মনিরা হত্যা : ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত : পিপি রেজাউল

একদশক আগে রাজধানীর খিলক্ষেতে কলেজছাত্রী মনিরা পারভীনকে হত্যার দায়ে ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। তবে মামলা থেকে মনিরার স্বামী মো. নাসির হোসেন খালাস পেয়েছেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন- নাসিরের ভাই মাসুদ, বড় বোন হাসিনা খাতুন ও তার স্বামী মিলন, মিলনের ভাই দেলোয়ার হোসেন এবং নাসিরের চাচা দ্বীন ইসলাম। রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক মাফরোজা পারভীন এই রায় দেন। আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রেজাউল করিম বলেন, ‘যৌতুকের জন্য মনিরাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।’ তিনি বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করে ২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষে আটজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।’

খিলক্ষেতের বড়ুয়া পশ্চিমপাড়ার লাহনিয়ায় ২০১৩ সালের ২১ জুন খিলক্ষেত নিকুঞ্জ মডেল কলেজের ছাত্রী মনিরাকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন মনিরার বাবা অটোরিকশাচালক মো. মোস্তফা।

মামলার এজাহার ও পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান নাসির উদ্দিন ২০১৩ সালের ১৮ জুন মনিরাকে গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের পর দুজনই ছিলেন আত্মগোপনে। বিষয়টি জানাজানি হলে নাসিরের পরিবার মনিরার পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। কিন্তু মনিরার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তা দেয়া সম্ভব ছিল না। এরই মধ্যে গত ২১ জুন মনিরাকে নিয়ে নাসির বাসায় যান। তখনই নাসিরের স্বজনেরা মনিরার ওপর হামলে পড়েন।

২০১৩ সালে ২৬ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, নাসির মনিরাকে নিয়ে বাসার সামনে আসা মাত্রই স্বজনেরা নাসিরকে মেরে বাসায় ঢুকিয়ে দেন। শুরু হয় মনিরার ওপর হামলা। তারা মাথায় ইট ও স্টাম্প দিয়ে আঘাত করেন। দৌড় দেন মনিরা। নাসিরের চাচা দ্বীন ইসলাম কাঠ দিয়ে তার পায়ে আঘাত করেন। মনিরা পড়ে যান। সবাই মিলে তার চুল ধরে ছেঁচড়াতে থাকেন। আবারও দৌড় দেন তিনি। দৌড়ে বালুর মাঠে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে যান মনিরা।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছিলেন, নির্যাতনের এ দৃশ্য দেখলেও তারা এগিয়ে যেতে সাহস করেননি। ‘কেন?’ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের একজন বলেন, নাসিরের বাবা, চাচাসহ আত্মীয়স্বজন পাশাপাশি বাসায় থাকেন। এলাকায় তারা বেশ ধনী ও প্রভাবশালী। মনিরার বাসার পাশে বালুর মাঠ। মাঠের দক্ষিণে নাসিরের বাসা। নাসির নিকুঞ্জ মডেল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলেন। তবে পরীক্ষা দেননি।

শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩ , ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৪

মনিরা হত্যা : ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত : পিপি রেজাউল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

একদশক আগে রাজধানীর খিলক্ষেতে কলেজছাত্রী মনিরা পারভীনকে হত্যার দায়ে ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। তবে মামলা থেকে মনিরার স্বামী মো. নাসির হোসেন খালাস পেয়েছেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন- নাসিরের ভাই মাসুদ, বড় বোন হাসিনা খাতুন ও তার স্বামী মিলন, মিলনের ভাই দেলোয়ার হোসেন এবং নাসিরের চাচা দ্বীন ইসলাম। রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক মাফরোজা পারভীন এই রায় দেন। আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রেজাউল করিম বলেন, ‘যৌতুকের জন্য মনিরাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।’ তিনি বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করে ২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষে আটজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।’

খিলক্ষেতের বড়ুয়া পশ্চিমপাড়ার লাহনিয়ায় ২০১৩ সালের ২১ জুন খিলক্ষেত নিকুঞ্জ মডেল কলেজের ছাত্রী মনিরাকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন মনিরার বাবা অটোরিকশাচালক মো. মোস্তফা।

মামলার এজাহার ও পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান নাসির উদ্দিন ২০১৩ সালের ১৮ জুন মনিরাকে গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের পর দুজনই ছিলেন আত্মগোপনে। বিষয়টি জানাজানি হলে নাসিরের পরিবার মনিরার পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। কিন্তু মনিরার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তা দেয়া সম্ভব ছিল না। এরই মধ্যে গত ২১ জুন মনিরাকে নিয়ে নাসির বাসায় যান। তখনই নাসিরের স্বজনেরা মনিরার ওপর হামলে পড়েন।

২০১৩ সালে ২৬ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, নাসির মনিরাকে নিয়ে বাসার সামনে আসা মাত্রই স্বজনেরা নাসিরকে মেরে বাসায় ঢুকিয়ে দেন। শুরু হয় মনিরার ওপর হামলা। তারা মাথায় ইট ও স্টাম্প দিয়ে আঘাত করেন। দৌড় দেন মনিরা। নাসিরের চাচা দ্বীন ইসলাম কাঠ দিয়ে তার পায়ে আঘাত করেন। মনিরা পড়ে যান। সবাই মিলে তার চুল ধরে ছেঁচড়াতে থাকেন। আবারও দৌড় দেন তিনি। দৌড়ে বালুর মাঠে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে যান মনিরা।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছিলেন, নির্যাতনের এ দৃশ্য দেখলেও তারা এগিয়ে যেতে সাহস করেননি। ‘কেন?’ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের একজন বলেন, নাসিরের বাবা, চাচাসহ আত্মীয়স্বজন পাশাপাশি বাসায় থাকেন। এলাকায় তারা বেশ ধনী ও প্রভাবশালী। মনিরার বাসার পাশে বালুর মাঠ। মাঠের দক্ষিণে নাসিরের বাসা। নাসির নিকুঞ্জ মডেল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলেন। তবে পরীক্ষা দেননি।