‘অনিয়ম’ ও ‘দুর্নীতিতে’ স্থবির ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

‘অনিয়ম’ ও ‘দুর্নীতিতে’ স্থবির ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। দায় নিচ্ছেন না কেউ। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন। কিন্তু কাজ বন্ধ থাকায় বেকায়দায় পরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। কারণ শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ-সবই ব্যাহত হচ্ছে। ওইসব কাজের জন্য কোন ‘দরপত্র’ আহ্বান করা হয়নি বলে ইইডি প্রধান প্রকৌশলীই অভিযোগ করেছেন। তার দাবি, ঢাকায় নির্মাণ কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে না।

জানা গেছে, ঢাকার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ ও পুরোনো অবকাঠামো সংস্কারের জন্য বিশেষ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অংকের টাকা অগ্রিম দেয়া হয়েছিল। দুই-আড়াই বছর আগে আগাম বিল দেয়া হলেও এ পর্যন্ত ৫৫ কোটি টাকার কাজ হয়নি বলে ইইডি কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন।

এ নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) ঢাকা মেট্রো অফিসের সাবেক ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরোধ তুঙ্গে। তারা একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। কিন্তু নির্মাণ কাজের কোন অগ্রগতি নেই। সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারাও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। তারা ‘কৌশলে’ নীচের স্তরের প্রকৌশলীদের দায়ী করছেন।

তবে নির্বাহী প্রকৌশলীকে ‘কৌশলে’ বাদ দিয়ে নিচের স্তরের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে (দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ) ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেট্রো জোন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন আবুল কালাম মো. আখতারুজ্জামান। তাকে ২০২১ সালের অক্টোবরে রংপুর জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

এর পর ঢাকা মেট্রোর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে আসেন হাসান শওকত। তিনি ঝুলে থাকা বিভিন্ন কাজের জন্য আখতারুজ্জামানকে দায়ী করে সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীর কাছে বেশ কয়েকটি অভিযোগপত্র দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম মো. আখতারুজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘একজন ঠিকাদার মারা যাওয়ায় কয়েকটি কাজে সমস্যা হয়েছিল। আমি এ বিষয়ে এখন আর কথা বলতে চাই না। আমাকে কর্তৃপক্ষ ডাকলে আমি ব্যাখ্যা দেবো। কারণ আমি একা সব দোষ করিনি।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকতের সঙ্গে একাধিকবার সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি তা ধরেননি। এখন তার দপ্তরের বিরুদ্ধে খোদ প্রধান প্রকৌশলীই দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন।

দরপত্র আহ্বান ছাড়াই কাজ

প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ‘অনিয়ম ও দুর্নীতিতে’ জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে গত ১০ মে ইইডির ঢাকা মেট্রো’র নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকতকে একটি নির্দেশনাপত্র দেন।

‘দরপত্র আহ্বান ব্যতীত মেরামত ও সংস্কার কাজ সম্পাদন’ শীর্ষক নির্দেশনাপত্রে বলা হয়, ‘অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও সংস্কার কাজ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কতিপয় প্রকৌশলীর সহযোগিতায় দরপত্র আহ্বান ব্যতীত সম্পাদন করা হচ্ছে। এতে দরপত্র আহ্বানের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার বিষয়টি প্রতিপালন হচ্ছে না।’

এ ধরণের প্রক্রিয়া দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে মন্তব্য করে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে না। নির্মাণ কাজ বা মেরামত ও সংস্কার কাজ বাস্তবায়নের বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও প্রতিপালন না হওয়ায় সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হওয়া, মেরামত ও সংস্কার কাজের গুণগতমান বজায় রাখা, প্রতিষ্ঠানের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হওয়াসহ নানাবিধ অনিয়মের সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং সংবিধিবদ্ধ নীতির পরিপন্থি।’

নির্দেশনাপত্রে বলা হয়, ‘এ ধরণের অবৈধ কর্মকাণ্ড হতে বিরত থাকার জন্য মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী ও সহকারী প্রকৌশলীরাসহ তাকে (নির্বাহী প্রকৌশলী) নির্দেশ প্রদান করা হলো। যে সমস্ত প্রকৌশলী এ সব দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের নাম লিখিতভাবে অত্র কার্যালয়কে অবহিত করার জন্যও তাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

