটিই করে আসছি আমরা।’

রান তাড়ার শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল আয়ারল্যান্ড। পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার প্রথম ২ ওভারে তোলেন ৩২ রান। তৃতীয় ওভারে হাসান মাহমুদ টানা তিন বলে রান না দেওয়ার পর চতুর্থ বলে দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন অ্যাডায়ারকে। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদ আগুনে বোলিংয়ে শিকার করেন তিন উইকেট। শেষ পর্যন্ত তিনি ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন ১৬ রানে।

সাকিব মনে করিয়ে দিলেন, দারুণ বোলিং করে চলা এই পেসারদের বাইরে আরও পেসার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশের।

‘ওরা যেভাবে বোলিং করছে, তা দুর্দান্ত। আরও কয়েকজন পেসার আছে আমাদের, যারা সুযোগ পাচ্ছে না। আমি নিশ্চিত, তারা যখন সুযোগ পাবে, একইভাবে নিজেদের মেলে ধরবে।’

গত টি-২০ বিশ্বকাপের পর সবশেষ ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে বাংলাদেশের টি-২০ দলে পরিবর্তন আনা হয় বেশ। মানসিকতা ও ধরনেও পড়ছে বদলের ছাপ। এতে এই সংস্করণে নতুন কিছুর আভাস দেখছেন দেশের ক্রিকেটের পুরোনো সৈনিক সাকিবও। ‘যে ছেলেরা এসেছে দলে, ভয়ের কোন কিছু তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। তারা অস্থির হয়নি, কোনো পরিস্থিতিতেই তারা অতি দুর্ভাবনায় পড়েনি। তারা ক্রিকেট খেলছে, উপভোগ করছে, এতেই ভালো ফল মিলছে।’

এভাবে খেলতে থাকলে সামনে ভালো কিছু হবে : তাসকিন

দুই ওপেনার লিটন-রনির ব্যাটিং ড্রেসিং রুমে বসে দারুণ উপভোগ করছিলেন তাসকিনরা। ডিএলএস মেথডে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে আসার পর ওপেনারদের প্রশংসায় মাতেন তাসকিন। জানান লিটনের সঙ্গে পাওয়ার প্লের হিটিং নিয়ে তার আলাপের কথা, ‘(লিটন-রনির ব্যাটিং) খুবই ভালো লাগছিল। গত রোববার রাতের ১০০ রান (পাওয়ার প্লেতে ১০২ রান) দেখেছি দক্ষিণ আফ্রিকার খেলায়। আমরা ভাবছিলাম ওরকম কিছু হতে যাচ্ছে নাকি। পরে লিটন আউট হয়ে আসার পর আমি বললাম, ‘কিরে তুই কি কালকের ম্যাচ দেখে ওরকম পিটাচ্ছিলি (হাসি)?’ (লিটন) বলে, ‘হ্যাঁ! ওরা পারলে আমরাও পারবো।’

তাসকিনের মতে এরকম আগ্রাসী ঘরানার ক্রিকেটে আগামীতে অনেক সুবাতাস আনবে দেশের ক্রিকেটে, ‘এটা খুব ইতিবাচক বিষয় এবং আমরাও খুব উপভোগ করছিলাম। মাশাআল্লাহ্?! এরকম ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে থাকলে অনেক ভালো কিছু হবে।’

মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩ , ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ০৫ রমজান ১৪৪৪

রনি-লিটন জুটি জয়ের ভিত গড়ে দেয় : সাকিব

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ছে সাকিবরা

গতকাল খেলা শুরুর পরপরই লিটন কুমার দাস ও রনি তালুকদার বুঝিয়ে দেন উইকেট আসলে কেমন। দুজনের ধুন্দুমার ব্যাটিংয়ে সাগরিকায় বয়ে গেল রানের জোয়ার। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পরে বলেন, শুরুর সেই রান স্রোতই দলকে নিয়ে গেছে জয়ের তটে। লিটন ও রনি ৯১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন স্রেফ ৪৩ বলে। প্রথম ৬ ওভারে ৮১ রান যোগ করেন দুজন, পাওয়ার প্লেতে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

প্রথম ওভারে লিটনের ছক্কায় শুরু, এরপর দুজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এলোমেলো হয়ে যায় আইরিশ বোলিং। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে সাকিব বললেন, এই জুটিই দলকে এগিয়ে নিয়েছে জয়ের পথে।

‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম না উইকেটের আচরণ কেমন হবে। তবে যেভাবে দুই ওপেনার খেলেছে, শুরু থেকেই তারা ছিল দারুণ ইতিবাচক, ইন্টেন্ট ছিল ভালো এবং ঠিক এমন কিছুই আমাদের প্রয়োজন ছিল। এই জুটিই আমাদের জন্য ম্যাচের ভিত গড়ে দিয়েছে।’

২৩ বলে ৪৭ রান করে আউট হন লিটন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটিতে ৩৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংসে ম্যাচের সেরা হন রনি।

পরে চারে নেমে ২০ বলে ৩০ করেন শামিম, সাকিব অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ২০ রান করে। ১৯.২ ওভারে বাংলাদেশ ২০৭ রান করার পর বৃষ্টিতে শেষ হয়ে যায় ইনিংস। পরে আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮ ওভারে ১০৪। তারা যেতে পারে ৮১ পর্যন্ত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজ থেকে সম্মিলিত অবদান ও দলীয় পারফরম্যান্সের যে নমুনা বাংলাদেশ মেলে ধরছে মাঠে, তা বাড়তি তৃপ্তি দিচ্ছে অধিনায়ককে।

‘আমরা এটাই চাই (সমন্বিত পারফরম্যান্স)। টি-২০তে দু-একজনের পক্ষে সব ম্যাচে অবদান রাখা কঠিন। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স প্রয়োজন আমাদের। গত চার ম্যাচ ধরে এটিই করে আসছি আমরা।’

রান তাড়ার শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল আয়ারল্যান্ড। পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার প্রথম ২ ওভারে তোলেন ৩২ রান। তৃতীয় ওভারে হাসান মাহমুদ টানা তিন বলে রান না দেওয়ার পর চতুর্থ বলে দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন অ্যাডায়ারকে। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদ আগুনে বোলিংয়ে শিকার করেন তিন উইকেট। শেষ পর্যন্ত তিনি ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন ১৬ রানে।

সাকিব মনে করিয়ে দিলেন, দারুণ বোলিং করে চলা এই পেসারদের বাইরে আরও পেসার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশের।

‘ওরা যেভাবে বোলিং করছে, তা দুর্দান্ত। আরও কয়েকজন পেসার আছে আমাদের, যারা সুযোগ পাচ্ছে না। আমি নিশ্চিত, তারা যখন সুযোগ পাবে, একইভাবে নিজেদের মেলে ধরবে।’

গত টি-২০ বিশ্বকাপের পর সবশেষ ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে বাংলাদেশের টি-২০ দলে পরিবর্তন আনা হয় বেশ। মানসিকতা ও ধরনেও পড়ছে বদলের ছাপ। এতে এই সংস্করণে নতুন কিছুর আভাস দেখছেন দেশের ক্রিকেটের পুরোনো সৈনিক সাকিবও। ‘যে ছেলেরা এসেছে দলে, ভয়ের কোন কিছু তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। তারা অস্থির হয়নি, কোনো পরিস্থিতিতেই তারা অতি দুর্ভাবনায় পড়েনি। তারা ক্রিকেট খেলছে, উপভোগ করছে, এতেই ভালো ফল মিলছে।’

এভাবে খেলতে থাকলে সামনে ভালো কিছু হবে : তাসকিন

দুই ওপেনার লিটন-রনির ব্যাটিং ড্রেসিং রুমে বসে দারুণ উপভোগ করছিলেন তাসকিনরা। ডিএলএস মেথডে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে আসার পর ওপেনারদের প্রশংসায় মাতেন তাসকিন। জানান লিটনের সঙ্গে পাওয়ার প্লের হিটিং নিয়ে তার আলাপের কথা, ‘(লিটন-রনির ব্যাটিং) খুবই ভালো লাগছিল। গত রোববার রাতের ১০০ রান (পাওয়ার প্লেতে ১০২ রান) দেখেছি দক্ষিণ আফ্রিকার খেলায়। আমরা ভাবছিলাম ওরকম কিছু হতে যাচ্ছে নাকি। পরে লিটন আউট হয়ে আসার পর আমি বললাম, ‘কিরে তুই কি কালকের ম্যাচ দেখে ওরকম পিটাচ্ছিলি (হাসি)?’ (লিটন) বলে, ‘হ্যাঁ! ওরা পারলে আমরাও পারবো।’

তাসকিনের মতে এরকম আগ্রাসী ঘরানার ক্রিকেটে আগামীতে অনেক সুবাতাস আনবে দেশের ক্রিকেটে, ‘এটা খুব ইতিবাচক বিষয় এবং আমরাও খুব উপভোগ করছিলাম। মাশাআল্লাহ্?! এরকম ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে থাকলে অনেক ভালো কিছু হবে।’