ইউক্রেনে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ধ্বংসের দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়ান বাহিনী। ড্রোন-ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনে রাতভর হামলায় তারা মার্কিন প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এতে হাইপারসনিক কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা বলেছেন, পুরোপুরি ধ্বংস, কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ওয়াশিংটন ও কিইভ ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মেরামতের সবচেয়ে ভালো উপায় কী হতে পারে, এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি জানান, এ মুহূর্তে ধারণা করা হচ্ছে, কোথাও স্থানান্তর না করে ইউক্রেনেই এটি মেরামত সম্ভব।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, ইউক্রেনে একটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে তাদের হামলায়। রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয় ক্রেমলিন বলেছে, হাইপারসনিক কিঞ্জাল ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাজধানী কিয়েভে হামলা চালানো হয়।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও এ হামলাকে ‘তীব্র’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। তবে ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা ১৮টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৬টি কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানী কিইভকে লক্ষ্য করে রুশ বাহিনীর তীব্র হামলার পর ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া ইউক্রেনের নতুন প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে রুশ বাহিনীর কৌশলগত হামলার চেষ্টা বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্যাট্রিয়ট পেয়েছে কিয়েভ। এটি ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে রুশ বাহিনী।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর গতকালের হামলাকে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলা বলা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে শীঘ্রই ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সম্প্রতি ইউরোপ সফর করে আধুনিক অস্ত্র দেয়ার অনুরোধ করেছে। এসব অস্ত্র পাওয়ার আগেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী।

এর আগে গত মার্চ মাসে ইউক্রেনে কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল রুশ বাহিনী। কিনঝালের গতি শব্দের গতির ১০ গুণ। শব্দের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩৩২ মিটার। অর্থাৎ এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতি সেকেন্ডে সোয়া তিন কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে। এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়া বিশ্বের যেকোনো স্থানে নির্ভুলভাবে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম বলে দাবি করে আসছেন পুতিন।

ইউক্রেনকে সম্প্রতি অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া জেলেনস্কি সরকার বার্লিনের কাছ থেকেও একটি প্যাট্রিয়ট পেয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের ধরনের ওপর এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়। প্যাট্রিয়টের প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় ৩০ লাখ ডলার। যদি ইউক্রেনের এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রুশ বাহিনীর শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়, তবে তা মস্কোর জন্য হতাশার।

গতকাল রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে কিয়েভে বিমান হামলার জরুরি সাইরেন বেজে ওঠে। এ সময় ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ সময় কিয়েভের আশপাশে ব্যাপক বিস্ফোরণ শোনা যায়। ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ ভ্যালেরি জালুঝনি বলেন, কিয়েভের প্রতিরক্ষা বাহিনী ১৮টি রুশ রকেট ও ড্রোনের মধ্যে ১৮টিই ধ্বংস করেছে।

শহরের উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে তীব্র এবং ব্যাপক আক্রমণ করা হয়। আকাশ, সমুদ্র ও স্থলভাগ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এ সময় ক্রেমলিনের ছয়টি দূরপাল্লার কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া নয়টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, তিনটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ছয়টি কামিকাজে ড্রোন ও তিনটি চালকবিহীন আকাশযান ধ্বংস করা হয়েছে।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, নির্ঘুম রাতের পর অনেকে বোমা হামলা থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্র চলে আসেন। তিনি বলেন, এ হামলায় তিনজন হতাহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় খারকিভ ও দোনেৎস্কে ছয়জন নিহত হয়েছেন। ওই দুই অঞ্চলের গর্ভনররা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর স্থলবাহিনীর কমান্ডার বলেন, বাখমুতের চারপাশে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত একটি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল্য প্রায় ১১০ কোটি ডলার। এটি ধ্বংস হয়ে থাকলে ইউক্রেনের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হবে।

image

যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত একটি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল্য প্রায় ১১০ কোটি ডলার, এটি ধ্বংস হয়ে থাকলে ইউক্রেনের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হবে -বিবিসি

আরও খবর
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের নতুন ভিডিও প্রকাশ
হঠাৎ দেশে ফিরছেন বাইডেন, কোয়াডের বৈঠক বাতিল

বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩ , ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৪

ইউক্রেনে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ধ্বংসের দাবি রাশিয়ার

image

যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত একটি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল্য প্রায় ১১০ কোটি ডলার, এটি ধ্বংস হয়ে থাকলে ইউক্রেনের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হবে -বিবিসি

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়ান বাহিনী। ড্রোন-ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনে রাতভর হামলায় তারা মার্কিন প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এতে হাইপারসনিক কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা বলেছেন, পুরোপুরি ধ্বংস, কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ওয়াশিংটন ও কিইভ ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মেরামতের সবচেয়ে ভালো উপায় কী হতে পারে, এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি জানান, এ মুহূর্তে ধারণা করা হচ্ছে, কোথাও স্থানান্তর না করে ইউক্রেনেই এটি মেরামত সম্ভব।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, ইউক্রেনে একটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে তাদের হামলায়। রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয় ক্রেমলিন বলেছে, হাইপারসনিক কিঞ্জাল ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাজধানী কিয়েভে হামলা চালানো হয়।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও এ হামলাকে ‘তীব্র’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। তবে ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা ১৮টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৬টি কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানী কিইভকে লক্ষ্য করে রুশ বাহিনীর তীব্র হামলার পর ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া ইউক্রেনের নতুন প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে রুশ বাহিনীর কৌশলগত হামলার চেষ্টা বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্যাট্রিয়ট পেয়েছে কিয়েভ। এটি ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে রুশ বাহিনী।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর গতকালের হামলাকে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলা বলা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে শীঘ্রই ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সম্প্রতি ইউরোপ সফর করে আধুনিক অস্ত্র দেয়ার অনুরোধ করেছে। এসব অস্ত্র পাওয়ার আগেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী।

এর আগে গত মার্চ মাসে ইউক্রেনে কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল রুশ বাহিনী। কিনঝালের গতি শব্দের গতির ১০ গুণ। শব্দের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩৩২ মিটার। অর্থাৎ এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতি সেকেন্ডে সোয়া তিন কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে। এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়া বিশ্বের যেকোনো স্থানে নির্ভুলভাবে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম বলে দাবি করে আসছেন পুতিন।

ইউক্রেনকে সম্প্রতি অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া জেলেনস্কি সরকার বার্লিনের কাছ থেকেও একটি প্যাট্রিয়ট পেয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের ধরনের ওপর এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়। প্যাট্রিয়টের প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় ৩০ লাখ ডলার। যদি ইউক্রেনের এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রুশ বাহিনীর শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়, তবে তা মস্কোর জন্য হতাশার।

গতকাল রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে কিয়েভে বিমান হামলার জরুরি সাইরেন বেজে ওঠে। এ সময় ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ সময় কিয়েভের আশপাশে ব্যাপক বিস্ফোরণ শোনা যায়। ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ ভ্যালেরি জালুঝনি বলেন, কিয়েভের প্রতিরক্ষা বাহিনী ১৮টি রুশ রকেট ও ড্রোনের মধ্যে ১৮টিই ধ্বংস করেছে।

শহরের উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে তীব্র এবং ব্যাপক আক্রমণ করা হয়। আকাশ, সমুদ্র ও স্থলভাগ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এ সময় ক্রেমলিনের ছয়টি দূরপাল্লার কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া নয়টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, তিনটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ছয়টি কামিকাজে ড্রোন ও তিনটি চালকবিহীন আকাশযান ধ্বংস করা হয়েছে।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, নির্ঘুম রাতের পর অনেকে বোমা হামলা থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্র চলে আসেন। তিনি বলেন, এ হামলায় তিনজন হতাহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় খারকিভ ও দোনেৎস্কে ছয়জন নিহত হয়েছেন। ওই দুই অঞ্চলের গর্ভনররা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর স্থলবাহিনীর কমান্ডার বলেন, বাখমুতের চারপাশে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত একটি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল্য প্রায় ১১০ কোটি ডলার। এটি ধ্বংস হয়ে থাকলে ইউক্রেনের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হবে।