ইইডির ঢাকা মেট্রোর ‘পরিচালন বাজেটের আওতায়’ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মেরামত ও সংস্কারের নামেই অনিয়ম ও দুর্নীতি বেশি হয়েছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকা মেট্রো কার্যালয়কে দেয়া চিঠিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ঢাকা মেট্রো নির্বাহী প্রকৌশলীর কর্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালন বাজেটের আওতায় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস (বিআইজিসি), টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ^বিদ্যালয় (বুটেক্স), আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, ইইডির প্রধান কার্যালয়, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজসহ সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের নানাবিধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেরামত, সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ করা হয়ে থাকে। এ সব কাজ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ঢাকা মেট্রোর মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়ে থাকে বলে প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন।

অগ্রিম বিল দেয়ার পরও নায়েমে কাজ বন্ধ

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২০১৯ সালের ৩ জুলাই নায়েমের একটি প্রশাসনিক ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ (৮, ৯ ও ১০ তলা নির্মাণ) কাজ উদ্বোধন করেন। এই কাজ দেয়া হয় ‘মেসার্স শফিক এন্টারপ্রাইজকে’। প্রতিষ্ঠানটি ১০ তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই করেছে। এরপর প্রতিষ্ঠানটির মালিক শফিকুল ইসলাম মারা যান। এতে দেয়াল নির্মাণসহ অন্য সব কাজ ঝুলে যায়।

কাজ না হলেও পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আরও প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা অগ্রিম দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার ঠিকাদারকে অগ্রিম বিল পরিশোধের বিষয়ে নায়েম কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানায়নি ইইডি। ইইডির নিজস্ব তহবিল থেকে এই কাজ হওয়ায় অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে নায়েম কর্তৃপক্ষ কিছু জানতেও পারছে না।

নায়েমের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুল করিম সংবাদকে বলেন, ২০২১ সালের মার্চ থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। তারা ঠিকাদার ও ইইডির ঢাকা মেট্রোর প্রকৌশলীদের বারবার তাগাদা দিচ্ছেন; কিন্তু কাজ শুরু হচ্ছে না।

নায়েমের কাজ দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ইইডির ঢাকা মেট্রোর সহকারি প্রকৌশলী সারোয়ার আহমেদ। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমি ঢাকা মেট্রোতে যোগদানের আগে থেকেই এ কাজ বন্ধ রয়েছে। বিল অগ্রিম দেয়া হয়েছে কি-না আমি বলতে পারব না। তবে আমি আসার পর এ কাজের জন্য কোন বিল দেয়া হয়নি।’

ঢাকা কলেজেও একটি দশতলা ভবনের ‘লিফ্ট স্থাপন, দেওয়াল ঢালাইসহ বিভিন্ন কাজ অসম্পন্ন রেখেই ফেলে রাখা হয়েছে বলে অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউসুফ সংবাদকে জানিয়েছেন। এই কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের দায়িত্বেও আছেন সারোয়ার আহমেদ।

সারোয়ার আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা কলেজে কোন কাজই বাকি নেই। শতভাগ কমপ্লিট।’

জানা গেছে, সম্প্রতি শিক্ষা প্রশসনের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন ইইডির ঢাকা মেট্রো অফিসের এক প্রকৌশলী। এরপর প্রধান প্রকৌশলীর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। তার সঙ্গে মাউশি মহাপরিচালকের তর্ক-বিতর্ক হয় মন্ত্রণালয়ের এক সভায়। আর ঢাকা মেট্রোর বর্তমান প্রকৌশলীও ওইসব কাজের জন্য সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়ী করছেন।

জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘নায়েমসহ আরও কয়েকটি কাজের দায়িত্বে ছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শফিক এন্টারপ্রাইজ। এর মালিক শফিকুল ইসলাম মারা যাওয়ায় কাজগুলি বন্ধ হয়ে যায়। আমি প্রকৌশলীদের বলে দিয়েছি-কাজগুলি বাতিল করে (পুনঃদরপত্র আহ্বান) দেয়ার জন্য।’

ঠিকাদারদের সুবিধায় ইচ্ছেমত কাজের প্রাক্কলন তৈরি

ইইডির ঢাকা মেট্রো’র উপসহকারি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি) কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করে প্রাক্কলত’ প্রস্তুত করার অভিযোগ করেছেন একই জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত।

