এ এ জাফর ইকবাল
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তার আগের করোনা সংকট তৃতীয় বিশ্বের খাদ্য-ঘাটতির দেশগুলোকে জানান দিয়ে গেছে কত প্রকট এ সংকট। আমরাও এর ভুক্তভোগী। এখন প্রয়োজন এই সংকট নিরসনে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ।
চাল-গমের পাশাপাশি ভোজ্যতেল, চিনি এবং ডাল প্রয়োজনমতো উৎপাদন করতে পারছি না আমরা। দীর্ঘদিনের সংকট এটা। একাধিক কারণে খাদ্যপণ্যের ঘাটতিতে রয়েছি। এর প্রত্যেকটি নিয়ে পরিপূর্ণ আলোচনা এবং সংকট নিরসনে সরকার ও ভোক্তাসহ সবাই জনসাধারণের সজাগ হয়ে ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে হবে। স্বাধীনতার সময় দেশে চালের ঘাটতি ছিল। গত ৫০ বছরে সামান্যমাত্র জমি বৃদ্ধি পেয়েছে আবাদে। সাড়ে সাত কোটি লোকের দেশে এখন জনসংখ্যা পৌঁছেছে ১৬ কোটিরও বেশি। বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদরা এক ফসলি জমিকে দুই-তিন ফসল এবং একরপ্রতি উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধিতে আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করেছেন। তারপরও সংকট মোচন হয়নি। ধান উৎপাদনে সবাই সাফল্য কাজে লাগিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখলেও ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না। কারণ ঘাটতি পূরণে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ানোর তেমন কোন সুযোগ নেই। তবে বিকল্প পথে চালের ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা চালানোর সুযোগ আছে।
উদরপূর্তিতে পারলে দৈনিক তিনবেলা ভাত খাওয়ার যে অভ্যাস তার পরিবর্তন আনতে হবে। যেতে হবে বিকল্প খাবারে। ধনী-দরিদ্র সবার জন্যই ভাতের বিকল্প বেছে নিতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে পছন্দ-অপছন্দকে বিবেচনায় নিয়ে। ভাতবিহীন খাবার-বৈচিত্র্যে এটা সম্ভব। প্রয়োজনও আছে এবং ভিন্ন ভিন্নভাবে সাধারণ মানুষ আপন আপন সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়েছেন ইতোমধ্যেই।
ঢাকা শহরের গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ব্যস্ততম সড়কে কেউ হেঁটে গেলে দেখতে পাবেন অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান যেখানে বিক্রি হচ্ছে গরম দুধ, সিদ্ধ ডিম, বনরুটি এবং কলা। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এ খাবারে আগ্রহী না হলেও রিকশাচালক, ভ্যানগাড়িচালক এবং এ ধরনের কায়িকশ্রম বিনিয়োগকারী মানুষ কিনে খাচ্ছে এগুলো। খাঁটি দুধ না হলেও এতে রয়েছে পরিমিত প্রোটিনের সরবরাহ। মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকায় একবেলার পরিপূর্ণ খাবার পাওয়াও যাচ্ছে খুবই সহজে খাওয়াও যাচ্ছে ঝটপট। কায়িক শ্রম দেয়া এই মানুষগুলো ধরেই নিয়েছে ভাতের চেয়ে এ খাবার উপাদেয়। এ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে শহর থেকে গ্রামে, ব্যস্ততম রাজপথ থেকে জমির আইলে আইলে।
ইউরোপজুড়ে মানুষের ভাত খেতে আগ্রহ নেই। তারা অভ্যস্ত গোলআলু থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন খাবারে। এক কেজি গোল আলু যে দামে বিক্রি হয়, তা এখনো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। তাছাড়া আলু-উৎপাদক দেশ হিসেবে আমাদের রয়েছে সাফল্যের অহংকার। বছরের সব সময় দেশের সর্বত্র গোল আলু পাওয়া যায়। সুতরাং ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর ব্যবহার এখনি উপযুক্ত সময়।
আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগেই বাংলাদেশে একজন উদ্যান তত্ত্ববিদ, নাম কামাল উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে কর্মরত থাকা অবস্থায় আলুর খাবার জনপ্রিয় করার জন্য একাধিক্রমে প্রায় দশ বছর আলুর খাবারের প্রদর্শনী করে গেছেন এবং চাষিরা যাতে আলু উৎপাদনে অধিক আগ্রহী হয়, সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনশীল এবং রোগ-বালাই সহনীয় আলুবীজ আমদানির পথ তৈরি করে গেছেন।
পেরুর রাজধানী লিমায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্র আলু উৎপাদন এগিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করেছে। সেই সময় আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি ভারতীয় বিশিষ্ট কৃষিবিদ ড. হরি কিশোর হর-হামেশাই বাংলাদেশে আসতেন এবং প্রান্তিক পর্যায়ের আলু উৎপাদকদের সাথে মত-বিনিময় করতেন। ফলশ্রুতিতে আলু উৎপাদনে এসেছে সফলতা। আমরা নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছি, একইসাথে সুযোগ তৈরি হয়েছে আলু রফতানীর। সময়ের সাথে এই রফতানি বাড়বেই। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে ভাতের পরিবর্তে আলুর তৈরি খাবার গ্রহণে।
আশার বিষয়, স্থানীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কর্মে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসেছেন। বাজারজাত হচ্ছে আলুর চিপস, ফ্রেন্স ফ্রাইয়ের মতো প্রায় ছয় থেকে সাত ধরনের খাবার। পাশাপাশি উন্নত শিল্পায়িত দেশ থেকেও আসছে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত আলুর খাবার। ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ভোক্তা বা গ্রাহক যখন আলুর তৈরি খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে তখনই এর প্রভাব পড়তে শুরু হবে ভাতের ওপর।
করোনা সংকট আমাদের বাধ্য করেছে মাছ-মাংসের পরিবর্তে শাক-সব্জির প্রতি আগ্রহী হতে। গ্রাম-শহর উভয় জনপদেই শাক-সব্জি খাওয়ার আগ্রহ বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। পুঁইশাক, লালশাক বছরের সব সময়েই পাওয়া যায়। পালংশাক, ডাটাশাক, কচুশাক, পাটশাক এবং কলমিশাক মৌসুমে যথেষ্ট জনপ্রিয়। সর্বত্র সবাই সমাজের মানুষরাই আগের তুলনায় অনেক বেশি শাক-সব্জি খেতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এটাও ভাতের ওপর চাপ কমাতে একটা উদ্যোগ। ভাতের সঙ্গেই আমরা শাক-সব্জি খাই এবং ভাত খাওয়া পরিমাণ কমিয়ে শাক-সব্জিতে তা পূরণ করি। এতে স্বাস্থ্যসেবার পথ সুগম হচ্ছে, পাশাপাশি চালের ওপর চাপ কমছে।
গম উৎপাদনে আমরা পেঁৗছাতে পারিনি অভীষ্ট লক্ষ্যে। ৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় দেশের প্রখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী ড. কাজী এম বদরোদ্দোজার আন্তরিক চেষ্টায় বাংলাদেশ কৃষ্টি গবেষণা ইনস্টিটিউটের যশোরের খয়েরতলা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রকে গম গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছিল। অনেক কৃষিবিজ্ঞানী কঠোর পরিশ্রম করেছেন গম উৎপাদন সম্প্রসারিত করতে। সবুজ বিপ্লবে সাফল্য অর্জনকারী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. নরম্যান-ই বোরলগ মেক্সিকোর আন্তর্জাতিক গম গবেষণা কেন্দ্রের তৎকালীন মহাপরিচালক হিসেবে একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন গম গবেষণা সম্প্রসারণে আমাদের সহযোগিতা করতে। গম উৎপাদন বেড়েছে কিন্তু ইপ্সিত মাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, কারণ, কৃষক গমের জমিতে অন্য ফসল চাষ করে অধিক মুনাফা পায় বলে তারা এ ফসলটি আবাদে প্রত্যাশিত সাফল্য দেখাতে পারেনি। তারপরও এটি অব্যাহত রাখতে হবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় খাদ্য হিসেবে।
