নাজিরপুরের হাটবাজার চায়না জালে সয়লাব, প্রশাসন নীরব

পিরোজপুরের নাজিরপুরে অবৈধ কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারি জাল, ভেসাল জাল এবং সুতি জালে সয়লাব হাটবাজার। মৎস্য প্রজনন মৌসুমকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবীদের কাছে জনপ্রিয় চীন থেকে আমদানিকৃত চায়না দুয়ারি জাল বিক্রির উৎসবে মেতেছে হাটবাজারের অসাধু ব্যবসায়ীরা। অবৈধ এসব জাল বিক্রি এবং ব্যবহারে কঠোর আইন থাকলেও প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতনমহল। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলার বৈঠাকাটা, গাওখালি, দিঘিরজান ও শ্রীরামকাঠি বাজারে স্থানীয় কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রশাসন ম্যানেজ করে এসব জাল গোডাউনে গুদামজাত করে বিক্রি করছে। পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে বাজারের দিনগুলোতে পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকেও জাল বিক্রি করতে আসেন ভাসমান জাল ব্যবসায়ীরা। তারা বিভিন্ন দোকানের সামনে প্রকাশ্যে অবৈধ এসব জাল পশরা সাজিয়ে বিক্রি করেন। ফলে মৎস্যজীবীদের উপজেলা সীমানায় বয়ে চলা সন্ধা, বেলুয়া, বলেশ্বর, কালিগঙ্গা নদীসহ অসংখ্য খাল-বিলে এসব জাল ব্যবহার করে ছোট-বড় সব ধরনের বিলুপ্তপ্রায় মাছসহ বিপন্ন প্রজাতির কাছিম, কুইচ্চা, কাঁকড়া ধরার ধুম পড়েছে। এসব জাল বিক্রি এবং ব্যবহার বন্ধ নাহলে দেশীয় মাছের বংশ নির্বংশ হওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা করছে খোদ জেলে সম্প্রদায় এবং সচেতনমহল। তবুও স্থানীয় হাটবাজারে এ জাল বিক্রি হচ্ছে হরহামেশা।

এ বিষয়ে বৈঠাকাটা বাজারের ভাসমান জাল ব্যবসায়ী সহিদ জানান,আমি পাশের উপজেলা থেকে ৮-১০ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার এই বাজারে জাল বিক্রি করতে আসি। আমার মতো আরও অনেকে এখানে জাল বেচাকেনা করে। অবৈধ এসব জাল কিভাবে প্রকাশ্যে বিক্রি করেন জানতে চাইলে তিনি (সহিদ) বলেন, সব কথা তো বলা যায় না। একটু এদিক সেদিক ম্যানেজ করতে হয়। প্রতি হাটে আমাদের ৫০-১০০ টাকা দিতে হয়।

বৈঠাকাটা বাজারের অপর জাল ব্যবসায়ী কাইউম জানান, আমি দেশীয় তৈরি বিভিন্ন জাল বিক্রি করি। এগুলো দিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন সবজি মাচা তৈরি করে আবার কেউ কেউ ঘেরের মাছ সংরক্ষণ করে। এ জালগুলো নদীতে বা খাল-বিলে তারা পাতে কিনা আমি জানিনা। এ সময় তার জাল রাখা গোডাউনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন অল্প কিছু চায়না দুয়ারি জাল গোডাউনে আছে এগুলো বিক্রি করতে আমার মাস খানেক সময় লাগবে। এরপরে আমি আর এ ধরনের অবৈধ জাল বিক্রি করব না। উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের মৎস্যজীবী মো. লোকমান সিকদার জানান, চায়না জাল ফাঁকি দিয়ে মাছ তো দূরের কথা, মাছের ডিম, পানির পোকাও যেতে পারে না। চায়না জাল নদীতে আসার পর থেকে মাছের পরিমাণ কমছে। এই জাল যদি বিক্রি এবং ব্যবহার বন্ধ করা নাহয় তাহলে ভবিষ্যতে পানিতে মাছ থাকে তা কেউ বিশ্বাস করবে না। বৈঠাকাটা তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ মো. আউয়াল কবির জানান, অবৈধ এসব জাল বাজারে বিক্রির কোন সুযোগ নেই। এসব জাল বিক্রি বন্ধে আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করছি এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম মণ্ডল জানান, অবৈধ জাল বেচাকেনা বন্ধে আমরা নিয়মিত উপজেলার প্রতিটি বাজারে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। এরপরেও যদি বাজারে কোন ব্যবসায়ী এসব জাল বিক্রি করে থাকে সঠিক তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

রবিবার, ১৪ মে ২০২৩ , ৩১ বৈশাখ ১৪৩০, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৪