গত ১২ এপ্রিল প্রধান প্রকৌশলীকে দেয়া এক চিঠিতে হাসান শওকত বলেন, ‘সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যার্থে জানানো যাচ্ছে যে, সূত্রোস্থ পত্রে উল্লেখিত প্রাক্কলন দুটি প্রস্তুত করেন উক্ত সময়ে ইইডির ঢাকা মেট্রোর আওতাধীন নিউ মার্কেট থানায় অতিরিক্ত দায়িত্বে কর্মরত উপসহকারি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান। তার মূল কর্মস্থল ইইডির ঢাকা মেট্রোর আওতাধীন তেজগাঁও থানা।’

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোর এক প্রকৌশলী বলেন, ঢাকা টিটিসিতে সংস্কারমূলক কিছু কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু এজন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর মতামত না নিয়েই ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে ‘ইচ্ছেমত’ ব্যয় দেখিয়ে প্রাক্কলন প্রস্তুত করেন হাফিজুর রহমান।

ওয়ার্ক সার্টিফিকেট দিয়ে পরে বাতিল

ইইডির ঢাকা মেট্রো কার্র্যালয় থেকে সম্প্রতি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ‘ওয়ার্ক সার্টিফিকেট’ বা ভালো কাজের সনদ দেয়া হয়। অথচ নির্মাণ কাজে জালিয়াতির অভিযোগে একই কার্যালয় থেকে ওই প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রতি আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। পরে একটি মহলের চাপের মুখে ওই কাজের সনদ বাতিল করে অফিস আদেশ জারি করে ঢাকা মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

গত ১০ এপ্রিল নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে, অত্র দপ্তর অসাবধানতাবশত মেসার্স মিরন এন্টারপ্রাইজ, ৩/এ দক্ষিণ কল্যাণপুর, দারুস সালাম, মিরপুর, ঢাকা বরাবর জারিকৃত ওয়ার্ক সার্টিফিকেট, ৩১/০১/২০২৩ সঠিক নয় বিধায় বিলম্বে ত্রুটি গোচরিভুক্ত হওয়ায় সার্টিফিকেট বাতিল করা হলো।’

বাঙলা কলেজে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে পাথরের পরিবর্তে ইটের ঢালাই

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজে পাথরের পরিবর্তে ইটের ঢালাই দিয়ে ‘বাউন্ডারি ওয়াল’ বা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। দুই দফা দরপত্রে প্রায় চার কোটি টাকায় ‘বাউন্ডারি ওয়াল’ নির্মাণ করা হয়েছে। পাথরের পরিবর্তে ইট দিয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করায় সরকারের অন্তত দুই কোটি টাকা গচ্ছা গেছে বলে ইইডির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।

এ অনিয়মের সঙ্গে ইইডির ‘ঢাকা মেট্রো’ অফিসের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী হাসাত শওকত এবং তার আগের এ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মো. আজাদকে দায়ী করা হচ্ছে। তারা ঠিকাদারকে ‘পাথরের পরিবর্তে ইটের শুরকি’ দিয়ে দেয়াল নির্মাণের সুযোগ করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, বাঙলা কলেজে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ হয়েছে তার প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার আগে। এজন্য তিনি বিষয়টি সর্ম্পকে বিস্তারিত বলতে পারছে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডির সাবেক একজন প্রধান প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, রাজধানীতে ইইডির সব নির্মাণ কাজ ঢাকা মেট্রোর অধীনে বাস্তবায়ন হয়। দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে সবকিছুই নির্বাহী প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। এসব কাজের বিল পরিশোধকারী অর্থাৎ ‘আয়ন-ব্যয়ন’ কর্মকর্তাও নির্বাহী প্রকৌশলী। এর নীচের স্তরের প্রকৌশলীরা শুধুমাত্র কাজ তদারকি করেন। এজন্য নির্বাহী প্রকৌশলী কোন কাজের দায়িত্বই এড়াতে পারেন না। আবার রাজধানীতে এতগুলো কাজে অনিয়ম হবে সেটি প্রধান প্রকৌশলী খোঁজ রাখবেন না তাও হতে পারে না বলে সাবেক ওই শীর্ষ প্রকৌশলী মনে করেন।

বুধবার, ১৭ মে ২০২৩ , ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৪

‘অনিয়ম’ ও ‘দুর্নীতিতে’ স্থবির ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