ধান ও গমের পর খাদ্যতালিকায় আসে তৈলবীজ। সরিষা ও তিল আবাদে আমাদের সাফল্য গত ৫০ বছরে প্রয়োজনীয় সুফল বয়ে আনতে পারেনি। সয়াবিন ও পামঅয়েল উৎপাদনকারী দেশগুলো ভোজ্যতেলের বাজার দখল করে নিয়েছে। প্রয়োজনেই আমরা বাধ্য হচ্ছি ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানিতে। দেশের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি আমদানি করতে হয়। এটারও লাগাম টানা প্রয়োজন। আশার বিষয়, চালের কুড়া থেকে উৎপাদিত রাইস ব্রায়ান অয়েল দাপটের সাথেই যাত্রা শুরু করেছে। ৬-৭টি মিল ইতোমধ্যেই উৎপাদনে এসেছে। দাম সয়াবিন এবং পাম অয়েলের চাইতে কিছুটা বেশি। বাঁশকোটা গন্ধ দূর হয়নি। এ তেল সবাই জায়গায় পাওয়া যায় না বলে এই তেল পর্যাপ্ত ক্রেতা-বান্ধব হতে পারেনি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের যথার্থ উদ্যোগ নেয়া খুবই জরুরি। রাইস ব্রায়ান অয়েলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথেই কমবে সয়াবিন ও পাম তেলের কদর। চাল আমদানির পরিবর্তে যদি ধান আমদানিতে সক্ষম হই তাহলে ভোজ্য তেলের বাজারে অবধারিতভাবেই আসবে নতুন মাত্রা। কুড়া আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শুধু তেল উৎপাদনেই নয়, একইসাথে গবাদিপশুর খাবার, মাছের খাবার এবং হাঁস-মুরগির খাবার তৈরিতে সহায়ক। এ ছাড়াও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় চালের চাইতে ধান রাখার সুযোগ বেশি।
অনেক ডাল বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে। চাহিদা কিন্তু কমেনি। এই চাহিদা কেন্দ্রীভূত হয়েছে মসুরি, মুগ, মাসকালাই এবং খেসারির ডালে। চাহিদার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি আমদানী করতে হচ্ছে। কৃষি-বিজ্ঞানীরা সব মৌসুমে মুগ, মাসকালাই উৎপাদনসহ উন্নত অধিক উৎপাদনশীল অনেক নতুন নতুন জাত আবিস্কার ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্প্রসারণে সাফল্য অর্জন করলেও আমরা প্রয়োজনীয় লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারিনি। এক্ষেত্রে সুযোগও সীমিত। তারপরও সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে ডাল উৎপাদনের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হবে। অড়হরের মতো ডাল উৎপাদনে অধিক আগ্রহী হতে হবে, যাতে করে উৎপাদিত ডাল দিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি জ্বালানি সংকট নিরসনে নতুন পথের সূচনা হয়। অড়হরের ডাল ছাড়া অন্য কোন ডাল ফসলের সাথে আমরা পরিচিত নই। আফ্রিকায় এবং দক্ষিণ আমেরিকায় অড়হরের মতো একই ধরনের খাটো বৃক্ষজাতীয় জাতের ডাল উৎপাদনকারী ফসল রয়েছে। এই ডালগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা যায়।
খোসামুুক্ত ডাল আমদানির পরিবর্তে খোসাযুক্ত ডাল আমদানিতে অধিক আগ্রহী হতে হবে যাতেকরে মানুষের প্রয়োজনের পাশাপাশি ডালের ভুষি দিয়ে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরির সহায়তা পাওয়া যায়।
চিনিও আমদানি হচ্ছে। দেশেও তা উৎপাদন হয়। দেশীয় উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কৃষকের দৃষ্টিতে, ফসল হিসেবে আখ মোটেই আবাদ-বান্ধব নয়। সরকারি মালিকানাধীন চিনিকলগুলোর ব্যবস্থাপনা দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভোগান্তিতে ফেলেছে মানুষকে। চিনিকলগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। একইসাথে চিনিকলগুলোর উৎপাদন-প্রক্রিয়া আরো আধুনিক ও সময়োপযোগী করতে হবে; যাতে উৎপাদন ব্যয় কমে আসে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- ঈশ্বরদীতে অবস্থিত একমাত্র আখ গবেষণা কেন্দ্রটির নাম পরিবর্তন করে চিনি উৎপাদনকারী সব ফসলের নামের সাথে সংযুক্ত করে তাতে খেজুর, তাল এবং বিটের মতো ফসল দিয়েও কাজ শুরু হয়েছে। এখন বৈজ্ঞানিকদের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে চিনি উৎপাদন ও সরবরাহে কিভাবে আমরা কতটুকু সাফল্য পেতে পারি।
