ফের বিদ্যুৎ উৎপাদনে রামপাল

কয়লা সংকটে ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টার পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে। শুরুতে জাতীয় গ্রিডে ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হলেও পরে তা ৪০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়।

ডলার সংকটে যথাসময়ে কয়লা আমদানি করতে না পারার কারণে গত ২৪ এপ্রিল থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ ছিল। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত কয়লা আসার পরে এই কেন্দ্রে আবার উৎপাদন শুরু হলো।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে গত শুক্রবার থেকে সাগরে ভাসমান এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে লোডশেডিং চলছে।

রামপাল উৎপাদনে ফিরে আসায় লোডশেডিং কিছুটা কমে এসেছে বলে দাবি করছেন পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার দেশে ১৯৫৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল; গত মঙ্গলবার লোডশেডিং ছিল ৮৭৭ মেগাওয়াট। রামপালের উৎপাদনে ফেরাসহ আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চাহিদা হ্রাসের কারণে লোডশেডিং কমে এসেছে।

বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। কেন্দ্রটিতে মোট দুটি ইউনিট রয়েছে, যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট করে। সে হিসাবে কেন্দ্রটির পূর্ণ সক্ষমতা হল দৈনিক ১৩২০ মেগাওয়াট।

বিআইএফপিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু হয়। শুরুতে ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেয়া হলেও পরে তা ৪০০ মেগাওয়াটে পৌঁছায়।

তিনি জানান, নিয়মিত ৫৬০-৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে ৪৬০ মেগাওয়াট ঢাকার জাতীয় গ্রিডে এবং ২০০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাটে সরবরাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু কয়লা সংকটে গত ২৩ এপ্রিল রাত থেকে কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল।

এখন সক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে জানতে জাইলে আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘এনএলডিসির চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যতটুকু আমাদের কাছ থেকে চাওয়া হচ্ছে, ততটুকু উৎপাদন করা হচ্ছে।’

কী পরিমাণ কয়লা এসেছে? সংবাদের এমন প্রশ্নের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘৫৫ হাজার মেট্রিক টন (মে.টন) এসেছে। আরও ৫৫ হাজার আসার পথে।’

সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেন্দ্রটিতে দৈনিক ৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে পূর্ণোদ্যমে চললে ৫৫ হাজার মে.টন কয়লা দিয়ে আরও ২২দিন কেন্দ্রটি চলবে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘ডলার সংকট আপাতত নেই। কয়লা আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে আরও কয়লা এসে যাবে, আমদানি অব্যাহত থাকবে।’

ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনটিপিসি) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সম-অংশীদারিত্বে ২০১২ সালে গঠিত হয় বিআইএফপিসিএল। যৌথ অংশীদারিত্বের এই কোম্পানি বাস্তবায়ন করে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, উৎপাদনে যাওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যেই রামপালের কয়লার মজুত শেষ হয়ে যায়। রিজার্ভ কয়লা দিয়ে আরও ৫ দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু রাখা হলেও ১৪ জানুয়ারি তা বন্ধ হয়ে যায়। ডলার সংকট কারণে কয়লা আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এক মাসের মাথায় আবার উৎপাদনে ফেরে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত ১৫ এপ্রিল রাত থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আবারও বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন। ১৮ এপ্রিল কেন্দ্রটি সচল হলেও কয়লা সংকটে ২৩ এপ্রিল রাত থেকে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়।

বিআইএফপিসিএল সূত্র বলছে, বর্তমানে তাদের ৬ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ দেয়া আছে। নতুন করে ডাকা দরপত্রে অংশ নিয়ে আরও ৬০ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ পেয়েছে দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে এসব কয়লা।

বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩ , ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৪

ফের বিদ্যুৎ উৎপাদনে রামপাল

ফয়েজ আহমেদ তুষার

image

কয়লা সংকটে ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টার পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে। শুরুতে জাতীয় গ্রিডে ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হলেও পরে তা ৪০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়।

ডলার সংকটে যথাসময়ে কয়লা আমদানি করতে না পারার কারণে গত ২৪ এপ্রিল থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ ছিল। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত কয়লা আসার পরে এই কেন্দ্রে আবার উৎপাদন শুরু হলো।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে গত শুক্রবার থেকে সাগরে ভাসমান এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে লোডশেডিং চলছে।

রামপাল উৎপাদনে ফিরে আসায় লোডশেডিং কিছুটা কমে এসেছে বলে দাবি করছেন পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার দেশে ১৯৫৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল; গত মঙ্গলবার লোডশেডিং ছিল ৮৭৭ মেগাওয়াট। রামপালের উৎপাদনে ফেরাসহ আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চাহিদা হ্রাসের কারণে লোডশেডিং কমে এসেছে।

বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। কেন্দ্রটিতে মোট দুটি ইউনিট রয়েছে, যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট করে। সে হিসাবে কেন্দ্রটির পূর্ণ সক্ষমতা হল দৈনিক ১৩২০ মেগাওয়াট।

বিআইএফপিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু হয়। শুরুতে ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেয়া হলেও পরে তা ৪০০ মেগাওয়াটে পৌঁছায়।

তিনি জানান, নিয়মিত ৫৬০-৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে ৪৬০ মেগাওয়াট ঢাকার জাতীয় গ্রিডে এবং ২০০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাটে সরবরাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু কয়লা সংকটে গত ২৩ এপ্রিল রাত থেকে কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল।

এখন সক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে জানতে জাইলে আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘এনএলডিসির চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যতটুকু আমাদের কাছ থেকে চাওয়া হচ্ছে, ততটুকু উৎপাদন করা হচ্ছে।’

কী পরিমাণ কয়লা এসেছে? সংবাদের এমন প্রশ্নের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘৫৫ হাজার মেট্রিক টন (মে.টন) এসেছে। আরও ৫৫ হাজার আসার পথে।’

সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেন্দ্রটিতে দৈনিক ৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে পূর্ণোদ্যমে চললে ৫৫ হাজার মে.টন কয়লা দিয়ে আরও ২২দিন কেন্দ্রটি চলবে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘ডলার সংকট আপাতত নেই। কয়লা আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে আরও কয়লা এসে যাবে, আমদানি অব্যাহত থাকবে।’

ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনটিপিসি) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সম-অংশীদারিত্বে ২০১২ সালে গঠিত হয় বিআইএফপিসিএল। যৌথ অংশীদারিত্বের এই কোম্পানি বাস্তবায়ন করে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, উৎপাদনে যাওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যেই রামপালের কয়লার মজুত শেষ হয়ে যায়। রিজার্ভ কয়লা দিয়ে আরও ৫ দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু রাখা হলেও ১৪ জানুয়ারি তা বন্ধ হয়ে যায়। ডলার সংকট কারণে কয়লা আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এক মাসের মাথায় আবার উৎপাদনে ফেরে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত ১৫ এপ্রিল রাত থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আবারও বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন। ১৮ এপ্রিল কেন্দ্রটি সচল হলেও কয়লা সংকটে ২৩ এপ্রিল রাত থেকে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়।

বিআইএফপিসিএল সূত্র বলছে, বর্তমানে তাদের ৬ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ দেয়া আছে। নতুন করে ডাকা দরপত্রে অংশ নিয়ে আরও ৬০ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ পেয়েছে দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে এসব কয়লা।