রাকিব উদ্দিন

‘অনিয়ম’ ও ‘দুর্নীতিতে’ স্থবির ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। দায় নিচ্ছেন না কেউ। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন। কিন্তু কাজ বন্ধ থাকায় বেকায়দায় পরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। কারণ শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ-সবই ব্যাহত হচ্ছে। ওইসব কাজের জন্য কোন ‘দরপত্র’ আহ্বান করা হয়নি বলে ইইডি প্রধান প্রকৌশলীই অভিযোগ করেছেন। তার দাবি, ঢাকায় নির্মাণ কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে না।

জানা গেছে, ঢাকার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ ও পুরোনো অবকাঠামো সংস্কারের জন্য বিশেষ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অংকের টাকা অগ্রিম দেয়া হয়েছিল। দুই-আড়াই বছর আগে আগাম বিল দেয়া হলেও এ পর্যন্ত ৫৫ কোটি টাকার কাজ হয়নি বলে ইইডি কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন।

এ নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) ঢাকা মেট্রো অফিসের সাবেক ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরোধ তুঙ্গে। তারা একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। কিন্তু নির্মাণ কাজের কোন অগ্রগতি নেই। সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারাও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। তারা ‘কৌশলে’ নীচের স্তরের প্রকৌশলীদের দায়ী করছেন।

তবে নির্বাহী প্রকৌশলীকে ‘কৌশলে’ বাদ দিয়ে নিচের স্তরের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে (দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ) ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেট্রো জোন অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন আবুল কালাম মো. আখতারুজ্জামান। তাকে ২০২১ সালের অক্টোবরে রংপুর জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

এর পর ঢাকা মেট্রোর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে আসেন হাসান শওকত। তিনি ঝুলে থাকা বিভিন্ন কাজের জন্য আখতারুজ্জামানকে দায়ী করে সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীর কাছে বেশ কয়েকটি অভিযোগপত্র দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম মো. আখতারুজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘একজন ঠিকাদার মারা যাওয়ায় কয়েকটি কাজে সমস্যা হয়েছিল। আমি এ বিষয়ে এখন আর কথা বলতে চাই না। আমাকে কর্তৃপক্ষ ডাকলে আমি ব্যাখ্যা দেবো। কারণ আমি একা সব দোষ করিনি।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকতের সঙ্গে একাধিকবার সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি তা ধরেননি। এখন তার দপ্তরের বিরুদ্ধে খোদ প্রধান প্রকৌশলীই দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন।

দরপত্র আহ্বান ছাড়াই কাজ

প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ‘অনিয়ম ও দুর্নীতিতে’ জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে গত ১০ মে ইইডির ঢাকা মেট্রো’র নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকতকে একটি নির্দেশনাপত্র দেন।

‘দরপত্র আহ্বান ব্যতীত মেরামত ও সংস্কার কাজ সম্পাদন’ শীর্ষক নির্দেশনাপত্রে বলা হয়, ‘অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও সংস্কার কাজ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কতিপয় প্রকৌশলীর সহযোগিতায় দরপত্র আহ্বান ব্যতীত সম্পাদন করা হচ্ছে। এতে দরপত্র আহ্বানের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার বিষয়টি প্রতিপালন হচ্ছে না।’

এ ধরণের প্রক্রিয়া দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে মন্তব্য করে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে না। নির্মাণ কাজ বা মেরামত ও সংস্কার কাজ বাস্তবায়নের বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও প্রতিপালন না হওয়ায় সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হওয়া, মেরামত ও সংস্কার কাজের গুণগতমান বজায় রাখা, প্রতিষ্ঠানের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হওয়াসহ নানাবিধ অনিয়মের সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং সংবিধিবদ্ধ নীতির পরিপন্থি।’

নির্দেশনাপত্রে বলা হয়, ‘এ ধরণের অবৈধ কর্মকাণ্ড হতে বিরত থাকার জন্য মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী ও সহকারী প্রকৌশলীরাসহ তাকে (নির্বাহী প্রকৌশলী) নির্দেশ প্রদান করা হলো। যে সমস্ত প্রকৌশলী এ সব দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের নাম লিখিতভাবে অত্র কার্যালয়কে অবহিত করার জন্যও তাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