চাল, গম, ডাল, ভোজ্যতেল এবং চিনি নিয়ে ইতোমধ্যে যা বলা হয়েছে, ঠিক এগুলো যদি সঠিকভাবে সময়মতো কাজে লাগানো যায়, তাহলে তা অবলম্বন করে সহসাই লাগাম টানা যাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বর্তমান বাজার পরিস্থিতির ওপর।
এ কাজে কতদিনে ইপ্সিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব- সে কথা বোধহয় নিশ্চিত করে বলার সুযোগ আসেনি। সাফল্য ও ব্যর্থতা, উভয়ের সম্ভাবনা আছে। তবে হেরে গেলে ছেড়ে দেব, তেমন ভাবনার অবকাশ নেই। একবার এক জায়গায় হেরে গেলে সাফল্যের লক্ষ্যে আবারো অগ্রসর হতে হবে নতুন চিন্তা এবং নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে। আজকাল গার্মেন্টস থেকে পর্যাপ্ত অর্থ আসছে, প্রবাসী শ্রমিকরা শত কষ্ট করে হলেও দেশে উপার্জিত আয় পাঠাতে উদগ্রীব। অন্যান্য খাতেও বাড়ছে উৎপাদন। এ সমস্ত আয়ের সিংহভাগ যদি খাদ্য-পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়ে যায় তাহলে তা বয়ে আনবে দুর্ভাগ্য। যত দ্রুত সম্ভব, খাদ্য-পণ্য আমদানি সংকুচিত করে আনতে হবে, বাড়াতে হবে দেশীয় উৎপাদন। নগর-শহরগুলোতে আকাশচুম্বি অবকাঠামো নির্মাণ উন্নয়নের চমক। তবে সবাই নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন- মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে যদি যত্নবান হওয়া না যায় এবং স্থানীয়ভাবে ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য-পণ্যের চাহিদা পূরণ না করা যায় তাহলে সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ব্যর্থ হতে পারে।
[লেখক : সাবেক ব্যাংকার]
মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩ , ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ০৫ রমজান ১৪৪৪
এ এ জাফর ইকবাল
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তার আগের করোনা সংকট তৃতীয় বিশ্বের খাদ্য-ঘাটতির দেশগুলোকে জানান দিয়ে গেছে কত প্রকট এ সংকট। আমরাও এর ভুক্তভোগী। এখন প্রয়োজন এই সংকট নিরসনে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ।
চাল-গমের পাশাপাশি ভোজ্যতেল, চিনি এবং ডাল প্রয়োজনমতো উৎপাদন করতে পারছি না আমরা। দীর্ঘদিনের সংকট এটা। একাধিক কারণে খাদ্যপণ্যের ঘাটতিতে রয়েছি। এর প্রত্যেকটি নিয়ে পরিপূর্ণ আলোচনা এবং সংকট নিরসনে সরকার ও ভোক্তাসহ সবাই জনসাধারণের সজাগ হয়ে ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে হবে। স্বাধীনতার সময় দেশে চালের ঘাটতি ছিল। গত ৫০ বছরে সামান্যমাত্র জমি বৃদ্ধি পেয়েছে আবাদে। সাড়ে সাত কোটি লোকের দেশে এখন জনসংখ্যা পৌঁছেছে ১৬ কোটিরও বেশি। বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদরা এক ফসলি জমিকে দুই-তিন ফসল এবং একরপ্রতি উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধিতে আন্তরিকতার সঙ্গেই কাজ করেছেন। তারপরও সংকট মোচন হয়নি। ধান উৎপাদনে সবাই সাফল্য কাজে লাগিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখলেও ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না। কারণ ঘাটতি পূরণে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ানোর তেমন কোন সুযোগ নেই। তবে বিকল্প পথে চালের ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা চালানোর সুযোগ আছে।
