চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সুদহার করিডোর, একক বিনিময় হার নির্ধারণ, রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতি আইএমএফ নির্দেশিত পন্থায় পরিবর্তনের মতো যেসব সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে, তা বাস্তবায়নের রোববার আগামী অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়নের জন্য প্রথম বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে গতকাল বেলা ১২টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গভর্নরের ব্যস্ততার কারণে আগামী রোববার শুরু হবে এ বৈঠক। নতুন মুদ্রানীতির একটি খসড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করা হবে বৈঠকে।
গত জুলাইয়ে গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এটি হবে আবদুর রউফ তালুকদারের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি। বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সময়ে মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করছে যখন, টাকার মান কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির পারদ প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি, ব্যাংকিং খাত রয়েছে তারল্য সংকটের চাপে।
গত এক বছর ধরে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহে টান রয়েছে, লেনদেন ভারসাম্য হয়ে আছে মাথাব্যথার কারণ। রাজস্ব আদায় আশানুরূপ না হওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে সরকারের। টাকা মান হারাতে শুরু করায় ডলার সাশ্রয়ে গতবছর জুলাই মাসে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, এখনও তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমদানি কমে গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এলেও বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়নি। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকা- গতি হারিয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে।
তখন মুদ্রানীতিতে নেয়া পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়াজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুদ্রানীতিতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
জানুয়ারি-জুন ২০২৩ সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতির সময় পার হয়েছে সাড়ে চার মাস। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক বিভিন্ন সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। হাতে গোনা কয়েকটি সূচকের ক্ষেত্রে মার্চ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে।
চলমান মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা (এম২) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। গত মার্চে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩৭.৭ শতাংশ, গত মার্চ পর্যন্ত হয়েছে ৩৭.৮২ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, সেখানে গত মার্চ শেষে অর্জন হয়েছে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চে যা ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ, মার্চ পর্যন্ত যা হয়েছে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। ফের রেপো হার বাড়িয়ে সতর্ক মুদ্রানীতি মাঝে বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও আইএমএফ এর পরামর্শে এখন আবার ছয় মাস অন্তর মুদ্রানীতি ঘোষণার পথে ফিরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে ধরে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাবে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। আর সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।
মুদ্রানীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘এবারের মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন থাকবে। তারমধ্যে সুদহার করিডোর, একক বিনিময় হার নির্ধারণ, রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতিসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।’
শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩ , ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৪
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সুদহার করিডোর, একক বিনিময় হার নির্ধারণ, রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতি আইএমএফ নির্দেশিত পন্থায় পরিবর্তনের মতো যেসব সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে, তা বাস্তবায়নের রোববার আগামী অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়নের জন্য প্রথম বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে গতকাল বেলা ১২টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গভর্নরের ব্যস্ততার কারণে আগামী রোববার শুরু হবে এ বৈঠক। নতুন মুদ্রানীতির একটি খসড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করা হবে বৈঠকে।
গত জুলাইয়ে গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এটি হবে আবদুর রউফ তালুকদারের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি। বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সময়ে মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করছে যখন, টাকার মান কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির পারদ প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি, ব্যাংকিং খাত রয়েছে তারল্য সংকটের চাপে।
গত এক বছর ধরে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহে টান রয়েছে, লেনদেন ভারসাম্য হয়ে আছে মাথাব্যথার কারণ। রাজস্ব আদায় আশানুরূপ না হওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে সরকারের। টাকা মান হারাতে শুরু করায় ডলার সাশ্রয়ে গতবছর জুলাই মাসে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, এখনও তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমদানি কমে গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এলেও বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়নি। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকা- গতি হারিয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে।
তখন মুদ্রানীতিতে নেয়া পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন, বিনিময় হারের চাপ নিয়ন্ত্রণ, সরকারের কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়াজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুদ্রানীতিতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
জানুয়ারি-জুন ২০২৩ সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতির সময় পার হয়েছে সাড়ে চার মাস। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক বিভিন্ন সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। হাতে গোনা কয়েকটি সূচকের ক্ষেত্রে মার্চ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে।
চলমান মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা (এম২) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। গত মার্চে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩৭.৭ শতাংশ, গত মার্চ পর্যন্ত হয়েছে ৩৭.৮২ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, সেখানে গত মার্চ শেষে অর্জন হয়েছে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চে যা ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ, মার্চ পর্যন্ত যা হয়েছে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। ফের রেপো হার বাড়িয়ে সতর্ক মুদ্রানীতি মাঝে বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও আইএমএফ এর পরামর্শে এখন আবার ছয় মাস অন্তর মুদ্রানীতি ঘোষণার পথে ফিরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে ধরে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাবে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। আর সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।
মুদ্রানীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘এবারের মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন থাকবে। তারমধ্যে সুদহার করিডোর, একক বিনিময় হার নির্ধারণ, রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতিসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।’