ইইডির ঢাকা মেট্রোর ‘পরিচালন বাজেটের আওতায়’ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মেরামত ও সংস্কারের নামেই অনিয়ম ও দুর্নীতি বেশি হয়েছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকা মেট্রো কার্যালয়কে দেয়া চিঠিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ঢাকা মেট্রো নির্বাহী প্রকৌশলীর কর্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালন বাজেটের আওতায় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস (বিআইজিসি), টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ^বিদ্যালয় (বুটেক্স), আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, ইইডির প্রধান কার্যালয়, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজসহ সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের নানাবিধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেরামত, সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ করা হয়ে থাকে। এ সব কাজ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ঢাকা মেট্রোর মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়ে থাকে বলে প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন।

অগ্রিম বিল দেয়ার পরও নায়েমে কাজ বন্ধ

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২০১৯ সালের ৩ জুলাই নায়েমের একটি প্রশাসনিক ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ (৮, ৯ ও ১০ তলা নির্মাণ) কাজ উদ্বোধন করেন। এই কাজ দেয়া হয় ‘মেসার্স শফিক এন্টারপ্রাইজকে’। প্রতিষ্ঠানটি ১০ তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই করেছে। এরপর প্রতিষ্ঠানটির মালিক শফিকুল ইসলাম মারা যান। এতে দেয়াল নির্মাণসহ অন্য সব কাজ ঝুলে যায়।

কাজ না হলেও পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আরও প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা অগ্রিম দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার ঠিকাদারকে অগ্রিম বিল পরিশোধের বিষয়ে নায়েম কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানায়নি ইইডি। ইইডির নিজস্ব তহবিল থেকে এই কাজ হওয়ায় অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে নায়েম কর্তৃপক্ষ কিছু জানতেও পারছে না।

নায়েমের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুল করিম সংবাদকে বলেন, ২০২১ সালের মার্চ থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। তারা ঠিকাদার ও ইইডির ঢাকা মেট্রোর প্রকৌশলীদের বারবার তাগাদা দিচ্ছেন; কিন্তু কাজ শুরু হচ্ছে না।

নায়েমের কাজ দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ইইডির ঢাকা মেট্রোর সহকারি প্রকৌশলী সারোয়ার আহমেদ। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমি ঢাকা মেট্রোতে যোগদানের আগে থেকেই এ কাজ বন্ধ রয়েছে। বিল অগ্রিম দেয়া হয়েছে কি-না আমি বলতে পারব না। তবে আমি আসার পর এ কাজের জন্য কোন বিল দেয়া হয়নি।’

ঢাকা কলেজেও একটি দশতলা ভবনের ‘লিফ্ট স্থাপন, দেওয়াল ঢালাইসহ বিভিন্ন কাজ অসম্পন্ন রেখেই ফেলে রাখা হয়েছে বলে অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউসুফ সংবাদকে জানিয়েছেন। এই কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের দায়িত্বেও আছেন সারোয়ার আহমেদ।

সারোয়ার আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা কলেজে কোন কাজই বাকি নেই। শতভাগ কমপ্লিট।’

জানা গেছে, সম্প্রতি শিক্ষা প্রশসনের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন ইইডির ঢাকা মেট্রো অফিসের এক প্রকৌশলী। এরপর প্রধান প্রকৌশলীর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। তার সঙ্গে মাউশি মহাপরিচালকের তর্ক-বিতর্ক হয় মন্ত্রণালয়ের এক সভায়। আর ঢাকা মেট্রোর বর্তমান প্রকৌশলীও ওইসব কাজের জন্য সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়ী করছেন।

জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘নায়েমসহ আরও কয়েকটি কাজের দায়িত্বে ছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শফিক এন্টারপ্রাইজ। এর মালিক শফিকুল ইসলাম মারা যাওয়ায় কাজগুলি বন্ধ হয়ে যায়। আমি প্রকৌশলীদের বলে দিয়েছি-কাজগুলি বাতিল করে (পুনঃদরপত্র আহ্বান) দেয়ার জন্য।’

ঠিকাদারদের সুবিধায় ইচ্ছেমত কাজের প্রাক্কলন তৈরি

ইইডির ঢাকা মেট্রো’র উপসহকারি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ‘সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি) কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করে প্রাক্কলত’ প্রস্তুত করার অভিযোগ করেছেন একই জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত।