উদরপূর্তিতে পারলে দৈনিক তিনবেলা ভাত খাওয়ার যে অভ্যাস তার পরিবর্তন আনতে হবে। যেতে হবে বিকল্প খাবারে। ধনী-দরিদ্র সবার জন্যই ভাতের বিকল্প বেছে নিতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে পছন্দ-অপছন্দকে বিবেচনায় নিয়ে। ভাতবিহীন খাবার-বৈচিত্র্যে এটা সম্ভব। প্রয়োজনও আছে এবং ভিন্ন ভিন্নভাবে সাধারণ মানুষ আপন আপন সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়েছেন ইতোমধ্যেই।
ঢাকা শহরের গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ব্যস্ততম সড়কে কেউ হেঁটে গেলে দেখতে পাবেন অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান যেখানে বিক্রি হচ্ছে গরম দুধ, সিদ্ধ ডিম, বনরুটি এবং কলা। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এ খাবারে আগ্রহী না হলেও রিকশাচালক, ভ্যানগাড়িচালক এবং এ ধরনের কায়িকশ্রম বিনিয়োগকারী মানুষ কিনে খাচ্ছে এগুলো। খাঁটি দুধ না হলেও এতে রয়েছে পরিমিত প্রোটিনের সরবরাহ। মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকায় একবেলার পরিপূর্ণ খাবার পাওয়াও যাচ্ছে খুবই সহজে খাওয়াও যাচ্ছে ঝটপট। কায়িক শ্রম দেয়া এই মানুষগুলো ধরেই নিয়েছে ভাতের চেয়ে এ খাবার উপাদেয়। এ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে শহর থেকে গ্রামে, ব্যস্ততম রাজপথ থেকে জমির আইলে আইলে।
ইউরোপজুড়ে মানুষের ভাত খেতে আগ্রহ নেই। তারা অভ্যস্ত গোলআলু থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন খাবারে। এক কেজি গোল আলু যে দামে বিক্রি হয়, তা এখনো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। তাছাড়া আলু-উৎপাদক দেশ হিসেবে আমাদের রয়েছে সাফল্যের অহংকার। বছরের সব সময় দেশের সর্বত্র গোল আলু পাওয়া যায়। সুতরাং ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর ব্যবহার এখনি উপযুক্ত সময়।
আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগেই বাংলাদেশে একজন উদ্যান তত্ত্ববিদ, নাম কামাল উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে কর্মরত থাকা অবস্থায় আলুর খাবার জনপ্রিয় করার জন্য একাধিক্রমে প্রায় দশ বছর আলুর খাবারের প্রদর্শনী করে গেছেন এবং চাষিরা যাতে আলু উৎপাদনে অধিক আগ্রহী হয়, সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনশীল এবং রোগ-বালাই সহনীয় আলুবীজ আমদানির পথ তৈরি করে গেছেন।
পেরুর রাজধানী লিমায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্র আলু উৎপাদন এগিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করেছে। সেই সময় আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি ভারতীয় বিশিষ্ট কৃষিবিদ ড. হরি কিশোর হর-হামেশাই বাংলাদেশে আসতেন এবং প্রান্তিক পর্যায়ের আলু উৎপাদকদের সাথে মত-বিনিময় করতেন। ফলশ্রুতিতে আলু উৎপাদনে এসেছে সফলতা। আমরা নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছি, একইসাথে সুযোগ তৈরি হয়েছে আলু রফতানীর। সময়ের সাথে এই রফতানি বাড়বেই। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে ভাতের পরিবর্তে আলুর তৈরি খাবার গ্রহণে।
আশার বিষয়, স্থানীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কর্মে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসেছেন। বাজারজাত হচ্ছে আলুর চিপস, ফ্রেন্স ফ্রাইয়ের মতো প্রায় ছয় থেকে সাত ধরনের খাবার। পাশাপাশি উন্নত শিল্পায়িত দেশ থেকেও আসছে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত আলুর খাবার। ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ভোক্তা বা গ্রাহক যখন আলুর তৈরি খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে তখনই এর প্রভাব পড়তে শুরু হবে ভাতের ওপর।