নাজিরপুরের হাটবাজার চায়না জালে সয়লাব, প্রশাসন নীরব

প্রতিনিধি, নাজিরপুর (পিরোজপুর)

image

নাজিরপুর (পিরোজপুর) : নিষিদ্ধ চায়না জাল নদীতে ফেলার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জেলেরা -সংবাদ

পিরোজপুরের নাজিরপুরে অবৈধ কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারি জাল, ভেসাল জাল এবং সুতি জালে সয়লাব হাটবাজার। মৎস্য প্রজনন মৌসুমকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবীদের কাছে জনপ্রিয় চীন থেকে আমদানিকৃত চায়না দুয়ারি জাল বিক্রির উৎসবে মেতেছে হাটবাজারের অসাধু ব্যবসায়ীরা। অবৈধ এসব জাল বিক্রি এবং ব্যবহারে কঠোর আইন থাকলেও প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতনমহল। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলার বৈঠাকাটা, গাওখালি, দিঘিরজান ও শ্রীরামকাঠি বাজারে স্থানীয় কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রশাসন ম্যানেজ করে এসব জাল গোডাউনে গুদামজাত করে বিক্রি করছে। পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে বাজারের দিনগুলোতে পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকেও জাল বিক্রি করতে আসেন ভাসমান জাল ব্যবসায়ীরা। তারা বিভিন্ন দোকানের সামনে প্রকাশ্যে অবৈধ এসব জাল পশরা সাজিয়ে বিক্রি করেন। ফলে মৎস্যজীবীদের উপজেলা সীমানায় বয়ে চলা সন্ধা, বেলুয়া, বলেশ্বর, কালিগঙ্গা নদীসহ অসংখ্য খাল-বিলে এসব জাল ব্যবহার করে ছোট-বড় সব ধরনের বিলুপ্তপ্রায় মাছসহ বিপন্ন প্রজাতির কাছিম, কুইচ্চা, কাঁকড়া ধরার ধুম পড়েছে। এসব জাল বিক্রি এবং ব্যবহার বন্ধ নাহলে দেশীয় মাছের বংশ নির্বংশ হওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা করছে খোদ জেলে সম্প্রদায় এবং সচেতনমহল। তবুও স্থানীয় হাটবাজারে এ জাল বিক্রি হচ্ছে হরহামেশা।

এ বিষয়ে বৈঠাকাটা বাজারের ভাসমান জাল ব্যবসায়ী সহিদ জানান,আমি পাশের উপজেলা থেকে ৮-১০ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার এই বাজারে জাল বিক্রি করতে আসি। আমার মতো আরও অনেকে এখানে জাল বেচাকেনা করে। অবৈধ এসব জাল কিভাবে প্রকাশ্যে বিক্রি করেন জানতে চাইলে তিনি (সহিদ) বলেন, সব কথা তো বলা যায় না। একটু এদিক সেদিক ম্যানেজ করতে হয়। প্রতি হাটে আমাদের ৫০-১০০ টাকা দিতে হয়।

বৈঠাকাটা বাজারের অপর জাল ব্যবসায়ী কাইউম জানান, আমি দেশীয় তৈরি বিভিন্ন জাল বিক্রি করি। এগুলো দিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন সবজি মাচা তৈরি করে আবার কেউ কেউ ঘেরের মাছ সংরক্ষণ করে। এ জালগুলো নদীতে বা খাল-বিলে তারা পাতে কিনা আমি জানিনা। এ সময় তার জাল রাখা গোডাউনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন অল্প কিছু চায়না দুয়ারি জাল গোডাউনে আছে এগুলো বিক্রি করতে আমার মাস খানেক সময় লাগবে। এরপরে আমি আর এ ধরনের অবৈধ জাল বিক্রি করব না। উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের মৎস্যজীবী মো. লোকমান সিকদার জানান, চায়না জাল ফাঁকি দিয়ে মাছ তো দূরের কথা, মাছের ডিম, পানির পোকাও যেতে পারে না। চায়না জাল নদীতে আসার পর থেকে মাছের পরিমাণ কমছে। এই জাল যদি বিক্রি এবং ব্যবহার বন্ধ করা নাহয় তাহলে ভবিষ্যতে পানিতে মাছ থাকে তা কেউ বিশ্বাস করবে না। বৈঠাকাটা তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ মো. আউয়াল কবির জানান, অবৈধ এসব জাল বাজারে বিক্রির কোন সুযোগ নেই। এসব জাল বিক্রি বন্ধে আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করছি এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম মণ্ডল জানান, অবৈধ জাল বেচাকেনা বন্ধে আমরা নিয়মিত উপজেলার প্রতিটি বাজারে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। এরপরেও যদি বাজারে কোন ব্যবসায়ী এসব জাল বিক্রি করে থাকে সঠিক তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।