গত ১২ এপ্রিল প্রধান প্রকৌশলীকে দেয়া এক চিঠিতে হাসান শওকত বলেন, ‘সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যার্থে জানানো যাচ্ছে যে, সূত্রোস্থ পত্রে উল্লেখিত প্রাক্কলন দুটি প্রস্তুত করেন উক্ত সময়ে ইইডির ঢাকা মেট্রোর আওতাধীন নিউ মার্কেট থানায় অতিরিক্ত দায়িত্বে কর্মরত উপসহকারি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান। তার মূল কর্মস্থল ইইডির ঢাকা মেট্রোর আওতাধীন তেজগাঁও থানা।’

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোর এক প্রকৌশলী বলেন, ঢাকা টিটিসিতে সংস্কারমূলক কিছু কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু এজন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর মতামত না নিয়েই ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে ‘ইচ্ছেমত’ ব্যয় দেখিয়ে প্রাক্কলন প্রস্তুত করেন হাফিজুর রহমান।

ওয়ার্ক সার্টিফিকেট দিয়ে পরে বাতিল

ইইডির ঢাকা মেট্রো কার্র্যালয় থেকে সম্প্রতি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ‘ওয়ার্ক সার্টিফিকেট’ বা ভালো কাজের সনদ দেয়া হয়। অথচ নির্মাণ কাজে জালিয়াতির অভিযোগে একই কার্যালয় থেকে ওই প্রতিষ্ঠানকে সম্প্রতি আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। পরে একটি মহলের চাপের মুখে ওই কাজের সনদ বাতিল করে অফিস আদেশ জারি করে ঢাকা মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

গত ১০ এপ্রিল নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকত স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে, অত্র দপ্তর অসাবধানতাবশত মেসার্স মিরন এন্টারপ্রাইজ, ৩/এ দক্ষিণ কল্যাণপুর, দারুস সালাম, মিরপুর, ঢাকা বরাবর জারিকৃত ওয়ার্ক সার্টিফিকেট, ৩১/০১/২০২৩ সঠিক নয় বিধায় বিলম্বে ত্রুটি গোচরিভুক্ত হওয়ায় সার্টিফিকেট বাতিল করা হলো।’

বাঙলা কলেজে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে পাথরের পরিবর্তে ইটের ঢালাই

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজে পাথরের পরিবর্তে ইটের ঢালাই দিয়ে ‘বাউন্ডারি ওয়াল’ বা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। দুই দফা দরপত্রে প্রায় চার কোটি টাকায় ‘বাউন্ডারি ওয়াল’ নির্মাণ করা হয়েছে। পাথরের পরিবর্তে ইট দিয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করায় সরকারের অন্তত দুই কোটি টাকা গচ্ছা গেছে বলে ইইডির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।

এ অনিয়মের সঙ্গে ইইডির ‘ঢাকা মেট্রো’ অফিসের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী হাসাত শওকত এবং তার আগের এ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মো. আজাদকে দায়ী করা হচ্ছে। তারা ঠিকাদারকে ‘পাথরের পরিবর্তে ইটের শুরকি’ দিয়ে দেয়াল নির্মাণের সুযোগ করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, বাঙলা কলেজে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ হয়েছে তার প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার আগে। এজন্য তিনি বিষয়টি সর্ম্পকে বিস্তারিত বলতে পারছে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডির সাবেক একজন প্রধান প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, রাজধানীতে ইইডির সব নির্মাণ কাজ ঢাকা মেট্রোর অধীনে বাস্তবায়ন হয়। দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে সবকিছুই নির্বাহী প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। এসব কাজের বিল পরিশোধকারী অর্থাৎ ‘আয়ন-ব্যয়ন’ কর্মকর্তাও নির্বাহী প্রকৌশলী। এর নীচের স্তরের প্রকৌশলীরা শুধুমাত্র কাজ তদারকি করেন। এজন্য নির্বাহী প্রকৌশলী কোন কাজের দায়িত্বই এড়াতে পারেন না। আবার রাজধানীতে এতগুলো কাজে অনিয়ম হবে সেটি প্রধান প্রকৌশলী খোঁজ রাখবেন না তাও হতে পারে না বলে সাবেক ওই শীর্ষ প্রকৌশলী মনে করেন।