করোনা সংকট আমাদের বাধ্য করেছে মাছ-মাংসের পরিবর্তে শাক-সব্জির প্রতি আগ্রহী হতে। গ্রাম-শহর উভয় জনপদেই শাক-সব্জি খাওয়ার আগ্রহ বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। পুঁইশাক, লালশাক বছরের সব সময়েই পাওয়া যায়। পালংশাক, ডাটাশাক, কচুশাক, পাটশাক এবং কলমিশাক মৌসুমে যথেষ্ট জনপ্রিয়। সর্বত্র সবাই সমাজের মানুষরাই আগের তুলনায় অনেক বেশি শাক-সব্জি খেতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এটাও ভাতের ওপর চাপ কমাতে একটা উদ্যোগ। ভাতের সঙ্গেই আমরা শাক-সব্জি খাই এবং ভাত খাওয়া পরিমাণ কমিয়ে শাক-সব্জিতে তা পূরণ করি। এতে স্বাস্থ্যসেবার পথ সুগম হচ্ছে, পাশাপাশি চালের ওপর চাপ কমছে।
গম উৎপাদনে আমরা পেঁৗছাতে পারিনি অভীষ্ট লক্ষ্যে। ৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় দেশের প্রখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী ড. কাজী এম বদরোদ্দোজার আন্তরিক চেষ্টায় বাংলাদেশ কৃষ্টি গবেষণা ইনস্টিটিউটের যশোরের খয়েরতলা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রকে গম গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছিল। অনেক কৃষিবিজ্ঞানী কঠোর পরিশ্রম করেছেন গম উৎপাদন সম্প্রসারিত করতে। সবুজ বিপ্লবে সাফল্য অর্জনকারী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. নরম্যান-ই বোরলগ মেক্সিকোর আন্তর্জাতিক গম গবেষণা কেন্দ্রের তৎকালীন মহাপরিচালক হিসেবে একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন গম গবেষণা সম্প্রসারণে আমাদের সহযোগিতা করতে। গম উৎপাদন বেড়েছে কিন্তু ইপ্সিত মাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, কারণ, কৃষক গমের জমিতে অন্য ফসল চাষ করে অধিক মুনাফা পায় বলে তারা এ ফসলটি আবাদে প্রত্যাশিত সাফল্য দেখাতে পারেনি। তারপরও এটি অব্যাহত রাখতে হবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় খাদ্য হিসেবে।
ধান ও গমের পর খাদ্যতালিকায় আসে তৈলবীজ। সরিষা ও তিল আবাদে আমাদের সাফল্য গত ৫০ বছরে প্রয়োজনীয় সুফল বয়ে আনতে পারেনি। সয়াবিন ও পামঅয়েল উৎপাদনকারী দেশগুলো ভোজ্যতেলের বাজার দখল করে নিয়েছে। প্রয়োজনেই আমরা বাধ্য হচ্ছি ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানিতে। দেশের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি আমদানি করতে হয়। এটারও লাগাম টানা প্রয়োজন। আশার বিষয়, চালের কুড়া থেকে উৎপাদিত রাইস ব্রায়ান অয়েল দাপটের সাথেই যাত্রা শুরু করেছে। ৬-৭টি মিল ইতোমধ্যেই উৎপাদনে এসেছে। দাম সয়াবিন এবং পাম অয়েলের চাইতে কিছুটা বেশি। বাঁশকোটা গন্ধ দূর হয়নি। এ তেল সবাই জায়গায় পাওয়া যায় না বলে এই তেল পর্যাপ্ত ক্রেতা-বান্ধব হতে পারেনি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের যথার্থ উদ্যোগ নেয়া খুবই জরুরি। রাইস ব্রায়ান অয়েলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথেই কমবে সয়াবিন ও পাম তেলের কদর। চাল আমদানির পরিবর্তে যদি ধান আমদানিতে সক্ষম হই তাহলে ভোজ্য তেলের বাজারে অবধারিতভাবেই আসবে নতুন মাত্রা। কুড়া আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শুধু তেল উৎপাদনেই নয়, একইসাথে গবাদিপশুর খাবার, মাছের খাবার এবং হাঁস-মুরগির খাবার তৈরিতে সহায়ক। এ ছাড়াও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় চালের চাইতে ধান রাখার সুযোগ বেশি।
অনেক ডাল বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে। চাহিদা কিন্তু কমেনি। এই চাহিদা কেন্দ্রীভূত হয়েছে মসুরি, মুগ, মাসকালাই এবং খেসারির ডালে। চাহিদার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি আমদানী করতে হচ্ছে। কৃষি-বিজ্ঞানীরা সব মৌসুমে মুগ, মাসকালাই উৎপাদনসহ উন্নত অধিক উৎপাদনশীল অনেক নতুন নতুন জাত আবিস্কার ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্প্রসারণে সাফল্য অর্জন করলেও আমরা প্রয়োজনীয় লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারিনি। এক্ষেত্রে সুযোগও সীমিত। তারপরও সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে ডাল উৎপাদনের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হবে। অড়হরের মতো ডাল উৎপাদনে অধিক আগ্রহী হতে হবে, যাতে করে উৎপাদিত ডাল দিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি জ্বালানি সংকট নিরসনে নতুন পথের সূচনা হয়। অড়হরের ডাল ছাড়া অন্য কোন ডাল ফসলের সাথে আমরা পরিচিত নই। আফ্রিকায় এবং দক্ষিণ আমেরিকায় অড়হরের মতো একই ধরনের খাটো বৃক্ষজাতীয় জাতের ডাল উৎপাদনকারী ফসল রয়েছে। এই ডালগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা যায়।
খোসামুুক্ত ডাল আমদানির পরিবর্তে খোসাযুক্ত ডাল আমদানিতে অধিক আগ্রহী হতে হবে যাতেকরে মানুষের প্রয়োজনের পাশাপাশি ডালের ভুষি দিয়ে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরির সহায়তা পাওয়া যায়।
চিনিও আমদানি হচ্ছে। দেশেও তা উৎপাদন হয়। দেশীয় উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কৃষকের দৃষ্টিতে, ফসল হিসেবে আখ মোটেই আবাদ-বান্ধব নয়। সরকারি মালিকানাধীন চিনিকলগুলোর ব্যবস্থাপনা দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভোগান্তিতে ফেলেছে মানুষকে। চিনিকলগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। একইসাথে চিনিকলগুলোর উৎপাদন-প্রক্রিয়া আরো আধুনিক ও সময়োপযোগী করতে হবে; যাতে উৎপাদন ব্যয় কমে আসে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- ঈশ্বরদীতে অবস্থিত একমাত্র আখ গবেষণা কেন্দ্রটির নাম পরিবর্তন করে চিনি উৎপাদনকারী সব ফসলের নামের সাথে সংযুক্ত করে তাতে খেজুর, তাল এবং বিটের মতো ফসল দিয়েও কাজ শুরু হয়েছে। এখন বৈজ্ঞানিকদের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে চিনি উৎপাদন ও সরবরাহে কিভাবে আমরা কতটুকু সাফল্য পেতে পারি।
চাল, গম, ডাল, ভোজ্যতেল এবং চিনি নিয়ে ইতোমধ্যে যা বলা হয়েছে, ঠিক এগুলো যদি সঠিকভাবে সময়মতো কাজে লাগানো যায়, তাহলে তা অবলম্বন করে সহসাই লাগাম টানা যাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বর্তমান বাজার পরিস্থিতির ওপর।
এ কাজে কতদিনে ইপ্সিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব- সে কথা বোধহয় নিশ্চিত করে বলার সুযোগ আসেনি। সাফল্য ও ব্যর্থতা, উভয়ের সম্ভাবনা আছে। তবে হেরে গেলে ছেড়ে দেব, তেমন ভাবনার অবকাশ নেই। একবার এক জায়গায় হেরে গেলে সাফল্যের লক্ষ্যে আবারো অগ্রসর হতে হবে নতুন চিন্তা এবং নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে। আজকাল গার্মেন্টস থেকে পর্যাপ্ত অর্থ আসছে, প্রবাসী শ্রমিকরা শত কষ্ট করে হলেও দেশে উপার্জিত আয় পাঠাতে উদগ্রীব। অন্যান্য খাতেও বাড়ছে উৎপাদন। এ সমস্ত আয়ের সিংহভাগ যদি খাদ্য-পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়ে যায় তাহলে তা বয়ে আনবে দুর্ভাগ্য। যত দ্রুত সম্ভব, খাদ্য-পণ্য আমদানি সংকুচিত করে আনতে হবে, বাড়াতে হবে দেশীয় উৎপাদন। নগর-শহরগুলোতে আকাশচুম্বি অবকাঠামো নির্মাণ উন্নয়নের চমক। তবে সবাই নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন- মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে যদি যত্নবান হওয়া না যায় এবং স্থানীয়ভাবে ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য-পণ্যের চাহিদা পূরণ না করা যায় তাহলে সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ব্যর্থ হতে পারে।
[লেখক : সাবেক ব্যাংকার]